somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মরা ফুল

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক

"আচ্ছা? তোমার কি কখনো অযথাই মন খারাপ করতে ইচ্ছে হয়? তারপর মন খারাপের সেই অঙ্কুরটাকে পানি আর সূর্যের আলো দিয়ে বড় করতে ইচ্ছে হয়? তারপর কারোর উপর খুব অভিমান করে ভ্যান ভ্যান করে কাঁদতে ইচ্ছে হয়? সেই কেউ'টা বা অন্য কেউ তোমার মন ভালো করার চেষ্টা করলে মন খারাপ ভাবটাকে আসন গেড়ে বসানোর চেষ্টাটা কি তুমি করো? আমি জানি তুমি করো না। অপরিণত বয়সের সেই আবেগটাকে পানি আর সূর্যের আলো দিয়ে বাড়তে দাওনি তুমি। অঙ্কুরটাকে ছুরি দিয়ে কেটে ফালাফালা করে ফেলেছো । কিংবা চারপাশে তৈরি করেছো পাথরের শক্ত দেয়াল। কখনো কখনো পাথরের দেয়ালে ফাটল ধরে। আর সেই ফাটলের সংকীর্ণ দৃষ্টিপথে ধরা পড়ে আবেগের চারা গাছের কচি কচি পাতা।

নাকি এসবই আমার ভ্রম। কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়াই আমি, তাই না? জানি! তোমার কঠিন হৃদয়ে সেই অঙ্কুরের স্থান নেই এখন আর। হাসছো তুমি? ভাবছ, কী সব ছাইপাঁশ লিখে রেখেছে অহংকারী মেয়েটা? হাসো, আমি বারণ করবো না। কিন্ত হাসিতে যেন ন্যাকামো না থাকে। ন্যাকা হাসি আমার একদম পছন্দ না। আর সেটা যদি ছেলেদের মধ্যে থাকে, সেটা আরো ভালো লাগে না।

অনেক কিছু লিখব - এই ভেবে লেখতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু এখন আর কিছুই মাথায় আসছে না। "

গুিট গুিট হরফে লেখা কাগজটাকে দুমড়ে মুচড়ে নষ্ট করার চেষ্টা করলো নীতা। তারপর ছুঁড়ে ফেলল ঘরের কোনে। নিজের উপরই মেজাজ খারাপ লাগছে। কিছুক্ষণ পর নিজেই গিয়ে কাগজটা তুলে আনলো। মেলে, মসৃণ করার চেষ্টা করলো। কী যেন ভাবলো ওটার দিকে তাকিয়ে। তারপর ওটা দেখে দেখে নতুন একটা কাগজে নতুন করে লিখলো। আরো ধীরে ধীরে, পরিপাটিভাবে। তারপর যত্ন করে ভাঁজ করে, হুমায়ুন আহমেদের "এইসব দিনরাত্রি" বইটার ভিতরে রাখলো। রেডি হয়ে বের হওয়ার আগে চোখে মোটা করে কাজল দিলো নীতা। ফারাবী কাজল কালো চোখ পছন্দ করে।

দুই

আজ কতদিন পর নীতার সাথে দেখা হবে! সকাল সকাল ক্যাম্পাসে এসে রইল ফারাবী। এতদিন পরে দেখা হচ্ছে। কিছুতেই ওকে দেরি করিয়ে রাখবে না। অপেক্ষা করতে একদম পছন্দ করেনা নীতা।

"শুভ জন্মদিন! "

একসাথে চিৎকার করে উঠলো ফারবীর বন্ধুরা। এত তন্ময় হয়ে ভাবছিল যে ওদেরকে দেখতেই পায়নি। খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে বন্ধুদের দিকে তাকালো ফারাবী।

'এখনো আসছে না কেন?' - আপন মনে বিড়বিড় করতে করতে বন্ধুদের জটলা থেকে বের হয়ে এলো ফারাবী। কিছুই ভালো লাগছে না। সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসল সে।

তিন

'Excuse me! কলমটা কি দেয়া যাবে?' চমকে উঠে পিছনে তাকালো ফারাবী। তাকিয়ে দেখে কালো বোরখা পরা একটি মেয়ে জিজ্ঞাসু নয়নে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কলমটা এগিয়ে দিলো সে।
'ধন্যবাদ,' একটু মুচকি হেসে বলল মেয়েটা।

বছর তিনেক আগে নীতার সাথে প্রথম কথোপকথোনের দৃশ্যটা মনে পড়ে গেল ফারাবীর। ঠিক যেন চোখের সামনে ঘটছে দৃশ্যগুলো। একসাথে কোচিং করত ওরা UCC তে। কিন্ত কখোনোই কোন কথা হয়নি।

