somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুনিয়ার সুর- সুরের দুনিয়া

০৯ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি একজন অতিমাত্রায় সংগীতভক্ত। নিতান্ত একটা ঝোঁক থেকে শোনা শুরু করেছিলাম। তবে দিনে দিনে তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, এখন সেটা রীতিমত অবসেশনের মতো হয়ে গেছে। এটাও কম বেশি সবাই টের পাবেন আমার পোস্টগুলো দেখলে

আমি মূলত একজন ডাইহার্ড রক মিউজিক ফ্যান। একটা সময় অনেক রক মিউজিক শুনেছি, এখনো শুনে যাচ্ছি, ভবিষ্যতেও শুনতেই থাকবো। তবে এখন ক্লাসিক্যাল মিউজিক শোনার প্রতি একটা ঝোঁক এসেছে। ক্লাসিক্যাল মিউজিক শুনতে গেলে প্রথমেই ইউরোপিয়ান ক্লাসিক্যাল মিউজিক শুনতে হয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন যে উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ কিংবা পন্ডিত রবিশংকরের নাম শোনার আগে কানে আসে Mozart কিংবা Beethoven এর নাম। তবে যারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে গান শেখেন তারা অবশ্য আগে দেশীয় রাগসংগীত সম্পর্কে ভালোই ধারণা রাখেন। আমি কোন সংগীতজ্ঞ নই, একজন সংগীতভক্ত মাত্র, কাজেই আমার এগুলো জানা ছিলো না। যাই হোক শুনতে শুনতে শ্রোতা হয়েছি।


ইন্টারনেট এবং আমার নিজের আগ্রহের কারণে কিছুদিনের মধ্যে বহু ক্লাসিক্যাল পীস শোনা হয়েছে। তা শুধু ইউরোপিয়ান ক্লাসিক্যাল নয়, ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতও।তা থেকেই আমার এই নোটের সূত্রপাত।

ইস্টার্ণ এবং ওয়েস্টার্ণ ক্লাসিক্যাল এর মধ্যকার গুণগত পার্থক্য নিতান্ত নবীশ শ্রোতার কানেও ধরা পড়বে। একটা অনেকবেশি যন্ত্রসংগীতনির্ভর আরেকটা বেশিরভাগই কন্ঠনির্ভর। আগে থেকে শোনা না থাকলে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত শুনতে বিড়ালের মিও মিও মনে হতে পারে! সে তুলনায় ইউরোপীয় মিউজিকে ঝংকার অনেক বেশি লক্ষ্যনীয়। এখানে অবশ্য যুক্তিসংগত কারণ আছে, আমাদের স্ট্রাকচারাল মিউজিক যা শোনা হয়, তার বেশিরভাগই ইউরোপীয় ধাঁচের, যেখানে হারমোনির প্রাধান্য বেশি। সে কারণে একটা নোটের ফ্রিকোয়েন্সি বা অক্টেভ পরিবর্তন হলে সেটা কানে লাগে। পরিবর্তনটা সহজে ধরে ফেলা যায়।মোদ্দাকথা আমাদের কান তৈরী হয় ইউরোপীয় ধাঁচের গান শুনে (এমনকি রবীন্দ্র সংগীতের সুরে স্কটিশ সুরের লক্ষ্যনীয় প্রভাব আছে- সদিও সেটা আলাদা Genre এখানে বিবেচ্য নয়)

অন্যদিকে প্রাচ্যের উচ্চাঙ্গ সংগীতে মেলোডি নির্ভর, এখানেও বাঁধাধরা হিসাব আছে , তবে সুরের পরিবর্তন বেশ কোমল তাই সহজে সুরের উঠানামা ধরতে পারা যায় না। সে কারণে অনেকের কাছে একঘেয়ে মনে হয়।

একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠতে পারে যে ইউরোপীয় ধ্রুপদী সংগীত কেন বেশি যন্ত্রনির্ভর আর উপমহাদেশীয় ধ্রুপদী সংগীত কেন কন্ঠনির্ভর?
এমনকি বিতর্কও উঠতে পারে যে ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতে যন্ত্রের যথেষ্ট প্রাধান্য রয়েছে, নইলে সেতার , সরোদ, সুরবাহার এসব যন্ত্রের লিজেন্ডারী বাদকদের কথা কেউ জানতে পারতো না। এক্ষেত্রে আমি সবিনয়ে বলবো যে এরা সবাই কালোত্তীর্ণ শিল্পী, কিন্তু ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত প্রথমত কন্ঠনির্ভর।পরে বাদ্যযন্ত্রগুলো তার মুকুটে আরো ঝলমলে রত্ন যোগ করেছে।

