somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা নিয়ে অনলাইনে অনেক ফাউল কথাবার্তা

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কয়েকদিন মাথা আউলা হয়ে আছে। রিকন্সিলিয়েশনে মিলিয়ন ডলারের হিসাবে গন্ডগোল বাঁধাচ্ছিলাম। মেজাজতো খারাপ ছিলই, মুজাজও খারাপ হয়ে আছে। স্বপ্নের মধ্যেও হিসাব নিকাশ করছি ইদানিং। অফিস ছাড়াও সুযোগ পেলেই গবেষণা করছি ঘটনা কী সেটা উদ্ধারের। এই চরম স্ট্রেসফুল সময়ে অব্যর্থ ওষুধ হচ্ছে ঘুম। একটানা শান্তিময় ঘুমের চেয়ে বড় চাপমুক্তি ওষুধ আমার জানা নেই।
কিন্তু আমার ছেলে গত কয়েক রাত ধরেই কনসিস্ট্যান্টলি রাত ২:৫০ এ ঘুম থেকে উঠে যাচ্ছে। পাঁচ মিনিট আগেও না, পাঁচ মিনিট পরেও না। কিভাবে এই কাজটা করছে আল্লাহ মালুম। দেহঘড়ি সর্বদাই রহস্যময়।
ঘুম থেকে উঠে যদি চুপচাপ নিজের মনে খেলতো তাহলে কোনই সমস্যা ছিল না। সে নিশ্চিত করবে আমিও যেন উঠে যাই। ওকে ইউটিউবে abcd বা নাম্বার লার্নিং ভিডিওজ ছেড়ে দিতে হবে। এবং তাই সে আমাকে চুমু খাওয়া শুরু করে।
সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে আমার কানে চুমু দিলে আমার কাতুকুতু লাগে। কাজেই সে পুরো মুখ বাদ দিয়ে কানেই চুমু খাবে। এবং যখনই আমি প্রতিক্রিয়া করবো, তখনই খিলখিল করে হাসবে।
এখন গভীর রাতে কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে ঐশ্বরিয়া রায়ও যদি চুমু খায়, তাহলেও মেজাজ খারাপ হতে বাধ্য। বিশেষ করে বান্দা যদি স্বপ্নেও একাউন্টিং হিসাব নিকাশ করে। কিন্তু নিজের বাচ্চার উপর মেজাজ খারাপ করা যায় না। তাও সেই বাচ্চার হাসি যদি হয় স্বর্গের ফুলের মতন। কাজেই আমি তাঁকে ল্যাপটপ ছেড়ে দিতে দিতে বলি, "যদি তুই দেখতে বিশ্রী হইতি রে....."
কী বুঝে আল্লাহ মালুম। সে পাত্তা দেয় না। পাত্তা দেয়ার কথাও না। জানে বাপ আজাইরা কথার কথা বলছে। সব বাপ মায়ের কাছেই মাহফুজুর রহমান মার্কা পোলাপানকেও হৃত্বিক রোশন মনে হয়।
এখন গভীর রাতে ঘুম ভাঙানো এবং এই চরম মানসিক চাপওয়ালা সময়ে প্রতিদিন গড়ে মাত্র দুই ঘন্টা ঘুমানোর এই রাগতো একজন না একজনের উপর গিয়ে পড়তেই হবে। কাজেই আমার রাগ আপাতত পড়ছে ফেসবুকের পোলাপানদের উপর। আরেকটু বিশেষ করে বললে, ক্যানভাসের লোকজনের উপর। আরেকটু বেশি বিশেষ করে বললে, ক্যানভাসে যেসব পোলাপান ফাত্রামি আচরণ করে তাদের উপর।
উদাহরণ দেই।
রহিঙ্গা ইস্যু খুবই জটিল এবং একই সাথে অতি সেনসিটিভ একটি ইস্যু। সীমান্তের ওপারে যা ঘটছে তা মানুষের আচরণ না। মানুষ মরছে, তেলাপোকা, মশা, মাছির মতন মানুষদের মারা হচ্ছে। দলে দলে লোক নিজের বাড়ি ঘর ছেড়ে ভিনদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। সীমান্তের এইপাড়ে তাঁদের জন্য রয়েছে অনিশ্চিত জীবন। তারপরেও অনেকে সেই ঝুঁকিটা নিচ্ছেন, এবং নৌকায় সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে পানিতে ডুবে মরছেন।
তীরে থেকে পানিতে নিখোঁজ স্বজনের জন্য প্রতীক্ষা করতে কেমন লাগে সেটা আমার ভালোই জানা আছে। আমার ভাইয়ের চেয়ে আপন, প্রিয় বন্ধু ইকবাল আমাদের সামনেই পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। তাই খবরের কাগজে যখন দেখি প্রতীক্ষারত স্বজনদের ছবি, তখন বুকটা মুচড়ে উঠে।
