আমি গ্রীষ্মের খটখটে পথে প্রিয় শুকনো ধুলো,
আমার কি মূল্য বল---
না পারি ভিজে মৃত্তিকায় মিশতে,
না পারি তোমার মত আকাশতারা হয়ে জ্বলতে।
সভ্যতার পদাঘাতে আহত আমি অজৈবিক অসার------------------
তবুও ভালবাসি তোমায়।
আমার ভালবাসা ভর করত কৃষকের দেহে,
বালক-বালিকার বলাকা মনে,
আর তোমার মেরুণ শাড়িটিতে।
তুমি এত পাষাণ কেন রে----
আকাশে জ্বলো রাতভর সহস্র কবির হয়ে
কবিরা লেখে দেবতুল্য সুন্দর কবিতা তোমায় নিয়ে, আমায় পদতলে রেখে--
তবুও ভালবাসি তোমায়।
আকাশটাকে বড় ইর্ষা হয়
তার বুকে তুমি মাথাপেতে ঘুমাও,
বুক ভরে কাঁদি- কেন আমি আকাশ হলাম না!
জান আমার কষ্টগুলি ধুলিকণা হয়ে মেঘ হয়,
তখন ভাবি এইতো আরএকটু হলেই আকাশ হব- তোমাকে পাব,
কিন্তু বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ি যে।
আমার কান্নায় নদীর পাড় ভাঙ্গে, পাহা্ড়ে ঢল নামে,
বিচূর্ণ হয় জনজীবন-- ধ্বংস আর ধ্বংস।
তাই মেঘ হতেও ভয় করে- পদতলেই রয়ে গেলাম,
তোমার ধারক হলাম না, তোমার আকাশ হলাম না।
কবে পাব তোমার দেখা?
কবে আকাশ হওয়ার স্বপ্নটা পূর্ণ হবে?
কবে মিলন হবে আকাশে আর পাতালে?
দিগন্ত তো শুধুই মরিচিকা,
দেখে এলাম গত শরৎএ----দিগন্ত বলে কিছু নেই,
ওখানে আকাশে আর মাটিতে মিলন হয়না,
সবই ভুল আর ভুল।
আমার প্রতিবিন্দু ধুলিকণা জানে তোমায় পাব না আমি-
তবুও ভালবাসি।
তোমার বালিকা মনের হয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম,
ওরা দেয়নি---------
শুধু আমাতে ভরকরে যারা তোমাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে তাদের অভিশাপ দিই,
ক্ষোভে প্রলয়ে মেতে উঠি,
অপেক্ষা করি সেই দিনের যেদিন তারা আমাতে মিশে যাবে।
গত জনমের কথা মনে আছে তোমার?
ভিটের কদম গাছে বর্ষার প্রথম কদম ফুল,
তুমি দুষ্ট বালিকা----
ঘাসফুলের নাকফুল,
সরষেফুলের দুল,
খোপায় গুঁজে কদমফুল।
আর একটি মেরুণ শাড়ির সেকি বায়না তোমার,
মেরুণ পাড়ওয়ালা শাড়ি তোমার চাই চাই।
আমি এনেছিলাম তুমি পরোনি,
কি হয়েছিল তোমার?
শুধু মনে আছে- ঝড়ের রাতের পর তোমার সিক্ত, নিথর ঘুমন্ত দেহের উপর
ভর করে আমার দুষ্ট বালিকা প্রকৃতির ধ্বংস হয়ে কেঁদেছিল।
কষ্টে আর কষ্টে,
দিনের পর দিন,
গ্রীষ্মের ধুলোয় মিশেগেছি আমি,
তুমি দেশবিভাগের শিকার,
আমি শিকারীর শিকার।
তুমি মেরুণ রং এর আকাশতারা,
আমি মর্ত্যের ধুলো।
০৪.০৩.২০০৭ ইং
খুলনা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ ভোর ৬:০৮