মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের পাঁচ ও বিএনপির এক নেতার ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ ছাড়াও জাতিসঙ্ঘের অধীনে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক চুক্তিও (আইসিসিপিআর) লঙ্ঘিত হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের এক চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে । ওই ছয় নেতার বর্তমান অবস'ার প্রতিকার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে জাতিসঙ্ঘের চিঠিতে।
চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের জামিন আবেদন কেন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে সে মর্মে আইনি ব্যাখ্যাবিষয়ক কোনো তথ্য সরকারের পক্ষ থেকে জমা দেয়া হয়নি । বিচারের আগে দীর্ঘ দিন ধরে এসব রাজনৈতিক নেতাকে আটক রাখা এবং তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখাকে নিবর্তনমূলক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
জেনেভায় অবসি'ত জাতিসঙ্ঘ হাইকমিশন ফর হিউম্যান রাইটসের ওয়াকির্ং গ্রুপ অন আরবিট্রেরি ডিটেনশন থেকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী লন্ডনের টবি ক্যাডম্যানের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়। টবি ক্যাডম্যান ৭ ফেব্রুয়ারি চিঠি গ্রহণ করেন।
চিঠিতে বলা হয়, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের ওয়ার্কিং গ্রুপ মনে করে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মো: কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নিবর্তনমূলকভাবে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৯ নম্বর ধারা এবং আইসিসিপিআরের ৯ নম্বর ধারার পরিপন'ী এটি। ওই ছয় নেতার বর্তমান অবস'ার প্রতিকার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করা যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং আইসিসিপিআরের আলোকে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিচারের আগেই দীর্ঘ দিন ধরে আটক রাখা এবং আসামিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার অভিযোগ বিষয়ে সরকারের কাছে জানতে চেয়ে জাতিসঙ্ঘ কমিশন থেকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে (১২ সেপ্টেম্বর ২০১১) সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তারা এসব অভিযোগ খণ্ডনও করেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি, আসামিদের আইনি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের আইনজীবীদের সেখানে অংশ নিতে দেয়া হয়নি। তারা বাধাহীনভাবে প্রমাণাদিও সংগ্রহ করতে পারেনি। আসামি ও তার আইনজীবীদের তথ্য পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে এমনভাবে বাধা দেয়া হয়েছে যা বিনা বিচারে আটক রাখার বিষয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করছে। তথ্য পাওয়ার অধিকারে বাধা সৃষ্টি করার বিষয়টি জাতিসঙ্ঘের অধীনে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকারসম্পর্কিত চুক্তির (আইসিসিপিআর) ৯ (২) ও ৯ (৪) ধারা এবং আইনের সাধারণ নীতির পরিপন'ী।
বিচারের আগে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আটক রাখা হলেও এখনো তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী। এটি আইসিসিপিআর চুক্তির ৯ (২) এবং ৯ (৩) ধারার পরিপন'ী। এ বিষয়গুলো মেনে চলার ক্ষেত্রে অব্যাহত ব্যর্থতা বিষয়ে সরকার কোনো ব্যাখ্যাও দিচ্ছে না।
চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক যেসব আইন বাংলাদেশ মেনে চলবে বলে চুক্তি করেছে সেসবের বাধ্যবাধকতা অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের রোম সংবিধি অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুর মতো বিষয়ে সমাধানের ক্ষেত্রে এটি একটি আদর্শ হতে পারে। তা ছাড়া সাবেক যুগোশ্লাভিয়া, রুয়ান্ডা ও অন্যান্য অ্যাডহক আদালতের বিচারকার্যক্রমও এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
চিঠিতে মতামত প্রকাশ করে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ প্রমাণের আগেই গ্রেফতার একটি ব্যতিক্রম ঘটনা হতে পারে, এটি আইন নয়।
জাতিসঙ্ঘের চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের জামিন আবেদন কেন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে সে মর্মে আইনি ব্যাখ্যাবিষয়ক কোনো তথ্য সরকারের পক্ষ থেকে জমা দেয়া হয়নি। অথচ জামিনের ক্ষেত্রে সব শর্ত মেনে চলার অঙ্গীকারসহকারে দরখাস্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতিসঙ্ঘ হাইকমিশন ফর হিউম্যান রাইটস থেকে আটক জামায়াত এবং বিএনপির ছয়জন নেতার অবস'া বিস্তারিত জানতে চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে গত বছর ১২ সেপ্টম্বর। ৩৫ দফার দীর্ঘ ওই চিঠিতে এসব রাজনৈতিক ব্যক্তিকে দীর্ঘ দিন ধরে আটক রাখার আইনগত বৈধতা বিষয়েও ব্যাখ্যা দাবি করা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে এসব নেতাকে নিবর্তনমূলকভাবে বিচারের আগে দীর্ঘ দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে। নিবর্তনমূলক উপায়ে তাদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বরের ওই চিঠিতে।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন আরবিট্রেরি ডিটেনশন কার্যালয় থেকে জেনেভার বাংলাদেশের স'ায়ী মিশনের মাধ্যমে এ চিঠি পাঠানো হয় বাংলাদেশ সরকারের কাছে।
কমিশন ১১ নভেম্বরের মধ্যে এর জবাব পাঠাতে বলে সরকারকে। তবে সরকার এর মধ্যে সময় বাড়িয়ে নিয়েছে।
গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে বলা হয়েছিল উল্লিখিত আটক ব্যক্তিদের অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও আন্তর্জাতিক আইনের আংশিক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোপুরি লঙ্ঘন করা হয়েছে মর্মে কমিশনের কাছে অভিযোগ রয়েছে। আইনের সমালোচনা করে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এ আইনটি বাংলাদেশের সংবিধান এবং জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণারও কোনো কোনো ধারার পরিপন'ী। কমিশনের চিঠিতে সুনির্দিষ্টভাবে ৩৫টি দফা উল্লেখ করে তার জবাব জানতে চাওয়া হয়েছে।
সেই চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি সরকার অভিযোগের জবাব না দেয় তাহলে তারা তাদের নিজস্ব উপায়ে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে একটি মতামত গ্রহণ করবে। সে আলোকে আটক ছয় নেতার বিষয়ে জাতিসঙ্ঘ হাইকমিশন ফর হিউম্যান রাইটস অভিযুক্ত পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী টবি ক্যাডম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে তাদের মতামত জানিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক ৬ নেতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত- জাতিসংঘ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন