somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহফুজ
আমি হচ্ছি কানা কলসির মতো। যতোই পানি ঢালা হোক পরিপূর্ণ হয় না। জীবনে যা যা চেয়েছি তার সবই পেয়েছি বললে ভুল হবে না কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। পেয়ে হারানোর তীব্র যন্ত্রণা আমাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে।

রিকসার হুড এবং দেবতার দানবীয় উপাখ্যান

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অদৃশ্য এক চোখের জলে ভেতরে ভেতরে ভেসে যাচ্ছে যেনো অদিতি। অমিতের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা আর হৃদয়ের গভীরে তিলেতিলে জমতে থাকা সম্মানের ভান্ডার সব আজ অস্তিত্বের সংকটে পড়ে গেছে। কালবৈশাখী ঝড়ের ঝাপটায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে সঞ্চিত চিন্তাভাবনা আর কল্পনার আদলে তৈরি ভিত্তিটা।

হুড উঠানো রিকসায় অমিতের পাশে বসে আছে অদিতি। একটি রিকসার হুড যে মানুষের বিশ্বাস আর উপলব্ধিগুলোকে কিভাবে নিষ্ঠুর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে পারে তা আজ অদিতির অনুভূতিগুলোকে পড়তে পারলে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা যেতো।
কয়েকমিনিট আগেও হুড ফেলা রিকসায় অমিতের পাশে বসে থাকা অদিতি নিজেকে পৃথিবীর সুখী মানুষদের তালিকার একজন ভেবেছিলো। তার মনে হচ্ছিলো স্বর্গের কোনো দেবতা তার দেবীকে নিয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্য অবলোকন করতে বেরিয়েছেন স্বর্গীয় বাহনে চড়ে।

অদিতি কল্পনায় ডানা মেলে যখন পরম তৃপ্তির মহাসমুদ্রে ভাসছিলো ঠিক তখনই অমিত রিকসার হুড উঠিয়ে দেয়, রোদ লাগছে বলে।

পড়ন্ত বিকেলের সুমিষ্ট রোদ আর মৃদুমন্দ বাতাসে অমিতের রোদের তেজ লাগলো কিভাবে?প্রশ্নটা অদিতির মনের মাঝে উঁকিঝুঁকি দেয়া শুরু করতেই সে খুব অবাক হলো আর পরক্ষণেই নিজেকে গুটিয়ে নিলো ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে। এ ভয় অনিরাপত্তা কিংবা প্রাণনাশের নয়। ভয়টা ছিলো দীর্ঘদিন ধরে অতিযত্নে লালিতপালিত করা বিশ্বাস বালির বাঁধের মতো গুড়িয়ে যাবার ভয়। হুড উঠানোর খানিকক্ষণ পরেই অদিতির ভয়টা বাস্তবে আরো বিকট হয়ে হাজির যখন অমিতের ডানহাত অদিতির শরীরের এখানে ওখানে মৃদু বিচরণ করতে শুরু করলো। অমিতের প্রতি অদিতির বুকভরা ভালোবাসা আর সম্মানের মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হয়েছিলো তখন।

প্রতিবাদ করার ক্ষমতাটুকু অদিতির ছিলোনা তা নয় আসলে ঘৃণায় সে একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। অদিতির এখন মনে হচ্ছে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অসাড় হয়ে গিয়েছে।

মাধ্যমিকে পড়াকালীন অমিতের প্রতি অদিতির ভালোবাসার জন্ম। অমিত হচ্ছে অদিতির বান্ধবী ইরিনার বড় ভাই। ইরিনাদের বাসায় প্রায় সময় যাতায়াত এবং পড়াশোনার সাহায্য চাওয়ার বদৌলতে অমিতের সাথে পরিচয়। সৌম্য,শান্ত চেহারার আর নিষ্পাপ হাসির অমিত সত্যি খুব সুদর্শন। সুদর্শন সেই অমিত তাই সহজেই অদিতির মনটা কেড়ে নিলো। কিন্তু অনুভূতিগুলো প্রকাশের সময় বা সুযোগ এবং সাহস অদিতি অর্জন করতে পারেনি বহুদিন।

আসাযাওয়ার পথে দেখা, টুকটাক কথা আর ভদ্রতারক্ষার হাসির বাইরে অমিতকেও তাই পাওয়া যায়নি। অমিত শুধু সুদর্শন ছিলো তা নয় নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রও ছিলো আর তাই তার বেশ নামডাক ছিলো ছোটবড় সবার মাঝে।

সবকিছু মিলিয়েই অদিতি কল্পনায় পঙখীরাজের পিঠে সওয়ারী হয়ে অমিতকে নিয়ে গিয়েছিলো অনেক দূরের পৃথিবীতে। প্রজাশূন্য যে পৃথিবীর একমাত্র অধিপতি ছিলো অমিত আর তার রাণী অদিতি। কল্পনার রাজ্যে বসবাস করতে করতে নিরুপায় অদিতি একসময় প্রিয় বান্ধবী ইরিনার কাছে লাজলজ্জা ভুলে সাহায্য চাইলো। প্রথমে ঠাট্টাতামাসা করলেও ইরিনা রাজী হয় বান্ধবীর প্রেমের মাধ্যম হতে।

