somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম বাজেটে শর্ট ফিল্ম বানানোর টিপস

২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





আপনাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা সিনেমা দেখেন। আনুমানিক ১০০ জনে ৮০ জন সিনেমা দেখে বলে আমার বিশ্বাস। যারা সিনেমা দেখেন তাদের মাঝে অর্ধেকেরো বেশী স্বপ্ন দেখেন সিনেমা বানানোর। যারা স্বপ্ন দেখেন তাদের ৫০ ভাগ (৪০জন) ট্রাই করেন, আর বাকি ৫০ ভাগ শুধু স্বপ্নই দেখে যান। যারা ট্রাই করেন, তাদের ৭০ ভাগ (২৮জন) ফিল্মমেকিং এর ঝামেলা এবং খরচ দেখে পিছিয়ে যান। বাকী যে ২৫ ভাগ (১২জন) থাকে, তারা মাটি কামড়ে পরে থাকে। অনেক চড়াই উতড়াই শেষে তাদের মাঝে টিকে থাকে মোটে ৪/৫ জন। আর এর মাঝে ১/২ জনের নাম হয়তো আমরা জানি :|

কি মনে হচ্ছে? ফিল্মমেকিং অনেক কষ্টের? কষ্টতো বটেই। সব কাজই কষ্টের যদি আপনার সে কাজের প্রতি ভালোবাসা না থাকে। আর যারা নিজেদের স্বপ্ন ফ্রেমে বাঁধতে চান, তাদের জন্যই সিনেমা পিপলস এর প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আজ এই সিনেমা পিপলস থেকে একটার পর একটা শর্ট ফিল্ম এর কাজ চলছে। তবে, আজকে সিনেমা পিপলস এর কথা নয়। আজকে টিপাটিপি আই মিন টিপস এর কথা।

ওকে গাইজ, লেটস স্টার্ট। আজকে আমরা দেখবো কিভাবে (প্রায়) বিনা পয়সায় শর্ট ফিল্ম বানানো যায়। ফিল্ম বানাতে গেলে আমাদের সামনে বাজেট মুল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় প্রায়ই। তাই, বাজেট কে কিভাবে কমানো যায় সেটাই দেখবো। আমাকে এই ক্ষেত্রে বিশ্বাস করতে পারেন কারন আমার ২য়৩য় শর্ট ফিল্মে খরচ হয়েছিল যথাক্রমে সতেরো'শ ও ৮ হাজার টাকা :P


১... যাদের সাথে কাজ করবেন তাদের কখনো বলবেন না এটা ফ্রী। বলবেন আসুন/আস/আয় এক সাথে কাজ করি। খালি মুখ দিয়ে বলবেন না, মিন করবেন। মানে সিরিয়াসলি কাজ নিয়ে চিন্তা করবেন এবং কোনভাবেই অন্যদের জুনিওর অফিসারের মতো ট্রিট করবেন না। লস্ট ড্রিম শর্ট ফিল্ম এর আগে এক ফ্রেন্ড কে বলেছিলাম যে আমি জিরো বাজেটে শর্ত ফিল্ম বানাবো। সে বলেছিলো ফ্রী তো কেউ কাজ করবেনা। তবে কমে করা যাবে; অন্তত তাদের খাওয়ার খরচ দিতে হবে। কিন্তু আই ওয়াজ ড্যাসপারেট; আমি বললাম বিড়ি সিগারেট ছাড়া এক টাকাও খরচ করবোনা। সে বললো যে আচ্ছা তুই পারলে কর। আমি কিন্তু সত্যিই পারিনি, কারন খাওয়া আর যাতায়াত ভাড়া বাবদ ১৭০০ টাকা খরচ হয়েছিলো। এবং এই খরচ দিয়েছিলাম আমি আর মুল ভুমিকায় অভিনয় করা ফয়সাল।

২... চিন্তা করেন আপনার পরিচিত যত জায়গা আছে সেগুলর কোনগুলোকে আপনি লোকেশন হিসেবে ইউজ করতে পারবেন। আপনার আঙ্কেলের অফিস? আপনার বন্ধুর বিল্ডিং? আপনার কাজিনের হাসবেন্ড এর খামার বাড়ি? অথবা এমন কিছু? যাদের সাথে জীবনে পরিচয় হইছে সবাইকে নক করেন। লজ্জা টজ্জা ভুলে যান। আপনি সিরিয়াসলি ফিল্মমেকার হতে চান? শুরুতে ছ্যাঁচড়া হোন।

