somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একান্নবর্তী পরিবার থেকে বৃদ্ধাশ্রম, এরপর কি?

১৯ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঋগ্ববেদের বিভিন্ন ঋগ পর্যালোচনা করলে একান্নবর্তী পরিবার ব্যবস্থা কত প্রাচীন তা বোঝা যায়। মানুষ পরিবার প্রথায় এসেছিল সভ্য হবার জন্য। সভ্যতা বিকাশে পরিবারের ভূমিকা যে অনস্বীকার্য তা এই প্রবাদ থেকে বোঝা যায়- ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’ বা ‘পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম পাঠশালা’।

পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কে আজ লিখতে আসিনি। আজ এসেছি পরিবারের গুনগত কাঠামো সম্পর্কে বলতে। ধরুণ- আপনি একটি গাছ লাগিয়েছেন এবং আপনার বন্ধুও একটি গাছ লাগিয়েছে কিন্তু আপনি গাছের গোড়া কেটে গাছ লাগিয়েছেন আর আপনার বন্ধু গোড়া সহ গাছ লাগিয়েছে। দুইজনই গাছ লাগিয়েছেন কিন্তু একজনের গাছ খুব দ্রুত বেড়ে উঠবে আর আরেকজনের গাছ হয়ত বেড়ে উঠবে বা মরে যাবে মাঝপথ। আমাদের পরিবার ব্যবস্থা সেই গোড়াবিহীন গাছ লাগানোর মতই হয়ে যাচ্ছে । আমরা যেখানে প্রকৃতির কোলে মানুষ হয়েছি , দাদী-নানীর মুখে গল্প শুনে ঘুমিয়েছি, তাদের শাসনে বড় হয়েছি সেখানে বর্তমান প্রজন্ম বড় হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। প্রকৃতির দান এবং যন্ত্রের দান কখনো এক হতে পারে না। উন্নত জীবিকা নির্বাহের অজুহাত দিয়ে আমরা বর্তমানে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে ছোট পরিবারে চলে যাচ্ছি। বাবা-মা কে গ্রামে রেখে বা দূরে রেখে সন্তান স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছেন। আপনি এবং আপনার স্ত্রী দুইজনই চাকরিজীবী। সন্তানকে দেখাশোনা করার সময় নাই। আপনার সন্তান বড় হচ্ছে কাজের বুয়ার কাছে বা অনেক যন্ত্রের ছত্রছায়ায়। ফলশ্রুতিতে পারিবারিক মূল্যবোধ কিন্তু গড়ে উঠছে না। তার মধ্যে মানবিকতা সৃষ্টি হচ্ছে না। আপনি হয়ত ভাবছেন, টাকা কামাতে পারছি, সব চাহিদা পূরণ করতে পারছি আর কি দরকার। কিন্তু এই শেকড় বিহীন পরিবারের ফলাফল আসন্ন এবং এর পরিণাম ভয়াবহ। আপনার সন্তান হয়ত একদিন আপনাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আলাদা স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকবে কারণ, তার মধ্যে পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব ও মূল্যবোধ গড়ে উঠেনি। এভাবে কি ভেবেছেন একবার??

একান্নবর্তী পরিবার আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এই পরিবার নিয়ে রচিত হয়েছে কত নাটক এবং চলচিত্র। এই পরিবারে বটবৃক্ষের ন্যায় একজন কর্তা থাকে। তার পরামর্শেই সব কাজ হয়ে থাকে। তিনি ছায়ার মত সবাইকে আগলে রাখে। পারিবারিক মূল্যবোধ এখান থেকেই গড়ে উঠে। বাঙালি সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে যদি পারিবারিক বন্ধন মজবুত না হয়। দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল তরূণ-তরূণী একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছি তা হল-‘লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি।'

আমরা চাই আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির মাধ্যমে বিশ্ব আমাদের চিনুক। সংস্কৃতির মাধ্যমে বিশ্ব আমাদের চিনুক। সংস্কৃতির আবাস হচ্ছে পরিবার। সেই পারিবারিক মূল্যবোধ ও বন্ধন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে লোরক সোসাইটি পরিবারের সদস্যরা এবারের ঈদ বৃদ্ধাশ্রমে করতে যাচ্ছে। এই দাদী-নানীদের মুখেই আমরা শুনেছি কিসসা, ছড়া, শিলুক, নীতি মূলক প্রবাদ-প্রবচন। আমরা যদি তাদের কাছ থেকে দূরে থাকি এবং তাদেরকে একঘরে রাখার মত বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেই তাহলে আমরা যা হারাবো তা অপূরণীয়।

সুবার্তা প্রবীণ সেবা কেন্দ্র, ব্যাংক টাউন, সাভার এখানে প্রায় ২০ জন প্রবীণ লোক বসবাস করেন। তাদের দুঃখের গল্প আপনাদের শোনাবো না। তাদের সাথে একটু আনন্দময় সময় কাটাতে চাই। তারা যে অভিজ্ঞতার ঝুলি বহন করছেন সেই অভিজ্ঞতাকে সম্মান দিতে চাই। আমরা ঈদের ২য় দিন সেখানে যাচ্ছি। সকাল ১১.০০ টায় সেখানে গিয়ে উপস্থিত হব। সারাদিন থাকবো, তাদের সাথে গল্প করবো, একসাথে খাব, গান শোনাবো, অনেক মজা করবো। সেই গল্প আপনাদের সেখান থেকে ফিরে এসে শোনাবো।

সবাইকে লোরক সোসাইটির পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক!!!
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×