এখন, কেউ যদি বলে ওদের কোনভাবেই আমাদের জমিতে আশ্রয় না দিতে, বরং "ওরা মরলে মরুক আমগো কী" বা "আমাদের দেশ দখল করবার এইটা একটা নাটক" "ওরা ইচ্ছা করেই নিজেদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে দিয়েছে যাতে বাংলাদেশে আসতে পারে" টাইপ মেন্টালিটি ধারণ করে, তখন ওদের মানুষ ডাকতে ইচ্ছা করে না। ওদের উচিৎ এই মুহূর্তে নিজের জন্য ভাল মতন একটা কবর খুঁড়ে সেখানে শুয়ে যাওয়া। ওদের মতন দুই চারটা পিস দুনিয়া থেকে বিদায় নিলে পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হবে।
ওদের জন্য সহজ চিকিৎসা। একবার এইসব গৃহহীন মানুষদের অবস্থা স্বচক্ষে দেখে আসুন। নিজের বাড়ির এসি কামরায় বসে ফেসবুকে অমুক তমুকের লেখা পড়ে লোকজনের দুর্দশা নিয়ে মক করা খুবই সহজ, একবার ওদের সংস্পর্শে গিয়ে, ওদের সাথে কথা বলে তারপর মক করে দেখান।
একবার শুধু নিজের চোখে দেখেন পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুকে যখন বাবা তাঁর মাথায় চাপিয়ে কান্না করেন, শুধুমাত্র এই আশায় যে পেটের পানি বেরিয়ে গেলেই ছেলে আবার বেঁচে উঠবে - কেমন লাগে এই দৃশ্য দেখতে?
আবার আরেক পার্টিকে দেখছি আবেগে এক্কেবারে বুদ্ধিলোপ পাওয়া উন্মাদের প্রলাপ বকছে।
"রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে করতে হবে।"
"দেশের বৌদ্ধদের মিয়ানমার পাঠিয়ে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করা হোক।"
"বাংলাদেশের উচিৎ মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ করা।"
এবং এইসব আজাইরা কথাবার্তা। এই সমস্ত পাবলিকদেরও উচিৎ গু খেয়ে আত্মহত্যা করা। মস্তিষ্কভর্তি মানব মল নিয়ে বেঁচে থাকার কী মানে?
সবার আগে একটা কথা মাথায় রাখবেন, রোহিঙ্গাদের সাহায্য বা ঘৃণা দুইটারই মানদন্ড যদি হয় "তাঁরা মুসলমান" তাহলেই আপনি মানুষ হিসেবে ফেল করে ফেলেছেন। মনে রাখবেন, কয়েকশো হিন্দু রোহিঙ্গা পরিবারও কিন্তু আমাদের দেশে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন। সবার আগে চিন্তা করুন তাঁরা মানুষ, আল্লাহর সৃষ্ট সেরা জীব। আল্লাহ বলেছেন, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে গিয়ে দুর্বলের পক্ষে দাঁড়াও। যদি অত্যাচারী নিজেও হই, তাহলে নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও আমার অবস্থান ন্যায়ের পক্ষে হতে হবে। কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ, কে হিন্দু খ্রিষ্টান বিচার মনে আসা শুরু করলেই বুঝে নিতে হবে আমি ইবলিসকে জিতিয়ে দিচ্ছি।
