somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চলেপথিক
আমি মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী, কারণ মুক্তচিন্তা হলো এমন এক প্রকার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি যা বলে যে বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ , মতামত গঠনের ক্ষেত্রে প্রথা, অন্ধবিশ্বাস এবং কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রভাবান্বিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয় ।

ধর্মঃ একটি প্রাগ-ঐতিহাসিক নিয়ম কানুন ছাড়া আর কিছুই নয়

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান দার্শনিক কার্ল মার্ক্স এর একটি বিখ্যাত উক্তি “ ধর্মের সমালোচনাই হচ্ছে সব আলোচনার মূল ভিত্তি “ মার্ক্স কেন এমন একটি কথা বললেন ? আমার যদিও আনেক আগে থেকেই মার্ক্স একটু আধটু পড়া ছিলো , কিন্তু কখনও বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব আরোপ করিনি । কেন যেন আমার মনে হয়েছে কমিউনিজম ধর্মকে স্বীকার করে না বলেই হয়তো কার্ল মার্ক্স এমন কথা বলেছেন । কিন্তু একটা সময়ে এসে বুঝলাম ধর্মের সমালোচনা মানুষের জ্ঞান অর্জনে যে বিশাল ভুমিকা রাখে তা অন্যকোন ভাবে এত সহজে হবার নয় । কারণ ধর্মমতের মত শক্তিশালী ও আদিম একটি বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে কিছু বলতে হলে অবশ্যই আপনাকে অনেক কিছু জানতে হবে, আর জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে । পড়ার জন্য চাই উপযুক্ত বই যার তালিকাটাও নেহাত একটা ছোট নয় । কিছু জানতে হলে পড়তে হবে , শুধু ‘বিশ্বাস ‘দিয়ে আর যাই হোক সঠিক আর বেঠিক এর পার্থক্য নিরূপণ করা যায় না ।
তাই ধর্মের সমালোচনা নাস্তিকতা তো নয়ই বরঞ্চ এটি মানুষের জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক ভুমিকাই পালন করে থাকে । কার্ল মার্ক্স এই ব্যপারটি খুব ভালভাবে উপলব্ধি করেছিলেন । তিনি দেখাতে চেয়েছেন আসলে অর্থই হচ্ছে যত অনর্থের মূল কারণ । তাই শুধু মাত্র সম্পদের সু-সমবণ্টনই এই বিশ্বকে এনে দিতে পারে চিরস্হায়ী শান্তি, কোন ধর্মমত নয় । মার্ক্স ধর্মীয় সমাজ ব্যবস্হা কে বাদ দিয়ে একটি শোষণহীন সমাজতান্তিক ব্যবস্হার মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির দিশা দেখিয়েছেন। যেখানে “ মানুষ উৎপাদন করবে সাধ্যানুযায়ী আর ভোগ করবে প্রয়োজন অনুযায়ী “। মার্ক্স এর এই অসাধারণ মতবাদটিকে নাস্তিকতার মোড়কে আবদ্ধ করে পুঁজিবাদী ও ধর্মবাদীদের মিলিত শক্তি এক হয়ে মানুষের সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব প্রতাষ্ঠার আন্দোলনকে বার বার প্রতিহত করে আসছে । অথচ একটি শোষণ মুক্ত সাম্যবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্হার মাধ্যমেই খুলে যেতে পারে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার এই রুদ্ধ দুয়ার ।

