somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বরিশাল ক্যাডেট কলেজ, বরিশাল-৮২১৬" :পর্ব-০৩

০২ রা জুন, ২০০৮ ভোর ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পর্বটি পড়ার আগে প্রথম পর্ব থেকে শুরু করতে পারেন ... ...
পর্ব ০: প্রারম্ভিকা: আমার লেখার কারন ও আপনার অংশগ্রহণ
পর্ব-০১
পর্ব-০২
-------------------------পর্ব ০৩-------------------------------------
শুরু হল নতুন জীবন, অনেক নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় হল। ঢাকার ছেলেরাই সবচেয়ে বেশি। সারাক্ষণই আমাদের পাশে আছেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা, কখনোবা আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন জলপাই পোশাকধারী আর্মির ননকমিশন স্টাফরা। কখন খাব, কি খাব, কিভাবে খাব, কোথয় যাব, কিভাবে যাব, কি পোশাক পরব, কিভাবে পরব ইত্যাদি সব বিষয়েই বলে বলে দিচ্ছেন কখনো শিক্ষকরা, কখনো স্টাফরা, কখনোবা সিনিয়ররা... হঠাৎ নিজেকে একেবারে পিচ্চি মনে হতে লাগল। এতদিন যে মিঠু সাইকেল নিয়ে মেতে থাকত শহরের অলিগলি, সাঁতরে একাকার করত কীর্তনখোলার ঢেউ, সেই আমাকে এতটা কঁচি খোকা ভাবা হচ্ছে কেন- সেটা বুঝতে পারছি না। প্রথম ২/৩ দিনে আমাদের মোটামুটি ক্যাডেটিয় জীবন ব্যাবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল। শেখানো হল ডাইনিং হলে চামচের ব্যাবহার, গ্লাস ধরার নিয়ম থেকে শুরু করে সিনিয়রের সাথে কথা বলার ভঙ্গি পর্যন্ত সবকিছুই। ১ম টার্মে মাত্র ১৫ দিন ছিলাম আমরা, তারপরেই ছুটি। এই ১৫ দিনে একটা মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার; দেখেছিলাম সব নতুন ক্যাডেটরাই নতুন জীবনে এক নতুন ধরণের অস্বস্তিতে আছে। এই অস্বস্তিটা দুই দলের ক্ষেত্রে দুই রকম...
একদল আমার মত যারা আগে ছিল অনেক মুক্ত, যাদের বিচরণক্ষেত্র ছিল অনেক বিস্তৃত, খোলা আকাশের মত বিশাল; এদের অবস্থা হয়েছিল জঙ্গল থেকে তুলে এনে চিড়িয়াখানার খাঁচায় বন্দী করা বাঘের মত, যে বাঘকে নিয়মিত খাবার দেয়া হয়, নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়, তবুও বাঘটার কাছে মনে হয় "কি যেন নেই...."
দ্বিতীয় দলটার অস্বস্তির কারণটা একটু ভিন্ন। এরা হচ্ছে সেই দল যারা আগে কোনদিন নিজে কিছুই করেনি, খাওয়া, কাপড় পড়া, গোসল ইত্যাদি সব কিছুই করে দিতেন আম্মু... কিন্তু ক্যাডেট কলেজেতো আম্মু নেই... বাসার মত টেবিলে সাজানো ব্রেকফাস্ট আছে, কিন্তু... ক্লাসে যাবার সময় এখানেও আগের মত জুতা-মোজা পড়তে হয়, কিন্তু আম্মুটাকে যে কোথায় পাই... ...!! সবকিছু থেকেও "কি যেন নেই..."

