গুরু বলে, Wait & See । অপেক্ষা কর এবং দেখে যা। দ্যাখ শালা চোখ বড় বড় করে দ্যাখ, নয়ন ভরে দ্যাখ। অপেক্ষা কর, আরো দ্যাখ। বেনসন অ্যান্ড হেজেসের বিজ্ঞাপন দেখি, আমি আর গুরু। শহর ঘুরে ঘুরে দেখি। কাজ নাই তো খই ভাজ। একটা দৈনিক আর কতোক্ষণ পড়া যায়? ডিশের লাইনে চ্যানেল মোটে ১২ টা। তার মধ্যে দুইটা আবার ঝিরঝির করে। একটা কুমিরের বাচ্চা বারবার ঢুকায় আর বের করে। গুরু বলে রাখ দেখিনি, চ বেরোই। দেখিনির নি টা কলকাতা থেকে এসেছে। ওইখানেও তিনমাস ছিল গুরু। দেখিনির ঠেলায় বেরিয়ে পড়লাম, সেই থেকে মোড়কে মোড় ঘুরে বেনসন অ্যান্ড হেজেসের বিজ্ঞাপন দেখে যাচ্ছি। বিন অ্যান্ড গন, আর্ট অ্যান্ড লিটারেচার, লাইফ অ্যান্ড ডেথ, প্রাইড অ্যান্ড প্রাজুডিস সব দেখলাম। ওয়ান অ্যান্ড অনলিটা দেখে বললাম, সবই তো বুঝলাম কিন্তু এইটার মানে কি? ছেঁড়াফোড়া প্যান্ট পইরা এই মডেল কী বুঝাইতে চায়? গুরু বলে, শালার আর প্যান্ট নাই, এই একটাই। ছেঁড়াফোড়া, টুটাফাটা হলেও ওই একটাই। তাহলে গুরু, ও ব্যাটা বেনসন খাবে কেমনে? সু (Shu) হকচকিয়ে গেল। গুরুর নাম সু, চাইনিজ নাম। অক্সফোর্ড চায়নাÑইংলিশ ডিকশনারি থেকে কালেক্ট করেছে নামটা। বললো, এটাই হলো অ্যালিগরি, সিম্বল। যাই বলো গুরু তোমার ওই Wait & See টাই ভালো ছিল। সু কথাটাকে সিরিয়াসলি নিল। বললো, হোর্ডিংটার ব্যাকগ্রাউন্ডটা একটু ভাব তো। মনে করো যে দূরে ট্রেন আসছে দেখা যায়, যাত্রীরা তটস্থভাবে ট্রেন দেখছে আর অপেক্ষা করছেÑ Wait & See . সু বললো ভেরি মাচ অরিয়েন্টাল হয়ে গেল। আরেকটা ভাব।
আহা তুমিই না বললা সেদিন, ওয়েস্টে স্কুলবয়, ফেমিনিস্ট আর ইমিগ্রান্টস ছাড়া কেউ স্মোক করে না।
কিন্তু তুই কনজিউমার মেন্টালিটিটা দেখবি না। ওয়েস্টার্ন মডেল না হলে কি প্রোডাক্ট চলে। কনজিউমার মেন্টালিটি মানে কি, তুমি কি আমার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে বেনসন অ্যান্ড হেজেস কম্পানিতে যাবা নাকি? দরকার হলে তাই যাবো, মিলাবে-মিলিবে, give & take .
তোমার এটা নেয়ার জন্য বেনসন কম্পানি মাথা কুটে মরছে।
য়ু হ্যাভ নো আইডিয়া অ্যাবাউট দি ভালু অফ আইডিয়া। অনলি দি টেস্টস, আইডিয়াজ অ্যান্ড ইমাজিনেশনস আর রুলিং দি গ্লোব।
আমি বললাম, ক্যাপিটাল?