আমরা সাদা চোখেই দেখতে পাচ্ছি এই পৃথিবিতে ঈশ্বর পদত্ত যতগুলো ধর্ম রয়েছে সে সব ধর্ম গুলো কি ভাবে ব্যর্থ হয়েছে এ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায়। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ধর্মের এই ব্যর্থতার দায় কার ? স্রষ্টার, তাঁর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের, না কি সাধারণ মানুষের ? ব্যর্থতার এই দায় যারই হোক না কেন, মূল কথা হলো ধর্মের এই ব্যর্থতা অসীম ক্ষমতাবান ঈশ্বররের ধারণাকে খাটো করে দেয় । আমরা যদি পৃথিবীর অন্যতম ধর্ম ইসলামের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই ইসলাম একদিকে যেমন মানুষে মানুষে সমতার কথা বলেছে আর অন্য দিকে এর অনুসারীরা মানুষকে বিভাজন করেছে ‘আশরাফ ‘ এবং ‘আত্রাফ’ নামিও বর্ণে । আশরাফরা উচ্চবংশীয় ও বিত্তবান আর আত্রাফরা নিম্নবংশীয় ও বিত্তহীন । ইসলামে নামাজ পড়ার রীতি ধনী ও দরিদ্রকে হয়তো এক সারিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে , কিন্তু ধনী আর দরিদ্রের পার্থক্য কি গুছিয়ে দিতে পেরেছে ? ইসলাম অর্থনৈতিক সম-বন্টন এর কথা বলেছে । দারিদ্রতা নির্মূলে যাকাত প্রদানের কথা বলেছে । কিন্তু কোন বিত্তবান মুসলমান কি সঠিক ভাবে যাকাত প্রদান করেন ? ইসলাম মানুষকে সত্যবাদী হয়ার আহ্বান জানিয়েছে । আর মুসলমান প্রতিনিয়ত কারণে অকারণে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে । ইসলাম দাস-দাসীদের সাথে মানবিক আচরণের কথা বলেছে, আর মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে গৃহকর্মী নির্যাতন একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে বহু দিন থেকে । ইসলাম সুধ কে হারাম করেছে অথচ ইসলামিক অর্থ ব্যবস্হা সুদের উপর দাঁড়িয়ে আছে ।

ইসলাম পরচর্চা-পরনিন্দা থেকে মানুষকে মুক্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে আর আমাদের দেশের মুসলমান জনগুষ্টির এই পরচর্চাই প্রধানতম কর্মে পরিণত হয়েছে । এতে প্রমাণিত হয় যে সঠিক অর্থে কেঊ আল্লাহ্‌র বিধান মানেন না এবং আল্লাহ্‌ কে ভয়ও করেন না, ভয়ের ভাণ করেন মাত্র ।
যেখানে আব্রাহামিয় ধর্মের আলোকে পৃথিবীর প্রথম মানব ‘আদম’ সৃষ্টির সূচনাই করেছেন স্বয়ং আল্লাহ্‌র উপস্হিতিতে তাঁর আদেশ লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে । সে আদম এর বংশধর এই আদম সন্তানেরা এই পৃথিবীতে বসবাস কালে অদৃশ্য আল্লাহ্‌র আদেশ সর্বদা মান্য করবেন এমন আশাবাদী হওয়ার কোন কারণ আছে কি ? তাই তো ইসলামের আলেম সমাজ শত শত বছর ধরে অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসা সৃষ্টি করে মাঠে ময়দানে ক্লান্তিহীন ওয়াজ-নসিহত করেও ব্যর্থ হয়েছেন এ দেশে ইসলামের কথিত মুমিন মুসলমান সৃষ্টিতে । ইসলামের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে কোনদিন দেখা যায়নি যে তারা, কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবিক কোন বিপর্যয়ে মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ! অথচ দান খয়রাতের মাধ্যমে অন্যের সাহায্য গ্রহণে তাদের ক্লান্ত হতে কখনও দেখা যায় না । ধর্মের এই ‘দাও নগদ নাও বাকি’ দর্শন সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর কিছু মানুষকে কর্মহীন ভিক্ষুকে পরিণত করে রেখেছে। পাপ কর আর পাপ মোচনে নামাজ পড়ো এবং আল্লাহ্‌র নামে দান কর ফর্মুলা সমাজের বিত্তবান শ্রেণীকে দিয়ে রেখেছে অসীম স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ । অথচ ইসলাম ধর্মের আগমনের মুল উদ্দেশ্যই ছিল মানুষের মধ্যকার পশুত্ব কে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানবিক গুণাবলী সম্পূর্ণ আদর্শ মানব সৃষ্টি ।

