কড়কড়ে রোদ উঠেছে। এরকম রোদে বাবুকে নিয়ে ছাদে আসা উচিত হয়নি। আবার বাসায় একাও তো রেখে আসা যায়না, কাপড় শুকাতে যাওয়াটাও এখন ঝক্কি মনে হচ্ছে। আচ্ছা, আমি শুয়ে আছি কেন ছাদে?? বাবুর হামাগুড়ি দেবার বয়স হয়ে গেছে, দেখা যাবে হামা দিতে দিতে ছাদের কিনারে চলে যাবে। মানুষটাকে কতোবার করে বললাম রেলিং ছাড়া ছাদওয়ালা বাড়ি ভাড়া নিও না, কে কার কথা শুনে! ঠিক যা আন্দাজ করেছিলাম, বাবু হামা দিতে দিতে ছাদের কিনারে চলে গেছে...আমি দৌড়ে উঠতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারছি না। বাবু হামা দিয়ে কিনারার দিকে চলে যাচ্ছে। চিৎকার করে ডাকছি...বাবু, বাবু,...আর কোনো নামও তো মনে পড়ছে না...বাবু আমার ফিরেও তাকাচ্ছে না...কি নামে ডাকবো...ছাদের কিনারায় চলে গেছে বাবু...আমার ডাক শুনছে না...আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, আমি উঠতে পারছি না, দৃষ্টিও ঝাপ্সা হয়ে আসছে...
কাঁদতে কাঁদতেই স্বপ্ন ভাংলো। চোখের পানি মুছে নিলাম। আজ প্রথম না, ঠিক একই স্বপ্ন গত কয়েক রাতের সঙ্গী। ওকে বললেই বলবে, এই সময় এতো দুশ্চিন্তা করো কেন? এই যে, পুরো রাতটা এখন ঘুমহীন কাটবে, আর মানুষটা পাশে শুয়ে মজা করে ঘুমাচ্ছে। কেমন অঘোরে ঘুমাচ্ছে...দেখে মায়া লাগছে। নাক ডাকছে না। এই জিনিষটা আমার অন্যরকম লাগে। বাবা, বড় ভাইয়া এমনই নাক ডাকা ডাকতো,পাড়ার অন্য বাড়ির মানুষেরও মনে হয় ঘুমাতে কষ্ট হতো। আবার আমি কিংবা মা কিংবা ছুটকীটা পুরা নিঃশব্দে ঘুমাতাম। কিশোরী মনে তখনই ঢুকে গেছে যে পুরুষ হলেই নাক ডাকতে হবে। মানুষটা কেমন নিঃশব্দে ঘুমাচ্ছে...নাকটা চেপে ধরে দেখি নাক ডাকে কিনা। ঘুমটাও ভেঙ্গে যেতে পারে...গেলে যাবে। আমি নির্ঘুম রাত একা কাটাবো কেন??
নাকটা চেপে ধরতেই লাফ দিয়ে উঠল ও...কিছুটা ক্যাবলার মতো হয়ে গেল। বললো,"কি হয়েছে?" বলেই আবার চারদিকে কি যেন খুঁজছে। আমার তো হাসি পাচ্ছে। ও কি ভেবেছে ঘরে চোর ঢুকে ওর নাক চেপে ধরেছে?
