somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিগত অধ্যায়

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তার সাথে এটাই ছিলো আমার প্রথম দেখা। সে'ই পছন্দ করেছিলো যায়গাটা। একটু নাকি নিরিবিলি, পাশাপাশি বসে দুটো কথা বলার জন্য উত্তম যায়গা আবার প্রথম দেখাটাও স্মরণীয় হয়ে থাকল। এখন দেখছি যায়গাটা মোটেও সুনসান নয়। যায়গাটা বলতে রেস্তোরাটা। বরং জনকোলাহলের মাঝে একটা খুপড়ি ঘর। দু-চার জোড়া যুগল একটু দুরে দুরে কয়েক টেবিল ফাকে বসে প্রণয়ক্রীয়ায় ব্যাস্ত। গুনগুন করে চলছে প্রেমালাপ।আমি বসে বসে দিবার জন্য অপেক্ষার পাশাপাশি কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করছিলাম সবচাইতে কাছের জুটির কথাগুলি। মৌমাছির গুুনগুন ছাড়া কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। স্বয়ং ভগবান ছাড়া কার সাধ্য আছে এদের কথা বোঝার? ভাবছি এরা নিজেরা বুঝতে পারছেতো নিজেদের কথা? পারারই কথা, গননা জানলে তিনের পরে না বুঝলেও চারই হয়। ও হ্যা দিবা, যার সাথে দেখা করতে এসেছি এটাই তার নাম। আর আজই আমাদের প্রথম দেখা। গত আটমাস ধরে কথা বলে চলেছি আমরা। রাতের পর রাত, কখনো রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে যায়। কর্মব্যাস্ত ণগরী জেগে উঠে কোলাহলে, তবু যেন কথা ফুরোয় না। অর্থহীন সব বাক্যালাপ যার আর পর নেই। তার স্থির ছবিগুলো আমাকে অস্থির করে তুলতো। গভীর বাদামী চোখ দুটোতে হারিয়ে যেতাম, হারিয়ে আবার নিজেকেই খুজে বেড়াতাম সেখানে। অনেক চেষ্টা করেও কোথাও সাক্ষাতের জন্য রাজী করাতে পারছিলাম না তাকে। অথচ আজ সে নিজেই দেখা করতে চাইছে। আমিও তাই বসে আছি ভাবলেশহীন। দুঘন্টা হয়ে গেল বসে আছি, ওয়েটারটা তাই উসখুস করছিলো। বুঝতে পেরে তাকে ডেকে একটা কিছুর অর্ডার দেব ঠিক তখনি আলো আধারী ভেঙে ছিপছিপে গড়নের মেয়েটা এসে পৌছল। প্রায় হাপাতে হাপাতে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
- অনেকক্ষন ধরে বসেছিলে বুঝি?
একটু ইতস্তত করে বললাম
-কই নাতো, এই আর কতক্ষন।
যদিও অনেক কিছুই বলার ছিলো, কিন্তু বলতেই পারলাম না। আড়চোখে তারদিকে তাকানোটাই কাল হয়েছিলো। তার দৃষ্টির উত্তাপে পুড়ে গেছে আমার জমানো সব অভিমান। স্বভাবসুলভ মিষ্টি হাসিটা দিয়ে বলল
-আমি জানি তুমি রেগে আছো, কিন্তু কি করব বল, কোনভাবেই একা একা বের হতে পারছিলাম না, তার উপর বাড়ীতে অনেক লোকজন, সবাইকে বোঝান কি আর সহজ?
আমি চুপ করে ছিলাম বেশ কতক্ষন। ঠিক চুপ করে নয়, ভাবছিলাম। স্বপ্ন আর সত্যির মাঝামাঝি সব ভাবনা। মৃত্যুর ঠিক আগ মূহুর্তে মানুষ নাকি রঙীন টানেলের মাঝ দিয়ে ছুটে চলে। আমিও তেমনি রঙীন ভাবনার মাঝদিয়ে ছুটে চলেছি। রাতের পর রাত নির্ঘুম জেগে থাকার হিষাব কষছি, একটি একটি করে গাথা স্বপ্নগুলোর হিষাব কষছি। দিবা তখন ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কাকে যেন কি বলছিলো। আমি যেন কিছুই শুনতে পারছিলাম না। ফোনটা রেখে সে'ই বলে উঠল
-আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
-মুক্তোর কানেরদুল পরা সেই মেয়েটির মত।
-কে? নীতুর কথা বলছ?
-নীতু ছাড়া কি কারো মুক্তোর দুল নেই?
-আমি কি করে বলব? তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে তো নীতু ছাড়া কারো মুক্তোর দুল নেই।
-আমার ফ্রেন্ডলিস্টের সব মেয়েদের খুটিয়ে খুটিয়ে দ্যাখো নাকি?
-সব মেয়েরাই দ্যাখে।
-সব মেয়েরা আর কি কি করে?
