somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংখ্যাগুরু -vs- সংখ্যালঘুঃ স্বাধীন বাঙালি যখন শাসক...সংখ্যালঘু পাহাড়ি/উপজাতি/আদিবাসীরা যখন শোষিত...আর দেশের ভূখণ্ড হাতছাড়া হওয়ার চিন্তায় উন্মাদপ্রায় আমরা !

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনার কর্মক্ষেত্রে ক’জন উপজাতি সহকর্মী আছে ?

আপনার সহপাঠিদের মধ্যে ক’জন পাহাড়ি ?

বা আপনার স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে কতজন আদিবাসী গোত্রীয় কাউকে চোখে পড়ে?

এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে কোনভাবেই যে বিশাল সংখ্যাতাত্ত্বিক পরিসংখ্যান আসবে না তা হলফ করে বলা যায়। সংরক্ষিত আসনের কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু আদিবাসী দেখা যায় কিন্তু এছাড়া বাকি ক্ষেত্রগুলোতে আদিবাসী আর বাঙালিদের একত্রিত পদচারণা নেই -এর বরাবর। তাই আপনার আর আদিবাসীদের মধ্যে বিস্তর আত্ত্বিক-তাত্ত্বিক-সামাজিক ফারাক তো থাকবেই। আপনি তথা আমি তথা আমরা হলাম বাঙালি, সমাজের মূল ধারার মানুষ। দেশ পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের কলকাঠি আমাদের হাতে- আমরা শাসক শ্রেণী। আমরা মূল জাতি। আমাদের উপজাত হলো উপজাতি। উপজাতিরা চেহারায় ভিন্ন। আচারে-অনুষ্ঠানে ভিন্ন। বসবাসের তরিকায় ভিন্ন। আমরা যখন উচ্চ শিক্ষিত, ওদের তখন ঠিক ক’জনের নামদস্তখত করার যোগ্যতা আছে তা জানেন কি?

আমরা সুবিধাভোগী। আমরা সুবিধা প্রদানকারিও বটে। কিন্তু ওরা কতটা সুবিধাপ্রাপ্ত ? স্বাস্থ্য-চিকিৎসার ন্যুনতম সুবিধাটুকু থেকেও তো আদিবাসীরা বঞ্চিত। ১৯৯৭ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে পোলিও’র টিকা প্রদান করা হলেও আদিবাসীরা এই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। হাজার হাজার পাহাড়ি শিশু অপুষ্টির শিকার এবং বিনা চিকিৎসাতেই মারা যাচ্ছে।

পাহাড়ি/উপজাতি/আদিবাসী যে নামেই ডাকি, ওরা সংখ্যায় কতজন ? সরকারি বা বেসরকারি সঠিক কোন তথ্য নেই। অথবা সঠিক তথ্য সহজলভ্য নয়। ১৯৯৭ সালের এক ভোটার তালিকা থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত অনুসারে এদের সংখ্যা ৪,৪২,৫৮১ জন। ২০০৮ সালের এক হিসেব বলছে ২ মিলিয়ন, অন্যদিকে খোদ আদিবাসীরা বলছে তাদের সংখ্যা ২.৫ মিলিয়নের মত।

বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে এদের বাস? পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও মোটামুটি তিনটি অঞ্চলে এদের বসবাস- সিলেট, ময়মনসিংহ (টাঙ্গাইল, জামালপুর নিয়ে) এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া। রাজশাহী অঞ্চলের কিছু এলাকা যেমন - গোদাগারি, নাচোল, মুণ্ডামালা, কাতোনহাট এলাকায় শুধুমাত্র আদিবাসীরাই বাস করে।