ইসলাম ধর্মের প্রধান ভিত্তি হোল ‘ বিশ্বাস ’। এক-আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস, বিশ্বাস আল-কুরআন আল্লাহ্‌র বানী, বিশ্বাস হজরত মোহাম্মদ (দঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, বিশ্বাস বেহেস্ত, দোজখ, ফেরেশতা এবং পুনরুত্থান দিবস এর প্রতি । ইসলামে এই বিশ্বাসগুলি ‘ঈমান‘ হিসাবে পরিচিত । আর এই ঈমানই হচ্ছে একজন মুসলমান হিসাবে নাম লিখাবার প্রথম পদক্ষেপ । এরপরই হচ্ছে তার অবশ্যই করনিয় কিছু কর্ম, যা ইসলামের প্রধান চারটি স্তম্ভ হিসাবে পরিচিত । ১। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ২। বছরে এক মাস সিয়াম সাধনা ৩। স্হাবর-অস্হাবর সম্পদের উপর নিদৃষ্ট পরিমাণে যাকাত প্রদান ৪। হজ্বব্রত পালন ইত্যাদি । এক জন মুসলিম এই বিশ্বাস ও অবশ্য করণীয় কর্তব্য গুলোকে ধারণ করেই তার জীবনের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন, এটাই বিধান । প্রশ্ন হচ্ছে মহান আল্লাহ্‌ যদি বিধি-বিধানের মধ্যেই মানব জাতিকে ধরে রাখবেন তবে প্রথম মানব ‘আদম’ কে কেন উনার নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ প্রদান করবেন ? তিনি তো সব ধরণের বিধি-বিধান সহযোগেই ‘আদম’ কে এই মর্তে পাঠাতে পারতেন ! কিন্তু তিনি তা করেননি, কেন করেননি কারণ তিনি চেয়েছেন মানুষ একটি স্বাধীন সত্ত্বা নিয়েই এই পৃথিবীতে অস্হান করবে । যেখানে মহান স্রষ্টা একবারেই এই বিশ্বের সব কিছু সৃষ্টি করে ফেলেছেন সেখানে শুধু মাত্র কিছু বিধি-বিধান কতিপয় ব্যক্তি বিশেষের মাধ্যমে পরবর্তীতে পৃথিবীতে প্রেরনের ঝামালা কেন পোহাবেন ?

ইসলামের প্রথম বিশ্বাস ‘আল্লাহ্‌’ আরবি ভাষায় বহুল প্রচলিত আদি শব্দ ইলাহা থেকে এর উৎপত্তি ,আল-ইলাহা শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে এক-ঈশ্বর । ইসলামধর্ম এই আল্লাহর পরিচয় দিয়েছেন এই ভাবে “ তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনিই সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত “ (সূরা আল হাদীদ, আয়াতঃ-৩)। এই বিশ্ব জগতের যাহা কিছু আছে আল্লাহ্‌ তার স্রষ্টা এবং প্রতিপালক, তিনি একটি ইচ্ছাময় শক্তি , তিনি সর্বশ্রেষ্ট জ্ঞানী এবং সর্বত্রই বিরাজমান এক নিরাকার সত্ত্বা । আব্রাহামিয় ধর্ম যেমন ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্ম গুলোরও প্রায় একই মত । দেখা যায় স্রষ্টার এ পরিচয় আল-কুরআনেই প্রথম দেয়া হয়নি, তারও অনেক আগের প্রতষ্ঠিত ধর্মমত গুলোতেও বলা হয়েছে ।

যেমন এই উপমহাদেশের প্রচলিত অন্যতম ধর্ম যেটি আমাদের কাছে সনাতন বা হিন্দুধর্ম হিসাবে পরিচিত, সেই ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ দেবীভগবত পুরাণে বিশ্ব জগতের স্রষ্টার পরিচয় দিয়েছেন ঠিক এ ভাবে –-
“ আমিই প্রত্যাক্ষ দৈবসত্ত্বা, এবং তুরীয় দৈবসত্ত্বা । আমি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব, আবার আমিই সরস্বতী, লক্ষী ও পার্বতী । আমি নক্ষত্ররাজী, আবার আমিই চন্দ্র । আমিই সকল পশু ও পাখী । আবার আমিই জাতিহীন, এমন কি তস্কর । আমি ভয়াল কর্মকারী হীন ব্যক্তি, আবার আমিই মহৎ কার্য্যকারী মহামানব । আমি নারী, আমি পুরুষ, আমিই জড় “ ।

আবার প্রখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল তাঁর মেটাফিজিকস গ্রন্হে সৃষ্টি ও স্রষ্টা সম্পর্কে বলেন -
“ সৃষ্টি হইতেছে একটি ক্রমবিকাশের ধারা । উহার সর্ব নিম্ন স্তরে রহিয়াছে এক আকার ও অবয়ব বিহীন জড়সত্তা, আর উর্ধতম স্তরে রহিয়াছে স্বয়ংসম্পূর্ণ এক পুত আত্মা এই আত্মা একটি ইচ্ছাময় শক্তি । উহার কোন কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা হইবা মাত্র উহার নির্বাচিত একটা আকৃতি জড়ের সহিত যুক্ত হয় এবং উক্ত ঈস্পিত ‘বস্তু’ রূপে দৃশ্যমান জগতে প্রকাশিত হয় । এই সৃষ্টি কার্য্য সম্পাদন যে জড় সত্তার মাধ্যমে উহা কোন ‘বাস্তব’ সত্তা নয় । আকার প্রাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত উহার বিদ্যমানত্ব শুধু একটি ‘সম্ভবনা ‘ মাত্র । যেমন বীজের ভিতর বৃক্ষ, যার অস্হিত্বের কোনও প্রমাণ থাকে না, যতক্ষন না উহা আকার প্রাপ্ত হয় ; অথচ উহা ছিল না এ কথাও বলার উপায় নেই । উহা সত্যিই ওখানে ছিল, তবে বস্তু রূপে নয়, বস্তুর ‘সম্ভবনা ‘ রূপে “।

বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্হ ‘ত্রিপিটক’এর হীনযান অংশে স্রষ্টা সম্পর্কে বলা হয়েছে “ ইহা থাকলে উহা হয়, ইহার উৎপত্তিতে উহা উৎপন্ন হয় । ইহা না থাকলে উহা হয় না, ইহার নিরোধে উহা নিরুদ্ধ হয় । ইহাকে প্রতীত্য সমুৎপাত বা কার্যকারণ নীতি বলে “
এ ক্ষেত্রে যেন বলা হচ্ছে একটি কার্যকারণ নীতিই হচ্ছে স্রষ্টা ।

এইজাতীয় তত্ত্ব বা মত এটাই প্রমাণ করে যে বড় বড় মনীষী ও ধর্ম প্রবক্তারা প্রায় সকলেই স্রষ্ঠা এবং তার সৃষ্টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভে ব্যর্থ হয়েছেন । তাইতো ধর্মগ্রহ্ন্ গুলোতে সৃষ্টিকর্তা ও তাঁর কর্ম সম্পর্কে যে সব কথোপকথন লিপিবদ্ধ রয়েছে তার সব বক্তব্য কিন্তু যুক্তিনির্ভর নয় তার বেশীরভাগই অস্পষ্ট ধারণা মাত্র । তাইতো ধর্মমত গুলি যুক্তির পরিবর্তে শুধু বিশ্বাস কে ধারণ করে আছে । তাদের এই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য এই ধর্মবাদী গোষ্ঠি যুগে যুগে যুক্তিবাদী মানুষদের নির্মম ভাবে হত্যা করে আসছে ।

খ্রিস্টপূর্ব যুগের প্রখ্যাত দার্শনিক প্লাটিনাস বলেছিলেন “ যুক্তিবাদীর জীবনই কেবলমাত্র যাদু-টোনা, ভেলকি থেকে মুক্ত “ । এর সত্যতা আমরা দেখতে পাই ‘জীন’ আমাদের মোবাইল ফোনে গুপ্তধন পাওয়ার সংবাদ জানিয়ে অর্থ প্রদানের আহ্বান জানায় আর সাধারন মানুষ জীনের দাবী মেনে সর্বশান্ত হয় । প্রতিনিয়তই আমরা দেখতে পারছি হতাশাগ্রস্ত কিছু ব্যক্তি কি ভাবে তাবীয-কবচ এর পিছনে অর্থ ব্যয় করে থাকে । বাস্তব অর্থে এগুলো তাদের কোন উপকারেই আসেনা শুধু মাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেই তারা এর পেছনে ছুটছে আর এই সুযোগে ফুলে-ফেঁপে উঠছে প্রতারণার এই ব্যবসা । এগুলো যদি সত্যি হতো তাহলে আমাদের কোন ডাক্তার বা হাসপাতালের প্রয়োজন হতো না, প্রয়োজন হতো না মেধা আর শ্রম এর বিনিময়ে ভাগ্য পরিবর্তনের। দরকার হতো না সারা পৃথিবীব্যপি এত অস্ত্র কারখানার, বান-টোনা কররেই হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা যেতো । আর এর জন্য কোন প্রকারের বিচারের মুখমুখিও আমাদের কখনও হতে হতো না । এটা যদি সম্ভব হতো তা হলে ওসামা বিন লাদেন এভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেই মেরে ফেলতে পারতেন কি না ?

