somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাড়ে চৌদ্দ শ বছর আগের আরব ভূখন্ডের এক ভদ্রলোক যেখানে এত স্মার্ট ছিলেন, সেখানে দুই হাজার ষোল সালে তাঁর ফলোয়াররা এত গর্ধব কেন হয়ে গেলেন সেটা বিরাট চিন্তার বিষয়।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অ্যামেরিকায় প্রতিবছর টর্নেডো হয়। টেক্সাসের টর্নেডোতো পৃথিবী খ্যাত। যদিও প্রতিবেশী স্টেট ওকলাহোমারগুলির ক্ষতির পরিমান হয় বেশি।
তা এইসব টর্নেডোতে গুটি কয়েক মানুষতো মরেই। দশজনের বেশি মরলেই দেশজুড়ে হায় হায় রব উঠে। প্রানের মূল্য এদেশে অনেক বেশি! সাথে ক্ষতি হয় বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির। যেখানে আমাদের দেশের যেকোন মৌসুমী সাইক্লোনের তুলনায় মৃতের সংখ্যা এখানে একেবারেই নস্যি, সেখানে অ্যামেরিকার টর্নেডোর খবর প্রথম আলোতে পড়ে আমার বাংলাদেশী ভাইয়েরা বয়ান দেন, "আল্লাহর গজব! পাপের শাস্তি!"
তাহলে নিজের দেশে যা ঘটে সেটা কী?
নেপালে যেদিন ভূমিকম্প হলো, সেদিন অনেক মানুষকে বলতে শুনেছিলাম, "আল্লাহর গজব পড়েছে।"
এখন দেশ কিছুদিন পর পর বড় বড় ভূমিকম্পে কেঁপে কেঁপে উঠছে, আর প্রতিবার এরা কোন না কোন নতুন থিওরি নিয়ে হাজির হচ্ছেন।
যেমন এইবারের থিওরি, "বেশরিয়াতি পহেলা বৈশাখ পালনের জন্য আল্লাহ ওয়ার্নিং দিয়েছেন।"
আরেকটা আরও হাস্যকর বয়ান, "মেয়েরা জিন্স পরে চলাফেরা করে বলেই ভূমিকম্প হয়।"
তাইলেতো ভাই অ্যামেরিকার ২৪ ঘন্টাই কাঁপাকাঁপির উপর থাকার কথা। এইদেশের সুন্দরী ললনারাতো হাঁটুর নিচে কিছুই পড়েনা!
প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটা অতি স্বাভাবিক ঘটনা। যেমন চন্দ্র-সূর্যগ্রহণ। যেমন আপনার মলমূত্র ত্যাগ। আপনি যাই করুন না কেন - এইসব ঘটবেই।
আমাদের নবীজির (সঃ) ছেলের মৃত্যু দিনে সূর্য গ্রহণ ঘটেছিল। সাহাবীদের একজন বললেন, "নিশ্চই প্রকৃতিও শোক প্রকাশ করছে।"
পুত্রশোকে মুহ্যমান নবীজি(সঃ) পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। তাই সাথে সাথে সবাইকে ডেকে এনে সাবধান করে দেন, কুসংস্কারে বিশ্বাস করাও শিরক।
সাড়ে চৌদ্দ শ বছর আগের আরব ভূখন্ডের এক ভদ্রলোক যেখানে এত স্মার্ট ছিলেন, সেখানে দুই হাজার ষোল সালে তাঁর ফলোয়াররা এত গর্ধব কেন হয়ে গেলেন সেটা বিরাট চিন্তার বিষয়।
আরেকটা কথা।
অনেককেই দেখি ফেসবুকে ছবি প্রকাশ করতে, "সুনামির পরেও আল্লাহর ঘর মসজিদ অক্ষত। বলুন সুবহানাল্লাহ!"
"ভূমিকম্পের পরেও আল্লাহর ঘর মসজিদ অক্ষত! কয়টা লাইক হবে?"
কথা হচ্ছে, নবীজির আমলেই বন্যায় একবার কাবা ঘর ভেঙ্গে গিয়েছিল। জ্বী, বন্যায়, কাবা ঘর, ভেঙ্গে গিয়েছিল। হোলিয়েস্ট অফ দ্য হোলি প্লেসেস অন আর্থ। সেটাও বন্যায় ভেঙ্গে গিয়েছিল। এই কিছুদিন আগেও বন্যায় কাবা ঘর ডুবে যেত। মানুষ সাঁতরে সাঁতরে হজ্জ্ব-ওমরাহ পালন করতেন। এখন ড্রেনেজ সিস্টেম ভাল হওয়ায় হারাম শরীফে পানি জমে না। নাহলে প্রাকৃতিক ভাবেই এর অবস্থান এমন যে চারদিক দিয়ে পাহাড় ঘেরা, মাঝখানে নিচু ভূমিতে কাবা ঘর। ঠিক যেন বেসিন। পাহাড়ের জমাকৃত সব পানি এসে কাবা ডুবিয়ে দিত। কয়েক বছর পরপরই কাবা ঘর ভেঙ্গে আবারও পুনঃনির্মান করতে হয়। এর মানে এই যে কাবা ঘরের নয়, কাবার মালিকের উপাসনা করতে হয়।
কথা হচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুহূর্তে গ্যারান্টি নাই যে আপনি মসজিদে আছেন, নাকি মন্দিরে - আপনি এর শিকার হতেই পারেন। কারন সেগুলো স্রেফ একটি ভবন। ওখানে দাঁড়িয়ে আপনি আপনার ঈশ্বরের উপাসনা করেন। ব্যস।
যদি দূর্যোগের সময়ে একটি বহুতল ভবন ধ্বসে পরে, তাহলে সেখানে যেমন একজন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরা ব্যক্তির মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে, ঠিক তেমনি একজন কট্টর নাস্তিকেরও সম্ভাবনা আছে প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে আসার।
কাজেই দূর্যোগের সময়ে আন্দাজে কথা না ছড়িয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আশ্রয় নিন। আল্লাহর নাম নিন। যদি বিপদ কাটে, তো আলহামদুলিল্লাহ।
আর যদি না কাটে, তাহলেও ভয় নেই। কোন অবস্থায় আপনার মৃত্যু হয়েছে সেটাই বড় বিষয়। হাতে তসবিহ ছিল নাকি বিয়ারের বোতল - সেটার উপরই নির্ভর করবে পরকালে আপনার পরিনতি।
যাই হোক, শেষে আবারও নবীজির (সঃ) সহিহ হাদিসটি মনে করিয়ে দেই। "কুসংস্কারে বিশ্বাস করাটাও শিরক।"
সবাই সাবধানে থাকবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:০২
৩১টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×