খুবই সত্যি কথা যে, আইন কেবল বৈধ দখলকৃত জায়গাতেই বসবাসের অনুমতি দেয়। ওদিকে সমতলের মানুষ দেশের কোণায় কোণায় বসত গড়েও তৃপ্ত হয়নি। পাহাড়ও চাই তার । কিন্তু সমতলের মানুষ কি করে পাহাড়ি এলাকাতে তাদের জমি দাবি করে? সেই ১৯৪৭ সাল হতে, বা স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে আদিবাসীদের নিজস্ব আবাদি জমি, নিজের গৃহ, গবাদিপশু সবই ছিল বলা চলে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শিক্ষা বঞ্চিত পাহাড়িদের কাছে এসব জমি, সম্পত্তির লিখিত কাগজপত্র সংরক্ষিত ছিল না। ফলে ভূমি-জরিপের সময় অধিকাংশই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থই হয়। এর সুযোগ নিতে দেরি হয়নি সমতলের মানুষের। পাহাড়িদের জায়গায় নাম লিখিত হয় স্থানীয় সমতলের মানুষজনের। আশুই গৃহহীন হয়ে পড়ে পাহাড়িরা। হুমকিধামকিতে ভীত পাহাড়িরা তাদের ন্যায্য সম্পত্তি ফিরে পেতে আইনের সরণাপন্ন হওয়া থেকে বিরত থাকে। উপায়ান্তর না দেখে অনেকেই ভারত পাড়ি জমায়। কিন্তু সেখানেও স্থায়ী বসতি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলে অগত্যা বাংলাদেশে ফিরে এসে ছিন্নমূলের মত বসবাস শুরু করে।

আদিবাসীদের জমি-জমা, সম্পত্তির মালিকানা হস্থান্তরের বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে বাংলাদেশ ভূমি আইনে। সম্পত্তির মালিকানা বদলের ক্ষেত্রে তৎকালিন মালিকের সম্মতি অত্যাবশ্যকীয়। এরকম একটি আইন থাকার পরও বেদখল হয়ে আদিবাসীরা প্রায় ছিন্নমূল হয়ে যায় কি করে! নিঃসন্দেহে, মালিকানা হস্তান্তরের প্রায় কোনটিই স্বেচ্ছায় ঘটেনা। এর পেছনে দারিদ্র, ভয়-ভীতি, বলপ্রয়োগ কাজ করে। এবং আদিবাসীদের অশিক্ষা আর সরলতার সুযোগ নেয় স্থানীয় সমতলের বাসিন্দারা। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যে জমি তারা চাষ করে, এমনকি নিয়মিত সরকারি খাজনাও পরিশোধ করে, তা নিমিষেই অন্যের অধিগ্রহণে চলে যায়।

আইন কতটা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে? আইএলও’র (ILO-International Labour Organization) ১০৭ তম সভায় পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয় যে, আদিবাসীদের সম্পত্তি অবশ্যই সংরক্ষণ করা হবে এবং সম্পত্তির অধিকারে তাদের কোনভাবেই সুবিধা বঞ্চিত করা যাবেনা। যদি নাগরিক সুবিধার্তে কখনো জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন পড়েই তবে যথাযথ পাওনা পরিশোধ করা অত্যাবশ্যকীয়। ২২শে জুন ১৯৭২ এর এই সভায় অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এই বক্তব্য সমর্থন করে। কিন্তু বাস্তবিক কর্মকাণ্ড কী বলছে? ময়মনসিংহের মাধুপুর পাহাড়ি এলাকায় জাতীয় উদ্যান পড়ে তোলার নামে বন বিভাগ প্রায় ৫০০০ আদিবাসীকে উদ্বাস্তু করে। বন কেটে সাফ হয়। টাঙ্গাইলে প্রায় ২৫,০০০ গারো ও কচ্ গোষ্ঠিকে স্থানান্তরিত করা হয়। যথাযথ মালিকানার অধিকার এড়িয়ে জমি অধিগ্রহণ আইনের আওতায় ফেলে রাজশাহী, দিনাজপুরে বলা চলে সুকৌশলে, অন্যায়ভাবেই জমি অধিগ্রহণ চলে। মৌলভীবাজারের প্রায় ৬৫টি গ্রামে দশ হাজারের মত আদিবাসী বছরের পর বছর ধরে বাস করছে জমি রেজিষ্ট্রেশনের কাগজপত্র ছাড়া। ২০০৭ এর জুলাইয়ে আদিবাসী নেতা, মুখপাত্র ও মহিলাদের উপস্থিতিতে এক সভায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এর সমাধান দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার প্রকৃত বাস্তবায়ন হয়নি।