৩... ক্রিয়েটিভ লোকদের সাথে খাতির জমান। তাদের কাজে লাগান। স্টোরীবোর্ড করতে চান? চলে যান ছবির হাট। উদাস হয়ে ঠেং ছড়িয়ে বসে আছে যাবতীয় আর্টিস্ট। তাদের কাজে লাগান। অনেকেই ফ্রী কাজ করে দিবে। আপনার বন্ধুর গলা ভালো? দু একটা ইন্সট্রুমেন্ট বাজায়? একটা গান লিখে দিন অথবা তাকে লিখতে বলুন। সুর দিতে বলুন। তাকে দিয়ে গাইয়ে রেকর্ড করে আপনার ফিল্মে কাজে লাগানো যায় কিনা দেখুন।

স্টোরীবোর্ড করার ক্ষেত্রে আপনি সফটওয়্যারের সাহায্য অ নিতে পারেন। টুনবুম এরকম একটি সফটওয়্যার। এছাড়া গুগলস্কেচ ব্যবহার করে দেখেছেন কখনো? এই দেখুন আমি কি এঁকেছি -



৪... অভিজ্ঞতা থেকে উত্তেজনাকে প্রাধান্য দিন। এটা প্রযোজ্য হবে যদি অভিজ্ঞ লোক কাজ করলে খরচ বেশী পড়ে। কোন অভিজ্ঞ ক্রু মেম্বার যদি কমে বা ফ্রীতে কাজ করতে চায় তাহএল স্বাগতম জানাবেন। অন্যথায় যারা ফিল্মমেকিং নিয়ে খুব আগ্রহী তাদের নিয়ে কাজ করুন। অনেকক্ষেত্রেই ভালো ফল দেয়।

৫... ক্যামেরা চালানো শিখে ফেলুন। আপনি যেহেতু ছোটখাটো ক্যামেরা চালাবেন, সেহেতু ক্যামেরা হ্যান্ডেল করা খুব টাফ কাজ হবেনা। বিশ্বাস করুন, ক্যামেরা নামক এই টুল টা টেকনিক্যালি হ্যান্ডেল করা খুব সোজা। আপনার শুধু কাজের আগে প্রচুর শুট করতে হবে, ফ্রেমিং/কম্পোজিশন শিখতে হবে। আপনি যে কোন উপায়ে শট কম্পোজ করতে পারবেন, কিন্তু কিভাবে ভালো কম্পোজ করা যায় সে ব্যাপারে নেটে লাখের উপরে টিপস। আমি ১ম শর্ট ফিল্ম লুপহোল এ সনির ব্রডকাস্ট ক্যামেরা ইউজ করেছিলাম। প্রতিদিন ১৭০০ টাকা বাবদ ২ দিনে ৩৪০০ টাকা খরচ হয়েছিলো। পরে দেখলাম আমার নিজেরি ডিএসএলআর আছে, আমি নিজেই কেনো শুট করিনা? এখন কি অবস্থা জানেন? আমার ডিরেকশন থেকে আমার সিনেমাটোগ্রাফী পোলাপান বেশী পছন্দ করে :(

৬... টিম ছোট করুন। আমি সবসময় বলি - আমার একজন সিনেমাটোগ্রাফার আর একজন এডিটর থাকলে আমি পুরো একটা প্রোডাকশন নামিয়ে ফেলতে পারবো। কারন আছে এখানে। ভবঘুরে নামে একটা নাটকের শুট করেছিলাম যেখানে অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর কেউ ছিলোনা। আমার কাজ আমি একাই করেছি, অ্যাসিস্টেন্টদের কাজ ও করেছি (একি সাথে সিনেমাটোগ্রাফী ও এডিটিং এর কাজ ও করেছি কিন্তু)... আমার সব কাজেই টিম ছোট ছিলো। অহেতুক অনেককে ইনভল্ভ করলে শুধুই খরচ বাড়ে। আরে ভাই বেনসনের দাম ও তো এখন ৮ টাকা, নাকি!



