কোন কিছুই বেশীদিন ধরে রাখতে পারিনা - আমাকে নিয়ে বন্ধু বান্ধবের একটা কমন অভিযোগ। অভিযোগের সত্যতা কি? ব্যাখ্যা করতেছি।
=> কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম ক্লাস এইট থেকে। তখন পত্রিকার ছোটদের পাতায় একটা কবিতা ছাপা হয়েছিলো; কিন্তু কোন পত্রিকা আর কি কবিতা আমার কিছু মনে নেই সে সময় আমি একটা গল্প ও লিখেছিলাম, কিন্তু আরো কয়েক বছর পর সেটা রিভাইজ দিয়ে দেখি তিন গোয়েন্দার কপি-পেস্ট হয়ে গেছে
যাইহোক। কবিতা লেখা মাঝে কিছুটা বিরতি এবং কলেজে উঠে আবার কবিতা ধরেছিলাম; তবে মুলত লিরিক লিখতাম। এরপর ঢাকা ইউনিভার্সিটি থাকাকালে জোরেশোরে কবিতা লিখেছিলাম, তখন বেশ কিছু কবিতা এথায়-সেথায় ছাপা হয়েছিলো। টানা ২ বছর কবিতা লিখেছিলাম। এবং একদিন কোন এক নিশ্চিত কারনে কবিতাকে বিদায় জানালাম। এখনো লিখি, তবে আগের সেই ফ্লো'টা নেই।
=> গীটার বাজানোর ইচ্ছে মনে হয় আমাদের সবার কম বেশী থাকে। ভার্সিটিতে উঠে আমারো মনে হলো গীটার বাজানো দরকার। মেয়েদের ইম্প্রেস করার থেকেও যেটা সবচেয় বেশী জরুরী ছিলো সেটা হলো - নিজের লেখা লিরিকগুলোকে টিউন করা। বন্ধুর কাছ থেকে একটা ভাঙ্গা চোরা গীটার নিয়ে শুরু ও করে দিয়েছিলাম। পুরোপুরি ডিস্টিউন্ড একটা গীটার দিয়ে পথচলা এবং বেশ কিছদূর যাওয়ার পর মনে হলো গীটার নয় কীবোর্ড টা শিখতে হবে। কিন্তু দুটোর একটাও ঠিকমতো হলোনা। [বিদেশে এসে আমি একটা খুব সুইট গীটার কিনেছিলাম; ইয়ামাহা এফ থ্রী টেন...]
=> আমি তখন শিরোনামহীন ফোরামের মডারেটর। বেশ কবিতা-লিরিক লিখে বেড়াচ্ছি। শিরোনামহীনের সাথে একটা প্রোজেক্টে (নিয়ন আলোয় স্বাগতম) অনলাইন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ ও করে ফেলেছি। ভাবলাম কিছু লিরিক লিখবো, জিয়া ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। কিছু লিরিক দেখালাম, উনি একটা লিরিক নিয়ে কাজ করতেও চাইলেন, এবং পাশাপাশি আমাকে একটা কন্সেপ্ট ও ধরিয়ে দিলেন লিরিক লেখার জন্য। ঠিক এই সময়ে আমি সরে দাড়ালাম। হারিয়ে গেলাম অন্য কোথাও।
=> RABSS (Real Association of Boys for Social Solidarity) - এই নাম দিয়ে এলাকায় একটা গ্রুপ খুললাম ২০০১ সালে। আমাদের এলাকার ময়লা ফেলা সহ বিভিন্ন ছোটখাটো কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেললাম। আমাদের অনভিজ্ঞতার ফলাফল - দুটো গাড়ির মাঝে একটা গাড়ি চুরী হয়ে গেলো, ময়লা ফেলা বাবদ উঠানো টাকা মার গেলো। পুরোপুরী লস প্রোজেক্ট; তার উপর বর্তমান র্যাব প্রতিষ্ঠা হলো। সত্যি বলতে কি এক প্রকার ভয়েই আমরা এখন আর বলিনা র্যাবস নামে আমাদের কোন গ্রুপ ছিলো
=> ক্রিকেট খেলি ক্লাস ফাইভ থেকে। ইন্টার পর্যন্ত খেলেছি। এলাকায় পেস বোলার হিসেবে বেশ নাম ডাক ও ছিলো। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলাম অনেকদিন। শেষমেষ এলাকার ছোটভাইদের টিমের কোচ হিসেবেই আমার যাত্রা শেষ হয়েছিলো। সেই টিমটা এখনো আছে; আমার দেয়া ফাইনাল ফ্যান্টাসী'র ব্যানারে এখনো তারা কালচারাল প্রোগ্রাম করে থাকে। তবে ক্রিকেট খেলেনা।
=> ক্রিকেট কে ছুটি দিয়েছিলামা সলে প্রোগ্রামার হবো ভেবে। বড় ভাই বেশ ডাকসাইটে প্রোগ্রামার তখন। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের আইটি ডিপার্টমেন্ট এর ডেপুটি। এরো আগে আড়ং এর পয়েন্ট অফ সেইল সফটয়্যার এর প্রথম ভার্সনটা সেই ডেভেলপ করেছিলো। তার কাজ দেখে মনে হলো বেশ ইন্টেরেস্টিং। কারন নিজের বানানো সফটওয়্যার দিয়ে কাজ করছি - নিজেকে কেমন রাজা রাজা লাগে। আমি নেমে পড়লাম ভিজ্যুয়াল বেসিক নিয়ে। নটরডেম কলেজে অনুষ্ঠিত আন্তঃকলেজ কম্পিউটার উতসবে আমি নিজের তৈরী করা একটা ভার্চুয়াল ডেস্কটপ শো করেছিলাম এবং প্রোগ্রামিং কনেটেস্টে অংশ ও নিয়েছিলাম। কিন্তু কোন পুরষ্কার পাইনাই ...
