somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিকশন লেখা নিয়া তিনজন লেখকের দশটা করে পরামর্শ

০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অ্যান এনরাইট
.....................
১. শুরুর বারোটা বছর খুব খারাপ।
২. একটা বই লেখার উপায় হইলো একটা বই লেইখা ফেলা। কলম কাজের জিনিশ, টাইপও করা যাইতে পারে। অতএব, কাগজের ওপর শব্দ সাজানোর কামে লাগে রাহো।
৩. শুধু বাজে লেখকরাই ভাবে যে তাদের লেখা সত্যই খুব ভাল।
৪. বর্ণনা দেওয়া কঠিন কাজ। মনে রাখবা, সব বর্ণনাতেই দুনিয়া নিয়া তোমার মতের প্রতিফলন ঘটে। ফলে, দাঁড়ানোর মতো একটা জায়গা বাইর করো।
৫. যেইটা তোমার পছন্দ সেইভাবে লেখো। পাতার উপর শব্দ দিয়া উপন্যাস হয়; বাস্তবতা কিন্তু অন্য জিনিশ। তোমার গল্প কতটা বাস্তব আর কেমনে তুমি এইটা বানাইছো সেইটা ব্যাপার না। ব্যাপার হইলো, এইটা কতটা দরকারি, সেইটা।
৬. উপাদানগুলা যেন নির্ভুল হয় সেই চেষ্টা করবা।
৭. মনে করো যে, তুমি মইরা যাইতেছো। যদি তোমার কোনো মরণ রোগ হয়, তাইলে কি তুমি এই বই শেষ করতে পারবা? কেন পারবা না? আর মাত্র ১০ সপ্তাহের আয়ু তোমার, এইরকম চিন্তা বইয়ের জন্য খারাপ। তাই, চিন্তাটা চেঞ্জ কইরা ফেলো। নিজের সঙ্গে তর্ক করা বন্ধ করো। লেখা বদলাও। দেখো, কীরাম সহজ হয়া যাইতেছে। এখন আর কাউরে মরতে হবে না।
৮. এই কাজ তুমি হুইস্কি হাতে নিয়াও করতে পারো।
৯. মজা করো।
১০. মনে রাইখো, তুমি যদি ১৫-২০ বছর ধইরা প্রতিদিন টেবিলে বইসা কাটাও, উইকএন্ডের হিসাবও যদি তোমার না থাকে, তাইলে নিশ্চিত থাকো, এইটা তোমারে বদলায়ে দেবে। এইটা হয়তো তোমার মেজাজের উন্নতি ঘটাবে না, কিন্তু অন্য কিছু করবে। এইটা তোমারে আরও স্বাধীন কইরা দিবে।

মার্গারেট অ্যাটউড
........................
১. এরোপ্লেনে বইসা লেখতে চাইলে সঙ্গে একটা পেনসিল নিও। কলম কিন্তু লিক করে। কিন্তু যদি পেনসিল ভাইঙ্গা যায় তাইলে প্লেনে বইসা ধার দেওয়া সম্ভব না। কারণ ওইখানে তুমি চাকু নিয়া যাইতে পারবা না। অতএব, দুইটা পেনসিল নিও।
২. যদি দুইটা পেনসিলই ভাইঙ্গা যায় তাইলে কাটার জন্য তুমি নখকাটারের ভোঁতা চাকু বা কাঁচের সাহায্য নিতে পারো।
৩. লেখার জন্য সাথে কিছু নিও। কাগজ হইলে ভাল। চিমটি কাইটা কাঠের উপর বা বাহুর উপরও লেখতে পারো।
৪. যদি কম্পিউটারে লেখো, তাইলে নতুন লেখা সেভ কইরা নিও।
৫. মেরুদণ্ডের ব্যয়াম কইরো। কারণ ব্যথা থাকলে মনোযোগ অন্যদিকে সইরা যায়।
৬. পাঠকের মনোযোগ ধইরা রাখো। (সবচেয়ে ভাল কাজ হয় যদি নিজের মনোযোগ ধইরা রাখতে পারো।) কিন্তু তুমি জানো না, পাঠক কারা। ফলে ঘটনা এই দাঁড়াইলো যে, তুমি বর্শা দিয়া আন্ধারে মাছ ধরতেছো। যেই জিনিশ অমুকরে মুগ্ধ করবে, সেই একই জিনিশ তমুকরে বিরক্ত কইরা ছাড়বে।
৭. একটা অভিধান, প্রাথমিক ব্যকরণ বই এবং বাস্তবতার ওপর কিছু দখল সঙ্গে রাখবা। মানে হইলো, ফ্রি খাওয়ার উপায় নাই। লেখা হইলো একটা কাজ। আবার এইটা জুয়াও। অবসরভাতা নিয়া পরিকল্পনার উপায় এইখানে নাই। অন্য লোকে তোমারে একটু সাহায্য করতে পারে, কিন্তু তোমার নিজের রাস্তা একান্তই তোমারই। তোমারে তো কেউ লেখতে কয় নাই, তুমি নিজেই এইটা বাইছা নিছো। সো প্যানপ্যান করবা না।
৮. নিজের বই এমনভাবে পড়া শুরু করবা না যে, তুমি নতুন একটা বইয়ের সুমধুর একটা পাতা পড়া শুরু করছো। এইটা সম্ভব না, কারণ জিনিশটা তো লেখছো তুমিই। তুমি তো পর্দার পিছনে আছিলা। তুমিই তো দেখছো কেমনে হ্যাটের ভিতর ইন্দুর ঢুকে গেছলো। অতএব ছাপার জন্য কাউরে দেওয়ার আগে এক বা দুইজন বন্ধুরে দিয়া পড়াইও। মনে রাখবা, এই বন্ধুদের সঙ্গে তোমার রোমান্টিক সম্পর্ক থাকা যাবে না। অবশ্য তুমি যদি সম্পর্ক নষ্ট করতে চাও তাইলে অন্য কথা।
৯. বনের মাঝখানে বইসা থাকবা না। গল্পের মধ্যে খেই হারাইলে বা স্থবির হয়া পড়লে পেছনে ফিরে যাও। যেইখানে রাস্তা হারাইছিলা সেই জায়গাটা খুঁইজা বাইর করো। ওইখান থিকা আলাদা রাস্তা ধরো। এবং/অথবা লোকটারে বদল করো। ক্রিয়ার কাল বদল করো, শুরুর পাতাটা বদলাও।
১০. প্রার্থনা কাজে আসতে পারে। অথবা অন্যকিছু পড়া। অথবা পবিত্র নৈশভোজের ছবি অবিরাম দেখা যাইতে পারে। এইটা তোমার উজ্জ্বল বইয়ের সম্পূর্ণ ও প্রকাশিত রূপ।

