শিরোনাম দেখেই হয়তো অনেকে ভ্রু কুচকাচ্ছেন, কেন আবার আরবি শিখতে হবে? আমার মাতৃভাষা বাংলা, আমি কেন আবার শুধু শুধু আরবি শিখতে যাব? আমি তো কোরআন পড়তে পারি, অনেকবার খতমও করেছি, এই রোজায়ও শুরু করেছি, এই লোক আবার নতুন কি থিওরি নিয়ে আসলো ?? মনের ঈমানই আসল ঈমান, আরবদের তুলনায় আমাদের ইমান কোন দিক থেকে কম? ইত্যাদি ইত্যাদি।
এইসব প্রতিবাদী কথা মনে আসাই স্বাভাবিক, এই জন্য কাউকে দোষারোপ করা যায় না একদমই।
কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, এই পর্যন্ত আপনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসাবে অনেকবার কোরআন খতম করেছেন, কিন্তু আপনি এর কতটা বুঝতে পেরেছেন? ছোটবেলা থেকে কত কষ্ট করে মসজিদে যেয়ে হুজুরের কাছে কোরআন শিখেছেন, কিন্তু আসলে শিখেছেন শুধুই আবৃত্তি, আর কিছুই না। শুনতে অনেক খারাপ শুনালেও এটাই বাস্তব সত্য। এই কোরআন শিখে আপনার কি লাভ হয়েছে? কিছু মানসিক প্রশান্তি পেয়েছেন বোধ হয় আল্লাহর নৈকট্য পেয়েই গেলাম অথবা অনেক সওয়াব হাসিল হইল ইত্যাদি। আর এতেই আমরা খুশি, কিন্তু কুরআনকে তো আর আবৃত্তি করার জন্য পাঠানো হয় নাই, পাঠানো হয়েছে আমাদের গাইড লাইন হিসাবে, না বুঝে সুর করে আবৃত্তি করে আপনি গাইড লাইনের কি ই বা অনুসরন করলেন একটু বলবেন???
আমরা পুরাই ধোঁকাবাজির মধ্যে নিমজ্জিত। সমগ্র রমজান মাসে লক্ষ লক্ষ মুসলমান কুরআন খতম করবে তোতাপাখির মত খেয়ে না খেয়ে পড়ে, তাদের উদ্দেশ্য অবশ্যই ভালো, কিন্তু কতই না ভালো হত যদি তারা অর্থ বুঝতে এবং অনুধাবন করতে পারত!! খতমের পর পাঠককে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, সে জানে কি না যে কি পাঠ করেছে এখন?? সন্তোষজনক জবাব পাবেন কিনা সন্দেহ!!এমন খতমে আপনি শুধু প্রতিটা হরফের জন্য বরাদ্ধ কিছু নেকি পেতে পারেন,আর কিছু না। কিন্তু এই খতম আপনার বাহ্যিক জীবনে কোন কাজেই আসলো না, আপনাকে যদি কোন অমুসলিম জিজ্ঞাসা করে , তোমার ধর্মগ্রন্থে এই বিষয়ে কোথায় কি লিখা আছে দেখাও, আপনি কি পারবেন?? না পারলে সে যদি বলে সারাদিন তাহলে কি পড়লা?? নিজে তো ডুবলেনই, ইসলামকেও ডুবিয়ে দিলেন আপনার সাথে। এই কুরআন তো শুধু তার পাঠক সংখ্যা বাড়াতে চায় নি, চেয়েছে অনুসারী, আপনি যদি বুঝারই চেষ্টা না করেন,তাহলে কিসের অনুসরণ করবেন? বুঝার চেষ্টা না করা কিন্তু অপরাধ।
যেই হাফেজ তারাবীর নামাজে কোরআন খতম করছে, যার মুখে সারাদিন আল্লাহর বানী লেগে থাকে, সেইসব হুজুরই কয়েকদিন পর ছাত্রের সাথে কুকর্মের জন্য পত্রিকার হেডিং হয় আমার মাথায় আসে না, এর একমাত্র কারন, সে জানে ই না যে কত গুরুত্বপূর্ণ কথা সে অন্যমনস্ক ভাবে আউড়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন, জানলে কিভাবে তার দ্বারা এইসব সম্ভব??
অপরাধ আসলে আমাদের মানসিকতায়, আমাদের নিয়মে। আমাদের ছোটবেলায় শিখান হয় সুর করে আরবি পড়া, বুঝে পড়ার কথা কারো মাথায়ই নাই। ছোটবেলা থেকে শিশুকে ইংরেজি এর পাশাপাশি আরবি ভাষা টা শিক্ষা দিলে যে তার উপকার হত, তা যদি কঠোর ধর্মমনা অভিভাবকরা বুঝত!!
