এভারেস্টকে দেখে আমার আনন্দ হয় শুধু, ভয় হয় না। সরাসরি পাহাড়টার নিচে দাঁড়িয়ে দেখি নি বলেই বোধহয়। তবে কাঠমান্ডু থেকেও দেখি নি। অথচ আমি জানতাম কাঠমান্ডু থেকে এভারেস্ট দেখা যায়। কি ভুল জানতাম! কাঠমান্ডু নামার পরেও আমার ভুল ভাঙেনি। হোটেলে যাবার পথটুকুতে গাড়ি থেকে অতিদূরে অণুবীক্ষণী দৃষ্টি ছুড়েও আমি এভারেস্টের কোনো টিকিটি বের করতে পারি নাই। আশায় ছিলাম শহরের কোনো না কোনো স্থান থেকে দেখা যায়, নইলে কাঠমান্ডুতে মানুষদের চলবে কিভাবে। বা কাঠমান্ডুতে কেনোই বা মানুষজন আসবে। মোটেই আকৃষ্ট করার মত শহর মনে হয়নি আমার কাছে - একমাত্র পাহাড়ের মাঝে একটা বিশাল ভ্যালি যদি কাউকে আকৃষ্ট করে; আমাকে অবশ্য ভ্যালিও আকৃষ্ট করেনি।
পরে জানলাম একমাত্র নাগরকোট থেকে দেখা যেতে পারে, অনেক আশাভঙ্গের পরে। একদিন, নেপালে যাবার বেশ কিছুদিন পরে, কাঠমান্ডু ভ্যালির উঁচু একটা পাহাড়ে চড়তে শুরু করলাম। পাহাড় পেঁচিয়ে ক্রমশ শীর্ষে চলে গেছে মসৃণ পিচের রাস্তা। উপরে যত উঠতে থাকলাম তত শহরের বিশাল বিস্তৃতি স্পষ্ট হতে থাকলো নিচে এবং সরে যেতে থাকলো দূরে। একসময় মেঘ এসে ঢেকে ফেললো শহরটি। নাগরকোটের একদম উঁচু একটা জায়গায় হোটেল। খুব সকালে সেখান থেকে এভারেস্ট দেখা যায়। তবে বর্ষার মেঘের কালে দেখা যায় না। আর আমি গেলাম সেসময়ে। মেঘ ছাড়া আর কিছু দেখা হলো না।
এভারেস্ট আমার দেখা হয়নি আর। কিন্তু যত এভারেস্টের ছবি দেখেছি তত আমার ভেতরে রক্ত নেচে উঠেছে। ফিল্মে দেখে পাগল হয়েছি। ইউটিউবে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা ভিডিও দেখেছি। ট্র্যাকিং এর জন্য নয়। সেটি আমার কখনও ইচ্ছে হয়নি। আমার কেবল এভারেস্ট দেখার ইচ্ছেটা আরো বেড়েছে। কোনো দূর স্থান থেকে, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে এভারেস্টকে দেখার জন্য আমি মরীয়া হয়ে ছিলাম।
সম্প্রতি এভারেস্ট নামের সিনেমাটি দেখে সর্বোচ্চ আনন্দ পেয়েছি। এভারেস্টকে এত স্পষ্টভাবে আর কোনো ভিডিওতে দেখিনি। সিনেমার অভিযাত্রিরা লুকলা এয়ারপোর্টে নেমে যখন হেঁটে হেঁটে বেজ ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছিলো তখন একটা জায়গায় এসে প্রথম এভারেস্টের যে ভিউটা দেখলো - সেটা জেনো আমিও সরাসরি তাদের সাথে থেকে দেখলাম। সিনেমাটিতে এরপর এভারেস্টের নানা অংশ দেখানো হয়। অভিযাত্রীদের গাইড এভারেস্ট শৃঙ্গে উঠে নামার পথে অক্সিজেন সংকটে পতিত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। সেই দৃশ্য এবং এভারেস্টের ঝড়ের দৃশ্য দেখে এবং এমন মৃত্যুর ঘটনার ভিডিও পূর্ব থেকেই অনেক দেখে ভয়ঙ্কর কোনো কিছুতে চড়ার সাহস আমার হয়নি, কিন্তু ঐ মৃত্যুও জেনো অপূর্ব মনে হলো। মহামূল্যবান মৃত্যু।
আমি লুকলা এয়ারপোর্ট থেকে বেজ ক্যাম্পের পথটায় হাঁটতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৫