এইজাতিয় প্রশ্নের উত্তরে এরা সাধারণত বলে থাকে রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী কোন ব্যক্তির উপর বান-টোনা কাজ করে না । তা হলে কি এটি কার্যকর শুধু মাত্র নিরক্ষর আর দরিদ্র মানুষের ক্ষেত্রে ? পানি পড়া আর তাবীয-কবজ ব্যবহারে যদি মানুষ আরগ্য লাভ করতো তাহলে ইসলামের নবী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬২ বৎসর বয়সে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতেন না ।

ধর্মের ভিত্তি যাই হোকনা কেন এর আগমনের প্রধানতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষ এবং সমাজকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা । মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব বোধ সৃষ্টি , মানুষের মাঝে ব্যক্তিগত সততা ও মানবিক গুণাবলির বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্টা করা।
শ্রেণী বৈশম্যহীন একটি আদর্শ জীবন ব্যবস্হার স্বপ্ন দেখিয়ে ধর্মের আগমন ঘটে এই বিশ্বে অথচ দীর্ঘ সময় পরেও ধর্মগুলো সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে । তাই তারা এখন মানব চরিত্র গঠনের কাজ বাদ দিয়ে পরলোকের কাল্পনিক শাস্তির ভয় দেখিয়ে শত শত বছর ধরে মানুষ জাতিকে শাসন আর শোষণ করে যাচ্ছে ।

ধর্ম মানুষকে দিয়েছে শুধু আশ্বাস আর বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বিশ্বাস , বিশ্বাস নিজের প্রতি, বিশ্বাস ব্যক্তির প্রতি । তাইতো আমরা নির্ভয়ে বুক পেতে দেই একজন শৈল্য-চিকিৎসক এর ধারালো ছুরির নিচে কারণ আমি বিশ্বাস করি তিনি আমাকে শারিয়ে তুলবেন । আমরা নিশ্চিন্তে উড়োজাহাজের আসনে যেয়ে বসি কারণ আমরা বিশ্বাস করি এর নির্মানকারীদের এবং এর চালকদের, এরা আমাদের নিরাপদেই পৌছে দেবেন নির্ধারিত গন্তব্যে । ধর্মীয় জ্ঞান আজও এমন কিছু উপস্হাপন করতে পারেনি যা মনুষ্য চিন্তার বাহিরে আর বিজ্ঞান মানুষের কল্পনার জগৎকেও ছাড়িয়ে গেছে ।

প্রায় সব ধর্মেরই অন্যতম বিশ্বাস পুনরুত্থান দিবসের প্রতি কিন্তু ঈশ্বরের এর প্রয়োজন কেন এটি আমার বোধগম্য নয় ! যেখানে এক আদম এর কাছ থেকেই বিশ্বের সব মানুষের সৃষ্টি সেখানে রহিম, করিম, রাম, সাম হিসাবে মানবকে চিন্নিত করার ঈশ্বরের প্রয়োজন কী ? মানব জাতি যেখানে তার আকার আকৃতি, মেধা সব কিছুই উত্তরাধিকার সূত্রে আদম এর কাছ থেকেই প্রাপ্ত হয়েছে অনেকটা ফটোকপির মত । সে ক্ষেত্রে এক আদম কে বিচারের মুখোমুখি করলেই যেখানে চলে সে খানে বিশ্বের সকল মানব কে জড় করার আধো কোন প্রয়োজন আছে কি ?
মানুষ যা চোখে দেখে তা ধারন করে তার মগজ এবং অনুভব করে তার মন, আর এই মনই মানুষকে আদেশ নির্দেশ দিয়ে থাকে । অথচ মানব শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিই অদৃশ্য যা মানবকে নিয়ন্ত্রণ করে । যেখানে মানুষের নিয়ন্ত্রক তার অদৃশ্য মন যে মন তার স্রষ্টার নির্দেশে চলে, সেখানে মানুষ কেন তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী থাকবে আর কেনই বা তার বিচার করা হবে ? মহান ক্ষমতাবান ঈশ্বর যিনি হও বললেই সব কিছু হয়ে যায় সেখানে উনার কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সাহায্যকারির প্রয়োজন হওয়াটা এবং সভাসদ বেষ্টিত হয়ে থাকাটা একটু বিস্ময়কর নয় কি ?

এই বিশ্ব একদিন ধ্বংস হবে এটাই স্বাভাবিক কারণ সব কিছুরই ক্ষয় আছে নিদৃষ্ট সময়ের পর আমাদের এই ছায়াপথটাই ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে এক বিশাল ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে । তখন সেই নিকষ অন্ধকারেই কি চিরতরে হারিয়ে যাবেন না স্বয়ং ঈশ্বর ?

তাইতো পারস্যের বিখ্যাত কবি রুদাকী লিখেছিলেন “ তোমার অস্হিত্ব, তোমার অতীত, ভবিষৎ সবই এক নিদ্রার ঘোর । “

--------------

























সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১৬
৪৪টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×