বইমেলায় ওবায়দুল কাদের, প্রায়ই সময় প্রকাশনীতে অাসতেন !
তিনি অাসার সাথে সাথে প্রকাশনীর অাশেপাশে নেতাকর্মীদের ভিড় জমে যেতো ! অনেকে তার সাথে ফটো তোলার জন্য অাসতেন, কেও অাসতেন বইয়ে অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য ! একদিন...
ঢাবি ছাত্রলীগের পরিচিত বড় ভাই এসে বললেন, পিয়াস, যোগাযোগমন্ত্রীর লেখা সবচাইতে কম দামী বই কোনটা ?
বললাম, ''গাঙচিল'', দাম ১০০এর অাশেপাশে হবে, থামেন দেখি...
কি কস ! সবচাইতে কম দামেরটাও ১০০টাকা ! পড়েছিস নাকি বইটা ? কি নিয়ে লিখছে ?
বললাম, কদিন অাগে পড়েছি, নোয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের সামাজিক প্রেমের উপন্যাস বলা চলে !.....
ওহ ! বইটা দে তাহলে, একটা অটোগ্রাফ নিয়ে অাসি !
বড়ভাই অটোগ্রাফ অানতে চলে গেলেন !
অাগে জানতাম না যে, ওবায়দুল কাদের বইও লেখেন ! জানার পরে, উনার ''গাঙচিল'', ''জীবনস্মৃতি, সব মনে নেই", ''যে কথা বলা হয় নি''...পড়েছিলাম ! উদ্দেশ্য ছিল, মন্ত্রীমহোদয় কেমন লেখেন সেটা জানা ! তার সাথে অটোগ্রাফ বা ফটোগ্রাফ নিতে হবে তার কোনো ইচ্ছে ছিল না ! নোয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন সাধারন ছাত্রলীগ কর্মী কিভাবে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ অাওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হয়ে উঠলো, সেটা জানার প্রচন্ড অাগ্রহ অামাকে ওবায়দুল কাদের সাহেবের ''জীবনস্মৃতি'' পড়তে বাধ্য করেছে ! যেদিন তিনি সর্বপ্রথম রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন সেদিন কি তিনি ভেবেছিলেন যে, তিনি একদিন এই দলের সাধারন সম্পাদক হবেন !
'যে কথা বলা হয় নি' বইয়ের মাঝখানের দিকে লেখক লিখেছেন, 'সব কথা কি অার বলা যায়' !
যেদিন একটু ভিড় কম ছিল, সেদিন উনাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, স্যার, বইয়ের নাম, যে কথা বলা হয় নি, অথচ বইয়ের মাঝামাঝি এক জায়গায় বলেছেন, 'সব কথা কি অার বলা যায়', একজন পাঠক হিসেবে ব্যাপারটা কেমন খাপছাড়া লাগলো !
লেখক হেসে বললেন, কোথায় পড়াশোনা করছো ?...
যারা বিসিএস দেন, তাদের জন্য বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত অাত্বজীবনী, কারাগারের রোজনামচা... মাস্ট ! তবে সময়ের অভাবে যদি কেও অসমাপ্ত অাত্বজীবনীর পুরোটা পড়তে না পারেন তবে শেষের টীকাগুলো পড়লেও বাঙলার ইতিহাস সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারনা হয়তো অাসে ! অনেকে সময়ের অভাবে সেটাও করেন !
অামি অসমাপ্ত অাত্বজীবনী পড়েছি, শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য, মানুষটা কেমন ছিলেন সেটা অাবিষ্কার করার জন্য, তার রাজনৈতিক চর্চা কেমন ছিল সেটা বোঝার জন্য, তার দর্শনকে উপলব্ধি করার জন্য, টুঙ্গিপাড়ার রেনুর স্বামী থেকে বাঙালী জাতির পিতা হয়ে ওঠার অজানা গল্পগুলো জানার তীব্র বাসনার তাগিদে বইটা পড়েছিলাম ! ভবিষ্যতে বিসিএস দিবো তার প্রিপারেশন হিসেবে পড়ি নাই ! ''জানতে চাই'' তাই পড়ি ! নেতা হবো, বিসিএস দিবো, এরকম ছাইপাশ ইচ্ছে কোনোদিনই অামার মধ্যে কাজ করে নি !
সরকার যদি ভালো কিছু করে তাহলে অামি তার প্রশংসা করবো, অার খারাপ কিছু করলে অামি তার সমালোচনা করবো, এটা বঙ্গবন্ধুরই দেওয়া শিক্ষা ! বঙ্গবন্ধুর লেখা পড়েই বলছি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে বঙ্গবন্ধুর অাদর্শর ছিটেফোটাও নেই !
এসব বলতে অামার বুকও কাপে না, ভয়ও লাগে না, কারন অামি কোনো দলের চাটুকার নই ! অাপনি সরকারী দল করেন বলেই সেই দলের বিপক্ষে কিছু বলতে পারেন না, তাহলে অাপনাকে বলবো, অাপনার সাথে বঙ্গবন্ধুর অাদর্শগত ফারাক অনেক ! বঙ্গবন্ধু শহীদ সাহেবের একজন সাধারন কর্মী হয়েও তার ভুল সিদ্ধান্তগুলো বঙ্গবন্ধু ধরিয়ে দিতেন, শহীদ সাহেবের সাথে একবার অভিমান করে বঙ্গবন্ধু মিটিং থেকে উঠেও এসেছিলেন !
অাজ অাপনি সেই বঙ্গবন্ধুর দলের নেতা হয়েও কখোনো বলতে পারবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অাপনার অমুক সিদ্ধান্তটা অযৌক্তিক মনে হচ্ছে, এভাবে না করে এভাবে করলে ভালো হতো, পারবেন বলতে ?
তাহলে অাপনি কিভাবে বঙ্গবন্ধুর অাদর্শের বুলি অাওড়ান ! অাপনার মুখে তো বঙ্গবন্ধুর অাদর্শ মানায় না ! অামার মতে, সেই অাপনি একজন রাজনৈতিক চাটুকার, বঙ্গবন্ধুর অাদর্শের সৈনিক নন ! অাপনার দ্বারা দেশ তো দূরের কথা, অাপনার সমাজেরই উন্নয়ন হবে না !
অার হ্যা, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসলে অাওয়ামী লীগ করতেই হবে, এমন ধারনা অযৌক্তিক ! লীগের অনেক কাজ অামার পছন্দ হয় না তাই অামি তার সমালোচনাও করি কিন্তু অামি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি ! তার অাদর্শকে বুকে ধারন করি !!