সু বললো, য়ু আর টকিং অ্যাবাউট দি নাইনটিনথ সেঞ্চুরি থিঙ্কিংস অফ মার্ক্স।
সুকে এসব সময় অত্যধিক উজ্জ্বল লাগে। নিজের লেফট ব্যাকগ্রাউন্ডটাকে এভাবে তুড়ি মেরে খারিজ করতে পারলে মজা পায় সে।
তুমি কিছুদিন আবৃত্তির ইন্সট্রাকশন দিতা না, মাস্টার মাস্টার ভাব নিয়া, সেই সব দিনের কথা মনে পড়ছে।
তারপর তো গেলাম সমান্তরালে (প্যারালাল ফিল্ম মুভমেন্ট)।
অবশেষে পুনে থেকে ফিরে প্যাকেজ নাটকের ফ্রিল্যান্স এডিটর, মাইরি তোমার লাইফটা ডাইভারসিফাইড। (মাইরি শব্দটা এসেছে কলকাতার লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে। গুরুই এনেছে।) গুরু একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে, জীবন বড় কঠিন বস, সোশ্যাল স্টাটাস, লাইভলিহুড, মিডলকাসের কমিটমেন্ট বড় কঠিন জিনিস।
হঠাৎ মন খারাপ হলে সু আমাকে বস বলে ডাকে। মন খারাপ বলে রিকশাটা আর জমলো না। বললাম, চলো কালচারাল অঙ্গনে একটু ঢু মেরে আসি। গুরু রাজি।
এখানে ঢোকার আগে কিছু কথা বলে নেয়া ভালো। এখানে আসলে গুরুর মেলশোভেনিস্ট ভাবটা চাগান দিয়ে ওঠে। নারীবাদী নারীবাদী মার্কা কথাবার্তা হাওয়া হয়ে যায়। সামনে পহেলা বৈশাখ। তাই কালচালার ফিল্ডটা একটু গরম। এমনিতে গরম থাকে না, তা নাÑ নিত্যদিনে এখানে কালচার হয়। আবৃত্তি, নাচ, নাটক, গান, গণসঙ্গীত, রবীন্দ্র, নজরুল। ফ্যাশন শোর জন্য ডিরেক্টররা এখান থেকে মডেল পিক করে। প্যাকেজ নাটকের নায়িকা, গানের মডেল, খবর পাঠিকা, কৌতুক অনুষ্ঠানের দর্শক, উপস্থাপিকা সবই এখান থেকেই সাপ্লাই যায়। আটোসাঁটো সিল্কি বস্ত্রে শরীর ঢাকা মেয়ে দেখলে (অন্য জায়গায় হলে নারী বলতাম) সু বলে, এতো মুভিং শো অফ বডিলি বিউটি। পাছাটা এমন ভাবে নাচাচ্ছে যেন তলঠাপ দিচ্ছে বিছানায় শুয়ে শুয়ে। নন্দিকেশ্বর বলেছেন, বক্ষ ও নিতম্ব প্রধান মেয়েদেরই অভিনয় ও নৃত্যে আসা উচিত। কারণ এগুলো ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা প্রকাশক। চারদিকে রবীন্দ্রনাথ চর্চা হচ্ছে, গান হচ্ছে, আগুনের পরশমণি, এসো হে বৈশাখ এসো এসো, নৃত্যনাট্য শাপমোচন।
বুঝলাম, সুর মনটা প্রফুল্ল হচ্ছে, জয় গোস্বামীর কবিতা আওড়াচ্ছে। তাকিয়েছি দূর থেকে, এতোদিন প্রকাশ্যে বলিনি... যে তোমার বুক থেকে শুষে নিচ্ছে গান ... সে প্রেমিক না সন্তান? না অন্য কিছু? তাকে একটু আঘাত করার জন্য বললাম, ওই মেয়েটাকে দ্যাখ, লিফট পেলে অনন্যা আজিমের চেয়ে ভালো গাইবে। গুরুর ওই একটাই সফট কর্নার। অনন্যা আজিম। বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। শান্তিনিকেতন ফেরত, স্টার, প্রেসের পছন্দসই, গ্লামারাস। অতোটুকু চায়নি বালিকা...। হঠাৎ থামলো, বললো, কলকাতায় গিয়া এ কথা বললে মাইর খাবি। যাই বলিস তুমি রবে নীরবে যখন শুনি মনে হয় ... স্বর্গলোক থেকে অমৃত ঝরে পড়ছে।
তুমি এতো বড় অ্যাডমায়ারার কেন তার? তোমারে তো পুছলো না, ফার্মাসিউটিকালসের মালিককে গিয়া চোদা দিল।
থাম না বস, এসব পুরানা আলাপ ছাড়, রাখ না বস।
