somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্মৃতিতে মাসুদ রানা, বাঙ্গালীর প্রথম সিক্রেট এজেন্ট

১৭ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল (১৬ -০৭ -২০১১) দৈনিক প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ছুটির দিনের প্রচ্ছদ কাহিনী লেখা হয়েছে “মাসুদ রানা”র জনক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক কাজী আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে। প্রচ্ছদটা দেখেই “কত স্মৃতি কত গান মনে পড়ে গেল”। মাসুদ রানার সাথে পরিচয় ১৯৬৬ বা ৬৭ সালে। তখন গোপালগঞ্জে থাকি, ক্লাশ এইট /নাইনে পড়ি। সাতক্ষীরা গিয়েছিলাম গোপালগঞ্জে ফেরার সময় খুলনায় খালার বাসায় দুই এক দিন ছিলাম। গল্পের বই পড়ার মারাত্মক নেশা। একটা লাইব্রেরিতে গিয়ে বিভিন্ন গল্পের বই দেখছি, তখন মূলত স্বপন কুমারের আট আনা সিরিজ, দস্যু বাহরাম, দস্যু মোহন, কুয়াশার(লেখক কুয়াশা, কুয়াশা সিরিজ নয়) ভক্ত। হটাৎ একটা ডিটেকটিভ বই দেখলাম যার দুইটা জিনিস চম্বুকের মত দুর্দান্ত আকর্ষণ করল, এক “কেবল মাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য”, দুই প্রচ্ছদের ষ্টাইল। প্রচ্ছদে একটা উইন্ডো দিয়ে পরের পাতার একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মার্কা মেয়ের ছবি দেখা যাচ্ছে। হায়! বইটার দাম দুই টাকা(সম্ভবতঃ), অত টাকা কোথায় পাব? কাছে যে টাকা আছে তার থেকে কিনলে গোপালগঞ্জে যাবার লঞ্চ ভাড়ার জন্য খালার কাছে হাত পাততে হবে। খালার কাছে হাত পাতায় লজ্জা নেই, কিন্তু এত আকর্ষনীয় বই না কিনতে পারলে বন্ধুদের কাছে লজ্জায় মাথা কাটা যাবে না? কি আর করা, একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বইটা কিনে ফেললাম। সেই থেকে মাসুদ রানার সাথে বন্ধন যেটা আজও টিকে আছে। সেই পাঠকের মৃত্যু হয়েছে, এখন আর কোন কিছুই পড়িনা বা পড়ার ধৈর্য নেই, কেবল মাত্র মাসুদ রানার সাথে আত্মিক বন্ধনের কারনেই এই লেখা। গোপালগঞ্জ থেকে নারায়নগঞ্জ, মতলব পরে পটুয়াখালী এসব যায়গায় মাসুদ রানাকে নিয়ে আমার স্মৃতি আনেকটা মলিন, তবে নারায়নগঞ্জ রেল ষ্টেষনের বুক ষ্টলে প্রতিদিন ফ্রি কয়েক পাতা করে পড়ে কয়েক খন্ড মাসুদ রানা পড়ে ফেলেছিলাম সেটা বেশ মনে আছে, আর এই ভাবে ফ্রি পড়তে গিয়ে ষ্টল মালিকের অনেক ধমক খেয়েছি সেটাও ভুলিনি।

এস এস সি পাশ করার পর মেহেরপুর কলেজে ভর্ত্তি হলাম বেশ কয়েকজন মাসুদ রানা ভক্ত, বোদ্ধা ও আলোচক পেলাম। সামাদ ভাই আমার এক ক্লাশ উপরে পড়েন, আমার রাজনৈতিক গুরু। কেন মাসুদ রানার মত এক মহান ব্যক্তিত্বের মাঝে SEX এর মত বাজে জিনিষ থাকবে কেনইবা ড্রিংক করবে এই প্রশ্নের উত্তর পেলাম সামাদ ভাইএর কাছে। তবে আকরামুলই মনে হয় সেরা। সে সুলতাকে (ধ্বংস-পাহাড় এর নায়িকা) কেন মেরে ফেল হোল কেনইবা সুলতাকে মুসলমান হিসাবে CONVERT করে মাসুদ রানার সাথে বিয়ে দেওয়া হলোনা তার কৈফিয়ত চেয়ে জনাব কাজী আনোয়ার হোসেনের কাছে বিরাট এক চিঠি লিখে বসল।

মাসুদ রানাকে নিয়ে আমার সবথেকে বড় স্মৃতি হোলো; বিকালে পাবলিক লাইব্রেরীর কাছের মাঠে (এখন সম্ভবতঃ মেহেরপুর ষ্টেডিয়াম) হকি খেলছি এক বন্ধু জানালো “কায়রো (মাসুদ রানার পনর নম্বর বই) আ চুকা হায়”। খবর নিয়ে জানলাম গাংনীর রকিবের কাছে কায়রো আছে। তাড়াতাড়ি খেলা শেষ করে বাসায় ফিরলাম, রাতের খাবার তখনাও তৈরি হয়নি যা ছিল তাই কিছু খেয়ে সাইকেলে করে আট মাইল দুরে গাংনীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। তখন দিনেই মেহেরপুর – গাংনী রাস্তা ফাঁকা থাকত আর রাতে তো কথাই নেই, কিন্তু বুকে কোন ভয় ডর নেই, কায়রো পড়তে হবে। রাত আটটা নয়টার দিকে গাংনী রকিবের বাড়ী পৌছালাম। রকিব বইটা পড়ছে শেষ না হলে আমাকে দেবেনা। বারটার দিকে ওর পড়া শেষ হোলো আমি বই পেলাম শেষ হতে হতে ভোর। সকালে বাসায় ফিরলাম। আমার বাবা অনেক স্নেহ প্রবন ছিলেন কিন্তু তার এক অলংঘনীয় নিয়ম ছিল ‘সন্ধ্যায আযান পড়ার আগে ঘরে ফিরতে হবে’, এর কোন বত্যয় ঘটলে বিরাট খবর আছে যাকে বলে ব্রেকিং নিউজ। তখনকার বাবারা তাদের সন্তানদের নিয়মিত ভাবে ছেঁচা দেওয়া কর্তব্য মনে করতেন, ছেলেরাও বাবার হতে ছেঁচা খাওয়াকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করতো। যাকে বলে মাইরের উপর ওযুধ নাই। সেদিন উভয় পক্ষই কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে কোন রকম গাফিলতি করেনি। তখন কার দিনে কলেজের ছাত্ররাও আনন্দের সাথে বাবার হাতের ছেঁচা খেত। আর আমি? মাসুদ রানার জন্য ধোলাই হয়েছি এর থেকে আনন্দ আর গর্বের আর কি হতে পারে।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×