somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাগরিক বতুতা

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপ্তবাক্য-নাগরিক জীবনে বিনোদনের অভাব, ঘোরার জায়গা নেই, নিরাপত্তা নেই, অর্থের অভাব; এ কথাগুলো আমি মানুষের মুখে ঘুরবার ব্যাপারে হরহামেশা অভিযোগ হিসেবে শুনতে পাই। ক্ষুদ্রজীবনে ঘুরবার জায়গার কখনো কোন অভাব বোধ করিনি। নিরাপত্তাকে থোড়াই কেয়ার করেছি, টাকা কস্মিনকালেও ছিল না। শুধু পায়ে হেঁটে ঢাকা শহরের কত জায়গায় যে গিয়েছি - কি এক দ্রষ্টব্য বস্তু ছিলাম মানুষের চোখে- হাড় জিরজিরে একটা মেয়ে জিন্স আর পাঞ্জাবী পরে, কোমর ছাপানো চুল নিয়ে ভয়াবহ রোদে হাঁটছে কিংবা রিকশায় হুড ফেলে বৃষ্টিতে ভিজছে-কখনো ভাবিনি এগুলো খুব আহামরি কোন কাজ, কেউ কিছু বললে বা ক্ষরচোখে তাকালে আমি দৃষ্টি ফেরত দিয়েছি।
৯৮-৯৯ এ নতুন জায়গা হয়েছে ঢাকার আশেপাশে, সেই জায়গার নাম আশুলিয়া। চারদিকে না কি চলনবিলের মতো পানি, হু হু বাতাস। নৌকায় করে ঘোরা যায়, তখনো তেমন ব্যাপকভাবে চটপটি ফুচকার গাড়ি দাঁড়ায়নি। প্রায়ই প্ল্যান করা হয় কিন্তু যাওয়া আর হয় না। ৯৯ এর অক্টোবর ২৪ তারিখ হওয়া সত্ত্বেও গরম কমেনি। মীরপুর থেকে আশুলিয়া আসা খুব সহজসাধ্য ব্যাপার না। মাবরুকা, আমি আর কাজলা ফার্মগেট এলাম। সেখান থেকে ম্যাক্সি (হিউম্যান হলার)তে করে আশুলিয়া। আশুলিয়া নেমে দেখি এক এলাহি কান্ড। বর্ষাকাল না হওয়াতে পানি তুলনামূলকভাবে কম। তিনটা মেয়েকে দেখে নৌকার দালালরা ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমরা আস্তে করে দূরে সরে গেলাম। এমনভাব করলাম আমরা কারো জন্যে অপেক্ষা করছি। দালালরা ফিকে হতে আমরা নিজেরাই দেখেশুনে একটু বয়স্ক একজন মাঝিকে নিলাম। ছোট্ট একটা নৌকা। তিনজনের কেউ সাঁতার জানি না। আমরা জলের উপর আমাদের উপর সূর্য। সে এক জটিল অনুভব। চোখ ধরে আসে মাঝে মাঝে পানিতে সূর্যের প্রতিফলিত আলো চোখে পড়লে। বান্ধবীরা ধরলো গান গাইবার জন্যে-তিনজনে ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে কোরাসে গাইলাম। মাঝি আমাদের খুব যত্ন করে ঘুরালো সাথে কোন ছেলে না থাকাতে মনে হয় খুশিই হয়েছে। আমাদের এক ঘণ্টা চুক্তির জায়গায় দেড় ঘণ্টার বেশি ঘুরিয়ে পাড়ে নামালো। এখানে সেখানে বিভিন্ন হাউজিং এর সাইনবোর্ড দিয়ে পানিতে খুঁটি দেয়া। এ জায়গার ভবিষ্যত ঐ সাইনবোর্ডগুলো হস্তরেখার মতো আমাদের বলে দিচ্ছে। একটু মন খারাপ হয়ে গেল। আমরা আবার যেভাবে গিয়েছি সেভাবে ফিরে এলাম। আমাদের তিনজনের সেটাই ছিল একসাথে কোথাও শেষ ঘুরতে যাওয়া-জীবনের টানাপোড়েনে কোন কোন বন্ধু কিভাবে যেন অজান্তেই খসে পড়ে, আর মেয়েদের বিবাহিত জীবন এর প্রারম্ভ তো এ খসে পড়াতে সবচাইতে বেশি কাজ করে।

ঢাকার ভেতর বলধা গার্ডেনে যে যায়নি সে কি বলতে পারবে সাজানো বাগানের বন্য রূপ কেমন হয়? মীরপুরে ক্ল্যাসিক আর শুভেচ্ছা কোচিং সেন্টার ছিল, সেখানে এসএসসি পরীক্ষার পর ঝাঁকে ঝাঁকে ছেলেমেয়ে ভর্তি কলেজ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্যে। আমরাও ভর্তি হয়েছি কোনদিন ক্লাস হয় কোনদিন হয় না। যেদিন হয় না সেদিন ঝালমুড়ি খাও, মুসলিম বিরিয়ানিতে বসে অথবা মীরপুর ১৪ নম্বরের ক্যাফে শান এ বসে আড্ডা মেরে বাসায় চলে যাও। মাঝে মাঝে টাকা পয়সা বেশি যোগাড় হলে রিকশায় ঘণ্টাভ্রমণ। এরকম একদিন গিয়ে দেখি ক্লাস হবে না। কি আর করা - চলে গেলাম যাদুঘর, এটা ৯৪। কয়জন যে গেলাম আমার সবার নামধামও মনে পড়ছে না। যাদুঘর থেকে চারুকলা, আমরা চারুকলাকে আর্টকলেজ নামে চিনতাম। সেখান থেকে লালবাগ। লালবাগের কেল্লায় আমরা ঢুকে অস্থির-স্কুল কলেজের ড্রেসপরা মেয়েরা ছেলেরা বসা। তারা আমাদের ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা দেখে খুবই বিরক্ত। পরীবিবির কবর দেখলাম। লিমা আমাদের বলতে লাগলো একবার ভাব এখানে বড় বড় বাঈজীরা নাচতো! এটা রঙমহল, ঐটা দরবার। শর্মিলা আফসোস করে বললো ইস্‌ আমাদের ফুল গ্রুপে একজনও নাচতে জানি না। ফ্যান্সি ইচ্ছা করে এক চক্বর নাচ দিলো তিন্নির ধা ধি না না থুন না বোলের সাথে।
লালবাগের কেল্লার কাছে আহসান মঞ্জিল কিন্তু আমাদের সেখানে যাওয়া হলো না। আমরা গেলাম বলধা গার্ডেনে। ঐখানে ঢুকতে ৫টাকা করে সম্ভবত আমাদের টিকেট করতে হলো। পুরো শরীরটা শান্তিতে জুড়িয়ে গেল। কত শত ধরনের ফুল।বড় বড় গাছ। এক একজন এক একদিকে গাছের নীচে বসে পড়েছি, পাখির ডাকে গাছের ছায়ায় কোথায় যে এতক্ষণের সব ক্লান্তি উড়ে গেল...আবার যাব এমনভেবে আমরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফিরতি পথে রওনা দিলাম। এক নদীর জলে যেমন দুবার স্নান করা যায় না তেমনি আমাদের আর বলধা গার্ডেনে যাওয়া হয়নি।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×