somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুরা কাহাফ এর (১৫-১৭) বর্ণনা

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,

আমরা যেহেতু মুসলমান, তাই আমাদের কোরআন পাক পড়তে হবে, সেই অনুসারে আমল করতে হবে, এর আগে আমি সুরা কাহাফের পরিপূর্ন অর্থ সহ প্রকাশ করেছি। চেষ্টা করবো দু একটি লাইনের ব্যাখ্যা আপনাদের অবগতির জন্য প্রকাশ করবো, আল্লাহ যেন আমাকে তৌফিক দান করেন।
সূরা কাহাফের ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

هَؤُلَاءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ آَلِهَةً لَوْلَا يَأْتُونَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ بَيِّنٍ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا (15)

“এরা আমাদেরই স্ব-জাতি,এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্যগ্রহণ করেছে। তারা (তাদের এসব উপাস্য সম্পর্কে) সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যেব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে,তার চেয়েবেশি গোনাহগার আর কে (হতে পারে)?” (১৮:১৫)

আগের আয়াতে আমরা আলোচনা করা হয়েছে, আসহাবে কাহাফ ছিলেন এমন কিছু ঈমানদার লোক যারা নিজেদের ঈমান রক্ষা করার জন্য শহর ও জনপদ ত্যাগ করে পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে ছিলেন।

আর এ আয়াতে তাদের কিছু কথাবার্তা তুলে ধরা হয়েছে যেখানে তারা নিজেদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হন। আর তা হলো, তারা যে দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং যাদের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন তাদের অনুসৃত দ্বীন তারা গ্রহণ করতে পারেন না। কারণ, তাদের জাতির লোকজন কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই এক আল্লাহর সঙ্গে বহু সৃষ্টিকর্তাকে শরীক করে। যদিও আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তার কোনো অংশীদার নেই। প্রকৃতপক্ষে তাদের জাতি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দিয়েছে। আসহাবে কাহাফ বা ঈমানদার লোকেরা আল্লাহ সম্পর্কে এ মিথ্যা অপবাদ সহ্য করতে পারেননি। তারা তাদের জাতির এ পথভ্রষ্টতায় দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন।

এ আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে:

১. গোত্র ও জাতিগত সম্পর্কের কারণে কোনো মিথ্যা বিশ্বাস গ্রহণ করা যাবে না। স্বজাতির লোকজনের ধর্মীয় রীতিনীতি ভুল বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে উপলব্ধি করতে পারলে তা ত্যাগ করতে হবে।

২. কারো প্রতি মিথ্যা আরোপ করা বড় ধরনের জুলুম। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর মিথ্যা চাপিয়ে দেয় তার চেয়ে বড় জালেম আর হতে পারে না।

সূরা কাহাফের ১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন :

وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيُهَيِّئْ لَكُمْ مِنْ أَمْرِكُمْ مِرفَقًا (16)

“তোমরা যখন মুশরিকদেরএবং আল্লাহ ছাড়া তাদের (অন্য) উপাস্যদের ত্যাগ করবে, তখন গুহায় আশ্রয় নাও। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিস্তার করবেন এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মগুলোকে সহজসাধ্য করে দেবেন।” (১৮:১৬)

আসহাবে কাহাফ বা ঈমানদার যুবকেরা প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলার পর বুঝতে পারলেন, তাদের জাতি ভুল পথ থেকে সরে আসবে না এবং তাদের পক্ষেও এই সমাজে বসবাস করে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হিসেবে ধর্মকর্ম পালন করা সম্ভব হবে না। এজন্য তারা শহর ও জনমানব থেকে বহুদূরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ অবস্থায় তাদের নেতা বলেন: যখন তোমরা মূর্তি ও মূর্তিপূজারীদের থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছ তখন এই গুহায় আশ্রয় নাও। আল্লাহই এখান থেকে আমাদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হচ্ছে:

১. দ্বীন রক্ষা করার জন্য কলুষিত সমাজ থেকে হিজরত করে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। যদি এর জন্য দুনিয়ায় নানা ধরনের কষ্ট সহ্য করতে হয় তাও করতে হবে। গুহার মধ্যে আল্লাহর বিশ্বাস নিয়ে অবস্থান করা লোকালয়ে শিরকের মধ্য থাকার থেকে উত্তম।

২. আল্লাহর পথে সংগ্রাম করলে তাঁর বিশেষ দয়া ও রহমত পাওয়া যায়।

সূরা কাহাফের ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন:

وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَتْ تَزَاوَرُ عَنْ كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَتْ تَقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِي فَجْوَةٍ مِنْهُ ذَلِكَ مِنْ آَيَاتِ اللَّهِ مَنْ يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا (17)

“তুমি সূর্যকে দেখবে,যখন উদিত হয়,তাদের গুহা থেকে পাশকেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়,তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলেযায়,অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান,সেই প্রকৃত সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্য কোনো পথ প্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।” (১৮:১৭)

এ আয়াতে আসহাবে কাহাফের গুহার ভৌগোলিক অবস্থান বর্ণনা করে বলা হয়েছে, এটি আল্লাহর একটি নিদর্শন। কারণ গুহাটির অবস্থানগত কারণে এর ভেতরে সরাসরি সূর্যের আলো যেত না। এর ফলে ঈমানদার যুবকদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেনি। সূর্যের আলোর এই পরোক্ষ রশ্মি ঘুমন্ত অবস্থায় ৩০০ বছর ধরে গুহাবাসীর শারিরীক সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অবশ্য এ গুহা কোথায় ছিল সে বিষয়ে মতবিরোধ আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত দু’টি মতের একটি হল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পার্শ্ববর্তী কোনো এলাকায়। আর দ্বিতীয় মতটি হচ্ছে, জর্দানের রাজধানী আম্মান শহরের পার্শ্ববর্তী একটি এলাকা; যার পাশে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে।

যাই হোক, আসহাবে কাহাফের গুহা কোথায় ছিল সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল আসহাবে কাহাফখ্যাত ঈমানদার যুবকেরা নিজেদের বিলাসবহুল জীবন ত্যাগ করে পাহাড়ের গুহায় চলে যান এবং এ কারণে আল্লাহর বিশেষ হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হন। এ কারণে আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে: হেদায়েত ও পথভ্রষ্টতা আল্লাহরই হাতে। তবে মনে রাখতে হবে, আল্লাহ মানুষকে তার চেষ্টা অনুযায়ী সুপথপ্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট করেন। ঠিক যেমনটি ঘটেছিল আসহাবে কাহাফের যুবকদের জীবনে। তারা ঈমানের পথে চলতে চেয়েছিলেন বলে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত দান করেন। কিন্তু তাদের জাতির লোকেরা মূর্তিপূজা ত্যাগ করতে চাননি বলে আল্লাহ তাদের হেদায়েত করেননি। পরিণামে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হচ্ছে:

১. আল্লাহর সাহায্যের কারণে আসহাবে কাহাফ নিরাপদ স্থানে জীবন অতিবাহিত করেন।

২. আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের যে কোনো ঘটনায় তাঁর সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এর প্রত্যেকটি ঘটনায় মানুষের জন্য রয়েছে শিক্ষণীয় বিষয়।

উপরে মাত্র তিন টি আয়াত এর অর্থ ও সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করা হযেছে, আসুন বেশী বেশী কোরআন পড়ি ও তার অর্থ জানি, যাতে আমাদের সবার জীবন মঙ্গলময় হয, দেশ জাতি উপকৃত হয়,
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×