somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হৃদয়ের অবগাহন ....written by Tania Hasan Khan (১ম পর্ব)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭০,২রা, এপ্রিল…….
বলাতলি, মানিকগঞ্জ।
পরন্ত বিকেল। চৈতালীর আজ মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে। ওর চাচার ছেলে কিষাণ আজকে ঢাকা থেকে আসছে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্র। সেই ছেটোবেলা থেকেই ওরা এক সাথে বেড়ে উঠেছে। প্রতিবার যখন কিষাণ গ্রামে আসে, চৈতালীর মন খামোখাই ছটফট করে। খামোখাই! কি জানি?... একা একা ভাবছে চৈতালী। আজকে সে আগে ভাগে বসষ্ট্যান্ডের কাছে এসে সইদের সাথে গল্প জুড়েছে। ওর সইদের কাউকেই ও বলেনি ..যে আজকে কিষাণ আসছে ঢাকা থেকে। সইদের জন্য নিয়ে এসেছে সদ্য গাছ থেকে পারা সতেজ পেয়ারা। গল্পের মাঝে বার বার তাকাচ্ছে পথের দিকে। বড় বড় বাসের হর্ণ শুনলেই ওর মনটা কেঁপে উঠছে। ওর সইদের নজরে পরে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই।

ময়নাঃ কিরে চৈতালী তুই বারে বারে পথের দিকে কি দ্যাহোস ? কারও আসার কথা আছে নি।

চৈতালীঃ নারে! কিছু না। লাল হয়ে গেল চৈতালীর মুখ। মাথা নিচু করে ফেলল…কেউ যেন না দেখতে পারে।

কলমিঃ হুম! বিষয়ডা জানি কেমুন কেমুন ঠেকতেছেরে…….।
চৈতালীঃ আরে নাহ! আমি সত্য কইতেছি। কে আর আইব? চল্ অহন বাড়ির দিক হাটি।

ময়নাঃ আর একটু থাক! আইজকা পরীক্ষা শ্যাষ অইল। ইস্কুলের আর পড়াশুনার ঝামেলা নাই .. কি করবি বাড়িত যাইয়া?

কলমিঃ হ! আর একটু থাহি..বাড়িত অহন কাম নাই আর। কি রে চৈতালী,…তোর কাম আছে?

চৈতালীঃ নাহ! আইচ্ছা তয় খাকি আর কতক্ষণ। ময়না তোরে না দ্যাখতে আসার কতা আসিল? কবে আইব?

ময়নাঃ জানিনা কবে আইব। বাজান মনে অয় কতা অহনো ফাইনাল করে নাই। তয় যহনই আইব লাভ নাইক্যা। আমি যামুনা সামনে। বাজানরে যে কেমনে কই? আমগো মাইয়্যাগো যে কেন অত তারাতারি বিয়া দিওনের জন্যে উইঠা পইরা লাগে আমার বুজ আহে না। দেহি মায়েরে কমুনে যে ..আমার আরও পড়ার ইচ্ছা আছিল। বাজানরে যদি এই কতাডা একটু কইত!

চৈতালীঃ থাউক আর মন খারাপ করিস না। দ্যাখ দেহি কি অয়।

এর মধ্যে কখন যে ঢাকা থেকে আসা বাসটি থেমেছে, আর কিষাণ বাস থেকে নেমে পরেছে কেউ খেয়াল করেনি। কিষাণই আগে চৈতালীকে দেখে ফেলল। সে ধীরে এগিয়ে গেল ওর দিকে।
কলমি হঠাত দেখে ফেলে চেচিয়ে ওঠে…….

কলমিঃ ওওওওওওওওওও….. এইডা অইল ঘটনা… ?

একথা শুনে চৈতালী ঘুরে তাকায়। কিষাণ! আসছে ওর দিকেই । ঠেটে একটা মিষ্টি হাসি। চৈতালী লজ্জা পেয়ে কলমিকে ইশারা করে। চুপ!

কিষাণ: কিরে চৈতালী কেমন আছিস? তুই কি করছিস এখানে?

চৈতালীঃ কিষাণ ভাই, বালো আছি। তুমি আছ বালো? আমি এইহানে আইছিলাম এক সইর বাড়িত দেহা করতে।

ফিক্ করে হেসে ফেলে ওর দুই সই। আর আড়ালে চোখ পাকিয়ে চৈতালী তাকায় সইদের দিকে।

কিষাণঃ তুই আমার সাথে শুদ্ধ করে কথা বলবি, এমনই কথা ছিল না?

চৈতালীঃ আচ্ছা। এখন থেকে চেষ্টা করুম।

ওই ময়না এখন তাইলে যাই। ভাল থাহিস! (নিজের মুখ নিজেই চেঁপে ধরে চৈতালী) ভাল থাকিস। চল ময়না! আমরা কিষাণ ভাইয়ের সাথে বাড়ির দিকে যাই।
দুষ্টু দুষ্টু হাসে ময়না আর কলমি। কলমি বলে ওঠে …

কলমিঃ আইচ্ছা তুই যা। আমি ময়নার লগে থাহি আর কিছুক্ষণ।

চৈতালীঃ থাক! তাইলে কালকে আবার দেখা হইব। বাড়িত আসিস পারলে।

মেঠো পথ ধরে এগিয়ে চলে ওরা দুইজন। পথের বাঁক ঘুরতে ঘুরতে কথা শুরু করে কিষাণ।

কিষাণঃ মা কেমন আছে রে চৈতালী? আর চাচী?

