চেয়ারম্যান
ফেডারেল ইলেকশন কমিশন
ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা
জনাব,
ছোটবেলায় একটা স্লোগান শুনতাম 'চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান'। দিনে দিনে মিথ্যায় পরিণত হয়েছে সেই স্লোগান। চীনের চেয়ারম্যান, আমাদের চেয়ারম্যান হতে পারেন না। হনও নি। সেই দিন চলে গেছে। ক্রসফায়ারে চেয়ারম্যানঅ'লারা এখন ঝাড়ে বংশে নির্মূল হতে চলেছে। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ততোই আরেকটা স্লোগান মনে মধ্যে অনুরণন তুলছে। সেই অনুরণনে সাড়া দিতেই এই আবেদন। সেই স্লোগান হলো : আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, আমাদের প্রেসিডেন্ট। আমি একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক। আমাদের একটা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আছে। সেনাবাহিনী পরিচালিত ভোটার রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্রে সেদিন গিয়ে আমি ছবিও তুলে এসেছি। আশা করছি, আমাদের দেশে নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনের আগে আমার নাগরিকত্ব পরিচয়ের কার্ডটিও আমার হাতে এসে পৌঁছাবে। কিন্তু গোপন প্রেমের মতোই আমার অন্তরে একটি সুপ্ত বাসনা কাজ করে, আমি আমেরিকার নির্বাচনে ভোট দেব। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবে, আমার প্রেসিডেন্ট। আমি ক্ষুদ্র মানুষ, আমার দেশটাকে তোমাদের রাষ্ট্রভুক্ত করার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। শক্তিও নাই। তোমরা নেবেও না। যে দেশ তোমরা দখল করো সে দেশকেও তো নিজেদের দেশ মনে করো না। আমাদের তো দখল করোনি। আমরা তবু তোমাদের আনুগত্য মেনে চলি। তোমাদের বাচ্চা বাচ্চা সরকারি কর্মকর্তারা যে নীতি দেয় সে নীতি অনুসারে আমরা চলি। আমাদের ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, আমাদের সরকার সবাই তোমাদের কথায় ওঠে বসে। তোমাদের সাউথ এশিয়ান ডেস্ক আমাদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর তোমাদের রাষ্ট্রদূত আমাদের ভাইসরয়। তোমাদের পররাষ্ট্রনীতির ওপর আমাদের দেশের গণতন্ত্র নির্ভর করছে। তোমরা কোন দিকে আমাদের নিয়ে যাবে তা নির্ভর করছে। তোমরাই ঠিক করে দেবে পাকিস্তানে, আফগানিস্তানে, বাংলাদেশে কে হবে ক্ষমতাসীন। ফলে, আমরা গভীর আগ্রহের সঙ্গে তোমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছি। এবার অবশ্যই ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট চাই। আমাকে জিজ্ঞেস করো না হিলারি না ওবামা কাকে চাই। এ নিয়ে আমরা দুভাগ হয়ে গেছি। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। যেই জিতুক তাকেই আমরা চাই। তিনি আমাদের মনে প্রেসিডেন্ট হয়ে আমাদের গণতন্ত্র দিন, আমাদের সাহায্য দিন, আমাদের নীতি দিন, আমাদের আদর্শ দিন। আমরা অধীর হয়ে তার অপেক্ষায় আছি। ভোট তাকে আমরা দিতে পারি না সরাসরি কিন্তু ভোটে আমাদের চেয়ে কে বেশি অংশ নেয়। তোমাদের টিভিতে দেখা যায়। আমাদের টিভিতে দেখা না গেলেও আমরাও ভোট দেই মনে মনে। যেখানেই তোমাদের মিডিয়া, তোমাদের বন্ধু, তোমাদের নিয়ন্ত্রণ সেখানেই তোমাদের ভোটার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তাই আমাদেরও মিস্টার প্রেসিডেন্ট। এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমরা এখন আর মানসিক ভোট দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে রাজি নই। আমরা সরাসরি ভোট দিতে চাই। সামনের সুপার টুয়েসডের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আমরা।
তোমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা খুব কঠিন। এটাকে আরও জটিল করার জন্য তোমাদের তাবেদার দেশগুলোতে একেকটা ইলেটোরাল কলেজ খুলতে পারো তোমরা। সেখানে তোমাদের দেশের নাগরিকত্ব না পেয়েও আমরা যেন ভোট দিতে পারি সে ব্যবস্থা রাখতে পারো। তোমাদের কঠোর হস্তক্ষেপের মধ্যে আমাদের সার্বভৌমত্ব যদি অক্ষুণ্ন থাকে তবে নাগরিক না হয়েও ভোট আমরা দিতে পারবো না কেন?
আশা করি, আমাদের জন্য কোনো একটা ব্যবস্থা তোমরা করে ফেলবে। এবার চেষ্টা করো। না পারলে, সামনের বার অবশ্যই যেন হয় সেদিকে খেয়াল দিও।