somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

গালিব আফসারৗ
পড়ছি দর্শনশাস্ত্র নিয়ে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখালেখির চেষ্টা করি, তা ফল হিসেবে কাব্যগ্রন্থ "ভালোবাসা এবং অন্যান্য অশ্লীলতা" বইমেলা '১৭ তে প্রকাশিত হয়েছে। একা থাকতে ভালোবাসি।

গল্পঃ হারামজাদা

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তার সম্মানার্থে উৎসর্গিত)

রিহান ক্লাস ফোরে পড়ে। ফুলগাছ নামে গ্রামের ছায়াঢাকা পিছঢালা রাস্তাটার পাশেই ওদের দোতলা স্কুল, স্কুলে মাত্র একটাই বিল্ডিং। রিহানের বাড়ি থেকে স্কুল প্রায় ২০ মিনিটের পথ। প্রতিদিন সকালে মা রিহানকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়, ব্যাগে বই ভরে দেয় আর সাথে দেয় ২০ টি টাকা। ক্ষিধে পেলে সদাই কিনে খাওয়ার জন্য। তারপর রিহান স্কুলের এই এতটুকু পথ একা একাই যায়। সকালের পিছঢালা রাস্তার পাশের ছোটো ছোটো ঘাসের উপর গুটিগুটি পা ফেলে রিহান স্কুলে যায়।

সেদিন দুপুরবেলা, রিহানদের ক্লাসে হেডমাষ্টার এসে বললেন, আগামী ১৭ তারিখ আমাদের এই দেশের সবচেয়ে ভালো মানুষটির জন্মদিন। আমাদের জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেইদিন জন্মেছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করার জন্য আমাদের স্কুলে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা হবে। তোমরা সবাই সেখানে ভালো ভালো ছবি আঁকবে। যে সবচেয়ে ভালো আঁকতে পারবে তার জন্য আছে অনেক বড় পুরস্কার।

স্কুল থেকে ফেরার সময় রিহান হেডমাস্টারের কথাগুলো ভাবতে লাগলো। আমাদের জাতীর পিতার জন্মদিন। আম্মু বলে, বঙ্গবন্ধুর জন্যই নাকি আমরা এই দেশটা পেয়েছি। যিনি এতবড় মানুষ তার জন্মদিনে তারই ছবি আঁকার সিদ্ধান্ত নেয় রিহান।

সে বাড়ি এসে মাকে এই কথা বলে। মা শুনে খুব খুশি হন। তিনি রিহানকে রংতুলি দিয়ে সাহায্য করতে থাকেন। কিভাবে কি করতে হবে তা বলে দেন। বঙ্গবন্ধুর সুন্দর একটা ছবিও কিনে এনে দেন। রিহান প্র‍্যাক্টিস করতে থাকে। সমস্ত মন দিয়ে ছবি আঁকতে থাকে ও, যত্ন করে ছবি আঁকে আর ছোট্ট হাত দিয়ে পাশে থাকা ছবিতে হাত বুলিয়ে আদর করে। যেন কত পরিচিত মানুষটা। দেখলেই দু'চোখ জুড়িয়ে যায়, ইচ্ছে করে ছবিটাকে বুকে তুলে নিতে।

আজ ১৭ই মার্চ। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। জাতীয় শিশুদিবস।
রিহানদের স্কুলে আজ অনেক মানুষ, শুধু বাচ্চারাই না, বড় বড় মানুষেরা ছবি আঁকা দেখতে এসেছেন। রিহানের খুব ভালোলাগে, এই এত এত মানুষ আজ এসেছে। সবাই বঙ্গবন্ধুকে কত্ত ভালোবাসে। রিহানের মা বলেছে, বাবা রিহান এই বঙ্গবন্ধুকেই তোমার আদর্শ বানিও। বঙ্গবন্ধুর মতো নিজের দেশকে ভালোবেসো।
তার আদর্শের মানুষটাকে সবাই এত বেশি ভালোবাসে দেখে গর্বে রিহানের বুক ভরে যায়।

প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে। রিহান সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে ছবি এঁকেছে। রেজাল্ট নাকি আগামীকাল দেবে। তাই বাড়ি ফিরতেছিলো রিহান।

পিছঢালা রাস্তাটা পার হয়ে দক্ষিণ দিকে ৫/৭ মিনিট হাটলেই রিহানের বাড়ি। এ পথটুকু কাঁচারাস্তা। কাঁচা পথ ধরে ফিরছিলো রিহান। পাখি ডাকা বসন্তের বিকেল। চারদিকে কোন মানুষ নেই। কিছুক্ষণ পরপর একটা কোকিল কুহু কুহু করে ডেকে যাচ্ছে। দূরে একটা গরু তার খুট উপরে তোলার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছে।
রিহান হঠাৎ কি মনে করে পিঠ থেকে ব্যাগ খুলে মাটিতে বসে পড়ল। তারপর একটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে মাটিতে ছবি আঁকতে শুরু করলো। কঞ্চির আগা দিয়ে আস্তে আস্তে সে অনেকক্ষণ ধরে আঁকতে থাকলো।

ঐ সময় রাস্তা দিয়ে একটা লোক আসতেছিলো। সবাই মাস্টারসাব বলে ডাকে ওনাকে। একটা রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা উনি। রিহান ওনাকে চিনতো না, ছোটো ছেলে।
মাস্টারসাব রিহানকে অতিক্রম করার সময় থমকে দাঁড়ালেন। তারপর ধমকে উঠে বললেন "ঐ ছোকরা, মাটির ভিত্রে ঐসব কি করস হুহ? দেহি,
শেখ মজিবের ছবি আঁকতাছোস?
হারামজাদা, জানোস তুই এই মানুষটা কেডা! এইডা হইলো আমগো দেশের পাপ, খারাপ মানুষ। ছবি মিশায়া ফেল। "

রিহান কঠিনচোখে তাকালো, ছবি মিশালো না।
-হারামজাদা, মিশায়া দে কইলাম।

-আপনে হারামজাদা, আমি মিশামু না।

-কি, এতবড় কথা! এই বলে মাস্টারসাব পা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা মিশিয়ে দিলো।

রিহান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল মাটির দিকে, যেখানে ছবি ছিলো। তারপর হাতের পাশে রাখা মাথা চিকন একটা কঞ্চি নিয়ে লোকটার উঁড়ুতে জোড়ে দাবিয়ে দিলো। লোকটা চিৎকার করে উঠলো।

-হারামজাদা, বঙ্গবন্ধু আমার জীবন, দেশের জীবন। বঙ্গবন্ধুর জন্য আমরা এই দেশ পাইছি। তারে মিশায়া দিছোস!

মাস্টারসাবের উড়ুতে অনেকখানি কঞ্চি ঢুকেছিলো। ব্যথায় কাতরাচ্ছিলো হারামজাদা।


লেখকঃ গালিব আফসারী
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:২৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×