আমি হাসতে হাসতে বললাম, "কই...কিছু হয়নি তো।" এইবার ও একটু অবাক সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছে, ভাবছে পাগল হয়ে যাইনি তো। আমার মজাই লাগছে।
আমি স্বাভাবিক গলায় বললাম, "ওই স্বপ্নটা আবার দেখেছি, আর ঘুমাতে পারছি না।"
" ওই জন্যে কি আমার নাক চিপে ধরা?"-একটা ভুরু উচিয়ে মজার ভঙ্গিতে তাকালো ও।
আমিও বিজ্ঞের মতো করে বললাম, "হুমম।"
আমি আঙ্গুলে শাড়ি প্যাচাতে লাগলাম , চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি বেচারা ঘুম ঘুম চোখে হাই তুলছে, আমার দেখেই খারাপ লাগছে, কাল সকাল থেকেই আবার অফিস, আবার হাড়-ভাঙ্গা খাটুনি। মাঝখান দিয়ে আমি ঘুম ভাঙ্গালাম।
নীরবতা ভাংতে আমিই কথা শুরু করলাম, "এ্যাই শোনো, আমাদের বাবুর একটা নাম রাখতে হবে।" ও তো অবাক, আমি ওকে প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই বললাম,"প্রতিরাতে স্বপ্নে বাবুকে ডাকতে থাকি, শুনতেই পায় না...", আমার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল কেমন করে যেন গড়িয়ে পড়ল।
ও হাসতে হাসতে বললো,"ছেলে না মেয়ে তা-ই তো জানো না, কি নাম রাখবা?"
"কেন? অনেক নামই তো আছে,ছেলে-মেয়ে দুজনেরই হয়, সেরকম কিছু একটা রাখবো।"
"নাহ, এইসব নাম ভালো লাগে না, তোমার যদি খুব ইচ্ছা হয়, তাহলে আসো দুইটা নাম রাখি, ছেলের নাম আর মেয়ের নাম, তুমি স্বপ্নে দুই নামে ডাকার সময় পাবে তো?"
আমি এবার একটু বিরক্ত চোখে তাকালাম। ও আবার চুপ মেরে গেলো। আবারো নীরবতা। বেচারা মজা করছিল, কেন যে বিরক্ত হতে গেলাম!!
অপরাধবোধ থেকেই জিজ্ঞাসা করলাম, "চা খাবে?", যদিও জানি ও চা-টা তেমন খায় না।
ও চুপ করে মাথা নাড়লো। সাথে সাথে বললো,"এখন কি ঘুমাতে যাবো মহারানী??"
আমি হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়লাম। আমার দিকে তাকিয়েই ও ফিক করে হেসে দিল। তারপরে বললো, "অনেকদিন রাত জাগা হয় না, না?"
"আমি তো প্রতি রাতেই জাগি, তোমার জাগা হয় না আর কি!!"
"মাঝে মাঝে এভাবে খুনের অ্যাটেম্প্ট নিতে পারো ঘুম ভাঙ্গানোর জন্যে, তাহলে যদি রাত জাগা হয় তোমার সাথে..."হাসতে হাসতে বললো।
"থাক, তুমি ঘুমাও, রাত আর জাগতে হবে না।"
"রাত তো প্রায় শেষ, আর কি ঘুমাবো...বরং তুমি একটা গান শুনাও।"
"হুমম...আর কাজ নাই, রাত-বিরেতে উনাকে এখন গান শুনাই"
"কেন, আগে রাত জাগতে না নাকি গান শুনাতে না??"
"আগের কাহিনী মনে করতে করতে ঘুম দাও, প্যাচাল পাড়তে হবে না"
"আরে কি আশ্চর্য...আমাকে জাগিয়ে এখন ঘুম দাও ঘুম দাও শুরু করেছে!! "
আমি হেসে দিলাম, জিজ্ঞাসা করলাম,"তাহলে কি আজ আর ঘুমাবে না?"
ও দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো, "নাহ...রাত্রি তো প্রায় শেষ, চলো আগের মতো রাতভর গল্প করি।"
"হ্যাঁ চলো গল্প করি ",আমিও সাথে সাথে জবাব দিলাম- "কিন্তু মাত্রই তো রাত্রি শেষ বললে ,তাই না?? তাইলে আর রাতভর গল্প কি?? গল্প বাদ দিয়ে চলো ঝগড়া করি।"
"আরিব্বাপ!! তোমার মতো ঝগড়াটে মেয়ে তো এই জীবনে একটাও দেখিনি!!"
"দেখবেও না..."
.... .... ....
..... ........ ...........
রাত প্রায় শেষ হয়ে আসছে , রাত্রি শেষের কাব্য কি শেষ না হয়ে পারে?
রাতের শেষে ভর দুপুরের কাব্য
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