শর্ট কোর্সের হওয়াতে খুব তাড়াহুড়ো করে ক্লাসগুলো করানো হয়েছিল ওদের। শেষ ক্লাসে কিছু আনসলভড অংক অন্য মেয়েদের সাথে মিলানোর চেষ্টা করছিল নীতা । অইদিন হালকা পাতলা কথা বলেছিল ফারাবীর সাথে। সেই শেষ। আর দেখা হয়নি সে বছর নীতার সাথে। ক্লাসমেট একটা মেয়ের কাছ থেকে নীতার নাম্বার নিয়েছিল ফারাবী। তারপর পরীক্ষার আগের দিন কাঁপা কাঁপা হাতে কল করেছিল ওকে। ফরমালিটির দুই একটা কথা বার্তা বিনিময় করার সময় কেন যেন ওর কথা আটকে আটকে যাচ্ছিল! বলতে পারবে না, কেন।

এরপর অনেকদিন পর আবার ফোন করেছিল। টুকটাক কথাবার্তা থেকে ফারাবী জানতে পারলো নীতাও আবার তার মত ভার্সিটিগুলোতে পরীক্ষা দিবে। একটা বছর অনেক লম্বা সময়। এসময় ওদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব জমে যায়। দুইজন আলাদা আলাদা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলেও নিয়মিত কথা হয় ওদের, দেখা হয়। সেই সাথে আরো একটা অদ্ভুত কাজ করে ওরা। সেটা হল চিঠি লেখা-লেখি । ফেসবুক, মোবাইল মেসেজিং এর তুলনায় যেটা অনেক বেশি আনন্দদায়ক ছিল ওদের কাছে।

মোবাইলের তীক্ষ্ম শব্দে ভাবনার ছেদ পড়লো ফারবীর, নিশ্চয়ই নীতার কল! তাড়াহুড়ো করে মোবাইলটা বের করে কানে ঠেকালো। না, নীতা নয়। সুরভী। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছে। নিস্পৃহ গলায় ধন্যবাদ জানিয়ে ফোনটা কেটে দিল ফারাবী। ফোনে এইসব যান্ত্রিক শুভেচ্ছা বিনিময় আর ফরমালিটির চেয়ে অতীত রোমন্থন করতেই ভালো লাগছিল তার।

চার

ঢাকার পরীক্ষাগুলো শেষ করে চট্রগ্রামে যাচ্ছে নীতা। ফারাবী আর কোথাও দিবে না। ঢাকায় চান্স না হলে পড়াশোনাই করবে না সে।
সেই সময়টাতে তাদের বন্ধুত্ব এতই গভীর ছিল যে, পরিচিত বন্ধু বান্ধব সবাই ভাবত, ওদের মধ্যে কোন ভালোবাসার সম্পর্ক আছে।

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের
পরীক্ষা শেষ করেই ফারাবীকে কল করেছিল নীতা।
গলায় উচ্ছাস ঢেলে বলেছিল,
'জানিস? তোর শেখানো পড়া থেকে তিনটা বাংলা প্রশ্ন আসছে!'
'বাহ! দারুণ....!'
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল ফারাবী, 'তুই কি আমার মেসেজ পড়িস নাই?'
'নারে!' গলায় আক্ষেপ ঢেলে বলল নীতা । 'মাত্রই তো ফোন খুললাম। রেজাল্ট কি তোর?'
'বলব না। তুই মেসেজে দেখে নে।'
'আচ্ছা এক সেকেন্ড...
ফারবীইইইই! D ইউনিটে ছিচল্লিশতম হইছিস তুই! কনগ্রাচুলেশনস! তুই তো বাজি মেরে দিছিস!'
'ধন্যবাদ, ধন্যবাদ। আচ্ছা বাসায় যা, পরে কথা হবে,' বলে রেখে দিয়েছিল ফারাবী।

সন্ধার পর যথারীতি আবার ফোন করে ফারাবী। নরম গলায় বলতে শুরু করে, 'জানিস, আব্বু আজকে ফোন করে কেঁদেই দিছে । আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর মধ্যে এটাই সেরা দিন। সবাই যে কি পরিমান খুশি, ভাবতেও পারবি না তুই। অধরা স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার যে কী তৃপ্তি - তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।'