এইবার যদি মনে করেন তাঁরাতো বিদেশী, ভিনদেশের মানুষ। ওদের মরন বাচনে আমাদের কিচ্ছু যাওয়া আসা উচিৎ না, তাহলেও ধরে নিন, আপনার আত্মার মৃত্যু ঘটে গেছে। ইন্নালিল্লাহ পড়ে ফেলুন। এই ন্যাশনালিজম থিওরিটাই আমার ঘেন্না লাগে। কাঁটাতারের এপারের বাসিন্দা, আমাদের চাটগাঁইয়া ভাইয়ের যখন মিডল ইস্টে মার খাওয়ার video প্রচার হয়, কষ্টে আমাদের কলিজা ছিড়ে যায়। আবার সীমান্তের ওপারের, এই একই ভাষা ভাষী রোহিঙ্গাদের কীট পতঙ্গের মতন মারা হলে আমরা খুশি হয়ে বলি “আরও মরুক। ওদের ইতিহাস বলে ওরা এই করেছে ঐ করেছে।“ এই সমস্ত মানুষ যখন নিজেদের উদারমনা, মানবতাকর্মী ইত্যাদি দাবি করে, তখন ইচ্ছা করে সামনে আয়না ধরে তাদের মুখোশ খুলে দিতে। নিজেদের আসল চেহারা দেখে যদি একটু লজ্জা পায়।
আচ্ছা, কালকে যদি ট্রাম্প কাকু আমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়, আমাকে আপনারা দেশে ঢুকতে দিবেনতো? আমিতো বহুদিন ধরেই সাতান্ন হাজার বর্গমাইলের বাউন্ডারিতে নেই। এবং আমার ছেলের জন্মওতো বাংলাদেশে না। আমি সত্যিই চিন্তিত।
আমি আগেও বহুবার বলেছি, এইবারও বলছি, রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া কোনভাবেই সমস্যার সমাধান না। বরং সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলা। মিয়ানমার ঠিক এইটাই চায়। ওরা চায় ওদের জনগণকে ঠেলে ওদের আদি নিবাসে পাঠাতে, এবং আমরা ওদের স্থায়ী আশ্রয় দেয়া মানেই ওদের পারপাস ফুলফিল করা।
রোহিঙ্গাদের চৌদ্দপুরুষের আবাসস্থল মিয়ানমার। ওখানে থাকাটা ওদের জন্মগত অধিকার। কাজেই আন্তর্জাতিকভাবে ওদের সরকারকে চাপ দিতে হবে হয় ওদের স্থায়ীভাবে ঐ দেশে রাখতে, নাহয় ওদের স্বাধীনতা দিয়ে আলাদা দেশ দিয়ে দিতে। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ইনফ্লুয়েন্স কেউ গণাতেই ধরে না, কিন্তু চেষ্টা নিতেতো ক্ষতি নেই। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখন পর্যন্ত যা করছেন, বাঘের বাচ্চার মতন করছেন। ফেসবুকের কোন কোন পাবলিকের লেখা পড়লে মনে হয় বাংলাদেশ সরকার বুদ্ধিহীনতায় ভুগছে এবং তিনি বিরাট তালেবর এসে গেছেন। আল্লাহর ওয়াস্তে নিজের দেশের সরকারকে সহায়তা করুন। শুধুশুধু আউলফাউল কাজ করে বা প্রচার করে ঝামেলা বাড়াবেন না।
৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বনেতাদের কাছে আমাদের হয়ে রীতিমত ভিক্ষা করেছিলেন। সোভিয়েৎ ইউনিয়ন তখন ইন্ডিয়ার পাশে এসে না দাঁড়ালে তিন ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার আকাশে মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি হিসেবে ভারতীয় বিমান প্রবেশ করতো না। আমাদের স্বাধীনতা আরও অনেকটা পিছিয়ে যেত।
কথাপ্রসঙ্গেই বলতে হয়, অনেকে মিয়ানমার এবং মুক্তিযুদ্ধকে এক কাতারে ফেলে দিচ্ছেন। তাদের কথাবার্তা আমার কাছে ক্লিয়ার না। আমরা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিলাম। ইন্দিরা গান্ধী যখন শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ দিতে এসেছিলেন, তখন আমাদের তরুণ, বৃদ্ধ, যুবারা একসাথে হাহাকার করে বলেছিলেন, "আমাদের ভাত চাইনা, অস্ত্র চাই। আমাদের অস্ত্র দিন - আমরা গিয়ে লড়াই করি।"
রোহিঙ্গারা কী সেই দাবি করছেন? নিজেদের স্বাধীনতার জন্য তাঁরা কী সর্বোচ্চ ত্যাগে আগ্রহী? তাহলে ইমোশনাল হয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে কেন ছোট করা?