তারপর অদিতি আর অমিতের ইরিনার সাহায্যে প্রেম হয়ে গেলো। কিছুদিন তারা একে অন্যের সাথে ফোনে আলাপও করলো।

উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষার প্রস্তুতি চলছে এখন তাই কলেজ বন্ধ। এরমাঝে গত পরশু অমিত দেখা করার কথা বলে অদিতিকে। রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে অদিতি। চাইলেই হুটহাট করে ঘর থেকে বের হতে পারেনা। বড়ভাই বাবা খুব আদর সোহাগ করলেও কড়া নজরে রাখেন। উপায় না দেখে ইরিনাকে দিয়ে ফোন করানো হলো অসিতির বাসায়। এক বানানো বান্ধবীর জন্মদিনের গল্প বলে অদিতিকে বাইরে নিয়ে আসা হলো।

- কি ব্যপার তোমাকে এত্ত আড়ষ্ট লাগছে কেনো? টেইক ইট ইজি অদিতি। এটা তোমার আমার প্রথম ডেট!

অমিতের কথায় অদিতি চমকে গিয়ে বাস্তবে ফিরে এলো। ঘৃণায় তার শরীর রিরি করছে। অনেক কষ্টে সে চোখের পানি আটকে রেখেছে। ভালবেসে দেবদূতের আসনে বসানো কোনো অসুরের সামনে সে চোখের জল ফেলে নিজেকে অপমানিত কিংবা একফোঁটা চোখের জলকেও অসম্মানিত করার ইচ্ছে নেই অদিতির। কয়েকটা মিনিটে তার বিশ্বাস আর ভালবাসার এমন নোংরা পরিণতি আবিষ্কার করতে পেরে বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলো সে। এই বিমূঢ়তা এতটাই কঠিন ছিলো যে, অমিতের হাত তার শরীরের কোথায় কোথায় স্পর্শ করেছে তা টেরই পায়নি অদিতি।

রোদের তেজ বলে মিথ্যা অজুহাতে যখন অমিত রিকসার হুড উঠিয়েছিলো ঠিক তখনই স্বপ্নের ইমারতে ফাটল ধরেছিলো অদিতির। তারপর অদিতি যখন অমিতের স্পর্শ টের পেয়েছিলো সেই থেকে গত কয়েক মিনিটে পুরো ইমারতই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অদিতি কল্পনাও করেনি স্বপ্নের মানুষটি জীবনের প্রথমবার সুযোগ পাওয়া মাত্রই তাকে শারীরিক ভাবে সামান্য আর মানসিকভাবে জানোয়ারের মতো ধর্ষণ করবে। পাশাপাশি বসতে চাওয়া মানেই কি আমার শরীরে হাত দেয়ার অনুমতি দেয়া? রিকসায় বসলেই কি হুড উঠিয়ে নস্টামি করতে হয়? প্রথমবারই শুধু ভালবাসার নেশায় মুগ্ধ হয়ে ঘুরতে এসে নিজের শরীরে ঘৃণ্য ছোঁয়ার অনুভূতি নিয়ে ফিরতে হবে তাও ভালবেসে দেবতার আসনে বসানো মানুষটির কাছ থেকে?

অদিতি কি হলো, কথা বলো?

দ্বিতীয়বারের মতো বাঁধা পেয়ে অদিতি চোখ তোলে চাইলো অমিতের দিকে। যে চেহারা জুড়ে ছিলো সৌম্যতা, চোখের ভাষায় ছিলো কোমল, নিষ্পাপ এক অমিতের অস্তিত্ব, সে সবকিছু কেমন কুৎসিত অসুরের মতো ভয়াবহ লাগছে। সানগ্লাসের আড়ালে অমিতের চোখজোড়া লোভার্ত শকুনের কথা মনে করিয়ে দিলো অদিতিকে।

আমি নেমে যাবো।
অদিতি শুধু এই একটি বাক্য বলতে পারলো অমিতকে।

অদিতির কণ্ঠ আর চেহারার অদ্ভুত পরিবর্তনে চমকে উঠলো অমিত। এতক্ষণ সে অদিতির চেহারা লক্ষ্য করেনি কারণ অদিতির দৃষ্টিতে, ধর্ষক অমিতদের ধর্ষনকালে চেহারার প্রয়োজন পড়েনা।

কি হয়েছে অদিতি?
অমিতের গলা কাঁপছে।

আমি নেমে যাবো। যন্ত্রের মতো দ্বিতীয়বার অদিতি বললো।

অমিত লাফ দিয়ে রিকসা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে বললো "মামা যাও"।

পাহাড়সম ঘৃণার স্তুপে এক বিন্দু কৃতজ্ঞতা জাগলো অমিতের জন্য অদিতির। অমিত নেমে না পালালে তাকে নামতে হতো কিন্তু পা দুটো অসাড় লাগছে। পেছন ফিরে তাকাতে গিয়েও তাকালোনা অদিতি। কি হবে তাকিয়ে? রিকসায় যার সাথে উঠেছিলো সে তো দিব্যলোকের সুদর্শন সুপুরুষ ছিলো কিন্তু যে নেমেছে সে তো নারীকে শুধুই মাংসপিণ্ড ভাবা সুযোগ সন্ধানী এক দানব। দানবদের জন্য কোনো পিছুটান থাকতে নেই, দেখাতে নেই সহানুভূতি।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৫২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×