'স্বাভাবিক,' উত্তর দেয় নীতা।
'আমিও খুব খুশি। কিন্ত জানিস? কেনো যেনো তোকে খুব দূরের মনে হচ্ছে ...'
'এর মানে কী? আগে আমি তোর খুব কাছের ছিলাম?' নীতার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে দুষ্টুমীর হাসি হাসতে হাসতে বললো ফারাবী ।
'বোকার মত কথা বলবি না!' ধমকে উঠলো নীতা। 'তুই তো আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু...!'
কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইল দুইজনেই। তারপর নীতাই আবার বললো,
'কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে তুই আমার সাথেই আছিস। অথচ হাত বাড়ালে তোকে নাগালের মধ্যে পাচ্ছি না। যেন অনেক দূরে তুই।'
'প্লিজ, তুই এইভাবে কথা বলিস না। তা না হলে আমার এই খুশি মিইয়ে যাবে।'
'আচ্ছা ঠিক আছে, বলবো না। খুশি?'
নীতার কথাটা এড়িয়ে গিয়ে ফারাবী বলল, 'তোর কি মনে আছে, DU তে চান্স পেলে আমি একটা জিনিস চেয়ে নিবো বলেছিলাম?'
'হু, মনে আছে। বল কী চাই?'
'বলব না।'
বলে খট করে ফোনটা কেটে দিল ফারাবী। নীতা নিশ্চয়ই এখন ফোনটার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে? মুখের ওপর ফোনটা রেখে দেয়া নীতার খুবই অপছন্দের কাজ।

পাঁচ

মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে আছে ফারাবীর। এমন কেন লাগছে ওর কাছে? আবীদ তো নীতার বন্ধু- ওর প্রতি ফারাবী কেন ঈর্ষান্বিত হবে?

সকালে ঘুম ভেঙ্গে নীতার মেসেজটা দেখার পর থেকেই অস্থির লাগছে ওর। নীতার বান্ধবী মাধবীকে পাঠানো মেসেজটা ভুলে চলে এসেছে ফারাবীর নাম্বারে । মেয়েটা প্রায়ই এমন ভুল করে। কি বিরক্তিকর!
হাতে ধরা মোবাইলটায় ওই মেসেজটাই ওপেন করা আছে। তাতে লেখা,
'দোস্ত, কি অবস্থা তোদের? কেমন আছিস তোরা ? কেমন পরীক্ষা দিচ্ছি খবরও তো নিলি না! আচ্ছা যাই হোক, শোন। কালকে না খুব মজার একটা কাহিনী হইছে। দুইটা পরীক্ষা ছিল কাল। মাঝখানের বিরতির সময় সবাই মিলে গল্পগুজব করছিলাম। হঠাৎ মনে পড়লো, পরীক্ষা শেষ করে ফিরতে ফিরতে অনেক দেরী হয়ে যাবে। কার সাথে ফিরবো? পরে আবীদ বললো সে নাকি আমায় বাসায় পৌছে দিবে।
পরীক্ষা শেষে আমরা শাটলে করে যাওয়ার জন্য প্লাটফর্মে এসে দাড়ালাম। ট্রেনে উঠার চেষ্টা করছি, কিন্ত এত ভিড় যে পা ফেলার জায়গাও নাই। হঠাৎ পিছনে ফিরে দেখি আবীদ নাই। অন্ধকার হয়ে এসছে, আবছা আলোয় পোলাপাইনের ভীড়ের মধ্যে খুঁজতেছি। কিছুক্ষণ পর দেখি তেড়ে আসতেছে আমার দিকে, বকাবকি করতে করতে বলতেছে, "তোর ফোন অফ ক্যান! আমি তো ভাবলাম ট্রেনের নিচেই পড়ে গেছিস। " "ওর মুখভঙ্গী দেখে তো আমার হাসি থামেই না....'

আরো কিছু হয়তো লেখা ছিল মেসেজটায়, কিন্ত এত বড় যে পুরোটা আসেনি। এই মেসেজটাই কেনো ওর ফোনে ভুল করে চলে এলো? সাথে সাথে ডিলিট করে দিল ফারাবী মেসেজটা। বিড়বিড় করে খেদ প্রকাশ করলো সে। মুখ খারাপ করে গাল দিল। এত অস্থির কেন লাগছে? অদ্ভুত একটা অনুভূতি- ধরণটা বুঝতে পারছে না ও। নীতার ফোন নাম্বারটাও ব্লক করে দিল ফারাবী।

সারাদিন তিনটা মেসেজ পেল নীতার। নিশ্চয়ই বহুবার কলও করেছে? মেসেজের উত্তরও দেয়নি ফারাবী।

দুইদিন পর বিছানায় শুয়ে ছাতের দিকে তাকিয়ে আছে সে। অচেনা সেই অনুভূতিটাকে এখন চিনতে পেরেছে। আর বহু চেষ্টা করেও সেটা অস্বীকার করতে পারছে না। নিজেকে শতবার বারণ করা সত্বেও নীতার নাম্বারে কল করলো ফারাবী, রিং হচ্ছে।

একবার

দুইবার

তিনবার

ফোন ধরছে না মেয়েটা, ধরবে না জানা কথা। অভিমানী মেয়েটা নিশ্চয়ই রেগে বোম হয়ে আছে? আবার ফোন করলো ফারাবী।

