বছর পাঁচেক আগে Autobiography of an Unknown Indian পড়ার পর থেকে নিরদ চৌধুরীর বইগুলো পরপর পড়ে ফেলার ইচ্ছা ছিল। কিছু বই জড়ো করেছিলাম, কিন্তু সময়-সুযোগের ফেরে তখন পড়ে উঠতে পারিনি। এখন চেষ্টা করছি। মাঝে অবশ্য কিছু ম্যাগাজিন-বইপত্রে বাংলা ও ইংলিশে তার দু-একটা সাক্ষাৎকার পড়া হয়েছে। মাস খানেক আগে তপন রায়চৌধুরী'র 'ইউরোপ পূণর্দর্শন' পড়ছিলাম। সেখানে নিরদ বাবুর কিছু বইয়ের উদৃতি/রেফারেন্স দেখে সেগুলো আরো একটু ঘেটে দেখার তাড়না জেঁকে বসেছে। সেইসূত্রে পড়ে শেষ করলাম 'আমার দেবোত্তর সম্পত্তি'।
'আমার দেবোত্তর সম্পত্তি' অনেকটা আত্মজীবনীর মতোই, তবে আরো বলিষ্ঠ। শৈশব, পড়াশুনা, চাকরিজীবন, রোমান্স, লেখালেখি এবং প্রবাসজীবনের চিরায়ত আনুপূর্বিক বিবরণের পাশাপাশি এই বইটিতে পেয়েছি তার জীবনচর্চা, জীবনবোধ ও দর্শনের পরিচয় যেটি মনে হয়েছে Autobiography of an Unknown Indian এর চেয়ে অনেক বিস্তৃত এবং পরিপক্ক।
'ইউরোপ পূণর্দর্শন' এর ভূমিকায় তপন রায়চৌধুরী ঊনবিংশ শতাব্দী জুড়ে বাঙালী তথা হিন্দু জাতীয়তাবাদ তাড়িত/প্রভাবিত যে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উল্লেখ করেছেন, নিরদ চৌধুরীও তার লেখকজীবনের মূলমন্ত্র যে একই সূত্রে বপিত/স্থাপিত সেটার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা সুন্দর করে দিয়েছেন। একজন ভারতীয় এবং কুলীন হিন্দু হয়েও তার অন্তর্দর্শন ছিল চলতি স্রোতের বিপরীতে। আর সেই কারণে শুরু থেকে শেষজীবন অব্দি বিরূদ্ধ-প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার নিয়তিও মনে হয় তিনি মাথা পেতে নিয়েছিলেন। তবে সেটি ছিল অহংবোধে পরিপূর্ণ, স্বকীয়তায় ভাস্বর।
এই সবকিছু নিয়ে উনার অভিজ্ঞতাগুলো অনেকটা স্মৃতিচারন এবং স্বীকারোক্তির বর্ণনায় উঠে এলেও সেইসব বক্তব্যের যে গভীরতা অনুধাবন করা যায় সেটি উনার সমকালীন কিংবা আধুনিক দর্শনচর্চায়ও বিরল ও দুর্লোভ। আমি বিশেষত নোট করেছি সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ক এবং বাঙালীর সাম্রাজ্যবিরোধী মনস্তত্ত্ব নিয়ে উনার বিশ্লেষণগুলো। তাছাড়াও উনার একাধারে বাঙালী ও ইংরেজসুলভ আপাত সাংঘর্ষিক দুটি ব্যাক্তিত্ববোধের পরিপোষণের যুক্তি-তর্কও বেশ উপভোগ করেছি।
উৎসাহী বইয়ের পোকারা বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
আমি এরপর পড়ব 'বাঙালী জীবনে রমণী', 'আত্মঘাতি বাঙালী' এবং 'আত্মঘাতি রবীন্দ্রনাথ'।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৫:১০