somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধের গোপন উপাখ্যান (১)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘৭১ সালের অক্টোবর মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এক চুক্তির মাধ্যমে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেললেন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে। এই চুক্তি গোপন চুক্তি নামে খ্যাত যা আজ পর্যন্ত দু’দেশের সরকার- বাংলাদেশ এবং ভারত, প্রকাশ করেনি।

চুক্তি শর্তগুলো হচ্ছে (১) যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে শুধু তারাই প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত রাখতে পারে। বাকীদের চাকুরীচ্যুত করা হবে এবং সেই শূন্যপদ পূরণ করবে ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। (২) বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্য বাংলাদেশে অবস্থান করবে (কতদিন অবস্থান করবে, তার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় না) ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাস থেকে আরম্ভ করে প্রতি বছর এ সম্পর্কে পুনরীক্ষণের জন্য দু’দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে । (৩) বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না, (৪) অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুক্তি বাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে (৫) সম্ভাব্য ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব দেবেন ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান, মুক্তিবাহিনী সর্বাধিনায়ক নন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়কত্বে থাকবে (৬) দু’দেশের বাণিজ্য হবে খোলা বাজার ভিত্তিক। তবে বাণিজ্যের পরিমাণ হিসাব হবে বছর ওয়ারী এবং যার যা পাওনা সেটা স্টালিংয়ে পরিশোধ করা হবে (৭) বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশ্নে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে এবং ভারত যদ্দুর পারে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে।’ (পৃষ্ঠা-৮১, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের’ এবং সিআইএ, মাসুদুল হক)

‘র’ এবং মুজিব বাহিনী
২৫ মার্চের পর শুধু যুদ্ধ প্রস্তুতিই নয়, যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্য যাতে বজায় থাকে, সে পরিকল্পনা রচনার প্রস্তুতি নেয় ভারত সরকার এবং পরিকল্পনা তৈরীর দায়িত্ব অর্পিত হয় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ -এর উপর। অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বাধীন বাঙালী যখন মরণপণ লড়াইয়ে লিপ্ত, মুক্তিবাহিনীর অকুতোভয় যোদ্ধারা যখন জীবন বাজি রেখে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কামান আর মেশিন গানের মুখোমুখি যুদ্ধরত, তখন ‘র’ অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের অজ্ঞাতে উত্তর ভারতের দেরাদুনের কাছাকাছি তানদুয়ায় গড়ে তুলতে থাকে তার নিজস্ব বাহিনী। সে বাহিনীর নাম মুজিব বাহিনী। (পৃষ্ঠা-৮৩, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের’ এবং সিআইএ, মাসুদুল হক

‘মুক্তিবাহিনীর এক বিরাট সংখ্যক সদস্য বামপন্থী চিন্তাধারায় সিক্ত। স্বাধীনতার পর এরা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে- এই চিন্তা থেকে এদেরকে নির্মূলের লক্ষ্যে প্রয়োজন হয়ে পড়ে একটি আজ্ঞাবহ বাহিনীর। আর সে বাহিনী গড়ে উঠবে শেখ মুজিব বাহিনী তৈরী করে ‘র’ যা করতে চেয়েছিল, কার্যক্ষেত্রে ঘটে যায় উল্টোটি। কারণ, খোদ মুজিব বাহিনীর ভেতরেই সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও বামপন্থী চিন্তাধারার অনুবর্তী ছিল শতকরা আশি ভাগ। (পৃষ্ঠা-৮৪, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের’ এবং সিআইএ, মাসুদুল হক)

যুবনেতা চতুষ্টয় চিত্তরঞ্জন সুতারের এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতেই তাজউদ্দিন আহমদের প্রধানমন্ত্রীত্বের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে যুদ্ধ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব তোলেন। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করবে যুদ্ধ কাউন্সিল। কেননা, তাদের মতে, মুক্তিবাহিনীতে ঢুকে যাচ্ছে এমন সব লোক যারা যুদ্ধে অনাগ্রহী এবং পাকিস্তানপন্থী। ‘প্রথম দলটি যার সংখ্যা ২৫০, তাদের ট্রেনিং দেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসাররা। ট্রেনিং শেষে এদের ভেতর থেকে ৮ জনকে করা হয় প্রশিক্ষক। হাসানুল হক ইনুকে করা হয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রধান। প্রশিক্ষকরা হলেন শরীফ নুরুল আম্বিয়া, আফম মাহবুবুল হক, রফিকুজ্জমান, মাসুদ আহমদ রুমী, সৈয়দ আহমদ ফারুক, তৌফিক আহমদ ও মোহন লাল সোম। পরে প্রশিক্ষকের সংখ্যা বাড়ান হয়। করা হয় বাহান্নো। এরাই বাকি দশ হাজার মুজিব বাহিনী সদস্যকে প্রশিক্ষণ দান করেন। ট্রেনিং প্রদান বন্ধ হয়ে যায় নভেম্বর ১৯৭১ সালের ২০ তারিখে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালনায় ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার আর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রধান হাসানুল হক ইনুর ওপরঅলা ছিলেন একজন কর্ণেল। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অন্যান্য ভারতীয় অফিসারদের মধ্যে ছিলেন মেজর মালহোত্রা। (পৃষ্ঠা-৮৬, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের’ এবং সিআইএ, মাসুদুল হক)