ছোট করা থেকে আরেকটা প্রসঙ্গে বলতে ইচ্ছে করছে। অনেকেই দাবি করছেন, "একাত্তুরে ভারত "জানতো" আমরা দেশ স্বাধীন হলেই নিজ দেশে ফেরত আসবো, তাই তাঁরা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল।"
কথাটি কিন্তু ১০০% সত্য নয়। "ভারতীয়রা জানতো" শব্দযুগলেই আমার আপত্তি। বেসিক ইতিহাসই বলবে কেন আমার আপত্তি।
৪৭ থেকে ৭০ পর্যন্ত আমাদের যত শরণার্থী ভারত গেছেন, কেউই ফেরত আসার জন্য যাননি। কলকাতার জমিদারদের শখের বাগানবাড়িগুলো দখল করে নিয়েছিল পূর্ব বাংলা, তখনকার পূর্ব পাকিস্তান বা বর্তমানের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া লাখে লাখে উদ্বাস্তু। বসত গেড়েছিলেন তাঁরা শিয়ালদাহ, হাওড়া ইত্যাদি রেলস্টেশনে। ফুটপাথ ছেয়ে গিয়েছিল গৃহহীন নরনারিতে। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার রাজধানী, স্বপ্নের শহর কলকাতা কয়েকদিনেই পরিণত হয়েছিল নোংরা ঘিঞ্জি নগরীতে। বেদখল হয়েছিল অনেক বাড়িঘর। সরকার এমন অনেককেই সেইসব দখল নেয়া বাড়িগুলো কাগজ করে দিয়েছিলেন। অনেককে জোর করে সরানো হয়েছিল দন্ডকারণ্যে। বন জঙ্গল কেটে নিজেরা নিজেদের বাড়ি বানিয়ে নাও। রেফারেন্স লাগবে? সুনীল-শীর্ষেন্দুর (যাদের আদি নিবাস পূর্ব বাংলা) অগণিত বই আছে সেই সময়ের সমাজের উপর। সাধারণ ইতিহাসের বই ছাড়াও কথা বলতে পারেন তখনকার সময়ের উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়া লোকজনের বংশধর যারা জন্মসূত্রে বর্তমান ভারতীয় নাগরিক, তাঁদের সাথে। খোঁজ নিলেই তাঁদের সন্ধান পাবেন। হয় আপনার আত্মীয়, বা আপনার পরিচিত কারোর আত্মীয়। বিদেশে যারা আছেন, তাঁদের জন্য এমন ভারতীয় সংগ্রহতো ওয়ান টু। শুধু গল্প শুনে যান কতটা কষ্ট করে তাঁরা আজকের অবস্থানে এসেছেন।
শরণার্থীদের দখল জমানো কর্মকান্ডের আরেকটা দলিল মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাত্থুরাম গোডসের শেষ চিঠি। যেখানে সে উল্লেখ করে যে দলে দলে উদ্বাস্তুরা মসজিদ দখল করে বাস করা শুরু করেছেন, এবং গান্ধীজি বলেছেন তাঁরা যেন অচিরেই মসজিদের দখল ছেড়ে দেন। নাত্থুরাম ভাইসাহেব তাই গান্ধীকে পাকিস্তানের (তথা মুসলিমদের) দালাল সন্দেহ করে (আরও অনেক কারন ছিল) গুলি করে মেরে ফেলেছেন।
এই গেল ৪৭-৭০ পর্যন্ত শরণার্থীদের "দখলবাজি কর্মকান্ড।"
তারউপর এইসব শরণার্থীদের অনেকেই ছিলেন নানান পেশায় এক্সপার্ট। তাঁরা তখন বাজারদরের চেয়ে অনেক সস্তায় নিজেদের সার্ভিস বিক্রি করতেন। যেমন রেডিও সারাই বা ছোটখাট ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ একজন শরণার্থী কলকাতার লোকাল মেকানিকের চেয়ে অনেক সস্তায় করে দিতেন। ফলে স্থানীয়দের পেটে সরাসরি লাথি পড়লো। তাঁরা গেলেন ক্ষেপে।
এইবার বয়ান করা যাক আরেকটা ফ্যাক্ট।
৪৭ এ পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য কারা সবচেয়ে বেশি দায়ী জানেন? বাঙাল মুলুকের মুসলমানেরা। পাঞ্জাবের মুসলিমরা আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য এত হাউকাউ করে নাই যতটা আগ্রহ ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের। ৯৬% ভোট পড়েছিল বাঙালিদের পক্ষ থেকে, পাঞ্জাবিদের পার্সেন্টেজ তিরিশ-চল্লিশও ছিল না। এবং দেশ স্বাধীন হবার পর হিন্দুদের তাড়িয়ে দেয়া হলো। স্বাভাবিকভাবেই ঘটি-বাঙাল হিন্দুদের একটা ক্ষোভ তখন বাঙালি মুসলিমদের উপর ছিলই। তারসাথে যোগ করুন পঁয়ষট্টি সনের ইন্দো-পাক যুদ্ধ। সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে দিয়েছিল এই লড়াই। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বড় বড় মিলিটারি নেতাগণ, এম.এ.জি. ওসমানী, খালেদ মোশাররফ, জিয়াউর রহমান, কে.এম. শফিউল্লাহ প্রমুখ একটিভ্লি পাকিস্তান মিলিটারিতে সার্ভ করেছিলেন। এইটাকেও তাঁরা ইস্যু বানান নি। বলেননি পাঁচ বছর আগেও ওরা আমাদের সাথে এই করেছে ঐ করেছে। একবারও বলেননি এই হারামিগুলোর জন্যই আজ আমরা দেশছাড়া।