কেন? এ প্রসঙ্গে চিন্তা করতে গিয়ে আমি আমার বন্ধু সৈয়দ রাফাতের সাথে আড্ডার কথা মনে পড়ে গেলো। আমার ধারণা ধ্রুপদী সংগীতের এই দুই ধারার ক্রমবিকাশের পেছনে এলাকা, জনসাধারণ, সংস্কৃতি যতটা প্রভাব রেখেছে, ঠিক ততটাই প্রভাব রেখেছে তৎকালীন আর্থসামাজিক অবস্থা, প্রযুক্তি এবং সভ্যতা।

ইউরোপে আমাদের পূর্বে শিল্পোন্নত হয়েছে। তারা ধাতুর ব্যবহার জানতো বহু আগে থেকেই , ধাতুর সহজলভ্যতাও বেশি ছিলো। একারণে বেশিরভাগ ইউরোপীয় বাদ্যযন্ত্র ধাতবনির্ভর । উদাহরণস্বরূপ পিয়ানো বা অর্গানের কথা বলা যেতে পারে, তাছাড়া Stringed Instruments যেগুলো আছে যেমন Violin,Guitar, Cello, কিংবা অন্যান্য যেমন Crash Cymbal কিংবা Brass Horn সব গুলোর নির্মাণেই ধাতুর ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। কাজেই ইউরোপীয় সংগীতে যন্ত্রের ব্যবহারের একটা ভালো সুযোগ ছিল। সেকারণে সলো পারফরমেন্সের পাশাপাশি অর্কেস্ট্রা'র বিকাশ বেশি ঘটেছে।

অপরদিকে যদি ভারতীয় উপমহাদেশের কথা চিন্তা করি, এখানে শিল্পবিপ্লবের বিকাশ হয়েছে অনেক পরে। ধাতু খুব একটা সহজলভ্য ছিল না। যা পাওয়া যেত তা আসবাবপত্র কিংবা অস্ত্রশস্ত্রের তৈরীর জন্যই বেশি ব্যবহৃত হতো।
কাজেই এখানে গানের বিকাশ হয়েছে কোন Man Made Instrument নয় ; The Ultimate Musical Instrument যাকে বলা হয় সেই গলার স্বর দিয়ে ! এবং তার সাথে সংগত করা হত বাঁশি এবং মৃদঙ্গ বা তবলা দিয়ে , লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে দুটোর একটাও কিন্তু ধাতব নয়! আধুনিক কালে আমরা যা শুনি যেমন সেতার , সরোদ, সুরবাহার , সারঙ্গী এগুলো অনেক পরে এসেছে; যখন মধ্যযুগে ভারতে মুসলমান শাসনের সূচনার পর। তার আগে মূলত গলার সুর, বাঁশরী এবং তবলাই ছিল সুর, তাল এবং লয়ের প্রধান উপকরণ। রাগ সংগীতের প্রধান প্রধান পরিচিত রাগগুলোর বিকাশ তখনি ঘটেছে। তারপর বহু মেধাবী এবং প্রতিভাশালী সংগীতজ্ঞ এসেছেন যারা নিজেদের গুণে নতুন বাদ্যযন্ত্রগুলোকে অনন্য করে তুলেছেন। এখানে অবশ্য একটা ব্যতিক্রম আছে , সেটা হলো বীণা। যা কিনা প্রাচীন যুগ থেকেই ইন্ডিয়ান মিথোলজিতে সুপরিচিত বাদ্যযন্ত্র।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভারতীয় যন্ত্রসংগীত কি তাহলে শুধুই কন্ঠনির্ভর? মোটেই না, পন্ডিত রবিশংকর কিংবা উস্তাদ বিলায়েত খাঁ'র সেতার কিংবা উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'র সরোদ শুনলে একটা অপার্থিব অনুভুতি হবেই। যাকে বলা যেতে পারে Ethereal! এরকম অনেক যন্ত্রসংগীতের Maestro আছেন যাদের কথা আমি জানি না। অনেকে হয়তো জানতেও পারেন।

একই কথা খাটে ইউরোপীয়ান ক্লাসিক্যাল মিউজিকের বেলায়ও। Mozart, Beethoven, Bach এদের গান যেকোন সময় মুড বদলে দিতে পারে। খালি পটভূমিটা ভিন্ন।

একজন শ্রোতা হিসেবে এগুলো আমার ব্যক্তিগত ধারণা। সবার মতামত জানতে চাই।

এখানে দুইটা স্যাম্পল দিলাম, দুটোই ইন্সট্রুমেন্টাল.......

Eastern Classical:http://www.youtube.com/watch?v=tyRILW6nHSY' target='_blank' >রাগ হংসধ্বনি
Western Classical: ভায়োলিন কনসার্টো ইন এ মাইনর
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×