অনেক সময় চুপচাপ কাটলো। কেউ কোনো কথা বললাম না। রাত যতো বাড়ছে পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতি ততো নানামুখী হচ্ছে।
বাঙালির সেকুলার উৎসব বলতে ওই একটাই। বাঙালি জাতি উৎসব করতে জানে না। জাতি হিসেবে এতো ব্যাকডেটেড বোধহয় আর কেউ নয়, মিনিমাম ট্রাডিশন সেন্স নেই। গুরু বললো, আমার কথা তো ভোলে নাই Ñ সেদিন এডিটিং প্যানেলে এসেছিল। পহেলা বৈশাখে প্রোগ্রামের কাজে। চ্যানেলে যাবে। ওদের ওখানে পহেলা বৈশাখ রাতে প্রোগ্রাম আছে, যেতে বললো।
তুমি আবার সেই প্রোগ্রামে যাবা নাকি?
You & Me, আমরা দুজনেই যাবো।
তুমি যা দেখালে গুরু, পরশু বললো মাগী, তোমাকে ছাইড়া কোনো আমলা কবির হাত ধরে সিঁড়ি টপকাচ্ছিল তাই বলে বলে!
বস। বলে আমার দিকে চেয়ে আপস প্রার্থনা করলো সু। ফিরতে ফিরতে বললো, শি ইজ কারা জেটকিন টু মি Always & Everywhere .
পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত অনন্যা আজিম সম্পর্কিত খোঁজখবর
রাশিফল
কুম্ভ : (আমি) কুম্ভ রাশির জাতক/জাতিকাদের ঘরে শনির আছর আছে। কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদস্থদের চোখে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। যাত্রা অশুভ। যানবাহন ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।
ধনু : (সু) বন্ধুদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়বে। বিদেশ যাত্রার সম্ভাবনা প্রবল। যাত্রা শুভ। পরিবারের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলুন।
অনন্যা আজিম : মীন রাশির জাতিকা অনন্যা আজিমের এ বছর ভালো যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ইনডিয়াসহ, পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশে ভ্রমণের সম্ভাবনা। এ বছর নতুন কয়েকটি ক্যাসেটে হাত দিতে পারেন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে ব্যস্ততা বাড়বে। বছরের শেষে ছোটখাটো দুর্ঘটনা হতে পারে। বন্ধুভাগ্য শুভ।
আজ রাজধানীতে
বর্ষবরণ : বাংলা একাডেমির আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিকাল ৫টায় নজরুল মঞ্চে আলোচনা সভা।
ছায়ানট : রমনা বটমূলে ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ভোর ৪টা।
এসো হে বৈশাখ, এসো হে : বৈশাখের আয়োজনে বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী অনন্যা আজিমের ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে সঙ্গীতানুষ্ঠান ও চা চক্র।
তাঁহার তিনি
নাম : অনন্যা আজিম
আসল নাম : অনন্যা রহমান আজিম
জন্ম : ২২ ফেব্রুয়ারি
পছন্দের রঙ : হালকা ম্যাজেন্টা
পছন্দের পোশাক : শাড়ি
পারফিউম : নিনা রিচি
ড্রিঙ্কস : ট্যাং, দার্জিলিং চা, পানি
খাবার : সাদা ভাত, ইলিশ
কোনো স্থানে গেলে আর ফিরে আসতে ইচ্ছা করে না : নায়েগ্রা ফলস
প্রিয় উপন্যাস : গর্ভধারিণী
প্রিয় লেখক : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
প্রিয় বই : গীতবিতান
প্রিয় চ্যানেল : ESPN, Star TV.
