somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: চোর

৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোর

শীতের সকাল। কোলাহল-হইচইয়ে ঘুম ভাঙল। উঠানে বাড়ীর লোকজন কি নিয়ে যেন বলাবলি করছে। চোখ ডলতে ডলতে বাইরে বেরোতেই শিবলু ছুটে এসে খবরটা দিল - ‘জানিস? সাঈদদের বাড়ীতে না চোর ধরেছে। চল দেখবি..’। কথাটা শুনেই আমার গলা শুকিয়ে গেল। বিস্ময়ে নয়, ভয়ে। হ্যাঁ ভয়ে। চোর শব্দটাতেই আমার ভয়। তাহলে খুলেই বলি। ছোটবেলা থেকেই (যদিও যখনকার কথা বলছি তখন যে খুব বড় হয়ে গেছি তা নয়। বয়স কত হবে? এই ধরুন ৪-৫ বছর) চোর বলতে আমার কল্পনায় যে ছবিটা ভাসতো তা হচ্ছে একটা হিংস্র প্রাণীর। যে কিনা কামড়ে দিতে পারে। আর হবেই বা না কেন? কাঁদলে আম্মা আমাকে এই বলে ভয় দেখাতো - ‘কাঁদেনা বাবা, চোর আসবে’। চোরের ভয়ে আমার কান্না থেমে যেত। কিন্তু চোর ভীতি আমার এমনি এমনি আসেনি। তার পেছনেও কারন আছে।

একবার গ্রীষ্মে কালবৈশাখীর রাতে আমাদের গোয়াল থেকে লাল গরুটা (লালু) চুরি হয়ে গেল। বিকেলে শুরু হয়ে ঝড় থামল সন্ধ্যার পর। কিন্তু বৃষ্টি হলো প্রায় সারারাত। রাতের খাওয়া শেষ হলে আম্মা রান্নাঘরে গোছগাছ সেরে লালুকে ভাতের মাড় দিতে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে লালু নেই। চিৎকার দিয়ে আম্মা বের হয়ে এলো। আম্মার চিৎকারে ঘরের সবাই তো বটেই আশপাশের ঘরের লোকও বের হয়ে এলো। আব্বা, বড়দা আর আমার দুই চাচাত ভাই টর্চ হাতে বৃষ্টির মধ্যেই লালুকে খুঁজতে বের হলো। আম্মা আমাকে আর আমার ছোট বোনকে শুইয়ে দিয়ে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলেন, যেন লালুকে পাওয়া যায়। এই ঘটনা আমার চোর ভীতি আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। এত্তো বড় একটা গরু লালুকে যে প্রাণী গোয়াল ঘর থেকে অনায়াসে তুলে নিয়ে যেতে পারে সেটা নির্ঘাত ভয়ঙ্কর হিংস্র প্রাণী। ঝড়ের সেই রাতে আমার ঘুম হলোনা, চোরের ভয়ে। কাঁথার ভিতর কাচুমাচু হয়ে শুয়ে থাকলাম। লালুকে অবশ্য খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, মাইল খানেক দূরে এক ধানক্ষেতে।

সেই রাতের লোমহর্ষক (আমার কাছে তো বটেই) চুরির ঘটনা প্রায় ভুলেই গেছি। এরই মাঝে ঘটল আরেক ঘটনা। আমাদের ঘরের পেছনে কুয়ার মতো একটা গর্ত করা হয়েছিল যদিও পরে সেই কুয়া আবার বন্ধ করে ফেলা হয়েছিল কিন্তু কি কারনে আমার জানা নেই। এক সকালে বাড়ীর লোকজন কি নিয়ে যেন হইচই শুরু করল। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম - ‘কি হয়েছে’? ভাইয়া যা শোনাল তাতে আমার গলা আরেক দফা শুকিয়ে গেল। আবারও চোর। একটা চোর নাকি ওই গর্তে পড়ে গেছে। কী সাংঘাতিক কথা! আগেরটা ছিল ‘গরু চোর’ এবারেরটা ‘মুরগী চোর’। পাটের দড়ি আনা হলো গর্ত থেকে চোর টেনে তোলার জন্য। ছয় জন মিলে অনেক চেষ্টা চরিত্র করার পর চোরটাকে তুলল। আমি দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখলাম। ভয়ে কাছে গেলাম না। কিন্তু সেই চোরের চেহারা আমার কাছে পরিচিত মনে হলো। চেহারাটা হিংস্র, সামনে তীক্ষ্ণ দাঁত। চোখে যেন আগুন জ্বলছে। গর্ত থেকে উঠেই এক দৌড়ে জঙ্গলের ভেতর চলে গেল। দেখতে শেয়ালের মত। চোর সম্পর্কিত আমার ধারনা আরও পাকাপোক্ত হলো।

কিন্তু সেদিন শীতের সকালে যথেষ্ঠ সাহস সঞ্চয় করে শিবলুর পেছন পেছন রওনা হলাম সাঈদদের বাড়ীর দিকে। সাঈদদের উঠানে অনেক লোকের ভীড়। শিবলুর সাথে ভীড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে আমি রীতিমত টাশ্‌কি খেলাম। চোর কোথায়? ঘরের খুটির সাথে দড়ি দিয়ে বাঁধা একটা লোক। একজন মানুষ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যথেষ্ট উত্তম-মধ্যম দেয়া হয়েছে। মাথা নিচু করে লোকটা মাটিতে বসে আছে। তার হাত পেছন দিক থেকে খুটির সাথে বাঁধা। লুঙ্গি পড়া লোকটার গায়ে স্যান্ডো-গেঞ্জি। গেঞ্জির এখানে-ওখানে ছেড়া। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। পায়ে স্যান্ডেল-জুতা কিছু নেই। মাটিতে ফেলে লোকটাকে নিশ্চই পেটানো হয়েছে কারন তার শরীরে এখানে ওখানে মাটি লেগে আছে। আমি শিবলুকে জিজ্ঞেস করলাম- ‘চোর কোথায়’? শিবলু বিরক্ত হয়ে বলল - ‘আরে দেখতে পাচ্ছিস না, সামনে বাধা’? আমি খুব হতাশ হলাম। কষ্টও পেলাম। চোর সম্পর্কিত ধারনা পাল্টে যাওয়ায় নয় বরং এটা ভেবে - মানুষ কি করে চোর হয়?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৩৩
১১টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×