'কেনো ফোন করছিস তুই? এক্ষুণী ফোন রাখ!' সবসময়কার মতই অভিমান মিশানো রাগ নিয়ে বললো নীতা। কিন্ত আজকে ওর কোন কথা শুনবে না ফারাবী। আজ নিজের আবেগ আর অনুভূতির কথা বলবে সে।

'নীতা, শোন! আমি তোর প্রেমে পড়ে গেছি। দুইদিন ধরে এটাই বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম। আমি তোকে ভালোবাসি। এবং সেটা বন্ধুর ভালোবাসা নয়।'

ওপাশে নীতা একদম চুপ মেরে আছে। সে কি আগে এটা আঁচ করতে পারেনি?
'কিছু বলবি না?'
'কী বলবো বুঝতেছি না। তুই বুঝি আর কোন মেয়েকে খুঁজে পেলি না?'
জবাব দিল না ফারাবী । নীতা বললো, 'তুই যেটা চাচ্ছিস, সেটা সম্ভব না । তুইও জানিস, আমিও জানি। সুতরাং আমাদের বন্ধুত্ব যেমন ছিল তেমনই থাকবে, ব্যাস!'
'উহু! ওটা আমার পক্ষে সম্ভব না। কাওকে ভালোবেসে ফেলার পর তার সাথে বন্ধুত্বের অভিনয় করার মত কষ্ট আর কিছুতেই নাই। ওটা যদি সম্ভব হতো আমি তোকে প্রপোজটাই করতাম না।'
'কিন্তু তোর সাথে বন্ধুত্ব ভেঙ্গে গেলে আমি থাকতে পারব না, তুই তো জানিস আমি পারবো না।'
'তাহলে একেবারে তোর করে নে।'
'আমি সেটাও পারবো না। কারণ তো তুই জানিস। আমি পারবো না।'
'কেন পারবি না, বল? কেন পারবি না? আমি কখনো তোকে দুঃখ দিব না।এই দুইদিন আমি নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি। নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিছুতেই কিছু হয়নি। আমি পারছি না!'
থামলো ফারাবী। আশা করলো ওপাশ থেকে নীতা কিছু একটা বলবে। নীতাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আবার শুরু করলো সে।
'আমার জীবনের সেরা সময়টা হচ্ছে এখন। অথচ এখন আমি কারো সাথে কথা বলি না। ছাদে যাই না, নীচে যাই না। বন্ধুরা আড্ডা দিতে ডাকলে যাই না। ফুচকার দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে বুকের মধ্যে একটা তীক্ষ্ণ ব্যথা খচ করে উঠে। কেনো এমন হবে, বল তো? এখন তো আমার চরম ফূর্তিতে থাকা উচিৎ। একটা বছর যে কষ্ট করেছি, তার ফল পেয়ে গেছি আমি।
কিন্ত আমি ভালো থাকতে পারছি না। সারদিন উদাস হয়ে বসে থাকি। টেস্ট খেলা দেখি বাসায় বসে। রাতে ঘুমাতে পারি না। কেন? কেন এমন হচ্ছে আমার সাথে, বলতে পারবি? জবাব তো তোকেই দিতে হবে। কারণ চোখ বন্ধ করলে আমি যে তোকেই দেখতে পাই।' একটু থামলো ফারাবী, তারপর আবার দম নিয়ে বললো,
'তিলেত্তোমা! আমি তোকে ভালোবাসি! এখন বল, তুই কি করবি। তোর কাছে দুইটা পথ খোলা আছে । এক, তুই আমার জীবনের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে থাকবি।
দুই, আমাকে ছেড়ে চলে যাবি। এখন সিদ্ধান্ত তোর কাছে। বল কী করবি?'
'আমি দুইটার একটাও করতে পারবো না। তুই আমার যেমন বন্ধু ছিলি তেমন বন্ধু হয়েই থাকবি।'
'না, তা সম্ভব না। আগেই বলেছি।'
'তাহলে?'
'তাহলে?'

দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফারাবী। 'তাহলে এই পর্যন্তই। আমি তোকে আর ফোন করব না। আর তুইও আর করিস না। তাহলে হয়ত দুজনের জন্যেই ভালো হবে।'
'কিন্ত...' ক্ষীণ গলায় আপত্তি জানাতে চায় নীতা, ফারাবী থামিয়ে দেয় ওকে।
'এটাই হয়তো একমাত্র উপায়। এখন থেকে আমরা দুজন দুজনকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। আর তুই কিন্ত খুব ভালো থাকবি। পাশের মানুষটাকে ভালো রাখবি। ভালোবাসবি।'

নীতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফোনটা কেটে দিল ফারাবী। গড়িয়ে যাওয়া চোখের পানিটা বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে মুছে নিলো চট করে। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই।

ছয়

সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে অনেকগুলো জটলা বেঁধে আছে। এর মধ্যে কোনটায় যে ফারাবী আছে, বুঝতে পারছে না নীতা। তার অনুসন্ধানী চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে ফারাবীকে। পেয়েও গেল, একটা জটলার মধ্যমনি হয়ে আছে সে। চোখাচোখি হতেই জটলা থেকে বের হয়ে নীতার দিকে এগোল। নীতাও হাসিমুখে পা বাড়ালো ফারবীর দিকে। কিন্ত একি! ফারাবীর চোখ ছলছল করছে কেন? গালটাও কি ভেজা ভেজা দেখাচ্ছে না? কাঁদছিল নাকি? আজকের দিনে কাঁদবে কেন ও?

