আম্মু নানু বাড়ি। আব্বু বললেন চল বাহিরে গিয়ে খেয়ে আসি। পাশেই ভালো পরোটা বানায়।
ফাকা ছিট না পেয়ে আব্বু আমি একেবারে শেষ টেবিলটাতেই বসলাম। আব্বুর সাথে পরোটা খাওয়ার অভিজ্ঞতা বেশ পুরনো।
খেতে খেতে আমাদের সামনে একজন অর্ধ বয়স্কা মহিলা বসলেন।তিনিও জায়গা না পেয়েই আমাদার সামনে বসেছেন বলে মনে হলো। কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম তিনি আমার চুলের দিকে তাকিয়ে আছেন। আর তার মুখটি অনেক বিরক্তি ও ক্ষোভ মশ্রিত।দেখতে দেখতে হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে বেরিয়ে গেলন। মাথায় হত দিয়ে দেখি আমার চুল খাড়া হয়ে আছে।
কিছুদিন আগের নিয়মিত তার্কিস জেলের প্রভাবেই হয়তো চুলের গোড়াশহ খাড়া হয়ে গিয়েছে।আর সোজা হয় না। কদুর তেল পর্যন্ত হার মেনেছে এই খাড়া চুলের কাছে।
কিন্তু আমার শখের চুলের উপর আন্টির হঠাৎ ক্ষেপে ওঠাটা আমার হ্রদয়কে ব্যথিতই করে ফেললো। এখন পরোটা আর ঢুকছেনা ভেতরে। মুখ উঠিয়ে দেখি তিনি বরাবর বেরিয়ে গেলেন।
কিছুক্ষনের মাঝেই স্কুল পড়ুয়া এক পুচকু এল। চেয়ার টেনে আমার মুখোমুখিই বসলো। কচুপাতা রঙের কামিজ, যেটা আমাদের বাড়ির পাশেরই গার্লস স্কুলের স্কুল ড্রেস। স্কুলের সামনে মাঝে মাঝেই অতিরিক্ত কাজ টাজের কারনে আড্ডা দেয়া হত। তাই ভাবলাম চুলটা খাড়া আছে থাক নাহয় আরো কিছুক্ষন। কারন আমার বন্ধু মারুফ উন্নত মানের খাড়া চুলকে প্রেমিক হওয়ার মৌলিক উপকরণ হিসেবে মনে করেন।আর তার দামি ডি এস এল আর থাকায় বন্ধু মহলে তার কথার মার্কেট প্রাইজ বেশ ভালোই যাচ্ছে আজকাল।তাই বাম হাতের চার আঙুলের ব্যাবহারে নিখুঁতভাবে চুলগুলোকে আরেকটু আকাশমুখি করে দিলাম।
হিমু হওয়ার চেষ্টাকালিন সময়ে চোখ ট্যাড়া করার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম ঢাবির মনির ভাইয়ার কাছে।তার মতে এটা নাকি হিমুদের পাওয়ার বৃদ্ধি করে। কিছুটা সফলতাও পেয়েছি অবশ্য। সেই সফলতাকেই কাজে লাগিয়ে মেয়েটির দিকে ট্যাড়া চোখে তাকালাম। বাবারে হাতের পরোটাটা তার গন্তব্যস্থল মুখে না গিয়ে প্লেটেই ফিরে গেল। কারন এই পুচকুকে আন্টির চেয়েও ডেঞ্জারাস মনে হচ্ছে। সেও আমার চুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছু মেয়ের নাকের আগায় রাগ থাকে। একটু নাক ঘামলেই রাগও বেড়িয়ে পরতে চায়ল। এরা কিছুটা নেতা টাইপের হয়। আর নির্যাতিত ছেলেদের অনেক বড় অংশ এই টাইপের মেয়েদের স্বামি হয়ে থাকেন।
দেখে মনে হলো আম্মুর সাথে রাগারাগি করেই এই রসনা বিলাসের পথ ধরেছেন।
মেয়েটি তাকিয়ে আছে আমার চুলের দিকে। মেয়েটির নাকটা বেশ লম্বা। আর খেয়াল করলাম আগায় কিছুটা ঘাম জমা হয়েছে। আমি মনে মনে ভাবলাম এই চন্দ্রমুখী আব্বুর সামনেই হয়তো আমাকে টাইট দিবে চুল খাড়া হওয়ার অপরাধে।
কিন্তু ঠাস করে চেয়ার পেছনে ঠেলে. উঠে দাড়িয়ে সেও বরাবরের রাস্তা ধরল।
আমি দুঃখে ভেঙে পরতে যাচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় পেছনে খেয়াল করলাম নতুম মূল্য তালিকা টাঙানো। আর তাতে লেখা, ইন্ডিয়ান পেয়াজ আর আলু বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ না পাওয়া যাওয়ায় নিম্নোক্ত পণ্য সমূহের মুল্য দ্বিগুণ হইয়াছে।
আদেশক্রমে কতৃপক্ষ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০০