somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানব জন্মের নামে কলঙ্ক হবেঃ বাইসাইকেল থিফের প্রলাপ-

২৫ শে মে, ২০০৭ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায়শই নির্জনে বসে ভাবি, সম্ভবত আমার ভেতরে কোথাও নীরবে নিভৃতে একজন হেলাল হাফিজ বাস করেন। অথবা হয়তো আমার নয়, আমাদের সবারই, আমাদের মানে-, আমরা যারা কবিতা ভাবি, হয়ত বা লিখি না সবসময় কিন্তু কবিতায়ই বসবাস করি। সেই কবিতাজীবি আমাদের সবার ভেতরেই আছেন একজন হেলাল হাফিজ।
একজন প্রেমিক ও সৈনিক হেলাল হাফিজ, যিনি সভ্যতাকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করেন, 'অশ্লীল সভ্যতা, নিউট্রন বোমা বোঝ, মানুষ বোঝ না!' যিনি আমাদের কানে কানে মন্ত্র পড়ে শোনান, 'এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।' আবার তিনিই যখন হাতের পাঁচটি আঙুলকে নিরাশ্রয়ীর ছদ্মবেশ দিয়ে প্রিয়তমাকে স্পর্শ করার ষড়যন্ত্র করেন, আমরা পুলকিত হই। জলের আগুনে জ্বলে পুড়েন যিনি, সেই হেলাল হাফিজ যখন লিখেন-
'মানব জন্মের নামে হবে কলঙ্ক হবে
এরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই,
উত্তর পুরুষে ভীরু কাপুরুষের উপমা হবো
আমার যৌবন দিয়ে এমন দুর্দিনে আজ
শুধু যদি নারীকে সাজাই। ''

-আমি তখন মুগ্ধ হয়ে পড়ি। প্রায় নিরুপদ্রব জীবনের কোন এক অবসর মুহূর্তে যখন আমি এ কবিতাটি পড়ি, মাথার ভেতরে কিছু ভাবনা কিলবিল করে ওঠে। ঠিক এমন করে জীবন পার করে দেয়াটা উচিৎ হচ্ছে কি? আমার তো একটা কিছু করার কথা ছিলো।
মানব জন্মের নামে আমারও কলঙ্ক হচ্ছে না তো?

------------------------------

প্রায় বছরকয়েক আগে, সম্ভবত গ্যোথে ইনস্টিটিউটের কোন এক হল রূমে বসে, ঢাবি-র চলচ্চিত্র পরিষদের সদস্য হিসেবে দেখছিলাম 'বাইসাইকেল থিফ' সিনেমাটি।

সাদাকালো সিনেমা, অনেক বছর আগের, প্রিন্ট ভাল ছিল না তবু তারই ফাঁকফোকরে একজন অভাবী বাবা ও তাঁর সন্তানের আকুতি পড়তে একটুও অসুবিধে হয় নি। বেকার বাবা অবশেষে চাকরি পায়। শহরের দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার লাগাতে হবে তাকে। কিছুই প্রয়োজন নেই, শুধু দরকার একটা বাইসাইকেল। পরিবারের সম্বল বিক্রি করে সেটা সে কিনেও ফেলে। কিন্তু কাজের প্রথম দিনেই সেটা চুরি হয়ে যায়। তারপরে পিতা পুত্র বিষন্ন চেহারায় ঘুরে ফিরে এখানে সেখানে। আবারো অনাহারের দুশ্চিন্তা মাথায় তাদের।

ঠিক এমনি সময়ে তারা দেখে অনেকগুলো সাইকেল একসাথে রাখা, সম্ভবত কোন অফিস ছিলো সেটা, অথবা রেস্তোরাঁ, ভুলে গেছি। খানিকটা দোনোমনা করে বাবা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, এখান থেকে একটা সাইকেল চুরি করবে সে, করতেই হবে। কিন্তু সাইকেল চুরি করে নিয়ে দৌড় শুরু করতেই ধরা পড়ে যায় সে! চারপাশের লোকেরা ছুটে আসে, ছেলের সামনেই চলে নির্দয় প্রহার! প্রচন্ড আক্রোশে তারা মারতে থাকে ধরা পড়া সাইকেল চোরকে।

সিনেমাটা বোধহয় এখানেই শেষ হয়েছিল। ভাল মনে নেই। তবে মনে আছে, শেষ হবার পরেও বুকের ভেতরে একটা অস্বস্তি ঘুরপাক খাচ্ছিলো যেন। অনেকক্ষণ, কি যে সেটা বুঝতে পারছিলাম না, শুধু মনে হচ্ছিলো, এক্ষুণি একটা কিছু করা দরকার আমার! ঠিক এক্ষুণি!

ছবি শেষের ঘোর কাটবার আগেই মাইক হাতে উঠে এলো সহপাঠী আশা, মৃদু স্বরে বললো, 'আমি জানি, এ ছবি দেখার পরে আমাদের সবার ভেতরে একটা প্রচন্ড ইচ্ছা জাগছে...।' আর, তখুনি, আশা বলে দিতেই, আমি চমকে উঠে ভাবি, তাইতো! আমার তো সত্যিই এখন ইচ্ছে করছে এক ছুটে বেরিয়ে গিয়ে কোথাও থেকে একটা সাইকেল চুরি করে আনি! ঠিক এক্ষুণি!

-----------------------------

আজ অনেকদিন পরে আবার সেই অনুভূতি ফিরে এলো মনে।
অলস বিকেলে সময় কাটাতেই ব্লগে ঢুকলাম। তারপরে এক এক করে পড়লাম ভ্যালেরিকে নিয়ে লেখা আরিফ জেবতিকের পোষ্ট, আগেই পড়া ছিলো, তবু আবারো পড়লাম জানালা-র পোষ্টটাও।
আর তারপর থেকেই আমার বুকের ভেতরে একটা অস্বস্তি দানা বেঁধে আছে। কেবলই মনে হচ্ছে, একটা কিছু করা দরকার আমার, আমাদের সবার। কি সেটা জানি না, বুঝে উঠতেও পারছি না ভাল করে, শুধু বুকের গভীরে কোথাও মনে হচ্ছে, উত্তর পুরুষে আমরাও ভীরু কাপুরুষের উপমা হচ্ছি না তো?

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:১৭
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×