somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোধ

০৩ রা মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মালির মোড়ে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা নেভি সিগারেট টেনেই যাচ্ছে নাসির। সাথে জাকির আর শাহজাহান। সে ঢাকা থেকে এসেছে ২ দিন হল। সন্ধ্যা হয়ে এল প্রায়। বাস গুলো থামছে একটা করে আর কনডাক্টরের কান ফাটানো চিৎকার " ঐ মালির মোড়, মালির মোড় লাববেন (নামবেন) কিডা, লাবেন (নামুন)"। মোড়টার পুরো নাম যতন মালির মোড়। কখনও কোন কালে এই খানে হয়ত যতন মালি বলে কেউ থাকত। তার নামেই নাম হয়েছে "যতন মালির মোড়"। সাতক্ষীরা জেলা শহরেই গেছে রাস্তাটি। এই জায়গাটার নাম চাঁদপুর। চৌধুরী বাড়ির ঠিক পাশেই নাসিরদের বাড়িটা। নাসির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। ওরা দুই ভাই এক বোন। বোন নাঈমা এবার কলেজে ভর্তি হল। হঠাৎ বাড়ি আসার একটা কারন অবশ্য আছে। নাঈমা কে ঈদানিং নাকি কারা বড্ড জ্বালাতন করে কলেজ আসা যাওয়ার পথে। তাদেরকেই শায়েস্তা করতে বাড়ি আসা নাসিরের। আজ দূপুরে রীতিমত ধোলাই করেছে ছেলেগুলোকে সে। তারই তৃপ্তিতে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে এখন সে।

সন্ধ্যার অন্ধকার টা আরেকটু ঘন হলেই নাসির ফতে ভাবীর রান্না ঘরে ঢুঁ মারবে একটা। ফতে ভাবীর কথাটা মনে হতেই বুকের মধ্যে ঢোলের বাড়ি পড়লো তার। আহা! সেই গতবার যখন বাড়ি আসলো, সামাদ ভাই বাড়ি ছিলনা, বড়দলের হাঁটে গিয়েছিল গরু কিনতে। বোকাসোকা সামাদ ভাইকে ফাঁকি দিয়ে তারই জমিতে নিশ্চিন্তে লাঙ্গল দিল নাসির। ফতে ভাবীও মুখ্যু-সুক্খু স্বামীর বদলে ঢাকাইয়া, শিক্ষিত ছেলে নাসিরের স্পর্শ পেয়ে নিতান্তই যেন খুশিতে গদগদ হয়ে গেল! এসব ভাবতে ভাবতেই নাসির তার শরীরের নিম্নাংশের শিরা-উপশিরা গুলোতে টান অনুভব করলো। জাকির আর শাজুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটা শুরু করলো ফতে ভাবীর বাড়ির দিকে। ভাবীর ছোট্ট ছেলেটার নাম হৃদয়। "হৃদয়ের আয়না" সিনেমায় রিয়াজের নাম হয়েছিল হৃদয়। সেই সিনেমা দেখে ফতে ভাবী ছেলের নাম হৃদয় রাখল। ঘরের পেছন দিয়ে রাস্তা। রাস্তা থেকেই হৃদয়ের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে উঠোনে পা দিল নাসির। সমাদ ভাই বাড়ি ছিল। " কিডা? নাসির ন্যেই?" সামাদ ভাই শুধাল। "হ্যায়। হৃদয় কনে? ফতে ভাবী বাড়ি নেই?" নাসিরের তড়িৎ জবাব। " তুমার ভাবী রানতিছে বুদায় (মনে হয়)" বললো সামাদ। "এইসু, বইসু নাসির, আমি বারুবো(বের হব) এট্টু, বাজারের দিক যাব।"সামাদ ভাই হাসি মুখে বললো। "যাবি তা যাতিছিস নে ক্যান হারামযাদা? আমার শরীরি আর কুলোইতিছ (কুলাচ্চে না) না বুজদি (বুঝতে) পারতিছিস নে?" মনে মনে খেকিয়ে ওঠে নাসির। সামাদ বেরিয়ে যায়। মুখে মদির হাসি নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে ফতে ভাবী। হৃদয় কে চাচীর ঘরে গল্প শুনতে পাঠায়। তারপর ঘরে দরজা আটকে নাসিরের সাথে নিজেই গল্প বলে, জগতের আদিমতম গল্প!

