somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত দিচ্ছে "বিপদ"! মস্তিষ্কের এই আচরণকে বলে লড়াই বা পালানোর (fight-or-flight) মানসিক অবস্থা। মন্তব্যে চাঁদগাজী কী বলেছেন সেটা পড়ার আগেই আপনি ঠিক করছেন, শিম্পাঞ্জিটাকে ঘুসি বাগাবেন, নাকি এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত কেটে পড়বেন।

মস্তিষ্কের এই মানসিক অবস্থার কারণ আমাদের মানব প্রজাতির হাজার বছরের বিবর্তনের ফল। অনেক দিন আগে বনবাসী পূর্বপুরুষেরা কোনো এক সকালে যখন জঙ্গলে খাবার খুঁজতে বেরিয়েছিল, তখন হঠাৎ ঝোপের আড়াল থেকে শব্দ। বাঘ না সাপ, হরিন না ভাল্লুক সেটা বোঝার সময় নেই। মস্তিষ্ক তখন প্রশ্ন করে না। হার্টবিট যায় বেড়ে, পা দুটো যায় থমকে।তখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দৌড়াবো নাকি লড়বো? এটার আরেকটি নাম দ্রুত ও স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটিক) অবস্থা। এই মানসিক ধরনটা দ্রুত এবং প্রতিক্রিয়াশীল, চিন্তা-ভাবনার সুযোগ এখানে নেই।

কিন্তু মানুষের ইতিহাস এখানেই থেমে যায়নি। আগুন জ্বালানো, ভাষার সৃষ্টি, সমাজ গঠন - এসবের সাথে সাথে মস্তিষ্কের আরেকটি অংশ শক্তিশালী হয়েছে। সেটি চিন্তাশীল মস্তিষ্ক। এখান থেকে আসে চিন্তা, সহমর্মিতা এবং কোনো কিছু গভীরভাবে বোঝার ক্ষমতা। এই অবস্থাকে বলে চিন্তাশীল ও সংযত মানসিক অবস্থা (calm-and-connect)। মানসিক এই অবস্থা কিন্তু আগেরটার মত অটোমেটিক নয়। এটিকে সক্রিয় করতে সময় লাগে। আবার তার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়। আপনি যদি কোথাও সুস্থির হয়ে বসতে না পারেন, তাহলে মস্তিষ্কের এই অবস্থা তৈরি হবে না।

ধরা যাক চা হাতে নিয়ে আপনি সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে একটা লেখা পড়ছেন। লেখাটি আপনাকে রাগিয়ে দিতে পারে, কিন্তু আপনি প্রতিক্রিয়া দেখান না। আপনি থামেন, ভাবেন। লেখক কেন এমন বলছেন? তথ্যগুলো কোথা থেকে এসেছে? একমত না হলেও এখানে নতুন কোন চিন্তার বিষয় আছে কি? এই যে থামা, এই যে প্রশ্ন করা, এটাই চিন্তাশীল মোড।

কিন্তু মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে চিন্তাশীল অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সহজ নয়। এতে পরিশ্রম লাগে, মনোযোগ লাগে। সে কারণেই চাঁদগাজীর সবেগে বায়ুত্যাগ ধরনের পোস্টগুলোতে পাঠক হয় বেশি। কাজী ফাতেমা ছবির সহজ-সরল প্রার্থনার মতো কবিতাগুলো পাঠকপ্রিয় হয় না। কিন্তু তিনি যখন চাঁদগাজী নামক শিম্পাঞ্জির থাবার আচরণ নিয়ে পোস্ট দেন তখন অনেকে পড়েন এবং মন্তব্য করেন। তাই দেখে শিম্পাঞ্জিটি ভাবে, সে একজন বিরাট ব্লগার এবং বোদ্ধাও বটে!

বিষয়টা শুধু চাঁদগাজীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে ভুল বোঝার সম্ভাবনা। বাঘ নেই, কিন্তু মস্তিষ্ক এখনো বাঘ নিয়ে পড়ে আছে। কেননা নিরাপত্তার ভাবনাটা সবচেয়ে আগে। বনের বাঘ-ভাল্লুক যদিও বা দূরে, কিন্তু ইন্টারনেট ঘিরে লড়াই বা পালানোর মানসিক অবস্থা চালু আছে। বাঘের বদলে এখন ট্রিগার হয় শব্দে, পোস্টে, মতাদর্শে।

কিন্তু সভ্যতা টিকে আছে লড়াই বা পালানোর মানসিক অবস্থার ওপর নয়। এটি টিকে আছে চিন্তাশীল মানসিক অবস্থার ওপর। সমস্যা শুরু হয় তখনই, যখন আমরা সারাক্ষণ লড়াই বা পালানোর মানসিক অবস্থাতে আটকে থাকি। সংবাদ, ব্লগ, ফেসবুক পোস্ট কিংবা রাজনৈতিক বয়ান তখন আর বিশ্লেষণের বিষয় হয়ে ওঠে না, হয়ে ওঠে বাঘ-ভাল্লুকের মতই কেবল বিপদ সংকেত মাত্র!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:০৬
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×