এইখানে পাবেন ১ম পর্বের ১ম অংশ
বাড়ির দরজায় হাত দিতেই কপাট খুলে বেড়িয়ে এল কিষাণের বাবা ফয়েজ আলী। সদা পান খাওয়া হাসি বিজরিত মুখ। কিষাণকে দেখে হাসি আরও প্রসারিত হল।
ফয়েজ আলী : আয় বাবা। কতখন তোর পথের দিক চাইয়া আছি। কেমুন আছস বাবা।
কিষাণ: আসসালামু আলাইকুম ।ভাল আছি আব্বা।তোমরা আছো কেমন? মা, মা কোথায়?মিতু?
মিতু কিষাণের ছোট বোন। কিষাণের থেকে ৭ বছরের ছোট।
ফয়েজ আলী: ওয়ালাইকুমুস্সালাম। এই তো বিতরেই আছে। কই হুনছ? কিষাণ আইছে। ও কিষাণের মা? মিতু?
এক ছুটে মিতু চলে আসে । ছোঁ মেরে কিষাণের হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে চিৎকার দেয়।
মিতু : ভাইয়া!! কেমুন আছ? মা আইজ সারাদিন ধইরা তুমার লাইগা পিডা বানাইছে। চাচীও আছে মার লগে। চাচা কত্তবার খোঁজ করে গেছে। আর চৈতালী বু.........
কিষাণের মা আয়শা বেগম হাত মুছতে মুছতে একগাল মিষ্টি হাসি নিয়ে বের হয়ে এলেন রান্না ঘর থেকে।
আয়শা বেগম : দেহ মাইয়ার কান্ড! পোলাডা কদ্দিন বাদে আইল। আর প্যাচাল লাগায় নিছে। বাজান! আইছ? কেমুন আছ তুমি?
কিষাণ: মা! আমি ভালই আছি তোমাদের দোয়ায়। তোমরা আছ ভাল? বাড়ির আর সব খবর ভাল?
আয়শা বেগম: হ বাজান। সব খবরই বালা। যাও পাক ঘরে তুমার চাচী পিডা বানায়। দেহা কর আর সালাম দিও। হ্যারপর হাত মুখ ধুইয়া লও। পরে কতা কইও। যাই আমি আর তুমার চাচী খাবার গরম কইরা বাইরা দেই অহন। ওই মিতু। ভাইরে সাবান আর তোয়ালে দে। যাও বাজান । তাড়াতাড়ি আইস। কিষাণের বাপ তুমি ছোড ভাইরে খবর দিয়া আন। কিষাণের সাথে এক সাতে খাইতে বস।
ফয়েজ আলী : হ তাই যাই কিষাণের মা।
মিতু: চল ভাইয়া। আমরাও যাই।
কিষাণ: আচ্ছা চল।
আয়শা বেগম: আর চৈতালীরেও আইতে কইও। পাগলীটারে তো আইজ বেশি দেখতাছিনা। ওরেও কইও আইজ এই হানেই খাইব।
একটা নতুন নকশি পাটিতে সবাই গোল হয়ে বসে রাতের খাবার খেতে বসেছে। কিষাণ, কিষাণের চাচা ওসমান আলী, কিষাণের বাবা। খাবার বেড়ে দিচ্ছেন কিষাণের মা আর চাচী শেফালী বেগম। একটু দূরে বসে আছে মিতু আর চৈতালী।
আয়শা বেগম : চৈতালী আর মিতু তোরাও বইয়া পর। দেরী কইরা লাব কি! আমি আর চৈতালীর মা পরে খামুনে।
ফয়েজ আলী : আরে আয় তো! সবাই এক সাতে খাওয়ার মজাই আলাদা। আয় মায়েরা।
চৈতালী: না চাচা আমরা মা আর চাচীর লগেই খামুনে।
কিষাণ: আপনাদের তো না খেলেও চলবে। খেয়ে দেয়ে তো মোটকু হয়ে গেছেন দুই জন।
মিটি মিটি হাসে কিষাণ।
মিতু: ভাইয়া তুমি চোক লাগাইও না। তুমি কম খাইতেছ নাকি । এত্তদিন পর মা আর চাচীর হাতের রান্না পাইয়া সবার খাওন একলই খাইতেছ দেহি। হুহ!
ভেংচি দেয় মিতু। চৈতালী বু! চল আমার ঘরে। তুমার সাথে অনেক গল্প আছে।
চৈতালী: চাচী! তোমার আদরের ছওয়ালরে পেট ভইরা খাওয়াও নইলে আমগো কিন্তু নজর লাগব।
আয়শা বেগম হাসে ।
শেফালী বেগম: আ্ইচ্ছা যা তোরা।
ওসমান আলী : ঢাকার সব খবর কি রে কিষাণ? বালা তো ?
