মানিক। নাম হলো মানিক। কাজ হচ্ছে সিএনজি চালানো। প্রশ্ন করলো ভনিতা ছাড়াই। শুনে আমি বাকরুদ্ধ। প্রশ্ন হলো, 'মূর্খ মানুষ কি সংগীত শিল্পী হতে পারবে?'
একটু আগে ফোনে এক বন্ধুর সাথে গান বিষয়ক আলাপ করছিলাম সিএনজিতে বসে। ড্রাইভার আমার ফোনালাপ মনযোগ দিয়ে শুনছিলো বুঝতে পারলাম তার প্রশ্ন শুনে।
'কেনো পারবে না?' অবাক হয়ে জবাব দিলাম।
মানিক বললো, 'আমি মূর্খ মানুষ......জীবনে পড়ালেখার সুযোগ পাই নাই.......কিন্তু বিশ্বাস করেন স্যার, আমার গানের গলা খুব ভালো.....মোটামুটি ভালোই গাই...কিন্তু জীবনে কোনো সুযোগ পাইলাম না সঙ্গীত চর্চার!'
শুনে একটু খারাপ লাগলো। স্বান্ত্বনা দেবো ভেবে কিছু বলতে যাবো অমনি সিএনজিটা থামলো। গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। নামতে নামতে বললাম, 'ফোন নম্বর দেন, একদিন আপনার গান শুনবো।'
তারপরে যা ঘটলো তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। মানিক হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। তার এমন সশব্দ কান্নার দিকে তাকিয়ে রীতিমত হতভম্ব আমি। আশেপাশে দাঁড়ানো আরো কয়েকটা সিএনজির ড্রাইভার তার দিকে তাকিয়ে আছে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে।
কাঁদতে কাঁদতে মানিক বললো, 'এতিম পোলা আমি...বাপমা অনেক ছোটবেলা মারা গেছে....জীবনে একটা সুযোগ পাইলাম না সঙ্গীত চর্চার।'
হঠাৎ এই নাটকীয় ডায়লগ এবং এরপরেই এক টান মেরে সিএনজি নিয়ে তার উধাও হয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, চলৎশক্তিহীন। কিছুই বুঝলাম না। বা বোঝার চেষ্টা করে ঘটনার সৌন্দর্য নষ্ট করতে চাইলাম না।