তাছাড়া অনেকেই জানেন একাত্তুরে ভারত নিজের সমস্যা নিয়েই জর্জরিত ছিল। দারিদ্র, অনাহার বা এইরকম হাজারও ইস্যু ছাড়াও নক্সালপন্থীরা তখন বিরাট মাথাব্যথার কারন। যেখানে সেখানে ট্যালেন্টেড লোকজনদের খুন করে ফেলছে। পুলিশ হত্যাতো তখন ছিল ওদের কাছে এবিসিডি। এরা আবার প্রেসিডেন্সি, হিন্দুর মতন ভাল ভাল কলেজের ছাত্র। ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাথা। হঠাৎ করে তাঁদের কী হলো কেউ বুঝতে পারছেনা। চীনা চেয়ারম্যানকে নিজেদের চেয়ারম্যান বানিয়ে কমিউনিস্ট হতে নিজেরই লোকেদের মেরে ফেলছে। ওদের দমনে তাই সরকার ব্যস্ত।
এদিকে পুরো উত্তরাঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে আছে চীন সীমান্ত। ইচ্ছা করলেই ভারতে ঢুকে যাবার ক্ষমতা তাদের ছিল। তখন চীন সরাসরিই পাকিস্তানের পক্ষ নেয়া দেশ। ওদের পাহারা দিতে বিরাট সংখ্যক সেনাবাহিনী সীমান্তে সতর্ক প্রহরায় রাখতে হয়। পাকিস্তান বর্ডারে লোক নিয়োগ - সেটাতো পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই করে আসছে।
এতকিছুর পরেও যখন প্রশ্ন দাঁড়ালো বাঙালি শরণার্থীদের জীবন মরনের, ভারত তখন এগিয়ে এলো। কেউ জানতো না যুদ্ধ কবে শেষ হবে। কেউ জানতো না শরণার্থীরা কী স্বাধীন দেশে ফেরত যাবে নাকি আগের চব্বিশটা বছরের মতই থেকে যাবে। কেউই জানতো না এত বিপুল সংখ্যক লোকজনের থাকা খাওয়ার টাকা কোত্থেকে আসবে। ওরা তারপরেও আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধীকে যখন নিক্সন বলেছিল পাকিস্তানকে ধমক দেয়ার পরিবর্তে শরণার্থীদের ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করবে, ভারতের লৌহ মানবী সেদিন বলেছিলেন, ভারত গরিব হতে পারে, কিন্তু অতিথি সেবা করতে কারো কাছে তাঁদের হাত পাততে হবে না।
নিজেরা নিজেরা টাকা তুলে আমাদের শরণার্থীদের তাঁরা খাইয়েছিল।
এই কারণেই যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের মুখের উপর জুতা মেরে আসলেন, আমি আমার শরীরে আশ্চর্য শিহরণ অনুভব করেছি। আমি কখনই কোন রাজনৈতিক দলের ভক্ত নই, কোন নেতানেত্রীকে পূজাও করিনা। তবে এইবার আমাদের প্রধানমন্ত্রী ন্যায়ের জন্য লড়ছেন। আমাদের উচিৎ দলমত নির্বিশেষে তাঁর পেছনে দাঁড়ানো।
ইন্দিরা আন্টিরও আমি বিরাট ভক্ত। তারপরেও তাঁর একটা কাজ প্রমান করে মানুষ কখনই অতিমানব হতে পারেনা। তিনিও মানুষ ছিলেন। পাপ পুণ্যের ঊর্ধ্বে নন। স্বাধীন পাঞ্জাবের দাবিদারদের দমনে পাঞ্জাবের গোল্ডেন টেম্পলে (শিখদের মক্কা/কাবা) নিজের দেশের সিভিলিয়ানদের উপর মিলিটারি লেলিয়ে দিয়েছিলেন এই নারীই। এর ফল ছিল তাঁরই শিখ দেহরক্ষীর হাতে তাঁর মৃত্যু। যার ফল ছিল ভারতজুড়ে শিখ-হিন্দু দাঙ্গা। পাঞ্জাব আজও হাজারো স্বজাতি নিরীহের রক্তের শোকে কাঁদে। আজও তাঁরা নেহেরু কন্যাকে ক্ষমা করতে পারেনি।
তো যাই হোক, এখন যারা বলেন ওরা জানতো আমরা ফেরত আসবো, আমরা ডিসিপ্লিন্ড আচরণ করবো এবং ইত্যাদি ইত্যাদি - তাহলে কিন্তু আমাদের আশ্রয়দাতা, আমাদের "শশ্মান বন্ধুদেরই" পারতপক্ষে ছোট করা হচ্ছে। এইটা উচিৎ না। এইটা অন্যায়। সত্য স্বীকারে কেউ কখনই ছোট হয়না। অন্যের ঋণ স্বীকারে ছোট হওয়ারতো প্রশ্নই উঠেনা।
১৯৭১ এবং ২০১৭ দুইটা দুই ভিন্ন সময়। দুইটাকে এক করে খিচুড়ি বানাবার চেষ্টাটা কেবল হাস্যকরই না, অপরাধও।