'শুভ জন্মদিন!'
বইয়ের প্যাকেটটা বাড়িয়ে ধরলো নীতা। মৃদু হেসে প্যাকেট খুলে বইটা দেখলো ফারাবী।
'ধন্যবাদ!' বললো সে।
'চল, ওখানে সবাই অপেক্ষা করছে।'
'চল!' একটু কেঁপে উঠল নীতার গলা। কারণ ফারবীর চোখ এড়িয়ে চিঠিটা বইয়ের পাতা গলে মাটিতে পড়ে গেছে। আর ফারাবী সেটা মাড়িয়ে দিয়ে হাঁটতে শুরু করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য পরিত্যক্ত কাগজের ভীড়ে মিশে গেছে নীতার আবেগপূর্ণ চিঠি। পড়ে থাকা চিঠিটার দিকে আর একবারও তাকালো না নীতা। ফারাবীর দেখিয়ে দেওয়া পথে হাঁটতে শুরু করলো।

ফারাবীর বন্ধুদের সাথে সারাটাদিন খুব ভালো কাটলো নীতার। গল্প-গুজব, আড্ডা, সারপ্রাইজ পার্টি, কেক কাটা, ছবি তোলাতুলি, খাওয়া দাওয়া সব মিলিয়ে ব্যস্ত একটা দিন কাটলো। একে একে ফারাবীর সব বন্ধুরা বিদায় নিলো। শুধু রইল নীতা, ফারাবী আর মিনহাজ। তিনজনে মিলে ক্যাফেটেরিয়ার বারান্দায় বসে রইলো অনেকক্ষণ। শেষ বিকেলে অসম্ভব মায়াবী একটা মেয়ে এসে ওদের সাথে যোগ দিল। তার হাতে ছিল কেক, পার্টি স্প্রে আর অনেকগুলো ছোট ছোট মোমবাতি।

সাত

লাবন্য যে আসবে, জানতো ফারাবী। একবার ভেবেছিল বারণ করে দেবে। পরে আর করলো না। লাবন্যকে দেখে নীতার প্রতিক্রিয়া কী হয় জানতে চায়। ক্যাম্পাসে একদিন লাবন্যকে দেখে ওর পিছু পিছু ঘুরেছিল কয়েকদিন। তারপর একদিন হুট করে প্রপোজও করেছিল। যদিও মেয়েটা না করে দিয়েছে, কিন্ত আচার আচরণ দেখে বোঝাই যায় ফারাবীকে পছন্দ করে সে। আর এটা বোঝার পর থেকে ওকে এড়িয়েই যাচ্ছে। যাতে মেয়েটা ওর দিকে আরো বেশি করে ঝুঁকতে বাধ্য হয়।

নীতার সামনে লাবন্য ফারাবীকে কেক মাখিয়ে দিচ্ছে। ফারাবী আড়চোখে নীতার দিকে তাকালো। নীতা গভীর মনোযোগ দিয়ে ফেইসবুক চালাচ্ছে। ফারাবী বলল, 'এই নীতা! ছবি তোল!'
নীতাকে হাসতে দেখলো ও। কিন্তু হাসিটা কি মেকি দেখাচ্ছে? নীতা নিজের ফোনেই ফারাবীর সাথে লাবন্যের ছবি তুললো, হাসিটা ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেই।

আট

রৌদ্রজ্জল দুপুর্। গনগনে রোদ না , স্নিগ্ধ রোদ। অনেকটা শীতের সকালের রোদের মত। হঠাৎ করেই রোদটা সরে গিয়ে আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমেছে। ঝুম
বৃষ্টি। মূহুর্তেই জানালার পাশের
বিছানাটা বৃষ্টির ছাটে ভিজে একাকার হয়ে।
এত তীর্যকভাবে পড়ছে বৃষ্টি! জানালার
কাঁচটা টেনে দিতেই বড়বড় বৃষ্টির ফোটা আঘাতহানতে লাগল। প্রবল
বৃষ্টিতে গাড়িতে বসে সামনে তাকালে গাড়িরসামনের কাঁচটায় যেভাবে বৃষ্টি পড়ে ঠিক তেমনিভাবে জানালায় বৃষ্টি পড়ছে।

কেন যেন দৃশ্যটা দেখতে অদ্ভুত ভালো লাগছে নীতার।বাসার সবাই
হুড়াহুড়ি করে সবগুলো দরজা জানালা বন্ধ করছে। কেউ ছাদে যাচ্ছে শুকনো কাপড়গুলো আনার জন্য। ঘর ভিজে যাওয়ায় কেউ কেউ চেঁচামেচি করছে।
মায়েদের চেঁচামেচি শুনে বাচ্চাগুলো চিতকার করে কেঁদে উঠছে। সব মিলিয়ে হযবরল অবস্থা!

