বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর থেকে ভিন্ন ভিন্ন বয়স ও জন্ম-প্রজন্ম কীভাবে ক্ষমতা, সুযোগ ও নৈতিকতার মুখোমুখি হয়েছে, সেই আলোকে সংক্ষিপ্ত একটি বিশ্লেষণ করা যায়।
১. ১৯৭১ সালে বয়স ২০–৩০
এই প্রজন্ম যুদ্ধের সময় সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে বা তার কাছাকাছি ছিল। আদর্শ, ত্যাগ ও রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্ন ছিল প্রবল। কিন্তু স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রযন্ত্র দুর্বল থাকায়, এদের একটি অংশ ক্ষমতার খুব কাছে চলে যায়। আদর্শের সঙ্গে বাস্তব রাজনীতির সংঘর্ষ এখানেই শুরু। দুর্নীতির বীজ রোপিত হলেও একে পুরোপুরি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত প্রজন্ম’ বলা কঠিন।
২. ১৯৭১ সালে বয়স ৩০–৪০
এরা স্বাধীনতার পর প্রশাসন, রাজনীতি ও ব্যবসায় দ্রুত প্রভাবশালী হয়। যুদ্ধ-পরবর্তী সংকট, দুর্ভিক্ষ ও অস্থিরতার মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতি গড়ে ওঠে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কাঠামো অনেকটাই এই সময়েই পাকাপোক্ত হয়।
৩. ১৯৭১ সালে বয়স ৫০–৬০
এই প্রজন্ম মূলত পাকিস্তান আমলের প্রশাসনিক সংস্কৃতি বহন করে এনেছিল। ফাইল, অনুমোদন, সুবিধা—এসবের সঙ্গে অভ্যস্ত মানসিকতা নতুন রাষ্ট্রেও টিকে থাকে। এরা দুর্নীতির সংস্কৃতিকে ‘স্বাভাবিক প্রশাসনিক চর্চা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখে।
৪. জন্ম ১৯৬৫–১৯৭৫
এই প্রজন্ম বড় হয়েছে সামরিক শাসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে। আদর্শের চেয়ে টিকে থাকা ও সুবিধা নেওয়ার মানসিকতা বেশি প্রভাব ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রে এরা পুরোনো দুর্নীতির কাঠামোর দক্ষ ব্যবস্থাপক হয়ে ওঠে।
৫. জন্ম ১৯৭৫–১৯৮৫
এরা বাজার অর্থনীতি, এনজিও ও বেসরকারি খাতের উত্থান দেখেছে। দুর্নীতি এখানে আরও ‘প্রফেশনাল’ হয়, কম দৃশ্যমান, কিন্তু বেশি কাঠামোগত। নৈতিক প্রশ্নের জায়গায় সফলতা ও সংযোগ বড় হয়ে ওঠে।
৬. জন্ম ১৯৮৫–১৯৯৫
এই প্রজন্ম ডিজিটাল যুগে বড় হয়েছে। সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িত থাকার হার তুলনামূলক কম হলেও, নীরব সম্মতি ও সুবিধাভোগী অবস্থান স্পষ্ট। প্রশ্ন তোলার ক্ষমতা আছে, কিন্তু ঝুঁকি নেওয়ার সাহস সবসময় দেখা যায় না।
তাহলে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত কারা?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




