চা ফ্যাক্টরী থেকে বের হয়ে আমরা সোজা চলে গেলাম সেই ভাইয়ের বাংলোয়। বাংলো টি টিলার উপর। সেই ব্রিটিশ আমলের বাংলো। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আছে। ভেতরে ফায়ার প্লেস ও রয়েছে। এর চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড় গুলো চা বাগান দিয়ে মোড়ানো। পাহাড়ে আছে কিছু বড় বড় গাছ। কোন গাছেরই নাম জানি না। সবই আমার অপরিচিত। শালিক পাখির কিচির মিচির শব্দে মুখরিত চারিদিক। এরকম সম্পূর্ণ নুতন একটা পরিবেশ আমার ভেতর কেমন যেন একটা আলাদা শিহরণ জাগাচ্ছিল। মনে মনে ভাবছিলাম এরকম জায়গায় যদি থেকে যেতে পারতাম কিছুদিন। মিজান ভাই বললেন, চিন্তা করুন তো যখন ঝম ঝম বৃষ্টি নামে পাহাড়ে তখন কেমন লাগে। ব্যাপারটা চিন্তা করে সত্যিই আমার মনে হচ্ছিল ইস্ যদি এমন সৌভাগ্য হত!
আমরা ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। ইতোমধ্যে বেজে গেছে ৫টার কাছাকাছি। পাহাড়ে চা বাগানের মধ্যে ঘুরতে যেতে হবে। ছবি তুলতে হবে। কিন্তু আশাহত হলাম-পাহাড়গুলো কেমন যেন ধোঁয়াটে দেখাচ্ছে দেখে। খেয়াল করলাম কোন স্থান হতে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে, সম্ভবত পাহাড়ে যেসব চা শ্রমিকদের বসবাস তাদের কোন বাড়ি হতে। সেই ধোঁয়ায় সব পাহাড়গুলোর চারিদিক ধোঁয়াসা হয়ে আছে। বুঝলাম ল্যান্ডস্কেপ একটাও ভাল হবে না। চাবাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে দু’একটা স্মৃতি ধারন করে নিয়ে যেতে হবে আরকি। পরে ডিএসএলআর কিনে (সেই কবে থেকে স্বপ্ন দেখছি, এখনো হয়নি) আবার ট্যুর প্লান করতে হবে গরম কালের দিকে যখন চকচকে আকাশ আর প্রকৃতি থাকে। আমরা বেরিয়ে পড়লাম-
নাম না জানা এই পরিচিত বুনো ফুলগুলো ঢেকে দিয়েছে কোন কোন টিলার পাদদেশ।
বছরে একবার চা গাছের মাথা কেটে ফেলা হয় নুতন কুঁড়ির জন্য। আর কিছুদিন পর সব পাহাড় গুলোকেই ন্যাড়া করে ফেলা হবে এরকম ভাবে।
আমরা পাড়াড়ের ঢালু বেয়ে উপরের দিকে উঠছি।
আর একটু উঠলেই আমরা উপরে উঠে যাব।
পাহাড়ের ঢাল দিয়ে সাপের মত আঁকাবাঁকা পথ।
আমরা পৌঁছে গেলাম পাহাড়ের উপরে।
আঙ্কেল আঙ্কেল আমি রেডি......
আমরা যে পাহাড়টায় উঠলাম ওটা অনেক লম্বা।
চা গাছের ফুল জীবনে এই প্রথম দেখলাম।
মরা এই গাছটা হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে যেন।
আমরা পাহাড় হতে নামছি। সূর্য ডুবে যাচ্ছে।
আমরা রওনা দিলাম। কুয়াশা আর আঁধার নেমে আসছে। পাহাড়ী রমনীরা ঘরে ফিরছে রান্নার কাঠ যোগাড় করে। ছবিটা নিলাম গাড়ির কাঁচের ভেতর দিয়ে। পাহাড় সরে যাচ্ছে দূরে। আমাদের গাড়ি ছুটছে, গন্তব্য কমলগঞ্জ। আমি গান ছেড়ে দিলাম-
একটি কুড়ি দুটি পাতা
রতনপুর বাগীচায়
কোমল কোমল হাত বাড়িয়ে
লচ্মী আজো তোলে.....
(চলবে)
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া-১ (দেখলাম চা উৎপাদন প্রক্রিয়া)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১০:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