=> প্রোগ্রামিং এর পাশাপাশি অ্যানিমেশনের দিকে ঝুকে পড়েছিলাম। তখন ম্যাক্রোমিডিয়া ফ্ল্যাশ এর খুব জয়জয়কার। নেট থেকে টিওটোরিয়াল নামিয়ে বেশ কিছু কাজ শিখেছিলাম। পরে থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্স এর কাজ দেখে ফ্ল্যাশ বাদ দিয়ে ওটা ধরেছিলাম। কিন্তু আমার পিসি ছিলো ডাইনোসর যুগের; থ্রিডি স্টুডিও নিয়ে বেশী একটা সুবিধা করতে পারলাম না। ততোদিনে ফ্ল্যাশ এর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
=> ছবি তুলতে সবাই ভালোবাসে। আমিও তুলতাম। অনেক্ষন লাগয়ে ছবি তুলতাম। আমি ছবি তুলতে গেলে পোলাপান বেশ বিরক্ত হতো। এতোক্ষন পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কার ভালো লাগে! লিন্তু আমি ফটোগ্রাফীর কোন টার্ম এর সাথে পরিচিত না থাকলেও কেনো যেনো মনে হতো সাব্জেক্ট ফ্রেমের কোথায় আছে, আর কি কি নিয়ে আসা যায় এসব নিয়ে ভাবা ভালো। ক্যামেরা চোখে লাগিয়ে সেসব ভাবতাম আর গালি খাইতাম ফটোগ্রাফী নিয়ে বেশিদুর আগানোর আগেই ফিল্মমেকিং নিয়ে আগ্রহী হয়ে গেলাম। এখন ফটোগ্রাফী নিয়ে হালকা পাতলা ধারনা এসেছে যেহেতু সিনেমাটগ্রাফী করে থাকি। কিন্তু ছবি টবি তেমন একটা তোলা হয়না
এবং অবশেষে ফিল্ম নিয়ে লাফালাফি শুরু করলাম। নিজেই স্টাডি করে অনেককিছু জানলাম। বিশাল অনলাইন ডাটাবেজকে কিভাবে ইউটিলাইজ করতে হয় ততদিনে বেশ শিখে ফেলেছি; তাই খুজে খুজে টিওটোরিয়াল বের করে শিখতে খুব বেশী বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু যতক্ষন না কাজ করছি ততক্ষন এই জ্ঞান কোন কাজে আসছেনা, এটা ভেবেই ২০১১তে ভিসা বাড়ানোর সুযোগ অনেকটা ইচ্ছে করেই মিস করে দেশে চলে গিয়েছিলাম। অল্প কিছু কাজ করে আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো - হবে, আমাকে দিয়ে ক্ষুদ্র কিছু হলেও হবে।
আপনারা হয়ত ভাবতে পারেন, এই ফিল্মমেকিং টাও হয়তো একদিন ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছু নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যাবো। কিন্তু আমার কেনো যেনো বিশ্বাস আমি এটাতেই লেগে থাকবো। কোন কিছুতে লেগে না থাকলে ভালো আউটকাম আসেনা সেটাতো আগেই দেখেছি। আর এদিক সেদিক ছূটাছুটি করতেও আজকাল ক্লান্ত লাগে, তাই এই একটা জিনিসেই স্টিকি হতে চাচ্ছি।
সামুতে যাত্রা শুরু করেছিলাম কবিতা দিয়ে। কবিতা ছেড়ে দেয়ার পর সামুতে লেখালেখি করতাম না। মাঝে পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সামুতে মাঝে মাঝে ঢু মারতাম। কিন্তু কি লিখবো বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু ফিল্মমেকিং নিয়ে জানাশোনার মাঝে মনে হলো এগুলা অন্যদের ও জানানো উচিত। অনেকেই জানতে চায় কিন্তু তাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়না। আমি নিজে দেখেছি ছেলেপেলে কিভাবে সিনিওরদের পিছনে লেগে থাকে অথচ কোন সুতো ছিঁড়ে না। আমার এই জানানোর চেষ্টা হয়তো সবার কাজে লাগেনা, কিন্তু অন্তত একজন তো উপকারী হচ্ছে? সেটাই আমার পরম পাওয়া।
সামুতে নিক এর বয়স ৬ বছর পার হয়ে গেলো।
কত অভিজ্ঞতা কত ঘটনা!
নিজের এই শরীরের বয়সও কম হলোনা।
কত অভিজ্ঞতা কত ভুল!
অর্ধযুগ পার করে হায় এখন ক্লান্ত ক্লান্ত লাগে।
বিঃদ্রঃ আমার ৮০টা পোস্ট একদিনে মুছে ফেলেছিলাম। তার মাঝে ১৫টার মতো পোস্ট আবার ফিরিয়ে এনেছিলাম নতুন করে, তবে প্রথম পাতায় দেইনি। এগুলো জাস্ট এই ব্লগে রেখে দেয়ার জন্যই।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৫০