বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক এটা প্রতিবেশী দেশটি চাচ্ছে না। এজন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলোর নিম্নমানের বীজ বাংলাদেশে ঢুকিয়ে বীজের জন্য নির্ভরশীল করে ফেলছে। পাশাপাশি ডাম্পিং করে কমমূল্যে ভারতীয় চাল বাংলাদেশে রপ্তানি করে কৃষকদের চাল উৎপাদনে অনাগ্রহী করে তুলছে। দেশের প্রধান খাতগুলোতে ভারতীয় আগ্রাসনের জন্য ‘রাষ্ট্রীয় নীতি’কে দায়ী করেছেন প্রফেসর আনু মুহাম্মদ। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, যখন দেশের পাটশিল্পকে ধ্বংস করতে আদমজি বন্ধ করা হয় তখন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নতুন নতুন পাটকল নির্মাণ করা হয়। ভারত বিশ্বব্যাংককে ‘প্রভাবিত’ করেই বাংলাদেশের আদমজি পাটকল বন্ধ করতে বাধ্য করে। একই সময়ে বিশ্বব্যাংক থেকে পাট খাতের উন্নয়নে ঋণ নেয় দেশটি, জানান আনু মুহাম্মদ। পাটে ভারতীয় আগ্রাসন এখানেই থেমে নেই। প্রতিবেশী দেশটির ‘ষড়যন্ত্রে’ মৃতপ্রায় খাতটির উন্নয়নে সরকার চেষ্টা চালালেও ভারতীয় ‘বীজ আগ্রাসনের’ সঙ্গে পেরে উঠছে না। দেশটি বাংলাদেশে নি¤œমানের পাটবীজ ঢুকিয়ে দিয়ে উৎপাদন ব্যহত করছে। পাশাপাশি ভারতীয় বীজের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। বিএডিসি’র খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক (বীজ ও বিপণন) লিয়াকত আলী বলেছেন, আমাদের বীজের মান অত্যন্ত ভালো। এছাড়া এ বীজ দুই বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তারপরও ভারতীয় পাটবীজে দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। আগে চাহিদার পুরো বীজই দেশে উৎপাদিত হতো। ভারতীয় বীজ আগ্রাসনের কারণে এখন আর দেশে তেমন বীজ উৎপাদিত হচ্ছে না জানান লিয়াকত আলী। ভারতীয় বীজ আগ্রাসনের কারণে পাটের আবাদ এবং উৎপাদন কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরে গতবারের এক লাখ ১৪ হাজার ৩৫৭ বেল পাট কম উৎপাদন হয়েছে । তৈরি পোশাক গত একদশক ধরে ভারতীয় আগ্রাসনের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু বাংলাদেশের ৮১ ভাগ রপ্তানি আয় আসা তৈরি পোশাক খাত। এই খাতের মধ্যমসারির জনশক্তি বেশিরভাগই ভারতীয়। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে গার্মেন্টে পরিকল্পিত অস্থিরতা তৈরি করে বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ আছে। আবার এসব বন্ধ হওয়া কারখানা ভারতীয়রাই কিনে নিচ্ছে। এভাবে প্রায় দেড়শ কারখানা ভারতীয় মালিকানায় গেছে, গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। ভারতীয়দের চাকরির বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেছেন, ফ্যাশন ডিজাইনারসহ বিভিন্ন কারিগরি পদের জন্য দেশে দক্ষ লোক পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়েই ভারতীয়দের ঢুকানো হচ্ছে। আবার বাংলাদেশের বায়িং হাউজ প্রায় সবগুলোই ভারতীয়। এদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে তৈরি পোশাকের অর্ডার ভারতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ.. বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা কেন্দ্রের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিবেশী দেশ ভারতের কিছু কোম্পানি আমাদের দেশে ব্যবসা করে। তাদের তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু গবেষণা করা হয়। এসব গবেষণা ফলাফল একটাই, আমাদের দেশের মুরগির মাংস খাওয়ার উপযোগী নয়। আমাদের ডিমের ভিটামিন কম, আমাদের ডিমের বাচ্চা উৎপাদন করলে রোগা হবে। তাদের ইচ্ছামতো গবেষণার নামে নানা ফলাফল দেখানো হচ্ছে। সকল গবেষণার একটায় ফল ভারত থেকে মুরগি, ডিম, বাচ্চা এবং খাবার আমদানি করতে হবে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কো-অডিনেশন কমিটির (বিপিআইসিসি) আহ্বায়ক মশিউর রহমান বলেন, এই খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনেও এসব পরিকল্পিত অপপ্রচার থামছে না। এবার আগ্রাসনের প্রধান লক্ষ্য কৃষি একদিকে ভারতীয় কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশে নিম্নমানের বীজ ঢুকানো হচ্ছে, অন্যদিকে ডাম্পিং করে (বাজার দখলে কমমূল্যে পণ্য সরবরাহ) কৃষিপণ্য রপ্তানি করছে। এরমাধ্যমে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে বাধা দিচ্ছে দেশটি, বলেছেন বিশেষজ্ঞরা
Shahid Khan
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০১