এসে গিয়েছে কোরবানির ঈদ। গরু আর খাসীর মাংস খেতে যারা পছন্দ করেন বেশী তারা নিশ্চয় ঈদের খুশী আর সাথে মাংস খাওয়ার খুশীতে ডাবল খুশী তবে যারা রাধতে পছন্দ করেন তারা নিশ্চয় এই কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাসায় দু একটা মাংসের আইটেম রান্না করতে চেষ্টা করবেন। এরই মধ্যে হয়তো টিভিতে দেখানো, ম্যাগাজিনে বা পেপারে ছাপা হওয়া কিংবা পরিচিত কারও কাছে থেকে শুনে বিভিন্ন ধরনের রেসিপি মনে মনে ভেবেও রেখেছেন যে সেটি রান্না করবেন।
ব্যক্তিগত জীবনে যদিও আমি নিজে রান্না করে আমার পছন্দের মানুষগুলোকে খাওয়াতে পছন্দ করি তবে আপাতত আমার ব্লগার বন্ধুদের জন্য তা করতে পারছিনা বিধায় সামুতে আমার রন্ধন ও ভোজন প্রিয় সাথে গরুর মাংস খেতে পছন্দ করা সহব্লগারদের জন্য নিয়ে আসলাম কয়েকটা মাংসের আইটেম
১. মুগডালের বিরিয়ানি
বিরিয়ানির সাধারন রেসিপি তো অনেক আছে তাই মুগডালের বিরিয়ানি নিয়ে আসলাম কিছুটা নতুন স্বাদ পাবার জন্য। আমি নিজে বিরিয়ানি খেতে খুব পছন্দ করি, ব্লগে আমার বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করা সহব্লগাররা কই দেখি
উপকরণ : গরুর মাংস দুই কেজি, পোলাওর চাল এক কেজি, মুগডাল আধা কেজি, ঘি এক কাপ, পেঁয়াজ বাটা দুই টেবিল-চামচ, আদা বাটা দুই টেবিল-চামচ, রসুন বাটা এক টেবিল-চামচ, পেঁয়াজ কুচি এক কাপ, দারুচিনি সাত-আট টুকরা, এলাচ ছয়-সাতটি, গরম মসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৮-১০টি, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা টেবিল-চামচ, তেজপাতা চার-পাঁচটি ও টকদই পৌনে এক কাপ।
প্রস্তুত প্রণালি : মাংস টুকরা করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে তাতে টকদই মাখিয়ে ২৫-৩০ মিনিট রাখতে হবে। তেল গরম করে কিছু দারুচিনি ও এলাচের ফোড়ন দিয়ে তাতে আধা কাপ পেঁয়াজ কুচি ভাজতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হলে পেঁয়াজ বাটা ও অর্ধেকটা আদা ও রসুন বাটা দিয়ে মাংস কষাতে হবে। পরিমাণমতো পানি দিয়ে মাংস সিদ্ধ করতে হবে। ঝোল শুকিয়ে এলে গরম মসলার গুঁড়া দিয়ে চুলা থেকে নামাতে হবে। মুগডাল ভেজে, ধুয়ে, গরম পানি দিয়ে এমনভাবে সিদ্ধ করতে হবে, যাতে ডাল গলে না যায়। চাল ধুয়ে পানি ঝরাতে হবে। ঘি গরম করে বাকি পেঁয়াজ কুচি বাদামি রং করে ভেজে তাতে অবশিষ্ট বাটা মসলা ও গরম মসলা দিয়ে কষিয়ে চাল ভাজতে হবে। চাল ভাজা হলে গরম পানি দিতে হবে। ফুটে উঠলে লবণ ও ডাল দিতে হবে। পানি কমে এলে চিনি দিতে হবে।
পোলাওর পানি শুকিয়ে গেলে হাঁড়ি থেকে কিছুটা পোলাও উঠিয়ে কিছু মাংস ও কাঁচা মরিচ দিয়ে আবার পোলাও দিয়ে ওপরে মাংস ও কাঁচা মরিচ ছিটিয়ে এভাবে তিন স্তরে সাজিয়ে দমে দিতে হবে। মুগডালের বিরিয়ানি কাবাব ও সালাদের সঙ্গে পরিবেশন করা যায়।
২. অল্প মশলায় গার্লিক বিফ
যারা অল্প মশলায় গরুর মাংস রান্না খেতে ভালোবাসেন তারা গার্লিক বিফ রাঁধতে পারেন। পোলাও কিংবা ফ্রাইড রাইসের সঙ্গে খুব ভালো লাগবে খেতে আশা করি
উপকরণ :
গরুর মাংস ১ কেজি
পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ
আদা ও রসুন বাটা ১/২ চা চামচ
রসুনের আস্ত কোয়া ১০/১২ টি
লাল এবং সবুজ ক্যাপসিকাম
লাল এবং সবুজ মরিচ ১০/১২টি
চিনি ১/৪ চামচ
অলিভ অয়েল
টমেটো সস ৪ টেবিল চামচ
টক দই ১ কাপ
গরম মসলা গুঁড়া ১/২ চা চামচ
লবণ স্বাদ মতো।
প্রস্তুত প্রণালী :
• মাংস ধুয়ে ছোট টুকরা করে কেটে নিন।
• মাংস একটি পাত্রে নিয়ে টক দই, আদা বাটা, রসুন বাটা, লবণ, চিনি, গরম মসলা গুঁড়া ভালো করে মিশিয়ে ১ ঘণ্টা মেরিনেট করে রাখতে হবে।
• কড়াইতে অলিভ অয়েল গরম করে পেঁয়াজ বাদামী করে ভেঁজে নিন।
• আস্ত রসুন ভেজে নিন।
• মাংস দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন।
• সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
• মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে লাল এবং সবুজ মরিচ এবং টমেটো সস দিয়ে নেড়ে দিন।
• ঝোল শুকিয়ে একদম মাখা মাখা হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলুন।
৩. ঝুরা মাংস
ঝুরা মাংস আমার খুব পছন্দ। পরোটা দিয়ে খেতে খুবই ভালো লাগে । এমনিতেও রান্না মাংস ৪-৫ দিন একটু একটু করে আঁচ দিলে ঝুরা হয় তারপরেও ঝুরা মাংসের রেসিপি নিয়ে আসলাম কিছুটা নতুনত্ব যদি আনা যায় সেই আশায়
উপকরণ : গরুর মাস ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি দেড় কাপ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, গোলমরিচ বাটা ১ চা-চামচ, জিরা বাটা ১ চা-চামচ, ধনে বাটা ১ চা-চামচ, বাদাম বাটা আধা চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ, সরষে বাটা আধা চা-চামচ, এলাচি-দারুচিনি-লবঙ্গ কয়েকটা, তেজপাতা ৩-৪টা, তেল ১ কাপ, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা-চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি : তেলে আধা কাপ পেঁয়াজ কুচি বাদামি করে ভেজে সব মসলা কষিয়ে মাংস দিয়ে দিতে হবে। আন্দাজমতো পানি দিয়ে মাংস সেদ্ধ করে নিতে হবে। মাংসের পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে। এবার মাংস নেড়েচেড়ে ঝুরা করে নিতে হবে। অল্প তেলে ১ কাপ পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে ঝুরা মাংস দিয়ে নাড়তে হবে। ভাজা ভাজা হয়ে গেলে গরম মসলা ও গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
৪. আচারি মাংস
পোলাও কিংবা বিরিয়ানির সাথে আচারি মাংসটা অনেক ভালো লাগে। এমনিতে আমি পোলাও বলতে অজ্ঞান তাঁর উপর এর সাথে আচারি মাংস নিলে এক প্লেট বেশী খেয়ে ফেলি । আমি চাই আমার পোলাও পছন্দ করা ব্লগার বন্ধুরাও আমার মত আচারি মাংসের সাথে বেশী বেশী পোলাও খাক
উপকরণ : গরুর মাংস ১ কেজি, আম অথবা জলপাইয়ের ঝাল আচার ৩ টেবিল-চামচ, পাঁচফোড়ন আধা চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, জিরাবাটা ১ চা-চামচ, সরিষাবাটা ১ টেবিল-চামচ, মরিচগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, দারুচিনি ২ টুকরা, এলাচ ২টি, তেজপাতা ১টি, সরিষার তেল আধা কাপ, চিনি ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৮-১০টি।
প্রস্তুত প্রণালি : মাংস টুকরা করে ধুয়ে আচার ও কিছু কাঁচা মরিচ বাদে সব উপকরণ মেখে নিতে হবে। তেল গরম করে পাঁচফোড়নের ফোড়ন দিতে হবে। তাতে মাখানো মাংস ও পরিমাণমতো পানি দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। মাংস সিদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে গেলে আচার ও কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় রেখে নামাতে হবে।
৫. মাংসের শুঁটকি
গরুর মাংসও শুটকির মত সংরক্ষণ করা যায় অনেকদিন । খেতেও মন্দ না
উপকরণ : গরুর মাংসের শুঁটকি ২ কাপ, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, রসুন কুচি আধা কাপ, এলাচ ৪টি, দারুচিনি ৪ টুকরা, তেজপাতা ২টি, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচগুঁড়া ২ চা চামচ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা আধা চা চামচ, পেঁয়াজ বাটা ১ চা চামচ, তেল আধা কাপ, লবণ পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালি : প্রথমে গরুর মাংসের শুঁটকি ভালোভাবে সিদ্ধ করে পাটায় ছেঁচে নিন। কড়াইতে তেল দিয়ে এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা, পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি দিন। পেঁয়াজ ও রসুন নরম হয়ে এলে সামান্য পানি ও মসলা দিয়ে কষান। এরপর মাংস দিয়ে খানিকটা পানি দিন। মাংস হয়ে তেল ওপরে উঠে এলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
৬. চাপলি কাবাব
এতো কিছু খাওয়া হবে আর কাবাব খাওয়া হবেনা তা কি করে হয় । অফিসের পাশে নতুন একটি রেস্তোরা হয়েছে আমিতো সেই রেস্তোরার কাবাবের প্রেমে পড়ে গিয়েছি ঈদেও খেতে চাই কাবাব । আমার কোন ব্লগার বন্ধুর কাবাব পছন্দ না আমি জানতে চাই
উপকরণ : ৭০০ গ্রাম গরুর মাংসের কিমা, ৩ টি ডিম (বিট করা), ২ টি বড় পেয়াজকুচি, আধাকাপ ধনিয়া পাতা কুচি, ১ টেবিল চামচ রসুনবাটা, ১ চা চামচ আদাবাটা, ২ টেবিল চামচ তেল, ১-২ টি টমেটো কুচি, ২-১ চা চামচ লবন, ১ চা চামচ মরিচ গুড়ো, আধা চা চামচ গরম মসলা, ১ চা চামচ জিরা গুড়া, সিকি চামচ বেকিং পাউডার, ১ চা চামচ চালের গুড়ো।
প্রস্তুত প্রণালী : ডিম বাদে সব উপকরণ ভালোভাবে মাংসের কিমার সাথে মাখিয়ে ফেলুন। শেষে বিট করা ডিম ও মশলা সমৃদ্ধ কিমা মাখিয়ে নরম একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার হাতের তালুতে নিয়ে গোল চ্যাপ্টা করে তেলেভাজুন। পরিবেশনের আগে লেবুর রস ছিটিয়ে পরিবেশন করুন। সাথে দিতে পারেন চাটনি ।
সবগুলো রেসিপি Chuijhal.com থেকে নেওয়া। অনেকগুলো রেসিপি থেকে আমার পছন্দের ৬ টি রেসিপি নিয়ে এলাম আমার সহব্লগার বন্ধুদের জন্য। একটি রেসিপিও কিন্তু আমি রান্না করে খেয়ে দেখিনি তবে আশা করি আমার সিলেকশন খারাপ হয়নি কেউ যদি সত্যিই চেষ্টা করেন রাধতে আমার মনে হয় হতাশ হতে হবেনা আর যদি কেউ হতাশ হয় তাহলে আমি নিজেই না হয় একদিন তাঁকে রান্না করে খাওয়ালাম তখন হতাশ হবেনা কেউ তা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি
সবাইকে অগ্রিম ঈদ মোবারক
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৮