৭... এই টিপস টি আগের টিপস এর সাথে কনফ্লিক্ট করতে পারে। তবে যদি পারেন আর কি - একজন ভালো অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর জোগার করুন। অনেক কাজ কমে যাবে আপনার। আমার ভাগ্য খারাপ আমি ভালো অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর পাইনি। কিন্তু আপনি চেষ্টা করবেন ভালো ও অভিজ্ঞ কাউকে খুঁজে পেতে। অভিজ্ঞ অ্যাসিস্টেন্ট আপনার প্রোডাকশন খরচ কমিয়ে দেবে অনেকখানি।

৮... ১ম পয়েন্ট টা মনে আছে? একটু যুক্ত করুন - সম্মান প্রদর্শন করুন। প্রোডাকশন বয়? তাকেও যথাযথ সম্মান দিন। আপনার ব্যবহার ভালো হলে সবাই আপনার জনয জানপ্রান দিয়ে দিবে। ক্রু মেম্বারদের হার্ট জয় করুন। দেখবেন কাজ তরতর করে এগুচ্ছে।

৯... ডিএসএলআর ইউজ করতেছেন? শুট করুন ফ্লাট বা নিউট্রাল পিকচারে। ক্যামেরায় দয়া করে কোন কালারিং করবেন না। ধরা খাবেন। ফ্লাট পিকচারে পোস্ট প্রোডাকশনে খুব সহজে কালার গ্রেডিং করতে পারবেন।

১০... অ্যাভেইল্যাবল লাইট কে ইউজ করুন। আল্লাহ'র ওয়াস্তে দিনের আলোকে পরিপূর্ন ব্যবহার করুন। ভোর ৬/৭ টা থেকে শুট শুরু করুন দরকার হলে। রাতের বেলা একেবারে প্রয়োজন না পড়লে শুট করবেন না কারন দিনের বেলায় শুট করেই আপনি এডিটরে নিয়ে খুব সহজে রাতের সিন বানিয়ে ফেলতে পারবেন। দিনের বেলা সূর্যের আলোকে বিভিন্নভাবে ইউজ করুন; প্র্যাক্টিস করুন।



১১... আত্মবিশ্বাস রাখুন। কাজের প্রতি প্যাশনেট হোন। আসুন একটি ছেলের গল্প শুনি। ছেলেটা ঢাকার বাইরে থাকে। তো, সিনেমা পিপলস এর ব্যানারে ৪র্থ শর্ট ফিল্ম এর দায়িত্ব নিলো কাঁধে। শর্ট ফিল্ম এর কাজ করার জন্য একদিন ঢাকায় গেলো সে। ঢাকায় যাওয়ার পথে আমাকে জিজ্ঞেস করলো এডিটর হিসেবে কাকে রেকমেন্ড করি আমি যেহেতু সে এডিটিং পারেনা। আমি বললাম সিপি'র ব্যানারে ১ম শর্ট ফিল্ম নির্মাতা অংশুর কথা। অংশুর ফোন নাম্বার দিয়ে দিলাম। ছেলেটা ঢাকায় গিয়ে CoolPix ক্যামেরায় সারাদিন শুট করে অংশুর হাতে ক্লিপ্স দিয়ে সেদিনই আবার বাড়িতে ফিরে গেলো। অংশু এডিট করে তাকে অনলাইনে শর্ট ফিল্মটা পাঠিয়ে দিয়েছিলো। এই ঈদেই আসছে এই ছেলে যার নাম ফজলে হাসান শিশির এর শর্ট ফিল্ম - MOMENTOS PARALELOS ...

১২... বাজেট লিখে ফেলুন। কোন গাড়ি প্রতিযোগিতা নেই, কোন বিল্ডিং ধ্বংস নেই, কোন খরুচে ব্যাপার নেই। অর্থাৎ এগুলো এড়িয়ে চলুন। আর এগুলো এড়িয়ে চলতে হলে আপনাকে শুরুতেই স্ক্রিপ্টে এগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। স্ক্রিপ্ট লেখার সময় ভাববেন - এই শটটা টেক করতে কি খুব বেশী খরচ হয়ে যাবে? অন্যভাবে সেই শট নেয়া যায় কিনা ভাবুন। ক্রিয়েটিভ আইডিয়া বের করুন। যেমন ধরুন, লস্ট ড্রিমে কিলার (আমি) এর হাতে একটা পিস্তল দরকার। কিন্তু পিস্তল নাই। আমি বাবুকে ক্যামেরা সামনে দাড় করিয়ে ফ্রেমিং করলাম বুক পর্যন্ত, এরপর রেকর্ড বাটন চাপ দিয়ে বাবুকে সরিয়ে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এমন ভাবে হাত নাড়িতে লাগলাম যেনো মনে হচ্ছে আমি গ্লাভস পড়ছি। এরপর কোমড়ে হাত দিলাম, মনে হলো আমি পিস্তল বের করছি। এরপর হাত সোজা রেখে দুইবার উপর নীচ করলাম যেনো মনে হয় আমি গুলি করছি। এডিটরে নিয়ে সেখানে গুলির সাউন্ড অ্যাড করে দিলাম। এ পর্যন্ত একজন আমাকে জিজ্ঞেস করছে ভাই আপনার হাতে মনে হয় পিস্তল ছিলোনা, তাইনা? ;)
২০০ টাকা বাঁচায়া দিছি :D