চৈতালীঃ বাড়ি চল সবাইকে দেখতে পারবা। মা আর চাচী তোমার জন্য পিঠা বানাচ্ছে। ইস! তুমি বড় কলেজে পড় আর ঢাকায় থাক দেইখা তোমার কত্ত দাম বাড়িত আর গেরামেও। সবাই তোমারে কত ভাল পায়।

কিষাণঃ হা হা হা! তোর হিংসা লাগে? আবারও সেই ভাষা? তুই চাস না সুন্দর করে কথা বলতে? তুই দেখতে এত্ত মিষ্টি ! আর ভাষা হইল তিতা।

চৈতালীঃ যাও! হিংসা কেন করব?

কিষাণঃ হা হা হা অনেক দিন পরে তোর লজ্জাবতী মুখ দেখলাম।

চৈতালী লজ্জা পেয়ে যায় হঠাত। ওর কিষাণকে এত ভাল লাগে। ছোট বেলায় ওরা এক সাথে কত খেলেছে, গল্প করেছে। কিষাণ ওকে কত যে খেয়াল রাখত। কোথাও গেলে ওর জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসত। আর শুধু বুদ্ধির পরীক্ষা নিত।

চৈতালীঃ তুমি কি কিছু ভুলে গেছ?

কিষাণঃ কি? কি ভুলে যাব?

চৈতালীঃ নাহ! কিছুনা।

কিষাণঃ ওহ! তোর জন্য .এই রে ভুলে গেছি তো! তুই একবার মনে করে দিবি না? এত্ত এত্ত চিঠি লিখিস। থাক! মন খারাপ করিস না। এর পরের বার নিয়ে আসব।

চৈতালীঃ না লাগব না। (মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল)

কিষাণঃ আরে মুখ দেখি পেঁচার মত হয়ে গেল..। এত্ত কাজের চাপ! পরীক্ষা দিতে দিতে তো খবর হয়ে যায়। এত কিছু কি আর মনে রাখতে পারি? (এই বরে মিট মিট করে হসে কিষাণ)

চৈতালীঃ একবার কইছিনা যে লাগব না। হুদাই বেশি প্যাচাল ভাল্লাগে না। আইচ্ছা অহন আম বাড়িত যাই। তুমিও যাও।

কিষাণঃ তোর রাগী মুখটাও এত সুন্দর কেন রে?
তুই এখন আমাদের বাড়িতে চল।রাতে সবাই একসাথে খাব। অনেক দিন পর। ভাবলে খুবি ভাল লাগছে। তুই তো বললি চাচীও আমাদের বাড়িতে। একসাথে ফিরিস।

চৈতালীঃ না না আমার একখান জরুরী কাম আছে। অক্ষণ মনে পড়ছে। আর বাড়িত কেই না থাকলে চলব?

কিষাণঃ হুম! অনেক বড় হয়ে গেছিস দেখি। আচ্ছা শোন। আর গাল ফুলিয়ে থাকতে হবে না। তুই কি ভাবিস আমি ভুলে যাব তোর কথা? কোন দিন হেয়েছে এমন? আমি তোর রাগী মুখটা দেখিনা প্রায় ৬ মাস! তাই একটু দেখার লোভ আর লুকাতে পারলাম না। পাগলী একটা! দে তো তোর হাত দুটো!

চৈতালী ঠোঁট উলটে একটু কি ভাবে। আচ্ছা কি আনছো?

কিষাণঃ লাল আর সবুজ রঙের রেশমি চুরি। আর এক জোড়া নূপুর। আর চিঠি লেখার একটা খাতা। তুই যে হারে লিখিস চিঠি চাচার তো কাগজ কিনতে কিনতে খবর হবার কথা।

চৈতালীঃ যাও! ভাল হইছে। আমার চুরি আর নূপুর দাও। খাতা পরে দিও । এখন তো আর লাগব না। তুমি তো এই খানেই আছ।

কিষাণঃ আচ্ছা দিব। তার আগে একটা কথা দে! তুই চাইলে অনেক সুন্দর করে কথা বলিস। কিন্তু বলিস না। এটা করা যাবে না। তোর রাগ মুখ আমার যেমন প্রিয় । তোর সুন্দর মুখের সুন্দর বুলিও অনেক প্রিয়। বল যে এখন থেকে বলবি?

চৈতালীঃ আচ্ছা বলব। এখন দাও তো। পরায়ে দাও।

কিষাণ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কোন দিন তো সে পরায় দিতে বলেনি। আজকে ওর হইছে কি? একটু বেশি দ্রুত বদলাচ্ছে! চিন্তার মাঝে ডুবে গেল মূহুর্তের জন্য কিষাণ। দেশের বর্তমান অবস্থার চিত্র ভেসে উঠে মনের ছবিতে। দেশও অস্খির। দেশের পরিস্থিতিও শুধু রহস্যের জাল বুনছে।

চৈতালীঃ কি হল? দিবানা? আচ্ছা আমি গেলাম।

কিষাণঃ আরে পাগলী কোথায় যাস? দাড়া! দিচ্ছি তো! এতো দেখি মহা পাগলী!

চৈতালী হাত বাড়িয়ে দিল কিষাণ চুরিগুলি চৈতালীর হাতে পরায় দিল। কি সুন্দর লাগছে। কিন্তু মুখে বলল……..

কিষাণঃ তুই আর একটু ফর্সা হলে বেশ লাগত!

চৈতালীঃ তুমি এমন করে বলতে পারলা? যাও! লাগবেনা আর নূপুর।

সে এক দৌড়ে ছুটে চলে গেল। কিষাণ ওর চলে যাওয়া পথে তাকিয়ে রিইল বিস্ময় নিয়ে। এ কোন চৈতালীকে সে দেখছে। মানুষ এত বদলে যায়? আর দেশ! দেশেরও তো অনেক বদল আসছে। এটাই কি সময়ের দাবী?

অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে কিষাণ নিজের বাড়িতে ঢুকে পড়ল।
........................................................................................

Date: 15/12/12
Time:10:16
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×