এ ছাড়াও এক চটুল পদ্ধতিতেও সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার নজির রয়েছে। আদিবাসীদের মাতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রথার সুযোগ নিয়ে সমতলের অসংখ্য মুসলিম পুরুষেরা গারো মেয়েদের বিয়ে করে, ফুসলিয়ে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নিয়ে মেয়েদের তালাক দিয়ে দিচ্ছে।

এরকম বহুমুখী প্রতারণার ফলে সৃষ্ট ভূমিহীনতা, সম্পত্তিহীনতা আদিবাসীদের জন্য অস্তিত্ব রক্ষার মত সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এভাবে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে বছরের পর বছর।

আশ্চর্য এই, যে দেশের মানুষ Save Gaza বলে মানবতার মাতম করে, সেই দেশেই নির্দ্বিধায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলো পাহাড়িদের। এক ইকো-পার্কের বিরোধীতা করায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে খুন হলো অনেক আদিবাসী। ২০০৪ সালে ইকো-পার্ক বিরোধী র‌্যালীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় পিরেন স্ন্যাল। পাহাড়িদের প্রতি সমতলীদের আক্রমণের ঘটনা আজকের নয় মোটেও। ২০০৭ সালের নভেম্বরে উত্তরবঙ্গের নওগাঁও জেলায় এক সাঁওতালী গ্রামে প্রায় দুইশত সমতলী আদিবাসীদের উচ্ছেদ করতে আক্রমণ করে। ভূমি দখলের জের হিসেবে ২০০০ সালে সাঁওতাল গোত্র-প্রধান, আলফ্রেড সোরেন, খুন হয়। এ ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে মামলা করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন অভিযুক্ত সমতলী আটক হয়নি বা তাদের বিচারকার্য হয়নি । উল্টো আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা করা হয়। ২০০৩-২০০৪ সালের ইকো-পার্ক বিরোধী আন্দোলনের সময় বন বিভাগ ও পুলিশ প্রায় ২৪টি মামলা দায়ের করে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালের ১৮ই মার্চ চলেশ্ রিচিল’কে আটক করা হয় এবং অকথ্য নির্যাতনের মুখে তার মৃত্যু হয়। প্রতাপ জাম্বিল, তুহিন হাদিমা, পিরেন সিমসাং নামের অপর তিন আদিবাসীও আটক হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়, যদিও পরর্তীতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।

অত্যাচারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গায় অবস্থান করে আদিবাসী শিশু ও নারীরা। আদিবাসীদের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টির জন্য ধর্ষণ এক মোক্ষম অস্ত্র। অসংখ্য মহিলা ও অল্প বয়সী মেয়েদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ২০০৮ -এ গরু চরাতে গিয়ে ধর্ষিত হয় ১৪ বছরের অর্চত চাকমা। ২০০৮ -এ নয় বছরের এক বালিকা, ২০০৭ -এ ৬ থেকে ২৩ বছর বয়সী বেশ কয়েকজন মেয়ে ও তরুনী ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এসব জঘন্য কীর্তিকলাপে নিরাপত্তা রক্ষীদের হাত ছিল বৈকি । ৭১’এ আমাদের মা-বোনের উপর নির্যাতনের জন্য রাতদিন দুয়ো দেই পাকবাহিনী আর রাজাকারদের। একরাশ ঘৃণা নিয়ে বিচার চাই যুদ্ধাপরাধীদের। কিন্তু এই যে সমতলীরা সুযোগমত আদিরসে নিজেদের ভোগলিপ্সা চরিতার্থ করে নিচ্ছি পাহাড়ি মেয়েদের উপর শারীরিক নির্যাতন করে, তা উপলব্ধি করে লজ্জা জাগে কি আমাদের?

