কবিতা পাঠ একধরণের প্রার্থনার মত। নিজের মানসইশ্বরে তন্দ্রালু দৃষ্টিপাত, নতজানু হওয়া। তার জন্য চোখ খুলে ও মস্তিস্কের ব্যবচ্ছেদ করে পাঠ ঠিক উপযুক্ত হবে না। আলোচ্য কবিতাটি পাঠের সময় চোখকে মুক্তি দিতে হবে; আলোর প্রতিফলনে দেখা এর শব্দ আপনাকে বুঝতে সহায়তা করবে না। বরং আপনি অন্তরচক্ষু খুলে আপন রষ্মিতে কবিতাটির দেহ স্পর্শ করুন। কি দেখতে পাচ্ছেন! হ্যা আপনি ঠিক বোধগম্যতার দ্বারপ্রান্তে, যখন কবি চারদিকের সব পানিকে কেবল অশ্রু দেখছেন তখন আপনার নয়নকে বিশ্রাম দিতেই হবে, এমনকি নিজের হাত মেলে ঠিক পঞ্চঅঙ্গুলী উপত্যকায় মস্তিস্কের বিচরণও বন্ধ করতে হবে। দেখতে হবে সেখানে মৃত্যুপুরান, এক অন্ধকারে যাত্রার আহাজারী! এবার পড়ুন, "পানে পানি নেই আর সব জল / তালু দেখায় আজ শব করতল"!
এক নিস্প্রহ সত্যের বয়ান, নিয়ন্তা মানস ইশ্বর থেকে এখন একে ভাগ্যতাড়িত ভাবার প্রায়াস পেয়েছেন। যা ঠিক ছিল লেখাঝোকা তাই মর্ত্যে হচ্ছে, যেমন হচ্ছিল নকশা, তেমন প্রবেশিছে শেকড়, কাঁটছে আচড়ে, অশ্রু পতন বারবার নিয়তীর অলংঘনীয় বিষময় হয়ে উঠেছে । ঠিক এর কাব্যিক স্ফুরণ এমনই, "করতলে তালু সেঁটে ব্রহ্মার ঠিকুজি / ঘুরে ফিরে সেঁকা আজগুবি মেঘদল"। আর তার ছত্রছায়ায় এক দ্রোহের আগমন লক্ষ্য করা সম্ভব, কেন বারবার এমন যাতনাময় পৃথিবীর নিষ্পেষন ললাটের লিখন হবে!
এমন বুকফাঁটা আর্তের চিৎকারে ধসে পড়ে অনেক ফলিত জ্ঞান। অনেক জ্যোতির্ময়তা। মানস ইশ্বর দেখা কবি নীরস পদযাত্রায় শাস্ত্রের লিপি দেখে, তার ঠোঁটে ক্রুর হাসি ফোটে, হায়রে জীবন, তোকে সমর্পনের অঙ্গীকারে বেঁচেবর্তে তুলতে হবে নবজন্মের দ্যুতি। এটা একধরণের নির্মোহ জীবনের কালাতিপাত ছাড়া আর কিছুই নয়। ভেবে দেখুন রহস্যময়ী কবি বলেন, "ব্রক্ষ্মিনী ঠোঁটে তোলে আগুণ শীতল / শাস্ত্র নাব্য ভাবে দ্বিতীয় আঁচল"! এক প্রকৃত স্বত্বা বিরাজিত, যার মাঝে প্রবাহিত স্রোতধারার পতিত রেদ, কেঁটে যায় সকল জাগতিক নিয়মের বিধান জীবনের এমন বহমানতায়! কবি আক্ষেপ করেছেন এবং নিরুপায়ে মেনে নেয়া জীবনের কলকাঠিতে বিলাপও করছেন, অতপরঃ দ্বিতীয় জীবন চলে দুলকি চালে, আপাত বহিস্তঃখোলসে; কিন্তু, প্রকৃত জল তখনও বয়ে চলে নিরবধি! কবিতাটি দেখুন আরেকবার -
পানে পানি নেই আর, সব জল
তালু দেখায় আজ শব করতল
করতলে তালু সেঁটে ব্রহ্মার ঠিকুজি
ঘুরে ফিরে সেঁকা আজগুবি মেঘদল
ব্রহ্মিনী ঠোঁটে তোলে আগুন শীতল,
শাস্ত্র নাব্য ভাবে দ্বিতীয় আঁচল !
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৫:১২