১৩... নতুন অভিনেতাদের ভয় পাবেন না। বি ফ্রেন্ডলি। নতুনদের অনেকেই আপনার শর্ট ফিল্মকে জাতে উঠিয়ে দিতে পারে। তারাও হয়তো সুযোগ খুজছে নিজেকে প্রমান করার জন্য। এই যেমন দেখুন, লুপহোলে অভিনয় করেছে আমার ফ্রেন্ড অর্নব যেটা ওর জীবনের প্রথম অভিনয়। লস্ট ড্রিমে তো সবাই জীবনে প্রথমবারের মতো ক্যামেরার সামনে দাড়ালো (আমি বাদে)... আন্ডার দ্যা ক্লাউডস অফ লাভের দুইজনেই একেবারেই নতুন... একেবারে বাজে অভিনয় করেছে কি কেউ? (লুপহোলের সাইকিয়াট্রিস্ট আর লস্ট ড্রিমের এক কম্রেড বাদে)

১৪... দয়া করে কমদামী লাইট বা অ্যাক্সেসরিজ ভাড়া করতে যাবেন না, কিনতেও যাবেন না। বেহুদা ১০০০ টাকা বেশী খরচ না করে গল্প কিভাবে বলা যায় সেদিকে মনোযোগ দিন। আউটডোর আর দিনের বেলা - স্ক্রিপ্ট লেখার সময় মাথায় রাখেন। কমদামী জিনিস আপনাকে শুধুই পেইন দিবে। আন্ডার দ্যা ক্লাউডস অফ লাভ এ দুইটা সানগান ইউজ করছিলাম। কাজের মাঝে গেলো একটা নষ্ট হয়ে। পরে এমনি এমনি শুট করছিলাম। কিছু টের পাইছে কেউ!!



১৫... শুট করতে পারমিশন লাগে? ওকে, এই নেন একটা টিপস। বলবেন - আমরা আসলে শুট করতেছিনা। টেস্ট করতেছি যে লাইট কেমন আসে। এই যায়গায় আসলেও শুট করতে পারবো কিনা। ;) কোন এক অজানা কারনে এই টিপস বেশ কাজে দেয়। তাদের যদি বলেন যে আপনি আসলে শুট করছেন না টেস্ট করছেন, তাহলে আপনার ছোটখাটো সেটাপে তারা তেমন গা করবেনা। তবে এর জন্য অবশ্যই আপনার অভিনেতা/অভিনেত্রীদের আগে থেকে ভালোভাবে রিহার্সেল করে আসতে হবে।
যারা চন্দ্রিমা উদ্যানে শুট করতে চান তারা আগে ভাগেই জেনে রাখুন যে ওখানে শুট করতে হলে অনুমতি লাগে, নাইলে শুট করতেই দেয়না। সিনেমা পিপলস এর ৬ষ্ঠ শর্ট ফিল্মের শুট করার সময় ঝামেলা করেছিলো দাদাভাইয়েরা। তবে ইউনিটের পোলাপান কিভাবে কিভাবে যেনো ম্যানেজ করে ফেলছে।

১৬...প্রতিটা শট নিখুত নেয়ার কথা ভুলে যান। নিখুত করতে গিয়ে বারবার এক শট নেয়ার কোন মানেই হয়না। আপনি যদি পারফেকশনিস্ট হোন তাহলে আলাদা কথা কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন প্রতিটা সিনেমাতেই অনেক ভুল থাকে; কিছু আমরা সহজেই দেখি কিছু দেখিনা। কিন্তু তাতে কি গল্পের আবেদন কমে যায়? অনেকক্ষেত্রে যায় অনেকক্ষেত্রে যায়না। আপনার কাজ হবে অল্প কিছু টেক নিয়ে পরের শটে চলে যাওয়া। হ্যাঁ, একেবারেই বাজে হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু মাথায় রাখবেন, কিভাবে আপনার গল্পকে প্রেজেন্ট করা যায়। দুই একটা শট নিয়ে দিন পার করে দিলেতো বিপদে পড়বেন। সবসময় যে গ্রামার মানতেই হবে তাও কিন্তু না।

