somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল করেই সেটা জানে এবং ওরাও পারলে ইরানকে ধূলিস্যাৎ করে দেয়।
দুই দেশের এই যখন মুখোমুখি অবস্থান, তখন এদের পরাশক্তি মিত্ররাও না জড়িয়ে পারে না।
ইজরায়েলের জন্ম থেকেই ওর সাথে আমেরিকার লাইলী-মজনু টাইপ প্রেম। সাথে সখি সখা হিসেবে যুক্ত আছে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ওয়েস্টার্ন শক্তি। মধ্যপ্রাচ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতেই ওখানে ইজরায়েলকে হাতে রাখা।
যেহেতু আমেরিকা ইজরায়েলকে ভালবাসে, তাই রাশিয়া-চায়না অবস্থান নিয়েছে ঠিক এর বিপরীত। "শত্রুর শত্রু আমার মিত্র" - এই বিশ্বাস থেকেই ইরানের সাথে ওদের বন্ধুত্ব ও ভালবাসা। এখানে ওরা সবাই টাকা ও ক্ষমতার পূজারী, "ইসলাম বনাম ইহুদি" মূলত একটা বাহানা।

তা গাজায় যখন ইজরায়েল নির্বিচারে মানুষ খুনে ব্যস্ত, গোটা বিশ্ব তখন ইজরায়েলকে তিরস্কার করে আসছিল। প্রায় চল্লিশ হাজার সিভিলিয়ান হত্যা করা হয়েছে। যার প্রায় তিরিশ হাজারই নারী ও শিশু। ওদের সব হাসপাতাল গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ওদের জন্য কোন ত্রাণ পাঠানো যাচ্ছে না। মানুষ হয় অনাহারে মরছে, নাহয় বোমার আঘাতে। মানুষের এমন নৃশংসতা দেখে ইবলিসের মনও হয়তো কেঁদে উঠে। হয়তো আমাদের এতটা অধঃপতন সেও কল্পনা করেনি।
তাই প্রথমবারের মতন আমেরিকা ইজরায়েলের কিছু কর্মকান্ডের বিরোধিতা করলো। যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিল না। আন্তর্জাতিক আইন পাস হলো। তবু ইজরায়েল সেই আইনকে মধ্যাঙ্গুলি দেখিয়ে এখনও নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইজরায়েল নিজের বর্ডারে ত্রাণ আটকে রেখেছে। আমেরিকা প্লেনে করে ত্রাণ বিতরণ করে আসলো। এর মাঝে কিছুদিন আগেই গাজায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাত ত্রাণকর্মীকে ইজরায়েলি বোমা হত্যা করায় আমেরিকা স্পষ্ট বিরক্তি প্রকাশ করলো। এতেই নেতানিয়াহু ঠোঁট উল্টে বলে, "তুমি আর আমাকে আগের মতন ভালবাসো না! নিশ্চই তোমার বাইরে কোন এফেয়ার চলছে।"

এরই মাঝে ইজরায়েল আরেকটা গুন্ডামি করলো। ওরা ইরানি দূতাবাসে আক্রমন করে ওদের কিছু মিলিটারি জেনারেল খুন করে ফেলল। আন্তর্জাতিক আইনে যা পুরোপুরি নিষেধ। আপনি আরেক দেশের দূতাবাসে কেন আক্রমন করবেন? ইজরায়েল কান্নাকাটি জুড়ে দিল, "ওরা আমাদের জন্য হুমকি! ওরা আমাদের নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করছিল। ওদেরকে না মারলে ওরা আমাদের মারতো।"
"প্রমান দাও!"
ইজরায়েল কোন প্রমান দিতে পারে না।
কিন্তু দুনিয়ার কোন মোড়লেরই ডিম্বকোষে এতটা সাহস নাই যে ওদেরকে গিয়ে বলে, "যথেষ্ট হয়েছে, তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে।"

হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ, অপমানিত ইরান বলে আসছিল ওরা জবাব দিবে। সেজন্য ১২ দিনের মতন অপেক্ষা করলো। তবে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স সবাই ইজরায়েলের সাথেই প্রস্তুত ছিল। তাই শয়ে শয়ে ড্রোন, মিসাইল ইত্যাদি ইজরায়েলের কোন ক্ষতিই করতে পারলো না। আয়রন ডোম ৯৯% মিসাইলই আকাশে ধ্বংস করে দিয়েছে। কেবল একটি এয়ারপোর্টের একটি রানওয়েতে সামান্য ক্ষতির ছবিই প্রকাশ হয়েছে।
ইরান বলছে পাল্টা জবাব দেয়া শেষ। ঘটনার এখানেই সমাপ্তি হলে সবার জন্যই ভাল।
কথাটা ঠিক। গোটা দুনিয়াও একই কথাই মানে।

কিন্তু ইজরায়েল এত সুবোধ বালক হলেতো টেনশন ছিল না। বরাবরের মতোই এইবারও ভিকটিম কার্ড প্লে শুরু করেছে। সে নিজে যে আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে আরেক দেশের জমিতে অন্য দেশের দূতাবাস আক্রমন করে ওদের জেনারেল হত্যা করে ফেলেছে সেসব দিব্যি চেপে গিয়ে ফোকাস করার চেষ্টা করছে যে ইরানই ওদের দেশে আক্রমন করেছে।
এখন ওরা হুমকি দিচ্ছে যে ইরানকে এর জবাব দেয়া হবে। আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড যদিও বলছে শান্ত থাকতে, তবে ইজরায়েল সেটা পাত্তা দিবে কিনা সন্দেহ। ওদের বিশ্বাসই এই যে শত্রুকে নিশ্চিহ্ন না করলে নিজে টিকে থাকা সম্ভব না।
গোটা দুনিয়া এখন আল্লাহ খোদার নাম নিচ্ছে যেন কোন যুদ্ধ না বাঁধে। কারন আধুনিক যুগে একটি যুদ্ধ শুরু করা খুবই সহজ, কিন্তু সেটা বন্ধ করতে যুগের পর যুগ কেটে যায়। মৃত লাশের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং কোটি কোটি টাকার অপচয় ছাড়া বাস্তবে যার কোন ফলই আসেনা। এবং বর্তমানে একটি যুদ্ধ মানেই অন্যান্য দেশগুলির মাঝেও ছড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে। এখানে যেমন ইজরায়েল যদি ইরানকে আক্রমন করে, ইরানও বসে থাকবে না। গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই তখন যুদ্ধ ছড়ানোর সুযোগ থাকবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এরই মধ্যে ইউরোপকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে, মিডলইস্ট যুদ্ধে লিপ্ত হলে বাকি বিশ্ব কি শান্ত থাকতে পারবে? এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব কয়েকবার ধ্বংস করার মতন বোমা পরাশক্তিগুলোর হাতে আছে। হিরোশিমার এটম বোমা এইসব বোমার তুলনায় দুগ্ধপোষ্য শিশু। আইনস্টাইনের বিখ্যাত উক্তিটা মনে পড়ে যায়, "আমি জানিনা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে হবে, তবে এইটা বলতে পারি চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধে মানুষ লাঠি আর পাথর দিয়ে লড়বে।"
সহজ ভাষায়, হাজার হাজার বছরের প্রচেষ্টায় লব্ধ এই মানব সভ্যতা ধ্বংস হতে কয়েক মিনিট সময়ও লাগবে না।
এই মহাপ্রলয় রুখতে হলে জাতিসংঘের এগিয়ে আসা উচিত। যদিও ওদের কাজটা ঠিক কি তা আমি আজ পর্যন্ত বুঝি নাই। যতদূর জানি, দুনিয়ার দেশগুলো যাতে একজন আরেকজনের সাথে কামড়াকামড়ি করে মরে না যায়, সেটা নিশ্চিত করাই ওদের লক্ষ্য। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোথায় কোন যুদ্ধ ওরা রুখতে পেরেছে? না আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ওরা কোন ঘোড়ার আন্ডা পেরেছে, না অন্যসব বড় যুদ্ধে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×