রোডি ডয়েল
....................
১. পছন্দের লেখকের ছবি টেবিলে সাজায়া রাখবা না। সেই লেখক যদি বিখ্যাত কেউ হন আর তিনি যদি আত্মহত্যা কইরা থাকেন তাইলে তো কথাই নাই।
২. নিজেরে দয়া করবা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাতা ভরাও, দরকার হইলে ডবল স্পেস দিয়া লাইনে বেশি জায়গা ছাইড়া আগাও। নতুন পাতা মানে ছোট হইলেও একটা বিজয়।
৩. এমনে কইরা ৫০ পাতা যাবার পর থামো। শান্ত হয়া, লেখার মান নিয়া চিন্তা করো। দুশ্চিন্তা শুরু করো- এইটা কাজ।
৪. যত তাড়াতাড়ি পারো লেখার একটা নাম দেও। নামটারে ভালোবাসো, দেখো। ডিকেন্স কিন্তু লেখার আগেই জানতেন যে, বিবর্ণ বাড়ি লেখাটারে লোকে বিবর্ণ বাড়ি বইলাই জানবে। বাকীটা সহজ হয়া যাবে।
৫. অল্প কিছু ওয়েবসাইটে ঘুরবা, বেশি ফালাফালি কইরো না। যদি গবেষণা না করো তাইলে অনলাইনের বইপত্রের ধারে কাছে ভিড়বা না।
৬. অভিধান রাখো। কিন্তু এমন জায়গায় রাখবা যাতে দেখতে গেলে কষ্ট করা লাগে। বাগানের পিছনে, ফ্রিজের পিছনে রাখতে পারো। পারলে ঘোড়া, দৌড়, বললো জাতীয় শব্দ ব্যবহার করো যেইগুলা সহজে মাথায় আসে।
৭. মাঝে মধ্যে প্রলোভনের মধ্যে ঢুইকা যাও। রান্না ঘরে মেঝে পরিষ্কার করো, ধোয়া থালাবাসন শুকাইতে দেও। এইটা গবেষণা।
৮. মনের ভাবগতিক বদলাও। অনেক সময় একটা ভাল আইডিয়া আরেক হের চেয়ে ভাল আইডিয়ার হাতে খুন হয়া যায়। আমি পার্টিশন নামে একটা ব্যান্ডের কাহিনী নিয়া একটা উপন্যাস লেখতে আছিলাম। পরে আমি ব্যান্ডের নাম দিলাম কমিটমেন্ট।
৯. যে বইটা তুমি লেইখা উঠো নাই সেই বইয়ের খোঁজে এমাজনে সার্চ দিবা না।
১০. কয় মিনিট সময় কভারের জীবনীর জন্য ব্যয় করবা। ‘তিনি তার সময়কে কাবুল এবং তিয়েরা দেল ফিয়েগোর মধ্যে ভাগ কইরা নিছেন’। এইরাম হেনা তেনা চর্চা কইরা কাজে ফিরত যাইবা।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×