-ঢং কোরোনা, সোজা করে বলতে পারনা, মুক্তোর দুল পরা কে?
-ডাচ শিল্পী ভেরমিয়ারের একটা পোট্রেট। the girl with pearl earring
-ওহ তাই, থ্যান্কিউ
আমি সেই চুপ করে রইলাম। আসলে কি বলব গুছিয়ে উঠতে পারছিলাম না। অথচ কত কথা সাজিয়ে রেখেছিলাম। প্রথম দেখায় তার প্রিয় কবিতাটি শুনিয়ে চমকে দেব বলে। আমি নীরষ মানুষ। তারপরও কিছু কৌতুক মুখস্ত করে রেখেছিলাম প্রথম দেখায় তাকে শুনিয়ে হাসাব বলে। অথচ এখন কিছুই মনে পড়ছে না। না কবিতা না কৌতুক। আমি চুপ করে তাকিয়ে আছি টেবিলক্লথটার দিকে। আবার নীরবতা। একটা এম্বুলেন্স হুইসেল বাজুয়ে চলে গেলে দিবা বলে উঠল
-এভাবে চুপচাপ বসে থাকবে? কিছু বলবেনা?
-কি বলব ভাবছি।
-ফোনে কথা বলার সময়তো মুখে খই ফুটত, তখন ভাবতে হত না?
-তখনকার কথাগুলো ছিলো রেলগাড়ীর মত, একটার টানে অন্য বগীটাও চলে আসত।
-এখন বুঝি বগী নেই? ঐযে বাদিকে তাকাও, বগী পেয়ে যাবে।
বাদিকে তাকালাম। একটা মেয়ে তার সঙী ছেলেটাকে চামচে কিছু একটা খাইয়ে দিচ্ছে। আমি দেখতে যেন তাদের চৌম্বক মেরূর মাঝে হারিয়ে গেলাম। আবার নীরবতা। আচ্ছা এমন কেন হচ্ছে? আমি দিবার দিকে মনযোগই দিতে পারছিনা। এবারো নীরবতা ভেঙে দিবা বলে উঠল
-মনে আছে, ফোনে কথা বলার সময় প্রটি দশ মিনিটে একবার করে তুমি একটা কিছু চাইতে।
-হু
-এখন চাওনা?
-না
-আমি যদি চাই?
-তাও হয়না। তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? লোকজনের সামনে, না-না।
-তা না হোক, আমি কি তোমার হাতটা ছুয়ে দেখতে পারি?
আমার কোন উত্তরের সুযোগ না দিয়েই সে টেবিলের উপর রাখা আমার হাত দুটো চেপে ধরল। তার বরফ-শীতল হাতদুটো তখন আমার কাছে পর্বতের মত ভারী হয়ে গেছে। হাহাকার গুলো নিঃস্বাসের সাথে বেরিয়ে আসছেনা। গলার কাছে এসে কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুরছে। একটা দীর্ঘশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা বোধ করছিলাম ঠিক তখনি খেয়াল করলাম দিনার ফুপিয়ে কান্নার শব্দ ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে। আবারো সেই গভীর বাদামী চোখের দিকে তাকালাম। রুপসজ্জার কালি চোখের নীচে লেপ্টে গেছে।, কান্না থামিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। আহা, একটু আগেইতো হাসছিলো, তারপর টের পাওয়ার আগেই কান্না জুড়ে দিয়ে তা আবার থামিয়েও দিলো। মেয়েরা পারেও। আমি পারি না। তাইতো কষ্টগুলো আশকারা পেয়ে আরো জ্বালাতে থাকে। দিবার আবার ফোন এল।
-হ্যা, এইতো, আচ্ছা, হ্যা
এবার সে উঠে দাড়াল।
-আমি চললাম। জানি খুব কষ্ট পাচ্ছো। তোমার চেয়ে লক্ষগুন বেশী আমি পাচ্ছি। দুঃখ, সেই কষ্টটাও তোমাকে দেখাতে পারছিনা। আর হ্যা, কাল থেকে আর আমাকে খোজার চেষ্টা করোনা। খুজলেও পাবেনা। যদি পেয়েও যাও, সেটা আমাকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না।
দিবা চলে গেল, দ্রুত নাকি ধীরপায়ে গেছে খেয়ালই করিনি, আমি সেই টেবিল ক্লথটার দিকেই তাকিয়ে আছি। কাল দিবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রথম অথবা শেষবারের মত দেখতে চেয়েছে আমাকে। হয়তো স্বম্পর্কের প্রতিদান দিতে, নয়তো স্বান্তনা দিতে। অথবা হয়তো সেও আমারই মত কষ্ট লাঘবের জন্য শেষ দেখা দেখতে চেয়েছে।
কত সহজেই না পায়ে হেটে সে চলে গেল। আমার জীবনের একটা অধ্যায় রচনা করে দিয়ে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×