এইসব গ্যাঞ্জামের কিছুই নীতাকে স্পর্শ করছে না। গুটি গুটি পায়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই, বাতাসের ঝাপটা আর বৃষ্টির ছাট নীতার চোখেমুখে এসে লাগল। ওর ভাল ভাল অনূভুতির খাতায় আরেকটা অনূভুতি যুক্ত হল। তীর্যক বৃষ্টিতে বারান্দায় দাঁড়িয়েই খুব ভালোভাবে ভিজতে পারছে সে। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টিটা উপভোগ করছে। ভুলেই
গেছে কয়েকদিন ধরেই তার সর্দি লেগে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসে পড়তে পারে।

বৃষ্টি এত তীর্যকভাবে পড়ছে যে বারান্দায় দাঁড়িয়েও সে বৃষ্টিতে ভেজাটা উপভোগ করতে পারছে। আহা! ছাদে যেতে পারলে কী মজাটাই না হতো! চোখ বন্ধ করে একটা কবিতা আবৃতি করলো ও।

" পারিনি তোকে আজও ভুলিতে...

হয়তো ভুলিবো না বলিয়াই করিয়াছি পন!

কাটছে দিনগুলি বড় বিষন্নতার ঘোরে...

মনের সকল আশায়,পড়িয়াছে মরিচার ঘন আস্তরণ...

ধুলো জমিয়াছে স্মৃতির পাতাগুলিতে...

রইলো না বাকি, কোন অবলম্বন...

রাখলি না কথা,থাকলি না পাশে...

তবে কেন এসেছিলি রাঙাইতে মোর স্বপন?"

কিন্তু চোখটা খুলেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল নীতার। নিচে রাস্তার টং এর দোকানে, শেডের নিচে দাঁড়িয়ে একটা লোক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। যেন বারান্দায় দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্যটা খুবই
মজাদার একটা দৃশ্য। জলন্ত দৃষ্টিতে একবার তার দিকে তাকিয়ে বাসায় ঢুকে গেল নীতা।
ইসসসসসস!
লোকটা না থাকলে তো আরেকটু ভিজা যেত! মনটা খারাপ হয়ে গেল ওর।

নীতা, নীতার মা আর ভাইকে নিয়ে ওর মামার বাসায় বেড়াতে এসেছে। ছোট মামার বিয়ে। দুই সপ্তাহ আগেই ওদের এসে পড়তে হয়েছে। বিয়ের যাবতীয় কেনাকাটা, অন্যান্য কাজকর্ম তো ওদেরকেই দেখতে হবে। আর এই সময়টাতেই ফারাবীর জন্মদিনটা হওয়ায় প্রায় চার বছর পর ওর সাথে দেখা হলো। এখন মনে হচ্ছে দেখা না হলেই ভালো হতো। সুপ্ত আবেগটাকে ঘুমুতে দেওয়াই উচিৎ ছিল। কেন সেটাকে জাগিয়ে দেয়া হলো? তাছাড়া বছর চারেক আগে যে ছেলেটাকে সে ফিরিয়ে দিয়েছিল, আজ কেন তার জন্য এত খারাপ লাগছে? এই ধরনের আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোন মানে হয়? সে তো এখন আর টিন এজের অবুঝ মেয়ে নয়। আবেগের লাগাম যখন হাতছাড়া হয়ে যাবার কথা, তখন তো ঠিকই টেনে ধরতে পেরেছিল। এখন কেন সেটা মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠছে?

নয়

যাবে না যাবে না বলেও "শাহবাগে কাজ আছে আমার" অজুহাতে বাসা থেকে বের হলো নীতা। আসলে এই খোঁড়া অজুহাত দিয়ে নিজেকেই বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফুল কিনতে হবে বাসার জন্য। সন্ধায় সবাই শাড়ির সাথে মাথায় ফুল পড়বে। কিন্তু সেটা আতিককে বললেও হতো। আতিক নিয়ে আসতে পারতো।

সে নিজে বের হবার আসল কারণ কী? মনের আনাচে কানাচে উত্তরটা খুঁজতে শুরু করলো। যেটা পেল, তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। না, না! কীসব যা তা ভাবছে সে! আসলে আতিক ভালো ফুল কিনতে পারবে না। সবসময় মরা ফুল কিনে নিয়ে আসে। সেজন্যই তো নীতা নিজেই বের হয়েছে।

হাতে কোন কাজ না থাকায় বাসে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে নীতা। অবচেতন মনে কখন যে ছেলেটার নাম্বারে ডায়াল করেছে নিজেই জানে না।

'বন্ধু!'
গলায় একরাশ আগ্রহ ঢেলে পরিচিত কণ্ঠটা বলে উঠলো। তার গলা শুনে ঘাবড়ে গেল নীতা। নিজের উপরেই রেগে গেছে। কেন ফোন দিতে গেল ছেলেটাকে?
'হ্যালো বন্ধু, আছিস? হ্যালো! হ্যালো!' উতকন্ঠা ঝরে পড়লো ছেলেটার গলায়।
'আছি!'
বহুকষ্টে যেন জবাব দিল নীতা।
'এত গ্যাঞ্জাম কিসের? কথা বোঝা যায় না কেন? তুই বাসে নাকি? কই যাস?'
'শাহবাগ।'
এত কথার উত্তর হিসেবে এই একটা শব্দকেই বেছে নিলো সে। আর কিছু বলার দরকার নাই।এটুকুই যথেষ্ট। ফোন কেটে দিল নীতা।

শাহবাগ পৌঁছে বাস থেকে নেমেই ফারাবীকে দেখলো নীতা। মুখ ফিরিয়ে ফুলের দোকান গুলি খুঁজতে শুরু করলো। কিন্তু কেন যেন সবগুলি দোকানই বন্ধ। আশ্চর্য! ফুলের দোকান তো বন্ধ থাকার কথা না!

ফারাবী যে পাশে পাশে হাঁটছে, ঠিক বুঝতে পারছে নীতা। ওর নিঃশ্বাসের শব্দও যেন শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু হনহন করে হেঁটেই চলেছে সে।

'নীতা! কোথায় যাচ্ছিস!'
'ফুল কিনতে এসেছি। সন্ধ্যায় মামার হলুদ।'
'ফুলের দোকান এখন সব বন্ধ পাবি। দেখছিস না কত র‍্যাব? সোনিয়া গান্ধি যাবে এই রাস্তা দিয়ে। তুই টিএসসিতে চল। কিছুক্ষণ আড্ডা মারি।'

নীতা ফারাবীর দিকে তাকালো একবার। তারপর মাথা নেড়ে বলল, 'চল।'

টিএসসির বটতলায় লোহার রেলিং এ কিছুক্ষণ বসলো ওরা। ছাড়া ছাড়া কিছু কথাবার্তা হলো। বেশিরভাগ সময়ই চুপ করে বসে রইল ওরা।

কিন্তু মিনিট বিশেকের মধ্যেই সেখানে লাবন্য চলে এল। তার খানিক বাদে এল মিনহাজ। ফারাবী বলল, 'চল, টিএসসির ভিতরে গিয়ে বসি।'
মাথা নেড়ে বারণ করে দিলো নীতা।
'তোরা যা। আমার ফিরতে হবে। সন্ধ্যায় প্রোগ্রাম আছে।'
'আরেহ চল! অল্প কিছুক্ষণ বসিস।'
মিনহাজ বাঁধা দিয়ে বললো।

কিছুক্ষণ ইতস্তত করলেও ওদের সাথে ভিতরে গিয়ে বসলো নীতা। কেন যেন ওদের সাথে ঠিক মিশতে পারছে না আজ। অথচ বন্ধুমহলে আড্ডাবাজ হিসেবে বেশ খ্যাতি আছে ওর। গতকালও তো আড্ডা মারলো। বলতে গেলে ওইই মাতিয়ে রেখেছিল। কিন্তু আজ কেন যেন কিছুই ভালো লাগছে না ওর। আড্ডা চলাবস্থাতেই হঠাত সে উঠে বলল, 'গেলাম!'
বলে আর দাঁড়ালো না। হনহন করে হাঁটতে শুরু করল। একবার পিছনে তাকালোও না।

টিএসসি থেকে বের হয়ে এক রিকশাওয়ালা মামাকে ডাক দিল নীতা। তার চোখ পানিতে টলমল করছে। কেন যেন মনে হচ্ছে, ফারাবী কি আসবে ওর পিছন পিছন? হুট করে চড়ে বসবে কি ওর পাশে?

রিকশা চলতে শুরু করেছে। নীতা প্রাণপণ চেষ্টা করছে কান্না থামাবার। কিন্তু সেটা কিছুতেই থামছে না। কেন কাঁদছে সে? কিসের জন্য এই কান্না?