প্রতিটা গণহত্যারই নিন্দা জানাতে হবে। হোক সেটা বিশ্বযুদ্ধে, হোক সেটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে, শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধে, ইজরায়েলের আগ্রাসনে, বা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে।
"আমার বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যা অনেক ঘৃণ্য ছিল কাজেই ওদের গণহত্যা আসলে গণহত্যা না" টাইপ মেন্টালিটি ত্যাগ করে একবার চিন্তা করেন প্রতিটা মানুষের প্রানেরই মূল্য অসীম। একটা বাপ জানে তাঁর সামনে তাঁর শিশুর ডুবে মরার কষ্ট। মা জানে তাঁর সামনে তাঁর সন্তানকে গুলি করে হত্যার কষ্ট। অন্যায়ভাবে বাপ মা হারানো এতীমের সাথে একবার কথা বলেছেন কখনও? কেউই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে অচেনা দেশে বাঁচার উদ্দেশ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে সমুদ্রে নৌকা ভাসায় না।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে যতই ইমোশনাল হই না কেন, কিছু বিষয়ে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
১. ওরা যেন কোন অবস্থাতেই অপরাধমূলক কর্মকান্ড ঘটাতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ইয়াবা পাচার থেকে শুরু করে পতিতাবৃত্তি, চুরি ডাকাতি ইত্যাদি অনেক কিছুই ঘটার সম্ভাবনা আছে। কিছু থাকবে স্বভাবে, কিছু হবে অভাবে, এবং এর অনেকখানিই হবে স্থানীয় বাঙালিদের উদ্যোগে। যেমন ইয়াবার কথাই ধরা যাক। শুধুমাত্র সাপ্লাই ছাড়া বাকি সব কিছুই (সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে সেবন পর্যন্ত) করে আমাদের দেশের লোকজন। কাজেই প্রচন্ড সতর্ক থাকতে হবে এই ব্যাপারে।
২. ওদের সাথে কোনভাবেই যেন মিয়ানমারের চর ঢুকে যেতে না পারে। এইটা অতি সহজ ট্রিক। এইভাবেই গুপ্তচর অনায়াসে কোন দেশে প্রবেশ করতে পারে।
৩. শুনলাম ওরা নাকি কোথায় কোথায় জোরপূর্বক দখলবাজি শুরু করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ/মিলিটারি এক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। এইখানে ছাড় দেয়া মানে আগামীতে আরও এমন ঘটনা ঘটবে। সাথে আশ্রয়প্রাপ্ত শরণার্থীদের কঠিন ধমক দিতে হবে, যদি একটাও বেদখলের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়, তাহলে সবকটাকে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে। দেখেন, যদি ওরাই দখলবাজদের বিরুদ্ধে পাহারা দেয়া শুরু না করে, তাহলে আমার ইনবক্সে গালাগালি করে যাবেন।
৪. এত বিরাট জনগোষ্ঠীকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবার মতন টাকা পয়সা আমাদের নেই। ওদের বসিয়ে খাওয়াবারও কোন মানে হয়না। ক্যাম্পে উপযুক্ত ট্রেনিং দিয়ে ওদের জনশক্তিতে পরিণত করা হোক। তারপর কড়া নজরদারিতে তাঁদের দিয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট করানো হোক। নিজেদের টাকা পয়সা ওরা নিজেরাই আয় করুক। তাহলে চাপটা একটু কমবে। ইনকাম ট্যাক্স থেকে সরকারের আয়ও হবে। অ্যামেরিকা ঠিক এইভাবেই টাকা কামায়।
৫. অতি আবেগে "জিহাদ" "যুদ্ধ" "বিবাহ" ইত্যাদি বুলি আওড়ানো বাঙালিদের সকাল বিকাল থাপড়ানো হোক। সরকারকে তাঁদের কাজ করতে দিন। শুধুশুধু ঝামেলা পাকালে ওদেরই ক্ষতি হবে বেশি।
৬. আলগা পিরিত দেখাতে গিয়ে বন বৃক্ষ পাহাড় কাটাকাটি করা কোন বেকুবের বুদ্ধি? রাঙামাটির পাহাড় ধসের ক্ষত কী এত তাড়াতাড়িই ভুলে গেল সবাই? "কারোর ব্যাকাপ ছাড়া ওরা নিজেরাই করে ফেলেছে" - থিওরিটা মানতে পারছিনা। আমাদের পুলিশ, মিলিটারি কেউই নিষ্কর্মা না। স্থানীয় ব্যাকাপ কেউ একজনতো আছেই। খোঁজ নিয়ে দেখুন এবং ব্যবস্থা নিন।
