somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২ অক্টোবরঃ জাতীয় পথশিশু দিবস আজ, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে পথশিশুদের মূল্যায়ন করতে হবে যত্নসহকারে

০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২ অক্টোবর, জাতীয় পথশিশু দিবস আজ। দেশের পথশিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছর আমাদের দেশে পালিত হয় এই দিবস। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। মায়ের কোল হলো তাদের নিরাপদ আশ্রয়। ক্ষুধার জ্বালায় মায়ের কোল ছেড়ে শিশুরা যখন মা-বাবার ঘর ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়ায় তখনই তাদের পরিচয় হয় পথশিশু। অবহেলিত শব্দটি পথশিশুদের জীবনের সঙ্গে যেন কোনো না কোনোভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে তারা বিভিন্ন ধরনের অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার। রাস্তাঘাটে এক টাকা-দুই টাকার জন্য তারা পথচারীকে অনুরোধ করে নানাভাবে। কেউ কেউ আবার কাগজ কুড়ায়। তীব্র শীতের মধ্যেও তাদের প্রায়ই গরম কাপড় ছাড়া দেখা যায়, যা অমানবিক ও দুঃখজনক। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার পথশিশু রয়েছে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, অফিস চত্বর, পার্ক আর খোলা আকাশের নিচে তাদের বাস। তারা বড় অসহায়। ঠিকমতো খেতে পারে না, ঘুমুতে পারে না, পরতে পারে না ভালো কোনো পোশাক। পায় না ভালো আচরণ। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব। শিশুরা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের দান। পথশিশুরা কারও না কারও সন্তান, ভাই বা আত্মীয়-স্বজন। সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার কারণে পথশিশুদেরও রয়েছে ন্যায্য অধিকার। স্বাধীন দেশে এ পথশিশুদেরও সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বড় হওয়ার অধিকার আছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এ মৌলিক চাহিদাগুলো যথোপযুক্তভাবে পাওয়ার অধিকার তাদেরও আছে। পথিশিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে আজ পালিত হবে জাতীয় পথশিশু দিবস।

উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়, প্রত্যেকটি শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র কোনো না কোনোভাবে পালন করে। বেশি খেয়াল রাখা হয় প্রত্যেক শিশুর সুস্থ জীবনযাপনের প্রতি। প্রত্যেক শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়া হয়বিভিন্ন সুন্দর পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যাতে কোনো শিশু যেন অবহেলার শিকার না হয় কারণ পথশিশুরাও দেশের অমূল্য সম্পদ। অথচ আশঙ্কাজনক হারে বাংলাদেশে বেড়ে চলেছে পথশিশুর সংখ্যা। দেশে ৮০ লাখ পথশিশু রয়েছে। এদের মাঝে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ১০ লাখেরও বেশি পথশিশু। এদের বেশির ভাগই অপুষ্টি, যৌনরোগ ও মাদকের নেশায় আক্রান্ত। সর্বনাশা মাদকের বিষে আসক্ত হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পথশিশু। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য মতে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ হেরোইন। ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও আট শতাংশ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সূত্র মতে, ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এদের সঠিক তদারকি না করা হলে তারা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের সমৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় অন্তরায় হতে পারে তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণা জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, মাদকাসক্ত শিশুদের ড্রাগ গ্রহণ ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ৪৪ শতাংশ পথশিশু, পিকেটিংয়ে জড়িত ৩৫ শতাংশ, হাইজ্যাকের সঙ্গে ১২ শতাংশ, ট্রাফিকিংয়ে ১১ শতাংশ, আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের সোর্স হিসেবে পাঁচ শতাংশ ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত ২১ শতাংশ, বোমাবাজির সঙ্গে জড়িত ১৬ শতাংশ পথশিশু। শিশুদের এ অবস্থার জন্য দায়ী আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো। রাষ্ট্র যদি সুনির্দিষ্ট পলিসি তৈরি করে, আমরা যদি আমাদের চারপাশের শিশুদের কথা মনে রাখি তাহলে পথশিশু বলে কেউই থাকবে না।’

শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ- এ ধরণের আপ্তবাক্য আমরা লেখায়, বক্তৃতায় হারহামেশা পড়ি ও শুনি। কিন্তু জাতির ভবিষ্যৎ সবাইকে, বিশেষ করে নিম্নবর্গীয়দের পথশিশুদের নিয়ে আমরা মোটেই মাথা ঘামাই না। শাসনযন্ত্র এদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে মনে হয় অসচেতন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এদেশেও ঘটা করে ‘আন্তর্জাতিক শিশু দিবস’ শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস, পথশিশু দিবস পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ বা শিক্ষাবিদ এসে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিয়ে যান। তাতে সমবেদনা ঝরে, এমনকি করণীয় কর্মসূচীর কথাবার্তাও উচ্চারিত হয়। কিন্তু সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রতিনিধি এদেশের শাসনযন্ত্র তাদের শ্রেণিস্বার্থের কারণে পথশিশুদের স্বার্থ সংরক্ষনে থাকে নির্বিকার। শিশু অধিকার হয়ে ওঠে নিছক কথার কথা। রাজধানী ঢাকার অসহায় পথশিশুদের একসময় ‘পথকলি’-র শোভন নামে আখ্যায়িত করে স্বাভাবিক জীবনস্রোত ফিরিয়ে নেবার পরিকল্পনা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত তা বেশি দূর এগোয় নি। ওদের ভাগ্য রাজপথেই নির্ধারিত থাকে। জীবনের নানাবিধ সুজগ-সুবিধা ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত পথশিশুদের সাহায্য দুএকটি এন.জি.ও এগিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত অবস্থার হেরফের হয়নি। টিআইবি’র মতে, বাংলাদেশ একদম ছোটখাট দুর্নীতিই হয় ছয় হাজার কোটি টাকার। এ টাকা দিয়ে পথশিশুদের জন্য কয়েক হাজার আশ্রয়কেন্দ্র ও কয়েক শ’ স্কুল তৈরি করা সম্ভব।

পথশিশুদের প্রতি যদি আমরা যথাযথ দৃষ্টি না দেই, তাহলে সমাজ ও দেশের ঐক্য বিনষ্ট হয়ে সর্বত্র অশান্তি ও অরাজকতা ছড়িয়ে পড়তে পারে। পথশিশুদের রক্ষা করা, তাদের উন্নয়নে কাজ করা ঈমানি দায়িত্ব। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব শিশুর রয়েছে সমান অধিকার। সে অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রিয় নবী (সা.) যেমন সদা সজাগ ও সচেতন ছিলেন তেমনি সে আদর্শ অনুসরণে আমাদেরও আন্তরিক হতে হবে। আর শিশুটি যদি হয় এতিম, অসহায় ও পথশিশু তবে তার লালন-পালনের দায়িত্বভার গ্রহণ করার দ্বারা জান্নাত লাভ করা সহজ হয়ে যায়। প্রিয় নবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো পিতৃহীন শিশুকে আশ্রয় দিয়ে নিজের পানাহারের মধ্যে শরিক করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তবে সে যদি ক্ষমার অযোগ্য কোনো অপরাধ না করে, যথাঃ আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে অথবা বান্দার হক নষ্ট করে, তাহলে ভিন্ন কথা (মুসনাদে আহমদ)। প্রিয় নবী (সা.) আরও এরশাদ করেন, ‘শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য কোনো পিতৃহীন শিশুর মাথায় যদি কেউ হাত বুলায়, তবে তার হাত যত চুলের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে, প্রতি চুলের পরিবর্তে তাকে অনেক নেকি দান করা হবে।’ (মেশকাত শরিফ)।

দেশকে এগিয়ে নিতে গেলে কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে এ পথশিশুদের মূল্যায়ন করতে হবে যত্নসহকারে। তাদের দৈহিক ও মানসিক শক্তির সদ্ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে সমাজের মূল ধারায় তাদের পুনর্বাসিত করতে হবে। সরকারের উচিত পথশিশুদের সম্পর্কে সচেতন হওয়া। প্রতিটি পথশিশুর জন্মনিবন্ধন করা। তবে এসব কাজ করা সরকারের একার পক্ষে হয়তো সম্ভব না, সে ক্ষেত্রে যে সংস্থাগুলো পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। সরকারের পাশাপাশি ওই সংগঠনগুলো যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করে এবং এ পথশিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র ইত্যাদির ব্যবস্থা করে, তাহলে এ পথশিশুদের মধ্য থেকেও আমরা পেতে পারি অনেক ভালো কিছু। পথশিশুদের রক্ষা করা, তাদের উন্নয়নে কাজ করা ঈমানি দায়িত্ব। প্রত্যেকটি শিশুর মাঝে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। এই পথশিশুদের পরিচর্যা করলে তারা বনসাঁই থেকে বটবৃক্ষে পরিণত হবে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব শিশুর রয়েছে সমান অধিকার। সে অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রিয় নবী (সা.) যেমন সদা সজাগ ও সচেতন ছিলেন তেমনি সে আদর্শ অনুসরণে আমাদেরও আন্তরিক হতে হবে এই হোক পথশিশুদিবসে আমাদের অঙ্গীকার।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×