আমাদের ব্যাচে আমরা ছিলাম ৫৫ জন। তার মধ্যে একজন ছিল আমাদেরই এক স্যারের ছেলে, আর একজন মাত্র আর্মি অফিসারের ছেলে, দুজন আমাদের কলেজের দুইজন অফিস কর্মকর্তার ছেলে, বাকি সবাই সাধারণ ছাত্র। নিয়ম অনুসারে, সামরিক কর্মকর্তা (আর্মি, বিমান বা নৌ সেনা বা অফিসার) কিংবা ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সন্তানদেন জন্য ১০%, অর্থাৎ ৫০ জনে ৫ জনের জন্য সংরক্ষিত আসন ছিল। অন্য কোন ধরণের কোন কোঠা পদ্ধতি নেই। ক্যাডেট কলেজ শুরু করেছিলাম মাসিক মাত্র ৬৫০ টাকা বেতনে, এই বেতনটা নির্ধারিত হত পরিবারের আয়ের উপর শতকরা হারে। তবে সরকারী চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে এই শতকরা পরিমাণটা অনেক কম ছিল, বেসরকারী পেশাজীবী বাবা-মায়েদের অনেক বেশী হারে বেতন দিতে হত। ৬৫০ টাকায় শুরু করে ক্যাডেট জীবন শেষ করেছিলাম মাসিক ২৪০০ টাকা বেতনে, প্রতি বছর জুনে পারিবারিক আয়ের সনদপত্র জমা দিতে হত, জুলাই থেকে নতুন বেতন কার্যকর করা হত। তবে আমাদের ক্যাডেট জীবনের শেষ দিকে একটা নিয়ম করা হয়েছিল যে কারও মাসিক বেতন ১৫০০ টাকার নিচে করা হবে না এবং দিন দিন বেতনের জন্য নির্ধারিত শতকরা হারের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছিল। আমাদের এক জুনিয়রের বেতন ছিল মাসিক ১০,০০০ টাকা এবং সেটা শেষ পর্যন্ত বেড়ে কত হয়েছিল তা জানি না।


ক্যাডেট কলেজ পরিচালনা ফান্ড নিয়েও আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করছি। ক্যাডেট কলেজগুলোর পরিচালনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় প্রতিরক্ষা বাজেট থেকে, শিক্ষা খাত থেকে নয়। ক্যাডেট কলেজগুলো পরিচালিত হয় সরাসরি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে "Cadet College Governing Bodies" -এর মাধ্যমে। সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রতিটি ক্যাডেট কলেজে নিযুক্ত থাকেন একজন মেজর, যার পদকে বলা হয় "এ্যাডযুটেন্ট ( ADJUTANT ) ", তবে কখনো কখনো প্রিন্সিপালও সামরিক ব্যাক্তিত্ব হয়ে থাকেন। সাধারণত ক্যাডেট কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা কেউ প্রোমোশন প্রক্রিয়ায় প্রিন্সিপাল হয়ে থাকেন, তবে ব্যাতিক্রম ঘটে যখন সরাসরি আর্মি এজুকেশন কোর থেকে কাউকে সরাসরি প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেয়া হয় এবং দিন দিন ব্যাতিক্রমটা ক্রমের মতই হয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া এটা এক বাক্যে বলা যায় যে এ্যাডযুটেন্টই হচ্ছে ক্যাডেট কলেজের সর্বময় কর্তা। এ বিষয়গুলো পরবর্তীতে আরও পরিস্কার হয়ে যাবে বলে আশা করি। যাই হোক, পরবর্তী পর্বে আবার আমরা ফিরে যাব গল্পে... ততদিনে আমি ফিরে এসেছি মায়ের কোলে... ১৫ দিনের একটা ছোট্ট টার্ম শেষ করে। পরের পর্বে আমার মাকে শোনাব সেই ১৫ দিনে আমার অভিজ্ঞতা... এবং তারপর আমরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে চলব... ... ...

ওহহো বলতে ভুলে গিয়েছিলাম. ঐ ১৫ দিনে মাকে দুটো চিঠি লিখেছিলাম, তবে... ... সেটাও ছিলো নিয়ম... স্যাররা বলেছিলেন, সবাই বাসায় চিঠি লিখবে। চিঠিগুলো পোস্ট করার আগে তারা আবার সেইগুলো পড়ে দেখতেন, "কেউ আবার কোন দুর্নাম লিখল কি না... ..."

[চলবে]


------পরের পর্বগুলি------

পর্ব -০৪
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:১৫
১৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×