পাহাড়িরা তাদের হকের জমি পেলেই খুশী। তারা কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে তাদের সমপদচারণা নিয়ে হৈ-চৈ করছেনা। তারপরও যেভাবে কাশ্মীরকে জ্বলতে দেখি সেভাবেই আমাদের পাহাড় জ্বলছে, পাহাড়ি মরছে। শান্তিচুক্তি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন হচ্ছে। সেনাবাহিনী ক্যাম্প স্থাপন হচ্ছে। চোখে চোখে থাকুক পাহাড়ি। নিখুঁত থাকুক সীমানা। ফখরুদ্দিন সরকার আমলে আসলে যে সেনাবাহিনী কর্তৃক কলকাঠি নড়ছিল তা নিয়ে হাজারো বিশ্লেষণ, সেনাবাহিনী শহরে দু’বার টহল দিলেই আমাদের টনক নড়ে সেনাক্ষমতায়ন হচ্ছে কিনা ভেবে, কেবল তারা পাহাড়ে তাবু গেঁড়ে বসলে আমরা কোন বিপদের আভাস পাইনা। বরং কেউ কেউ উল্টো যুক্তি দেই সেনাবাহিনী থাকাতেই হয়তবা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কি হতো তা না হলে! পার্বত্য চট্টগ্রাম হাতছাড়া হয়ে যেতো বাংলাদেশ ভূখণ্ড হতে? এমন দাবি কি আদৌ উঠেছে আদিবাসীদের কাছ থেকে ? লিখিত বক্তব্য এসেছে কোথাও? কোন মিটিং-মিছিল? তাহলে আমরা সমতলীরা, সভ্য শহুরেরা সীমান্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন? কেন প্রবলভাবে বাঙালি হয়ে, অন্ধ দেশপ্রেমে প্রশ্ন উত্থাপিত হবে--কেউ কি চান পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে যাক? এই প্রশ্নের মধ্যেই কেমন সংখ্যাগরিষ্ঠ আধিপত্যের গন্ধ ভুরভুর করছে। যেন আমরাই কেবল সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি রাখি। আমরা ”না” বললে ”না জয়যুক্ত হয়ে” পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদেরই ভূখণ্ড থেকে যায়। আমরা ”হ্যাঁ” বললে, ”হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়ে” আদিবাসীরা তাদের স্বাধীনতা লাভ করে! পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলার ভূখণ্ড, কিন্তু পাহাড়িরা অবাঙালি! তাই ওদের উপর চরম অত্যাচারকালীন সময়ও আমরা আদিবাসী মুখগুলোর চেয়েও আমাদের প্রাণপ্রিয় ভূখণ্ড সহিসালামাত আছে কিনা সেই চিন্তায় উৎকন্ঠিত হই। যে দেশের মানুষ কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবির প্রতি মানবিক সমর্থন দেয়, সে দেশের মানুষ অমানবিকভাবে ব্যতিব্যস্ত নিজের সীমানা কাটায় কাটায় মেপে নিতে! ৭১’এ পাকিস্তানও চেয়েছিল আমাদের ’অন্যায়’ আবদারকে রুখে দিয়ে তাদের সীমানা যথাযথ রাখতে, এক গৌরবময় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আমরাই তো বাংলাদেশ নামক একটি আলাদা দেশ পেয়েছিলাম, তাই না? অতঃপর যখন আমরা শাসক হয়ে যাই, তখন স্বার্থপরের মত ঠিকই শুষে খেয়ে ফেলি যত দাবি। ঠিকই সবলের মত শোষণ করি দূর্বলকে।