১৭... এমনো হতে পারে যে আপনার অভিনেতা বা অভিনেত্রী একদিন আপনার সাথে কাজ করে আর করবেনা। Dont just keep calling them.. তাদের ফিরে আসার ইচ্ছে হলে প্রথম দু একবার কল দিলেই ফিরে আসবে। হয়ত তারা ভাবছে আপনি অ্যামেচার, অথবা তারা তাদের লাইফ নিয়ে ব্যস্ত। আপনার দায়িত্ব হলো ভিন্ন উপায়ে হলেও আপনার গল্প প্রেজেন্ট করা। এমন যদি হয় আপনার গল্প রোমান্টিক ছিলো আর একদিন শুট করেই নায়ক ভাগলপুর, আপনি নায়ককে মেরে ফেলুন, স্ক্রিনে পরিচয় করান নতুন ক্যারেক্টার, রোমান্টিক গল্পকে বানিয়ে ফেলুন মিস্ট্রী বা থ্রীলার বা ক্রাইম। বি ক্রিয়েটিভ ম্যান :)

১৮... হয়তো অ্যাক্টর/অ্যাক্ট্রেস না, আপনার সিনেমাটোগ্রাফার অথবা অ্যাসিস্টেন্ট আর কাজ করবেনা বলে ঠিক করলো, ভেঙ্গে পড়ার প্রয়োজন নেই। এটা আপনার সিনেমা; আপনাকে যে কোন উপায়ে শেষ করতে হবে। চাই কি কারো হাত থাকবোনা কারো পাও থাকবোনা, কিন্তু আপনার ফিল্ম যেনো শেষ হয়। প্রতিটা ফিল্মের পেছনে হাজার ঝামেলার গল্প থাকে। এগুল কাটিয়েই সবাই ফিল্ম বানায়।

১৯...মাথা নষ্ট করে লাভ নেই। টেনশন নিয়ে লাভ নেই। টেনশন দূর করুন। ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। সবসময় দ্বিতীয় বা তৃতীয় পথ থাকে; আমরা জাস্ট দেখিনা। ২য় বা ৩য় পথ নিয়ে ভাবুন, পেয়ে যাবেন। আচ্ছা, টেনশন এসে যায়। যেমন ধরুন, স্পটে গিয়ে দেখলেন আপনি একাই গেছেন, পুরো টিম লেইট। অথবা, ক্যামেরাম্যান বা অ্যাক্টর লেইট। কি করবেন? চিল্লাচিল্লি কোন সমাধান নয়।

২০... সেট কে খেলার মাঠ বা তাস খেলার রুম ভাববেন না। বন্ধুরা বন্ধুদের জায়গায়, আর আপনার কাজ আপনার কাছে। অ্যাক্ট লাইক প্রো। কোন বন্ধু যদি আপনার শর্ট ফিল্মে কোন কাজে না লাগে তাহলে তাদের সেট থেকে দুরে রাখুন। শুটিং মঙ্গল গ্রহের প্রানী না যে সেটা দেখতে হবে। হ্যাঁ, অনেকেই দেখতে চাইতে পারে; কিন্তু বন্ধু বান্ধব সেটে? তারা শুধুই প্যাঁচ লাগাবে (সব ক্ষেত্রে এটা সত্যি নাও হতে পারে)

২১... কাজের প্রতি ডেডিকেইটেড এবং কমিটেড পোলাপান জোগার করুন। আপনার উপর অনেক চাপ কমে যাবে। বন্ধু বান্ধব হলেও কেয়ারফুলি লক্ষ্য করুন কোন বন্ধু কাজটাকে ভালোবেসে বা আপনাকে ভালোবেসে কাজ করছে, আর কারা ব্যাপারটা ফাইজলামি হিসেবে নিচ্ছে।

২২... যদি এমন কোন সিন থাকে যে সব অ্যাক্টররা খাচ্ছে, তাহলে সিন টা নেন লাঞ্চ ব্রেকের সময় ;) খরচ কমে যাবে।

২৩... সবাইকে খাওয়ান, কিন্তু কম দামে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন। একদিন দুইদিন কম দামী খাবার খেলে কিছু হবেনা। কিন্তু দয়া করে কাউকে ভাবতে দেখেন না যে পার্টি চলতেছে।