ব্যাগ হাতড়ে কয়েক বছর আগে কুরিয়ারে পাওয়া ফারাবীর চিঠিটা বের করে মেলে ধরলো। চোখ মুছে পড়তে শুরু করলো নীতা।

"এই যে তিলোত্তমা,
হ্যাঁ! তুমিই তো সেই তিলোত্তমা, যার জন্য অনায়াসে সিন্ধু বিজয় করা যায়। যাকে দেখার জন্য চোখের সামনে থাকা হিমালয়কে মনে হবে শুধুই একটা উঁচু দেয়াল। যার জন্য আমি হাজার থেকে হাজারো বছর, জীবন থেকে জীবনতর অপেক্ষা করে যেতে পারব। - এই কথাগুলো আমি বলছি না। কে বলছে জানিস? তোর সেই দুষ্ট সাদাবালক। আমি শুধু তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি অবাক হয়ে। আর ভাবনার সমুদ্রে হারিয়ে যাই। কতটা গভীর অনুভূতি থাকলে একটা ছোট্ট বালক তার সমস্ত উজার করে দিতে চায় একজন এক্সট্রা অর্ডিনারি তিলোত্তমাকে। এটা কি সাধারণ কিছু, নাকি অসাধারণ কোন আবেগ? আমি মুগ্ধ হয়ে ভাবি, এইতো সেদিনের পিচ্চি বালক… কী পেল এই তিলোত্তমার মাঝে, যাকে সে জীবন উজার করে ভালোবাসে? যেকোন কিছুর বিনিময়ে সারাজীবন সারাজীবন নিজের অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে পেতে চায় তাকে?

বন্ধু, তুই তো আমার সেই বন্ধু যার হাত ধরে হাঁটা যায় অনন্তকাল। তুই তো সেই হৃদয় হরণকারী তিলোত্তমা, তুই তো আমার পরম বন্ধু, প্রকৃত বন্ধু, হৃদয়ের বন্ধু।

আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখি, তিলোত্তমা আমার মাথায় বিলি কাটছে, আর আমি তার ভয়ংকর মায়াবী দুটি চোখে চোখ রেখে ভাবছি, কী বিশাল এক সমুদ্র তার চোখে। যাতে আমি অনন্তকাল সাঁতার কাটতে চাই।

বন্ধু, চিঠিটা কি খুব বেশি রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে? আপনি তো আবার রোমান্টিকতার ঘোর বিরোধী! কিন্তু এগুলো তো আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আপনা আপনিই বের হয়ে আসছে। আমার মনে হচ্ছে, আমার এই কথাগুলো তুই খুব মুগ্ধ হয়ে শুনছিস। আর এই মূহুর্তে তোকে খুব সুন্দর লাগছে … …"

আর পড়তে পারলো না নীতা। প্রবল অশ্রুপ্রবাহে চোখ আবারো ঝাপসা হয়ে গেছে। চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললো সে। তারপর ছুঁড়ে ফেললো রাস্তায়। চলতি রিকশায় বসে থাকা নীতার হাত থেকে মুক্ত হয়ে কাগজের টুকরোগুলি পিছনের দিকে উড়ে গেল। কিছুক্ষণ উড়ে তা ভূপাতিত হলো।

রিকশা থেকে নেমে সামনের দিকে একটা মাত্র ফুলের দোকান খোলা পেল নীতা। বেলি ফুলের মালা আর কমলা রংএর ঝারাবারা ফুল দিতে বলে সামনে তাকালো ও। কয়েক গজ দূরেই ফারাবী দাঁড়িয়ে আছে। সাথে লাবন্য ও আছে।

কাছে এসে ফারাবী বলল, 'চল, ফুচকা খাই। তাছাড়া আমাদের রিলেশন শুরু হচ্ছে, লাবণ্যের কাছ থেকে ট্রিট নেওয়া উচিৎ! কী বলো লাবন্য? '
হেসে লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দিল সে।
'সময় নেই। আমাকে যেতে হবে।'
অন্য দিকে ফিরলো নীতা। বাঁধভাঙা অশ্রু লুকাতে চেষ্টা করছে। ফুলের দোকানে টাকা দিয়ে ফুলগুলো নিলো সে। খেয়ালই করলো না, দোকানী মরা ফুলগুলো দিয়ে দিয়েছে পলিব্যাগে করে। ঝাপসা চোখে এত কিছু খেয়াল করা যায় নাকি? জ্যামে আটকে থাকা বিকল্প বাসে উঠে গেল নীতা।

পিছন থেকে কয়েকবার ওর নাম ধরে ডাকলো ফারাবী। ভ্রুক্ষেপই করলো না নীতা। কিন্তু মহিলা সীটে বসে একবার ফিরে তাকালো ও। আতিপাতি করে খুঁজেও পেল না ফারাবীকে। ও জানে না, ফারাবী তখন তাকিয়ে আছে নীতার দিকেই। একহাতে লাবন্যর হাত ধরা, আর অপর হাতে মাটি লেগে ময়লা হয়ে যাওয়া নীতার সেই চিঠিটা।

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×