কিষাণ: রাজনীতির খবর বেশী ভাল না চাচা। পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন খুব সুবিধার না । দিন দিন কেমন ভারী হয়ে উঠছে।
ফয়েজ আলী : হ! আমরাও ট্যার পাই। ছাত্ররা কি মিছিল টিছিল করে নাকি? তুই কইল ওই হানে যাইস না। আমগো মিছিল মিটিং এ কাম নাই।
কিষাণ: মাঝে মাঝে যাই আব্বা। খারাপ লাগে আমদের দেশের ভাগ্য দেখে। কেমন গোলামীর জিঞ্জির পরা। অথচ আমরা সংখ্যায় কত্ত বেশী।
ওসমান আলী : বাপের মন তো। ভাই হইল ডরায়। তুই সাবধানে থাকবি বাপ। যাওন লাগলে যাবি। তবে ঝামেলা দেখলে বাড়ি আইয়া পরবি। আমাগো অত সাহস দেখানোর দরকার কি।
আয়শা বেগম : কোন জায়গায় যাওনের কতা হইতাছে ছোড ভাই, মিছিলে? কোন দরকার নাই তুমি অইল তুমার বাপের একখান মাত্র পোলা। ঢাকা শহরে পড়তে গ্যাছো। পড়া হইলে চইলা আসবা। আইসা বাপের বুইড়া বয়সে হাতের লাঠি হইবা। কুনো ঝামেলায় জরাইবা না।
দ্যাশে যাই হোক।আজ কাইল পোলাপানের মতি গতির কুনো তাল নাই।
ফয়েজ আলী : গত বছর পাশের গ্রামের মাতব্বরের যে পোলাডা ঢাকায় পড়তে গিয়া মইরা গেল। তাই দেইখা তুমার মাও ডরাইছে বাজান।
আমারও এক একদিন রইতে ঘুম আহে না। তোমার মায়ে আমারে মাঝে মধ্যেই কয় তুমারে আর ঢাকায় না পাঠাইতে। তুমি গেরামে থাইকাই বা করবা কি অহন। কিন্তু আমারও কেমুন ডর করে। ঝামেলা দেখলে তুমি নিজ থাইক্কা চইলা আইস বাজান। এইডা আমার আর তুমার ময়ের অনুরোধ।
ওসমান আলী: হ! দ্যাহো। আবার দ্যাশের অবস্থা বালও হইয়া যাইতে পারে। তয় তুমি কোন দলের মিছিল আর মিটিং এ মইধ্যে যাইবা না। যদি বিশেষ কুনো কারণে যাওন লাগেই সেই কতা ভিন্ন।
কিষাণ: তোমরা এত্ত ভেবনা তো। মিছিল মিটিং এত ভয়ানক কিছু না। আর সরকার যদি লাইন মত সব চালায় এই সব ঠিকও হয়ে যেতে পারে। তবে রাজনীতি তো? বোঝা মুসকিল পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে । দোয়া করবে সবাই যেন দেশে একটা সুন্দর দিন আসে।
এতক্ষণে সবার খাওয়া শেষ হয়ে গেল। সবাই উঠবে। ফয়েজ আলী চুপ করে বসে কি ভাবছে। ওসমান আলী ডাকল।
ওসমান আলী: মিঞা ভাই? হাত ধুইলাম।
কিষাণ: আব্বা! আব্বা! উঠবা না।
চমকে ওঠে ফয়েজ আলী।সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে নড়ে চড়ে বসে।
ফয়েজ আলী: হ! আমার খাওয়াও তো শ্যাষ। আইচ্ছা হাত ধুইয়া ফালাও। ও কিষাণের মা। মাইয়া গো খাইতে ডাক দ্যাও ।
আয়শা বেগম : ওই চৈতালী আর মিতু আয় তাড়াতাড়ি। কত্ত রাত অইয়া গেল। ছোড বউ চলো আমরাও বইসা পরি।
শেফালী বেগম: আইচ্ছা ভাবী। দাড়ান আমি ওগো ডাইকা আনি।
চলে এসেছে চৈতালী আর মিতু।
মিতু: মা খাওন দাও। এত্ত খিদা লাগছে। চাচী আইজ চৈতালী বু থাকুক আমার সাতে?
চৈতালী: আরে না । আর এক দিন থাকুম নে। একলা যখন থাকস । আমি তো থাকি তোর লগে । থাকি না? আইজ তো তুই একলা না। ভাই আছে । ভাইয়ের লগে সুখ দুঃখের প্যাচাল পারবি।
আয়শা বেগম : থাক না চৈতালী। মিতু বায়না দিছে। গত বছরও তো কিষাণ আসলে তুই জোর করতি আমগো বাড়িত থাকার জইন্য। অহন কি বড় হইয়া গেছস। পাগলামী চইলা গেছে। হুম!
হা হা হা । হেসে উঠল সবাই। শুধু চৈতালী লজ্জায় লাল নীল হতে থাকল। চৈতালীর মা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন মেয়ের দিকে। তার চোখে যেন মেয়ের আরেক রূপ ধরা দিচ্ছে। মেয়ে টা আজকাল বদলে যাচ্ছে। তার মেয়েকে সে নিজেই কেন যেন মাঝে মধ্যে বুঝে উঠছে না।
Date: 31/1/13
Time:8:50 pm..
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