৭. সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট যেটা, তা হচ্ছে, ফেসবুকে অনেক জানোয়ার ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বৌদ্ধবিদ্বেষী প্রোপাগান্ডা ছড়াতে শুরু করেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাবার ইন্ধনদাতা হিসেবে সরকারের উচিৎ এই মুহূর্তে এদের ধরে ধরে ডিম থেরাপি শুরু করা। কান কথায় কান দিয়ে নিজের ভাইয়ের গলায় ছুরি চালাতে আমাদের ঐতিহ্যগতভাবেই অভ্যাস আছে। এইবারও সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর পায়তারা চলছে। এইসব আগাছা নিধনে সরকার তলোয়ার হাতে মাঠে না নামলে আমাদের সাজানো বাগান ধ্বংস হতে সময় লাগবেনা।
৮. যতদূর বাঙালিদের চিনি, আমরা অবশ্যই ওদের অসহায়ত্বের ফায়দা তুলবো। কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে নিজের কার্য্য সিদ্ধির জন্য নানান অপরাধমূলক কাজ করাবো। ধরা পড়লে ওরাতো রোহিঙ্গা, ফেসবুকীয় বুদ্ধিজীবীরা আমার দিকে নজরই দিতে দিবে না। আর কাজ হয়ে গেলেতো কথাই নাই।
৯. আরেকটা ব্যাপার যেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে, ওদের মধ্যেই অনেকে নেতা হবার চেষ্টা করবে। তারপর দল গঠন করবে। তারপর ধীরে ধীরে এটা ওটা করার চেষ্টা করবে যা আমাদের দেশের স্বার্থ বিরোধী। শুধু রোহিঙ্গাই না, মানুষেরই স্বভাব এই। এইটা কিছুতেই করতে দেয়া যাবেনা। যখনই কাউকে নেতা হতে দেখা যাবে, সাথে সাথে তাকে দমন করতে হবে। নেতাগিরি করতে হয় নিজের দেশে গিয়ে করো। এইখানে টাল্টিবাল্টি বন্ধ।
ও আচ্ছা, বলতেতো ভুলেই গেছি। রোহিঙ্গাদের চিরতরে রাখা কেন বিপজ্জনক সেটা আমরা শিখতে পারি প্যালেস্টাইনীদের কাছে থেকেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, হাজার বছর ধরে ইহুদি-মুসলিমরা একে অপরের আদর্শ প্রতিবেশী হিসেবে সহাবস্থান করে এসেছে। এবং তারপর একদিন তারা সিদ্ধান্ত নিল ফিলিস্তিন দখল করে নিয়ে ইজরায়েল বানাবে। আজকে ইহুদি-মুসলিম দ্বন্দ্বের প্রধান কারন এই দখলবাজ জায়নিস্ট ইজরায়েলি গোষ্ঠী। আমরা নিশ্চই চাইনা আগামী ১০-২০ বছর পর আমাদের ছেলে মেয়েরা বাঙালি-রহিঙ্গা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাক।
তবে এখানে মজার ঘটনা হলো, বাঙালি "শিক্ষিত" সমাজের একদল লোক অনায়াসে ইজরায়েলকে সমর্থন করে ফেলে (যেখানে অ্যামেরিকান ইহুদিরাই উগ্রপন্থী জায়ানিস্টদের দেখতে পারেনা - মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি দেখে মাঝে মাঝে হাসিও পায়) তারাই আবার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কট্টর। বুঝিনা, আজকে রোহিঙ্গাদের চামড়া ফর্সা হলে কী তাদের মনোভাব ভিন্ন হতো? নাকি ওয়েস্টার্ন মিডিয়ার ফোকাস পেলে? নাকি স্রেফ মুসলিম না হয়ে অন্য কিছু হলে? কী করলে আপনাদের মন গলবে?
ব্রাদার, মানুষকে মানুষ মনে করতে শিখুন, তাহলে নিজেও একদিন মানুষ হবেন। :)
আরও অনেক কিছুই বলার আছে। সময়ের অভাবে বলতে পারছি না। যেমন আমাদের বাঙালি ভাই ব্রাদাররা রোহিঙ্গা মেয়েদের আড়ালে নিয়ে ধর্ষণ করতে গিয়ে আর্মির হাতে ধরা খেয়েছে। চলন্ত বাসে নিজ দেশের নাগরিককেই যেখানে ধর্ষণ করে ফেলে আমাদের সোনার ছেলেরা, সেখানে রিফিউজিরাতো একদম সিলভার প্ল্যাটারে সাজানো ডিশ। ইয়াম! ইয়াম!!
আমাদের বাঙালি মাঝিরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছ থেকে নৌকা পার করার জন্য চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক দুই লাখ টাকা, সোনার গহনা সব ছিনিয়ে নিচ্ছে, এবং প্রতিশ্রুত টাকা না পেয়ে নির্বিকারচিত্তে নৌকা ডুবিয়ে শরণার্থী মেরে ফেলছে। টিভিতে প্রচার হচ্ছে এইসব ঘটনা। এবং এই নিয়ে আমাদের সুশীল বুদ্ধিজিবি সমাজ একদম সাইলেন্ট। এই রকম হিপোক্রেট মন নিয়ে বাঁচেন ক্যামনে ভাই?