বাঘাইছড়ির ঘটনা বলা চলে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে তোলপাড় তুলেছে। তাতে আমরা বাঙালি হিসেবে বিব্রত। আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আমরা এতে বিদেশী শক্তির কূটচাল দেখি। আমরা এতে ভারতের কালো হাত দেখি। ভারতের লাভ দেখি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে আমাদের সীমান্ত রক্ষীরা মরলে আমরা গালির তুবড়ি ছোটাই। কিন্তু যখন আমরা বাঙালিরা আদিবাসীদের মারছি, জ্বালাচ্ছি তখন চোখ-কান বন্ধ করে আঁতেলিয় ভঙ্গিতে বলছি, আসলে যা দেখানো হচ্ছে, তা একপেশে, আমাদের বরং প্রকৃত সত্যটা জানা দরকার। আমরা শান্তি চাই। আশু সমাধান চাই। কি সেই সমাধান যাতে করে শান্তি আসবে? পাহাড়িদের অধিকারের জমি ফিরিয়ে দিয়ে নাকি কাহিনী ধামাচাপা দিয়ে, প্রতিরক্ষা বাহিনীতে লোকবল বাড়িয়ে, সেনাবাহিনী দিয়ে ঘিরে পাহাড়িদের আমাদের আয়ত্তে আনতে পারলে?

কি সেই সমাধান যার পরিকল্পনায়, প্রয়োগে প্রশাসন হিমশিম খায়? নাকি আমাদের মূলধারার জাতি নিয়েই এতো এতো সমস্যা যে উপজাতিদের দিকে নজর ফেরানোর সময় কোথায়! প্রয়োজন আসলে আদি ও অকৃত্রিম সদিচ্ছা এবং সৎসাহস। আদিবাসীদের পুনর্বাসনে সম্ভাব্য বিবেচ্য বিষয়গুলো যা হতে পারে -

১. আদিবাসীরা সংখ্যায় কত এবং কোথায় কোথায় তাদের বাসস্থান তা জরিপ করে সেই উপাত্ত লিপিবদ্ধ করা।
২. এলাকা ভিত্তিক ভূমি নিষ্পত্তিকরণ নথিপত্রগুলো ঘেঁটে সেখান থেকে জমির মালিকানার ইতিহাস বার করতে হবে। এসব পুরনো দলিল-কাগজপত্র জেলা অথবা থানা তফসিল অফিসগুলোতে পাওয়া যাওয়ার কথা।
৩. বিশেষত ১৯৭৪ সাল হতে আদিবাসীদের হস্তান্তরিত জমির চুক্তিনামাগুলো থেকে জানা যেতে পারে পূর্বেকার মালিক কে, কেন/কিভাবে জমি হস্তারিত হয়েছিল। স্থানীয় রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে সংরক্ষিত রেজিস্ট্রিশন ভলিউম বই থেকে আসল কাগজপত্র পাওয়া যাওয়ার কথা।

বিদেশে আমাদের সাথে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত আচরণ করা হয় বলে আমরা বাঙালিরা নাকি কান্না করি। ক্ষোভ দেখাই। নিজ দেশে আমরা যখন প্রথম শ্রেণী, আমরা যখন মূলধারার জাতি, তখন শ্রেণীকরণের এই খেলায় আমরাই বা কম কিসে! সেলুনে চুল-মুখ-হাত-পায়ের নখ পরিচর্যার জন্য এই আদিবাসী/পাহাড়ি/উপজাতিতের গড়ে-পিঠে তুলছিনা আমরা ?

অবশ্য আদিবাসীদের নিয়ে এতো ভাবনার সময় কোথায়! ১০০ থেকে ১০০০টা আদিবাসী লাশ পড়ুক না হয়, আমরা বাঙালিরা বরং কিভাবে একটি খাস ভূখণ্ড হাতছাড়া হওয়া থেকে রক্ষা করা যায় তাই নিয়ে সতর্ক থাকি !



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:১২
১১১টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×