নামাজে মনোযোগ দেওয়া টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই নামাজের সময়ই দুনিয়ার সব আজে বাজে চিন্তা মাথায় এসে ভর করে। একটা হাদিস শুনেছিলাম, সুত্র জানা নেই, যার বিষয়বস্তু হল, কোন মানুষ যদি তার সারা জীবনে নিশ্ছিদ্র মনোযোগের সাথে মাত্র ২ রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে কবুল করাতে পারে তাহলেই তা তাকে নিয়ে যাবে জান্নাতে। নামাজে মনোযোগ দেওয়া এতই বেশি কঠিন ।বিশুদ্ধ নামাজ এতই দুর্লভ। রোজার মাসে তারাবিহ নামাজে ১ ঘণ্টার বেশি সময় দাড়িয়ে থেকে লোকজন নামাজ পরে সত্য, কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পরে কয়জন? আপনি যদি না ই বা বুঝেন হুজুর কি পড়ছে, কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখবেন? আপনি যদি আজকে আরবি ভাষাটি বুঝতেন, তাহল ইমাম কি বলছে তা অনুবাদ করে হলেও বুঝার চেষ্টা করতেন, ফলে আপনার মস্তিস্ক অন্য কিছু চিন্তা করার সুযোগও পেত না, ফলশ্রুতিতে আপনার মন নামাজেই থাকতো।
এটা তো হিন্দি গান না, যে আপনি অর্থ বুঝেন আর নাই বুঝেন, মুখস্ত করে সুন্দর করে গাইতে পারলেই হল! কোরআন তো আবৃত্তি করার জন্য পাঠানো হয় নি।
অনেকে বলতে পারেন, আমরা বাংলা অর্থও পড়ি, তাদের জন্য বলি, আমরা অনেক ভাল ভাল বিখ্যাত বই এর অনুবাদ পড়ি, কিন্তু আসল বই এই স্বাদ আর পাই না, মনে মনে অবাক হই, এত ফালতু বই এত এত লোক পড়ে ভাল বলল, নোবেল ও পেল, কিভাবে সম্ভব??? আসলে, অনুবাদের মান যতই ভালো হোক না কেন, আসল বইএর স্বাদ কি অনুবাদে কোনদিন পাওয়া সম্ভব?
সাহাবীরা নামাজের সময় এতই মগ্ন থাকতেন, মাথায় পাখি বসলেও টের পেতেন না, এটাই প্রকৃত আল্লাহর কালিমার স্বাদ,এখন এইসব রুপকথা মনে হয়। তারা বুঝতেন, অনুধাবনও করতেন,তাই এত সিরিয়াস হতেন, আমরা বুঝি ই না,অনুধাবন করা দূরে থাক, তাই নামাজে এত অলসতা, শিথিলতা।
আমি বাংলাকে অবজ্ঞা করছি না, কিন্তু আসল কথা হল, রবীন্দ্রনাথের কবিতা ইংলিশে অনুবাদ করলে তা যেমন সৌন্দর্য হারাবে, এখানেও তেমন। একজন ইংরেজ তার ভাষায় অনুবাদকৃত রবি ঠাকুরের কবিতা যা বুঝবে, তার চেয়ে অনেক ভাল বুঝবে যদি সে বাংলা ভাষা শিখে তার পর বাংলায় পড়ে সেই একই কবিতা। যদিও কোথায় রবীন্দ্রনাথ, আর কোথায় কুরআন, ধৃষ্টতা মাফ করবেন, এটি শুধুই একটি রূপক উদাহরন মাত্র।
আমরা দুনিয়াতে ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ কত ভাষা শিখছি, যা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন। সেই তুলনায় আরবি ভাষা শিখা অনেক সহজ আমাদের জন্য, কারন আমরা এই ভাষা পড়তে পারি, লিখতে পারি, নতুন করে বর্ণমালা শিখতে হবে না আর কষ্ট করে।
আমার মনে হয় আরবি ভাষা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত আবশ্যিক হলে, বিশেষ করে ইসলাম ধর্মের কোরআন-হাদিস পড়তে ও বুঝতে মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হবে এবং সবাই যার যার ধর্ম নিজের জীবনে জেনে-বুঝে প্রতিফলিত করতে পারবে। ধর্মের অপব্যবহার কেউ করতে পারবে না। ধর্ম নিয়ে কুসংস্কার দূর হবে। নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি হবে।
এখন দেখি কোথায় এই ভাষা শিক্ষা সম্ভবঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন বিদেশি ভাষা শেখানো হয়। ইংরেজি ছাড়াও চীনা, ফরাসি, জার্মানি, জাপানি, স্প্যানিশ, রুশ, তুর্কি, আরবি ও কোরিয়ান—এই ভাষাগুলো শেখানো হয় এখানে। জুনিয়র, সিনিয়র, ডিপ্লোমা ও উচ্চতর ডিপ্লোমা কোর্স করানো হয় ধাপে ধাপে। প্রতিটির মেয়াদ এক বছর (১২০ ঘণ্টা)।
এ ছাড়া প্রতিটি ভাষায়ই ৬০ ঘণ্টার শর্ট কোর্স রয়েছে। যা প্রতি বছরে ৪ টি ব্যাচে করানো হয়।
ভর্তির যোগ্যতা: প্রার্থীকে উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও বাইরের শিক্ষার্থীরাও এখানে ভর্তি হতে পারবেন। আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা: জুন। ভর্তি পরীক্ষাঃ জুলাই।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের নাম সেন্টার ফর ল্যাংগুয়েজ। চীনা, ফরাসি, স্প্যানিশ, জাপানি ও আরবি ভাষা শিক্ষার সুযোগ আছে সেখানে। সকাল ও সন্ধ্যায় ক্লাস হয়। ৩০ ঘণ্টার কোর্স করতে লাগে তিন থেকে চার হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যরাও এই কোর্সে অংশ নিতে পারেন।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
মডার্ন ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউট ও কনফুসিয়াস সেন্টার দুটি পরিচালিত হয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। চীনা, ফরাসি, আরবি ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয় তিন মাস মেয়াদি চারটি সেমিস্টারে। প্রতি সেমিস্টারের খরচ পড়বে পাঁচ হাজার টাকা।
অনেক বড় হয়ে গেল। ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
প্রসঙ্গ আরবি ভাষা শিক্ষাঃ কেন শিখবেন, কোথায় শিখবেন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৮টি মন্তব্য ১০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর
বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন