somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনটি সমকালীন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার অনুবাদ

০৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধনঞ্জয় রাজকুমার
প থ
পথকে মালা পরিয়ে দাও
ওই পথের গর্ভ থেকেই আমাদের জন্ম হয়েছিল ।


রঞ্জিত সিংহ
আ জ ও সে আ সে
আর
বিধবা নদীটি এসেছিল
আমাদের উঠান পর্যন্ত।
মন্দ্রিত রৌদ্রের মতো কী শান্তি
স্বপ্ন দেখেছিল সে।
বিশ্রামহীন তিনরাস্তার কোন পুলিশপয়েন্টের মতো
উদভ্রান্ত এখন।
তৃষ্ণাথরথর বুক চাপরিয়ে কেঁদে কেঁদে
আমার কাছে চেয়েছিল দু'ফোটা জল
আমি নিরুপায় ভয়ে লজ্জায়
ঘরের ভেতর নিঃশব্দ বসেছিলাম
এখনও আমি ভিজে উঠি চোখে -
নিষ্তেজ আমি
এমন নিম্নজ!

আর
বিধবা নদীটি এসেছিল
আমাদের উঠান পর্যন্ত।


সন্তোষ সান্তান
স ম্প র্ক সি রি জ - ২
ইস্কপনের বিবির সাবঅল্টার্ন য়াবেরুনীর সৌন্দর্যে নিপুন এক কবিতা লিখে যাব,
এমন সময় হাতের তালু দাবী করে রাজসুলভ ভাগ্যলিপি। যে শিণ্পের টানে
একজন জন্মকবি দারিদ্রের সাথে সংসার পাতে, সেই নির্বাক শিল্প ছড়িয়ে থাকে
অতিচেতনায়, যুক্তির বাইরের কোন পৃথিবীতে। ইশ্বরের লীলা যেন মাকড়শার
জাল। ইশ্বরও এখন বৃদ্ধ। তাকেও স্ট্রাগল করে বাঁচতে হয়। আকাঙ্খায় পূর্ণ আজ
পিতলের বাটিখানা। প্রতি পদক্ষেপে বিধিনিষেধ, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ট্যাবু
সান্ধ্য আরতির মৃদঙ্গের তালে তালে নাচে নারীদের কন্ঠ। জয়দেবের গীত শুরু
হলে আসরের বৈষ্ণব-নামাবলী থেকে নেমে আসের অষ্টসখির প্রানধন কৃষ্ণ।
কৃষ্ণ, ময়ুরকন্ঠী রঙের নামবাচক এ বিশেষ্যের দ্বিতীয় অক্ষরটি যুক্তবর্ণ; "ষ" ও "ণ", এ
দুই ব্যঞ্জনের মাঝে ছোট্ট একটি ফাঁকও খুঁজে পেলাম না, যেখানে অনায়াসে
ঢুকিয়ে দেতে পারব বর্ণিল কিছু মানবতা। এদিকে "ক" খুব একলা, তার সাথে মিশে
আছে "ঋ" কার, একা থাকলে তার গায়ে মেখে দিতাম কনেরাঙা মমতা; আর
কলঙ্কিনী রাইয়ের জন্য খয়েরি রঙের কিছু স্মৃতি। কলঙ্কিনী রাই আসলে এমন
একটি নাম যার কোনো সর্বনাম নেই, আছে শুধু আকিঁবুকিহীন দুঃখীনি বিশেষন।
আমরা জানি, বিশেষ্যের সাথে বিশেষনের ব্যবহার আত্মিক তৃপ্তি এনে দেয়।

ঘোমটার মতো শাদা কুয়াশা পৃথিবী মায়ের কোলে ছড়িয়ে পড়লে অবুঝ
এ মন বৈষ্ণব-খড়ম, অহংকারী সানগ্লাস, অপরূপ কবিতা সব রেখে বৃন্দাবনের
দিকে সরে পা বাড়ায়।

*য়াবেরুনী - কাঁচুলি বিশেষ। আগে মনিপুরী মেয়েরা শরীরের উর্ধ্বাংশে ব্যবহার করতো।
*জয়দেব - আষাঢ় মাসে মনিপুরীদের কাঙ উৎসবের সময় কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ গাওয়া হয়



ধনঞ্জয় রাজকুমার : আধুনিক বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার জনক। জাতি, সংস্কৃতি, অতীত, ও শেকড়কে নিজের বিশাল কাব্যক্ষমতায় ধারন করেছেন। আশির দশক এবং তৎপরবর্তী কবিদের অধিকাংশ অনুসরন করেছেন তার পদাংক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : হপনর বাবুয়ানি, ডিগল হাতহানল মোরে, ভিক্ষা দেনে এর আহিগিতৌ, হমাজি গাটর পানি ইত্যাদি।
রঞ্জিত সিংহ : নব্বই দশকের কবি। অরন্য রুপকল্প ও শান্ত সমাহিত বয়ানধরনের পাশাপাশি রাজনীতিশ্পর্শী এক গভীর হাহাকার তার কবিতায় ছুঁয়ে যায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : মোর ইমারঠার মোর প্রেমর কবিতা।
সন্তোষ সান্তান : নতুন শতাব্দীর কবি। প্রতিস্ঠান বিরোধিতার তার্কিক জায়গা থেকে হিউমারের মধ্য দিয়ে পেশ করেন কবিতা। বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ভাষার মাসিক সাহিত্যপত্র "নুয়া এলা"য় নিয়মিত লেখেন।
সূত্র: মনিপুরী সাহিত্য সংগ্রহ। ভুমিকা ও অনুবাদ- শুভাশিস সিনহা। ঐতিহ্য, ঢাকা, ২০০৭।
ছবি: শক্তিকুমার সিংহের পেইন্টিং
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৭:৫৭
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×