এবং একটি পোস্টের কমেন্টে অনেককেই দেখলাম খুব চিন্তাক্লিষ্ট। প্রেগন্যান্ট মহিলারা পেটে করে হাজারে হাজারে আগাছা নিয়ে এসেছে। এই যুদ্ধের সময়ে ফুর্তিফার্তার মন থাকে ক্যামনে!? আপনাদের একটা সুসংবাদ দেই। শরণার্থী শিবিরের ঐ নোংরা ঘিঞ্জি পরিবেশে এই সমস্ত শিশুদের অর্ধেকের বেশি রোগে ভোগে মারা যাবে। কেউ মরার সময়ে মাকে সাথে করে নিয়ে যাবে। মানব শিশু জন্মের সময়ে অনেক সেনসিটিভ থাকে, সহজেই রোগাক্রান্ত হয়, এবং মরেও সহজে। আপনাদের টেনশন অর্ধেক হয়ে গেল। মজা না? আসেন একটু দাঁত ক্যালাই।
জাফর ইকবাল স্যারের বোধয় একটা গল্প পড়েছিলাম, একটি ছেলের মা তাঁকে গর্ভে নিয়ে একাত্তুরে হেঁটে গিয়েছিলেন কয়েকশো মাইল পথ। আমার এক মামার জন্ম একাত্তুর সালের জুন মাসে। এখন ভাবছি নানা-নানী বেঁচে থাকলে "ফুর্তি-ফার্তার" জন্য তাঁদেরকে নিয়েও লোকে হাসি মজাক করতো। বার্থ কন্ট্রোল ফর্মূলা কেন ব্যবহার করলো না এনিয়ে তিরস্কার করতো।
তাঁদের জ্ঞাতার্থে, একটা আর্টিকেলে পড়েছিলাম ওরা নাকি প্রেগন্যান্ট হচ্ছে কেবল ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে।
সাথে, জনসংখ্যাবৃদ্ধির একটি ইউনিভার্সেল কারন হচ্ছে, শিশু মৃত্যুর হার বেশি হওয়া। বাবা মা নিশ্চিত থাকেন না তাঁদের জন্ম দেয়া প্রতিটা সন্তানই বড় হবে কিনা। কে না চায় মৃত্যুর সময়ে জীবিত বংশধর রেখে যেতে? তাছাড়া ওদের অশিক্ষিত দরিদ্র সমাজে "যত সন্তান, তত হেল্পিং হ্যান্ডস, তত আয়" - থিওরিরও প্রচলন আছে।
যাই হোক, মোট কথা, ইস্যুটা এতটা সহজ সরল না। ঝড়ের কবলে ডুবন্ত নৌকার যাত্রীদের আমি অবশ্যই আমার নৌকায় স্থান দেয়ার চেষ্টা করবো। ওদের মৃত্যুমুখে ফেলে দেয়া মানুষ হিসেবে আমার জন্য কোন অপশন না। আগে তাঁদের প্রাণ রক্ষা করে তারপর আমাকে খেয়াল রাখতে হবে যে উদ্ধার হওয়া মানুষদের মধ্যে কেউ যেন আমার নৌকাকে ফুটা করে না দেয়! যদি উদ্ধারকৃত দশজনের নয়জনও খারাপ হয়ে থাকে, তারপরেও আমি নয়জনকে শাস্তি দিয়ে একজন নির্দোষের প্রাণ বাঁচাবো।
এবং সাথে এও খেয়াল রাখুন, আমাদের সোনার বাংলার সোনার টুকরা মানুষেরাও যেন ওদের সাথে অসৎ আচরণ করতে না পারে। দেখেছি দুষ্কৃতিকারীদের এই বাঙালিরাই (পার্বত্যাঞ্চলের বাঙালি, অপরাধীরই একই গ্রামের অধিবাসী) গণপিটুনি দিচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ! এই নাহলে আমার দেশকে নিয়ে আমরা গর্ব করি!
আবেগ পাশে রেখে মানুষ হিসেবে ওদের সাহায্য করুন। এবং এইটা অবশ্যই মাথায় রাখুন ওদের ১০০% ই ভাল মানুষ নয়, ১০০% ও খারাপ নয়। যেগুলি খারাপ, সেগুলিকে হ্যান্ড পিক করে কঠিন ব্যবস্থা নিন। যারা ভাল, তাঁদের নিজের সাধ্যমতন সাহায্য করুন। সাহায্য করতে না পারেন খুবই ভাল কথা, যারা সাহায্য করছে, তাঁদের পথে শুধু শুধু কাটা বিছাবেন না। নজরুলের কবিতার মতন ব্যালেন্সড হন, "মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি, আর হাতে রণ-তূর্য্য।"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×