ঘর আলো করে একদিন চিৎকার করে কেঁদে কেটে বাড়ি কাঁপিয়ে নতুন সদস্য টির আগমন হলো,চোখ বুজে শান্তিতে প্রাণ ভরে শ্বাস নেন মা জননী। নবজাতকের এই কান্না কোনো দুঃখের কান্না নয়। এই ফুলে ফলে ভরা, আকাশ, বাতাস, মাটির পৃথিবীতে অন্য সবার সাথে জায়গা করে নেবার আনন্দের কান্না, তৃপ্তির কান্না ,সুখের কান্না। সে কাঁদে, আর মা বাবা দাদা দাদু ,নানা নানু, খালা ফুফু,আত্মীয় পরিজন সবাই হাসে। সেও তৃপ্তির হাসি। প্রাপ্তির হাসি। ছুটো ছুটি শুরু হয়ে যায়,আয়া নার্স ,ধাত্রী সবার মাঝে এক অনাবিল আনন্দের বন্যা বয়ে যায় । দিনে দিনে এ কোল থেকে সে কোল করতে করতে একদিন বসতে শিখে ,হামাগুড়ি দেয়। তারপর হাঁটে।
তারপর স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠে আর সবার মত। শুরু হয় স্কুল ,কলেজ পড়াশোনা। এক মুহূর্ত সময় নেই। পরিবারের সবাইকে খুশি করে একদিন অত্যন্ত ভালো ফলাফল করে উচ্চতর শিক্ষার গন্ডিও পেরিয়ে যায় । বড় প্রতিষ্ঠানে কাজও পায় । এবারে বউ দেখার পালা। তত দিনে দাদা আর দাদু বয়োবৃদ্ধরা কেউ বেঁচে নেই। মা বাবা ফুফু চাচারা আছেন। বাড়িময় ধুম পড়ে গেল। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। যেমনটি করে ভুবন আলো করে বাড়ির ছেলেটি একদিন জন্ম নিয়েছিলো ,ঠিক তেমনি করে পূর্নিমার চাঁদের মতো লক্ষী পয়মন্ত বৌটির গৃহপ্রবেশ হলো। বছর ঘুরে যেতেই আবার বাড়িতে নতুন প্রাণের আগমন বার্তায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় ।যথা সময়ে সুখের কান্নায় ভরিয়ে দিয়ে বাড়িময় আনন্দের জোয়ারে ভাসিয়ে সবাই কে জানিয়ে দিলো এই জানা অজানার দুর্গম ,বন্ধুর পৃথিবীতে তার আগমনবার্তা । সদ্য মা হওয়া বৌটি পরম মমতায় সন্তানকে আগলে রেখে বড় করে তোলে। একদিন বড় হয় ,বিয়ে হয় আবার তারা সন্তানের মা হয় ,বাবা হয়। সেই পূর্নিমার চাঁদের মতো টুকটুকে বৌটি এক সময় হয়ে যায় অশতিপর বৃদ্ধা। আবার তাদেরও বংশ পরম্পরায় অনেকেই বেঁচে নেই। অনেকে আছেন। আবার পরের বংশধরেরা একই ঘুর্নিচাকার আবর্তে একই ভাবে নতুন জীবনে পা ফেলে।এভাবে প্রতিনিয়ত একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
এভাবেই চলছে যুগের পরে যুগ ,শতাব্দীর পর শতাব্দী । এক যায় এক আসে। কেউ বেঁচে থাকে না ,সবাই একদিন চলে যায়। তারপরও একই ভাবে ঘূর্ণিচক্রের মতো আমরা ঘুরছি।চলছে বিরামহীন এই ঘূর্ণি চক্র। কেউ থেমে নেই এক মূহুর্ত। পৃথিবী যতদিন থাকবে এই চক্রও চলবে অনন্ত কাল ধরে। আমরা যত কিছুই করিনা কেন,আনন্দ উল্লাস ,সফলতা, ব্যর্থতা সব কিছুর উর্ধে চরম সত্য হলো এখান থেকে একদিন চলে যেতে হবে।
তাহলে কেন এত কিছু? কেন এত হা হুতাশ ? কি পেলাম ? কি পেলাম না ? জন্মালেই যদি মরতে হয় তবে বেঁচে থাকার জন্য কেন এতো সংগ্রাম মানুষের? যে শিশু একদিন জন্ম মুহূর্তে আনন্দের কান্না কেঁদে বাড়ি ভর্তি সবাইকে হাসিয়েছিলো সে শিশুই পরবর্তীতে কোনও একদিন সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যায় পরপারের ডাকে।
.. ঔপন্যাসিক দিলারা হাশেম এর "আমলকীর মৌ" উপন্যাসে একটি কথা পড়েছিলাম যার সার কথা ছিল এমন --
"যেদিন তুমি এই পৃথিবীতে এসেছিলে সেদিন তুমি কেঁদেছ আর তোমার চারপাশের জগৎ হেসেছে। আর আজ তোমার চারপাশের সবাই কাঁদছে ,তুমি চলে গেছ সব কান্না হাসির উর্ধে।"
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০৪