somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহফুজ
আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

প্রথম, ২য়, ৩য় প্রেম এবং অশ্রুহীন কান্না।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাটক, বাস্তবতা!!!

জঙ্গলের এত গহীনে কেউ কোন দিন আসেনি, মধ্যবয়স্ক লোকটা ঠিক এই মুহূর্তে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
অনেক দিন থেকে পরিকল্পনা করে, খোঁজে খোঁজে এসেছে সে বনের এই গহীনে।

সে চিৎকার করে কাঁদতে চায়, চিৎকার করে কিছু বলতে চায়, চিৎকার করে কিছু মানুষকে গালি দিতে চায় আর চিৎকার করে কিছু মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চায়।

লোকালয়ে এমন করলে লোকে পাগল ভাববে, জেনে যাবে তার জীবনের অনেক না বলা গল্প।

চুলদাড়ি প্রায় সব পেকে একাকার; যতোনা বয়সের ভারে তার চাইতে জীবনের অনিশ্চয়তা আর ঝড়ঝাপটায়।
চিৎকার শুরু করেছে সে, শুরু করেছে কান্নাও। চোখে অশ্রু নেই, কান্নার শব্দটাও কেমন অদ্ভুত। এই দৃশ্যে গ্লিসারিন দিয়ে চোখে জল আনা হলোনা কেন নাকি অশ্রুহীন কান্নার ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলার জন্য।

যাই হোক ফ্ল্যাশব্যাক থেকে যা জানা গেলো: লোকটার জীবনে তিনবার প্রেম চিত্রায়িত হয়েছিলো। প্রথম প্রেমটাকে প্রেম না বললেও চলে, যদিও সে প্রেমই জীবনের অনেক হিসেব নিকেশ লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিলো । যাকে সে কোনদিন বলতেই পারেনি, "তোমাকে ভালোলাগে , ভালোবাসি।" বছরের পর বছর গোপনে ভালোবাসতে বাসতে যেদিন বলার জন্য প্রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ঠিক সেদিন জানলো, খুব বেশী না হয়তো মুহূর্ত কয়েক আগেই ভালোবাসার মানুষটিকে আরেকজন দখল করে ফেলেছে!! এরপর অনেকবার শৈশবের সে যন্ত্রণাময় দিনগুলিতে ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যের বাহুডোরে দেখেছে আর নিভৃতে কেঁদেছে। গল্প শেষ না এখনো প্রথম প্রেমের। ভালোবাসার মানুষটি একটা অসময়ে ধরা দিয়েছিলো স্বপ্নের মতো আরো পরে। তারপর একেবারেই চলে গিয়েছিলো সুখের অসুখ দিয়ে।

দ্বিতীয় প্রেমটা হুট করে এসেছিলো, মেয়েটা ভালোবাসতো প্রথম প্রথম খুব। নিজে থেকেই এসে হাত বাড়িয়েছিলো সে। আজকের মধ্যবয়স্ক লোকটা তখন সবে বছর কুড়ি কিংবা বাইসের হবে। দীর্ঘদিন চললো সে প্রেম। চললো মান অভিমান, ঝগড়াবিবাদ, প্রথম ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে হলো বিরাট ঝামেলা। একসময় সমাধান হলো সবকিছুর কিন্তু আরো অনেক দিন পর মনে হলো আসলে সে মানুষটা আর আগের মানুষ নেই। যেখানে ছিলো ভালোবাসা সেখানে জমতে লাগলো মিথ্যা, ছলনা, অপ্রেম, প্রতারণা। অনেকগুলো দিন, মাস, বছর পার করে লোকটা দেখলো সম্পর্কটা একটা মিথ্যার দুর্ভেদ্য দুর্গ। ফলাফল বুকের ভেতর পাথর চাপা দিয়ে বাঁধন ছিন্ন করা।

তৃতীয় জন জীবনে এসেছিলো অনেকটা দেবীর মতো। অবিশ্বাস্য ভাবে সে এসেছিলো জীবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে প্রদীপের আলো হয়ে। পরম মমতা, ভালোবাসা আর নির্ভরতা দিয়ে সে যেনো জীবনটাকেই পালটে দিতে এসেছে মনে হয়েছিলো। মধ্যবস্ক লোকটাকে সে দেবী তখন এতো ভালোবেসেছিলো নিঃস্বার্থ ভাবে যে, লোকটা জীবনের ফেলে আসা বিভীষিকাময় ঘটনাগুলি ভুলতে বসেছিলো প্রায়। ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলো সে, এমন একজন মানুষকে তার জীবনে পাঠানোর জন্য কিন্তু লোকটার সে সুখ আর শান্তি বেশিদিন থাকলোনা। পুর্বজনমের কোনো পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে মনে হয় লোকটার জন্ম হয়েছিলো। এমন মনে হবার কারান তৃতীয় মানুষটা এতোটাই ভালোবাসতে শুরু করলো যে তা ভয়াবহ ভালোবাসায় রূপ নিলো। এমন ভালোবাসা, কিংবা মমতা কোন পিতামাতা তার সন্তানকে করেন কি না সন্দেহ। বিপদ আপদ সবকিছুতে মানুষটা দেবদূতের মতো হাজির হতো, ছায়ার মতো পাশে থাকতো। সে মেয়ে আজকের গহীন জঙ্গলের লোকটাকে শুধু পারেনি গিলে খেয়ে নিজের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখতে। প্রতিটা মুহূর্ত চাইতো পাশে পাশে থাকার, সারাক্ষণ চাইতো ওর সঙ্গ, চোখের আড়াল হলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়তো মায়াবতী, মমতাময়ী আর সুন্দর মেয়েটি। এই ভালোবাসাই একসময় শাস্তি মনে হতে লাগলো, মায়াবতীকে বুঝানো গেলোনা কিছুতেই এ যে ভালোবাসা নয় এ অত্যাচার। মধ্যবয়স্ক এই লোকটাকে মায়াবতী ভালোবাসতে বাসতে প্রায় মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তুললো। ফলাফল এত ঘটনা,দুর্ঘটনায়ও যে জীবনে নেশা স্পর্শ করেনি সে নিজেকে গিনিপিগ ভাবতে শুরু করলো, ভালোবাসার অত্যাচারে, ভালোবাসার অপরিমেয়তায় পরিণত হলো নেশাখোরে। পতন শুরু তখন, যে পতন আটকাতে পারেনি কেউ। লোকটা উপলব্দি করেছিলো, ভালোবাসাহীনতা কিংবা মিথ্যা, প্রতারণা ইত্যাদিই শুধু মানুষকে কষ্ট দেয়না, অতিরিক্ত ভালোবাসাও কষ্ট দেয়।

নির্জন জঙ্গল আজ লোকটার চিৎকারে প্রকম্পিত। বিধাতাকে সে প্রশ্ন করছে, হে বিধাতা, জীবনে যতো অপরাধ করেছি তার জন্য তো কোনদিন শাস্তি দাওনি আমাকে কিন্তু বিনাদোষে এত অসহ্য যন্ত্রণা কেন সইতে হলো জীবনভর? এ তোমার কেমন বিচার? আমি তো কোনদিন পথের একটা কুকুরকেও ঢিল ছুড়ে মারিনি সে কষ্ট পাবে ভেবে তবে আমাকে কেন অসহ্য কষ্টের অসংখ্য ঢিলের আঘাত সইতে হলো!!
লোকটার চোখে এখনো পানি নেই, কিন্তু বাকি সবাই অশ্রুসিক্ত ঠায় বসে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:২০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×