বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে নানা শ্রেনীর নানা মুনীদের অজ্ঞ-বিজ্ঞ অভমিত আছে।অনেকেই বলে থাকেন,স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরে ইহা নিসঃপ্রয়োজন। কেউ কেউ আবার বলে থাকেন,ইহার কোনকিছুই ঠিক নাই।
আমি ধরেই নিলাম,ওনার সঠিক বলছেন।
১৪৭৪ সালের রোমান সাম্রাজ্যের ’এড হক’ ট্রাইব্যুনাল নিয়েও এমন অভিযোগ ছিল।এধরনের অপরাধ বিচারের জন্য এটাই ছিল প্রথম ট্রাইব্যুনাল।ভন হ্যাজনেব্যাচ অপরাধী প্রমানিত হয়ছেলিনে এবং ভদ্র লোকটির গর্দান কাঁটা গিয়েছিলো।
এর প্রায় সাড়ে পাচঁশত বছর পরে বাংলাদেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে তদ্রূপ অভিযোগ,ইহা নিরপক্ষে নয়। প্রথম দিক্কায় দেশীয় কন্ঠগুলো আওয়াজ তুললো,অতঃপর দূরান্তের।১৯৬৯ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে আইনি সহায়তা প্রদানকারী আইনজীবি ব্রিটিশ লর্ড কার্লাইল যখন এ রায় প্রত্যাখান করে বিবৃতি দেন,তখন হতবাক হতে হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ন্যুরেমর্বাগ ট্রাইব্যুনালে অক্ষশক্তি’র যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল। মিত্রশক্তির কাউকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়েছে বা সাজা পেতে হয়েছে,শুনিনি। তার মানে,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির কেউ যুদ্ধাপরাধ করেননি? রাম যদি হেরে যেতো আর রাবণ যদি দেবতা হতো, তবেই কার রথ স্বর্গে পৌছাল জানা যেতো।
“The Lost Battalion” নামক মুভিতে একজন জার্মান জেনারেলের যে ভূমিকা দেখলাম,তাতে এটা বিশ্বাস করতে কষ্টহয় যে,তারা সবাই যুদ্ধাপরাধ করতে পার।যাই হাকে,দু-একজন দিয়ে তাে আর সবাইকে পরমিাপ করা যায় না।তদুপরি,ওটা সিনেমা (ইতিহাস নির্ভর এবং হলিউড নির্মীত)।
”বিদেশী হোক সে হারাম,তবু রুচিকর”-এটা আমাদের বদ্ধমুল বিশ্বাস। ২৫ র্মাচ ২০১০ প্রথম ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রাক্কালে, যদু হোক কিংবা মদুই হোক, একজন বিনদেশী বিচারপতি যদি নিয়োগ করা হতো- তবে আমাদের পেট না ভরলেও গলাটা অবশ্যই ভিজতো। যেন নিদেনপক্ষে একজন বিদশী নিয়োগ,নিরপেক্ষতার স্বাক্ষর।
এতো গেল আমাদের একধরণের বন্দিত্বের বিষয়। এবার অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক।
”অপারেশন র্সাচ লাইট” কে সমর্থনকারী কিছু বাঙালী এখনও বলে বেড়ান ৭১’এ কোন মতেই তিন মিলিয়ন শহীদ বা নির্যাতিত হননি। তাদের কাছে আমার সবিনয় প্রশ্ন, তাহলে সঠিক সংখ্যাটা কত? এবং এর সূত্রই বা কি?
বাংলাদেশের স্বাধীনতাত্তোর সরকার সমূহ জনগণের নানা অধিকার নিয়ে অবহেলা করতে থাকায়,জনগণের সাথে সরকারের সম্পর্ক দাড়িয়েছে এখন শুধুই অবিশ্বাসের। যার প্রভাব জাতিসত্তার মতো গূরুত্বর্পূণ বিষয়গুলোতেও আছড়ে পড়ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি জনপ্রিয়তা হারায় তবে তা জনগণ-সরকার বাইল্যাটারাল সর্ম্পক না থাকার জন্য হারাবে।আর তার দায়? সরকারের। মোদ্দাকথা,জনগণকে যথেষ্ট দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়তে না পারার দায় সরকারসমূহের। মৌলিক অধিকারসমূহ নিয়ে যুদ্ধরত এবং অধিকার বঞ্চিত একটা দেশের জনগণকে অল্পতেই ভিন্ন পথে পরিচালনা করা যায়। বিরোধীরা এ সুযোগ হাতছাড়া করার মতো নির্বোধ নয়। তাছাড়া,কোন সরকারই জনগণকে তাে নয়ই, এমনকি তার কর্মী বাহিনীকেও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলশ্রুতিতে, দেশের অাপামর জনতা অনেক ক্ষেত্রেই বিভ্রান্ত হচ্ছে,কখনও কখনও দ্বিধাবিভক্তও বটে।
অামরা অন্তত, এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরসূরী তৈরী হওয়ার মতো নজীরবিহীন ঘটনার মুখোমুখি হতে চাইনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৭