ঈদের দিনে নামাজ পড়ার পর সারাদিন অফিস করায় ঈদের দিনের আমেজ আসলে সেভাবে টের পাইনি। দেশে আমার নামে কোরবানী করায় স্লটারিং হাউসে টাকা দিয়ে মাংস কেনার দিকেও গেলাম না। কারণ, মাংস তিনভাগ করে বাকি দুইভাগই বা কাকে দিতাম। তবে ৫ম দিনে এসে আমার ফ্রিজে কোরবানীর মাংস এলো, সেই সাথে এলো ঈদের আনন্দও। এটাও এক ধরণের ভাগ্যই বলতে হবে। নইলে আমার সাথে হঠাৎ মিসরীয় ভদ্রলোক মোহাম্মদেরই বা কেন দেখা হবে? আর দেখা হবার সাথে সাথেই আমিও মুসলমান এবং এখানে আমার কেউ নেই জেনে জোর করে তার বাসায়ই বা কেন নিয়ে যেতে চাইবে? আর আমিই বা প্রথম পরিচয়ে একজন ভিনদেশীর বাসায় কেন চলে যাব? যাই হোক, জানা ছিল মিসরীয়রা আমুদে জাতি। হই-হুল্লোড় করতে ওরা খুব পছন্দ করে এবং মোহাম্মদের বাসার পরিবেশও এর ব্যতিক্রম হল না। ওর বাবা-মা, বড় ভাই-ভাবী, তাদের দুই ছেলে মেয়ে। ভাবী মেয়ের পেছন পেছন দৌড়াচ্ছেন হোমওয়ার্ক শেষ করানোর জন্য। বাবা হাই ভলিউমে টিভিতে খবর দেখছেন। মা টেবিলে ডিনার রেডি করে সবাইকে ডাকছেন। বেশ একটা হইচইমুখর পরিবেশ। খেতে বসে টুকটাক আলাপচারিতা। মোহাম্মদের মা ইংরেজি বলতে পারেন না। উনি ইজিপশিয়ান অ্যারাবিকে আমার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন আর মোহাম্মদের সাহায্যে আমি জবাব দিচ্ছিলাম। উনার জোর জবরদস্তিতে দুইবেলার খাওয়া একবেলায় সাবাড় করলাম। আসার সময় একটা মাংসের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে যখন উনি বলছিলেন আমি যেন যখন খুশি তখন চলে আসি, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে যেন কোন অনিয়ম না করি; ততক্ষণে আমি সবকিছু ঝাপসা দেখছি। চোখের কোনের চিকচিকে জলীয় পদার্থ যেন কেউ দেখে না ফেলে সেজন্য তাড়াহুড়ো করে বিদায় নিয়ে এক দৌড়ে গাড়িতে উঠে ছুট। আসলেই, মা মা-ই হয়। তা তিনি যে দেশের, যে জাতির বা যে ভাষারই হোন না কেন।
অক্টোবর ৯, ২০১৪
সিয়াটল, ওয়াশিংটন