somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বরিশাল ক্যাডেট কলেজ, বরিশাল-৮২১৬"-০১

৩১ শে মে, ২০০৮ ভোর ৪:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পর্বটি পড়ার আগে প্রথম পর্ব থেকে শুরু করতে পারেন ... ...
পর্ব ০: প্রারম্ভিকা: আমার লেখার কারন ও আপনার অংশগ্রহণ

-------------------------পর্ব ০১-------------------------------------
বাবা আজ অনেক খুশি। বাবার অনেক দিনের স্বপ্ন আজ পূরন হয়েছে, ছেলে ক্যাডেট কলেজে চান্স পেয়েছে। আমিও খুশি, অনেক খুশি। ছোটবেলা থেকেই বাসার বাইরে থাকাই আমার অভ্যাস। সকাল ৭ টায় গন্তব্য জিলা স্কুল; স্কুল , কোচিং সবকিছু শেষ করে আমি ফিরতাম একেবারে সন্ধ্যায়। বাবা মা দুজনেই চাকরিজীবী, তাই সন্ধ্যায় সবাই একত্রে বাসায় ফিরতাম। আবার পরদিন সকাল হলেই গন্তব্য: জিলা স্কুল...। ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পরে কি করব বুঝতে পারছিলাম না... অর্থাৎ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিব, নাকি চলতে থাকবে, বুঝতে পারছি না। ঐ সময়ে আমার সবচেয়ে আপনজন ছিলো জিলা স্কুলের সেই বন্ধুগুলো, ওদের ফেলে বাসায় বসে বসে ক্যাডেট কলেজের জন্যে দিন গুণবো- এটা সম্ভব ছিলো না; তাই ঠিকানা আবার জিলা স্কুল। যার সাথেই দেখা হয় একই কথা, কিরে ক্যাডেটে চান্স পাইয়া গেলি... যাবি কবে? আমি কেবল মনে মনে ভাবি, কিছুতেই যেতে মন চাইছে না; এই স্কুল, এই মাঠ, এই ক্রিকেট, দলবেধে কীর্তনখোলায় গোছল... এসব ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। বেশ কয়েকবার ভেবেছিলাম, আব্বু-আম্মুকে আমার অনিচ্ছার কথাটা বলব, কিন্তু সাহস হয় নি। আমার খুব কাছের কিছু বন্ধু ছিলো সরোজ, পাভেল, অপু, মাহামুদ, রায়হানসহ আরও অনেকে। আমরা ছিলাম "সাইকেল গ্রুপ," যারা স্কুল ছুটির পরে সাইকেলে টো টো করতাম। খুব বেশি ভালবাসতাম ঐ লাল সাইকেলটাকে; ক্লাস ফাইভে ফাইনাল পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার পরে বাবা ঐ সাইকেলটা কিনে দিয়েছিলেন। আমি সবাইকে ছেড়ে চলে যাব- এটা মেনে নিতে পারছিল না বন্ধুরা অনেকেই। কিন্তু আমাকে যে যেতেই হবে। সুতরং বিদায় বন্ধু... কান্নায় চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছিল ... শেষ যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম, সেদিন কাউকে বলিনি যে আগামীকাল আমি চলে যাব, স্কুল থেকে ফেরার সময় সাইকেল চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল... মনে হচ্ছিল যেন কেউ পেছন থেকে ডাকছে আমায়... "মিঠু, যেও না..." ইস্ সেই খেলার মাঠ,সেই বেলস পার্ক কিংবা পরেরসাগর মাঠের ক্রিকেট, সেই কীর্তনখোলা আজও হাতছানি দিয়ে ডাকে আমায়...



১২মে, ২০০১, আমি, বাবা-মা, ছোট বোন আর আমার কাকা, আমরা রওনা হলাম বিশাল একটা ব্যাগ নিয়ে, গন্তব্য: বরিশাল ক্যাডেট কলেজ । বাসা থেকে বের হবার সময় লাল সাইকেলটার দিকে বারবার তাকচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল, আর কোনদিন বুঝি আমি সাইকেল চালাতে পারব না। আমি অনেক বেশি উৎফুল্ল ছিলাম , শুধু একটা বিষয় ছাড়া, সেটা হচ্ছে প্রিয় জিলা স্কুল আর প্রিয় বন্দুরা... ওদের আজও অনেক ভালবাসি। এসব ভাবতে ভাবতে আমরা কখন যে নতুন বাজার টেম্পুস্ট্যান্ডে চলে এলাম! দাদুর মুখটা খুব মনে পড়ছিলো, বাসা থেকে যখন রিকসায় উঠি, দাদু কেমন যেন হা করে তাকিয়েছিলেন আমার দিকে, মুখে কোন কথা বলেন নি।

টেম্পু ছুটছে রহমতপুরের দিকে... ধীরে ধীরে পিছনে ফেলে যাচ্ছি আমার প্রিয় শহর বরিশাল... বাবা-মা দেখছে আমি বেশ উৎসাহি, এতে তারা বেশ খুশি, কারন আমি মন খারাপ করলে সমস্যা। নতুন পরিবেশ, সেখানে হাঁসিখুশি থাকতে পারলেই ভাল। আর একজনের জন্যে খুব খুব কষ্ট লাগছিল... সে আমার ছোট বোন, বড় আদরের ছোট বোন... "আশা"...

আমরা নামলাম ক্যাডেট কলেজের অপজিটে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের "সাতমাইল" নামের জায়গাটিতে...
বেশ রঙিন সাজে সেজেছে আজ বরিশাল ক্যাডেট কলেজ, ঠিক যেন বিয়েবাড়ি! "বরিশাল ক্যাডেট কলেজ" লেখা গেট দিয়ে আমরা ঠুকলাম সেই বহু প্রতিক্ষীত গৃহে... তারপর অনেক কথা... সব কি একবারে বলা যায়... সেদিনের "মিঠু" পরবর্তীতে কি করে "তারিক" হয়ে গেল, সে এক বিস্তর কাহিনী...
[চলবে]


------পরের পর্বগুলি------
পর্ব-০২
পর্ব -০৩
পর্ব -০৪
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:০৭
১৭টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×