২৪... কখনোই ক্রু মেম্বার বা কাস্টিং এর উপর দুর্বল হবেনা। বলা ভালো তাদের কাউকে ভালোবেসে ফেলবেন না। তাহলে আপনার কাজ ধ্বংস হতে সময় লাগবেনা। কাজ শেষ হোক, এরপর কিছু করলে করেন না করলে নাই। কিন্তু কাজ চলাকালিন এসব ব্যাপার দূরে রাখুন। কোন বন্ধু বান্ধব যদি কাজ চলাকালীন কোন কাস্ট বা ক্রু মেম্বারের প্রতি দূর্বল থাকে তাহলে তাদের অনুরোধ করুন তারা যেনো কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই চিন্তা থেকে দুরে থাকে (আপনি কারো মন কন্ট্রোল করতে পারেন না অবশ্যই) ... কিন্তু কেউ না শুনলে ঠাডায়া চটকানা দিবেন... চটকানায় কাজ না হইলে সোজা স্যাক করবেন। বলবেন ওকে আপনার টিমে দরকার নাই। গেঞ্জাম মামা গেঞ্জাম।

২৫... যে কোন ক্যামেরা নিয়ে মাঠে নামুন। যে কোন মানে যে কোন। ডিএসএলআর এর জন্য অপেক্ষা করবেন না। নিজের না থাকলে জোগার করুন। আপনার গল্প ভালো হলে কোন ক্যামেরা দিয়ে শুট করেছেন এটা নিয়ে কেউ মাথাই ঘামাবেনা।

২৬... তিনটা জিনিস মনে রাখবেন। (ক) সবার কাজের প্রশংসা করুন। (খ) ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলুন; কখনোই আজকের কাজ কালকে করবেন ভেবে ফেলে রাখবেন না। (গ) কাজটাকে এঞ্জয় করুন


লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেলো। কিন্তু প্রতিটা পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ন। কিছু পয়েন্ট হয়তো আপনার প্রোডাকশন খরচ কমাবেনা কিন্তু আপনাকে ক্রিয়েটিভ হতে সাহায্য করবে। অনেক কিছুই কাভার করা সম্ভব হয়নি। হয়তো অন্য কোনদিন আবার কিছু টিপস নিয়ে আসবো।

লক্ষ্যনীয়, আমি নিজে খুব ভালো ডিরেক্টর এই দাবী করিনা; আমার জাস্ট চেষ্টা থাকে যেনো আপনাদের মাঝে কেউ একজন ভালো ডিরেক্টর হয়ে বের হয়ে আসে। ১০০ জনকে শিখানোর পর যদি একজন ডিরেক্টর হয়ে কোন একদিন অস্কার নিয়ে আসে, তখন ভাবতে পারেন আমি কি পরিমান খুশী হবো? সেদিন আমার চোখের আনন্দ অশ্রুকে কোথায় কিনতে পাবনে আপনি?

বেস্ট অফ লাক উইথ ইওর প্রোজেক্ট।


মাহদী হাসান [শামীম]
ফ্রীল্যান্স ফিল্মমেকার
সিনেমা পিপলস


ফিল্মমেকিং নিয়ে আমার অন্যান্য পোস্টঃ

১ - সিনেমায় মিউজিক এর গুরুত্বঃ ফিল্মমেকার হিসেবে আপনার করনীয়
২ - রেড ক্যামেরা আসলে কি? ফিল্ম ক্যামেরার সাথে এর পার্থক্য
৩ - আসুন শিখে ফেলি কিভাবে সহজ উপায়ে আস্ত একটা ফিল্ম বানিয়ে ফেলে যায়
৪ - যা যা জানা প্রয়োজন
৫ - ক্যামেরা নির্বাচন
৬ - শর্ট ফিল্ম এর জন্য ডিএসএলআর খুঁজছেন? আরেকবার ভাবুন
৭ - কিভাবে আপনার শর্ট ফিল্ম এর জন্য স্ক্রিপ্ট লিখবেন
৮ - সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখবেন? যেসব ব্যাপার মাথায় রাখবেন
৯ - শট ও অ্যাঙ্গেল নিয়ে কিছু টিপস
১০ - ১০টি অবধারিত প্রশ্ন ও তার উত্তর
১১ - কিভাবে এডিট করবেন আপনার ফিল্ম
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ১০:১৫
৪৭টি মন্তব্য ৪৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×