এবার আমরা আবদুর রাজ্জাকের ভাষ্যে আসতে পারি। দেখতে পাব সমাজতন্ত্রের প্রতি সিরাজুল আলম খানের বিশ্বস্ততার প্রশ্নে তার বক্তব্য। আবদুর রাজ্জাক বলেন : “ভারতে যতদিন ছিলেন যুদ্ধে তিনি (সিরাজুল আলম খান) তো যানইনি, কলকাতাতেই অধিকাংশ সময় ছিলেন। ওখানে তার যে ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন শিলিগুড়ির পাংগা ক্যাম্প,- তার ইনচার্জ ছিলেন মনিরুল ইসলাম ওরফে মার্শাল মণি এবং মান্নানকে দায়িত্ব দিয়ে কলকাতাতেই থাকতেন। কলকাতায় কোথায় কি করতেন, কাউকে জানতে দিতেন না। পারবর্তীকালে খবর পাওয়া গেল তিনি নকশালদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। (সোসালিস্ট ইউনিটি সেন্টার : নেতা শিবদাশ ঘোষ) সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ, যিনি দক্ষিণপন্থী লবির লোক, তার সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল সিরাজুল আলম খানের। মোটিভটা ধরা পড়েছে অনেক পরে- যখন আমরা দেখলাম পিটার কাস্টারর্সের সঙ্গে তার সংযোগ, তখন দেখলাম পশ্চিম বাংলার অতি বামপন্থীদের সঙ্গে তার যোগসূত্র রয়েছে, যাদের সঙ্গে ট্রটস্কাপন্থী আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্রীদের যোগাযোগম যারা সিআইএ অরগানাইজড। তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখা গেল পরবর্তীকালে। আমি তখন বুঝতে পারলাম তিনি একটা মটিভ নিয়ে কাজ করছেন। আর ট্রটস্কী লাইন সম্পর্কে আমার তো পরিষ্কার ধারণা আছে, এতো সিআইএ-র লাইন। (পৃষ্ঠা-৮৭-৮৮, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের’ এবং সিআইএ, মাসুদুল হক)

‘১৯৭১ সালের মে মাসের ২৯ তারিখে তানদুয়ায় মুজিব বাহিনীর ট্রেনিং শুরু হলেও অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার এর অস্তিত্বের খবর জানতে পায় আগস্ট মাসে। এ মাস হতেই সীমান্তে মুক্তিবাহিনী কমান্ড ও ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী কমান্ডের অগোচরে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুজিববাহিনী সদস্যরা বাংলাদেশ অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে শুরু করে। কিন্তু বিভিন্ন সেক্টর মুক্তিবাহিনী কমান্ড ও ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তারা ধরা পড়ে। প্রয়াত মুক্তিবাহিনী কমান্ডার মেজর জলিলের বাহিনীর সেক্টরে মুক্তি বাহিনী সদস্যদের হাতে ধরা পড়ে বাইশ জন মুজিববাহিনী সদস্য। ১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে আমাকে দেয়া টেপকৃত এক ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারে মেজর জলিল বলেন : “আমার সেক্টরাধীন হিঙ্গেলগঞ্জের ফিল্ডে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তারা বাইশজনকে গ্রেফতার করেন। তারা তখন ভেতরে প্রবেশ করছিল। সেখানে তাদের চ্যালেঞ্জ করা হয়। এক ভদ্রলোক নিজেকে ক্যাপ্টন জিকু বলে পরিচয় দেন। তাকেও গ্রেফতার করা হয়। (পৃষ্ঠা-৮৯, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের’ এবং সিআইএ, মাসুদুল হক)