অবসরে কী করেন : বাচ্চাদের সময় দিই, রান্না করি।
ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস : ৩৫-৩০-৩৬
অনন্যা আজিমের বাসা প্রায় মিস করতে ধরেছিলাম।
গুরু রিকশাওয়ালার শার্ট টেনে ধরে বললো, এটাই হবে, অনেক গাড়ির সারি দেখিস না।
বললাম, রোখখে ভাই। যথার্থ ধরেছে গুরু।
প্রথম গেটেই সিকিউরিটির লোকেরা ওয়ার্ম রিসিপশনের জন্য দাঁড়িয়ে।
আপনারা কোথায় যাবেন?
এটা অনন্যা আজিমের বাসা না? আমরা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এসেছি।
আপনারা আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন?
হ্যা রে ভাই।
দেখি দেখান তো?
গুরু পকেট থেকে আমন্ত্রণপত্র বের করলো। ঠিক আছে আপনারা ভেতরে যান, সোজা গিয়ে বামে লিফট। লোকগুলোকে পেছনে রেখে একটু এগিয়ে বললাম, গুরু তোমার দামী মোবাইল সেটটা একটু হাতে রাখো, উটকো প্রোব্লেমে কাজ কি? সোশাল স্ট্যাটাস বলে একটা কথা আছে না।
গুরু মোবাইল বের করে। লিফটের কাছে গেলে আরো একজন এগিয়ে এলো, বোধহয় জেরা করার জন্য, গুরুর ভাব দেখে থেমে গিয়ে বললো, স্যার প্লিজ।
লিফটে ওঠার জন্য আরো দুজন দাঁড়িয়ে। একজন সাবেক অভিনেতা, বর্তমানে এমপি পদপ্রার্থী, অন্যজন পত্রিকার মালিক। তাদের সঙ্গে একই লিফটে উঠতে একটু সঙ্কোচ বোধ ভেতরে থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। দেখি গুরুও উসখুস করতে করতে মোবাইলটা ততোক্ষেণে লুকিয়ে ফেলেছে।
রিসিপশনে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং অনন্যা আজিম এবং তার ছোটখাটো সাদাচুলো শিল্পপতি স্বামী। সাবেক অভিনেতা এবং পত্রিকার মালিকের রিসিপশন শেষ হলে আমরা এগোলাম।
অনন্যা বললেন, এই যে সু। বসো।
আমার দিকে তাকিয়ে এক চিলতে মিষ্টি হাসি দিলেন।
অনন্যা আজ পরেছেন উজ্জ্বল নীল বর্ণের জর্জেট শাড়ি। পার্টিতে তিনি পছন্দ করেন জর্জেট আর জামদানি। টিভি বা পাবলিক ফাংশনে পরেন হালকা রঙের সিল্ক অথবা সিফন। শীতে তসর। হেয়ার স্টাইল করেন, অরুণা বিউটি পার্লারে। আজ তার খোপায় শোভা পাচ্ছে বেলী ফুল। পারফিউমে আজ বেলির ফেভার। মেকআপ নিয়েছেন খুব কম, মেকাপে নিয়মিত সময় ব্যয় করেন দুই থেকে তিন ঘণ্টা। অর্নামেন্টস দেশি ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে। মাটির গয়না আনিয়েছেন আমেরিকা থেকে। টিপ পরেছেন শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে। স্বামীটি পরেছেন আড়ংয়ের পাঞ্জাবি।