----------------------------------------------------------------------------

ঢাকায় ফিরেছে আজ নাসির। গত দুই দিন বেশ ভালোই কেটেছে নাসিরের। মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে, হালকাও! শরীরের সব বদ রক্ত নিংড়ে বের করে দিয়ে এসেছে ফতে ভাবীর ঘরে। কামরাঙ্গিরচরে একটা মেসে থাকে সে। এলাকার সুপুত্রদের সাথে ভাল সম্পর্কের জের ধরে নাসিরের অবস্থানও এলাকায় বড় ভাইদের সম পর্যায়েরই। ক্যাম্পাসে গিয়ে বাংলা ডিপার্টমেন্টের সামনে একটু দাঁড়ালো। এইখানেই রোজ মেয়েটা দাঁড়িয়ে থাকে ক্লাশ শেষে। ঐ তো দেখা যায়। নাসির, শিমুল আর শফিক মিলে মেয়েটার বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দৈর্ঘ-প্রস্থের হিসেব করে আর তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে যোগ বিয়োগের হিসেব শোনায়। লজ্জায় অপমানে মেয়েটা সরে যায়, ওদের থেকে একটু দূরে। কিন্তু তাতেও রেহাই নেই। আবার শুরু হয় "কত হবে রে? ৩২ না ৩৪?" তারপর আবার হো হো করে হাসি। মেয়েটা নিজের দেহের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। না তো, কোথাও তো কোন খুৎ নাই। যারা সব কিছুর নাটের গুরু নন্দ ঘোষ হিসেবে মেয়ে মানুষের ওড়নাকে দেখে তাদের কথা মনে হতেই নিজের ওড়নাটা গুছিয়ে নিতে যায় মেয়েটা। কিন্তু ওড়নাটাও তো ঠিক জায়গাতেই আছে, তবে?!!!

ধৈর্য সহ্যের সীমাকে থোড়াই কেয়ার করে মেয়েটা এবার এগিয়ে গেল। "পাইছেন কি আপনারা? প্রতিদিন যা খুশি তাই বলবেন? আপনাদের কি মা-বোন নাই?" নাসির হেসে বলে "সবাই যদি মা বুন হয় তো শোব কার সাতে?"। মেয়টা এবার রাগে ফেটে পড়ে "জানোয়ার"। "জানোয়ার" শব্দটা নাসিরের মনুষ্যত্বে(!) কঠিন করেই আঘাত করে। জানোয়ার শব্দটাকে মিথ্যে প্রমাণ করতেই এবার সে মেয়েটার ওড়না ধরে টান দেয়। ওড়ানাটা খুলে আসে। দু'হাত একজায়গায় করে নিজের শরীরটাকে শত চোখের যোগ বিয়োগের হাত থেকে বাঁচাতে চায় সে। অনেক এগিয়ে এসে বলে "বাদ দেন ভাই, যান যান" "যান আপু, আপনার কি দরকার ছিল কথা বাড়ানোর"। হায় রে জগৎ! অপমানে কাঁপতে থাকা মেয়েটা দ্রূত পায়ে চলে যায় কমনরুমের দিকে।
-----------------------------------------------------------------------------

মাথা থেকে এখনও টুপিটা খোলেনি নাসির। উঠোনে পা মেলে বসে আছে। সকাল ১০ টার বাস ধরেই বাড়ি এসেছে। ঘর থেকে মায়ের মৃদু কান্নার আওয়াজটা এখনও শোনা যাচ্ছে। বাবা বারান্দার বাঁশের খুটিতে মাথা ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। জুতো জোড়া এখনও পড়ে আছে এক কোণে। শুধু জুতোর মালিক নাঈমা নেই। রাতে টয়লেটে উঠেছিল নাঈমা। অনেক রাত তখন। মা কে ডেকেছিল, মা বলেছিল "আমি চ্যাতনা (জাগনা) আছি, তুই যা"। পায়খনাটা উঠোনের শেষ মাথায়। তারপর আর ঘরে আসেনি সে। মাও বেশিক্ষণ চ্যাতনা ছিলনা। সকালে উঠে মা প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য খুঁজতে থাকে নাঈমা কে। পাশের বাড়ি টেলিভিশনও দেখতে যায়নি। তাহলে কোথায় গেল? খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির সামনে মজা ডোবাটার ঠিক উপরেই পাওয়া গেল নাঈমা কে। কাপড় নেই গায়ে। দু'পায়ের মাঝখান দিয়ে একটা ভেরেন্ডার ডাল সোজাসুজি ঢুকানো ছিল, যেন নরপিশাচরা নিজেদের নেতিয়ে পড়া অস্ত্রের উপস্থিতিকে নশ্বর করে গেছে এভাবেই। বুকের ওপর অনেক গুলো কামড়ের দাগ, গালের একপাশের মাংস ছিঁড়ে গেছে। সেই ক্ষততে মাছি গুলো ভঁন ভঁন করছিল। মা চিৎকার করে উঠেছিলেন। তারপর পাড়া-প্রতিবেশি দৌঁড়ে আসে। নাসির ফোন পেয়েই ছুটে আসে। নাসির বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে মা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো "ও নাসির রে, এ কি হল রে বাপ? আমার নাঈমা আর মা বইলি ডাকপে না রে" মা জ্ঞান হারায়।

-----------------------------------------------------------------------------

নাসির এখনও বসে আছে চুপ করে। ওর কানে জগতের আর কোন শব্দই প্রবেশ করেনা। শত সহস্র নাঈমা তখন তারস্বরে চিৎকার করে বলছে "জানোয়ার! তোর ঘরে কি মা বোন নেই??!!!""
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:৪৩
৫৬টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×