আগস্ট মাসে মুজিব বাহিনীর ট্রেনিংপ্রাপ্ত সদস্যরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা শুরু করলেও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে নামার কোন পরিকল্পনা তাদের ছিল না। দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা নিয়ে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আব্দুর রাজ্জাক ও হাসানুল হক ইনু আমাকে বলেছেন যে, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা ধাপে ধাপে এগোবার পরিকল্পনা নেন। এই উদ্দেশ্যে প্রতিটি থানায় একজন করে কমান্ডারের অধীনে দশ জন ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুজিব বাহিনী সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমান্ড গঠন করা হয়। তাছাড়া ছিল একজন রাজনৈতিক কমান্ডার। রাজনৈতিক মটিভেশন প্রদানই ছিল তার কাজ। একই পদ্ধতিতে গঠন করা হয় জেলা কমান্ড। জেলাতেও ছিল রাজনৈতিক কমান্ডার। থানা কমান্ড ও জেলা কমান্ড গঠন হলেও যুদ্ধ বলতে যা বোঝায় তা করেনি মুজিব বাহিনীর সদস্যরা। তারা যা করে, সেটা আমরা জানতে পাব আব্দুর রাজ্জাকের মুখ থেকে : “আমরা জনগণের সঙ্গে মিলে যুদ্ধ করছি। কিছু কিছু রাজাকারও খতম হচ্ছে। কিন্তু মূল জায়গাটা মানে পাক আর্মির সামনে না পড়লে যুদ্ধ করছি না। দু’চার জায়গায় সামনে পড়ে গেছি- যুদ্ধ হয়েছে। আমরা তো লড়াই শুরু করেনি। আমাদের তো পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। পাঁচ বছরের প্রথম বছরে কি করবো, তৃতীয় এবং চতুর্থ বছরে কি করবো তারপর সরকার তৈরী করবো, - এই ছিল আমাদের সামগ্রিক পরিকল্পনা। আমরা যদি সফল হতাম তাহলে কোন ঘাস থাকতো না, আগাছা থাকতো না। সমাজ দেহ থেকে আগাছা উপড়ে ফেলতাম। প্রতিবিপ্লবীদের থাকতে হতো না। হয় মটিভেট হয়ে এদিকে আসতে হতো নইলে নিশ্চিহ্ন হতে হতো। (পৃষ্ঠা : ৯০)


১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (Director of Intelligence Bureau : D.I.B) জানতে পায় যে, কলকাতার ভবানীপুর এলাকার একটি বাড়ীতে, যা ছিল ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দ সংস্থার অপারেশনাল সদর দপ্তর। সেখানে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে একটি গোপন সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। তার উদ্দেশ্য, পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে পরিণত করা। পাকিন্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এও জানতে পায় যে, চিত্তরঞ্জন সুতার ও কালিদাস বৈদ্য নামক দুই পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে এই গোপন সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে। তাদেরকে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট মনে করতো। গোয়েন্দা সংস্থা আরো জানতে পারে, স্বাধীন বাংলা বিপ্লব নামক সংগঠনটি সংখ্যালঘিষ্ঠ এলাকায় বিশেষ করে ফরিদপুরের সংখ্যালঘিষ্ঠ অঞ্চলে তৎপর রয়েছে। ছাত্রদের মধ্যে ওই সংগঠনটি কিভাবে এবং কি কারণে জড়িত ছিল, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেটা আবিষ্কার করতে পারেনি। (পৃষ্ঠা-১৯, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এবং সিআইএ, মাসুদুল হক)

ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা পয়তাল্লিশ জন। সংখ্যাগুরু অংশ ছত্রিশ জন ছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য। এরা সবাই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। বাকি ৯ জন এদের মধ্যে ছিলেণ নূরে আলম সিদ্দিকী, আবদুল কুদ্দুস মাখন, শেখ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। এরা ছিলেন শেফ ফজলুল হক মনির কট্টর অনুসারী।

শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের অভিনন্দন জানায় দক্ষিণপন্থী দলগুলোও। কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের দাবী অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত এবং পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে তা গ্রহণ করতে হবে। পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম অনতিবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানান এবং বলেন, “এভাবেই বর্তমান সঙ্কট থেকে জাতির উত্তরণ ঘটতে পারে”। পাকিস্তান জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নিদ্দিকী আহমদ বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের চার দফা দাবী মেনে নিয়ে তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়েই বর্তমান সঙ্কট সমাধান সম্ভব। এর আগে ৪ মার্চ পাকিস্তান তেহরিকে ইশতেকলাল পার্টি প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খালন বলেন : “যদি এরপরও বর্তমান শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তাহলে পূর্ব পাকিস্তানিদের সমর্থনে আমি আন্দোলন শুরু করব। -- তিনি বলেন, শেখ মুজিবর রহমানকে সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের ছয় দফায় খারাপ কিছু নেই। (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা : ৬৯৬)

এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ সালের এই পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিরই (মনি সিং) নেয়া এক রাজনৈতিক প্রস্তাবের ৩ নম্বর প্রস্তাবে মাওলানা ভাসানী এবং স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে বলা হয়, “অন্যদিকে কিছু উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদী তথাকথিত স্বাধীন পূর্ব বাংলার নামে অবাঙালী বিরোধী জিগির তুলিয়া এবং মাওলানা ভাসানী স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের আওয়াজ তুলিয়া জনগণের মনে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ বিরোধী মনোভাব গড়িয়া তুলিয়া অবস্থা আরো জটিল ও ঘোরালো করিয়া তুলিয়াছে।” ---- এবং ঐ রাজনৈতিক প্রস্তাবের ৫ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়, “এই সংগ্রামের সফলতার জন্য উগ্র বাঙালী জাতীয়তাবাদের অবাঙালী জনগণ বিরোধী এবং মাওলানা ভাসানীর পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ বিরোধী জিগিরের মুখোশও আমাদের খুলিয়া দিতে হইবে। (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা : ৬৫৪)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×