এই নারী, যার বাড়ি শীতলক্ষা আর বুড়িগঙ্গা বিধৌত শহরে, যে শহর থেকে প্রতিদিন লক্ষ-কোটি টাকার পণ্য এক্সপোর্ট হয়ে যায় ভিনদেশে, সেই শহরের এই নারী কী করে, কেমন করে করাচীর মতো ‘ফটোস্ট্যাট বাঙালিদের’ শহরে রপ্তানি হয়ে গেলেন, আজ সে কথা মুখ ফুটে বলতে তার লজ্জার শেষ নেই । তিনি কী পরোকীয়ার বলি হয়েছেন ? হতে পারে । নাকি তিনি পরিবার থেকে পালিয়েছিলেন কোনো অপমানের সূত্র ধরে ? আমরা একটা কিছু কল্পনা করে নিতে পারি ।
আমরা জানতে পেরেছি, তিনি সে দেশে দীর্ঘদিন ভিক্ষাবৃত্তি করেছেন, তারপর এক ভিক্ষুক তার সঙ্গী হয়েছেন সেখানে । মাথাটা গুঁজতে তো হবে, তাই না ! দীর্ঘ দশ বছর। বহুবার দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন । অবশেষে শুনেছেন, তার মহল্লার মসজিদ থেকে তাবলিগ যাবে বাংলাদেশে । তাদের হাতে পায়ে ধরে পড়েছেন ।
আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করেছি, এ দেশের তার স্বজন-সুজন যারা আছে, তারা তার খোঁজ পাওয়ামাত্রই কান্নায় বুক ভাসিয়েছে, তার সঙ্গে ফোনে কথাও বলা গেছে ইতোমধ্যে, কিন্তু আবেগের ক’টা দিন পার হতেই যেই না বাস্তব মাটিতে পা দিয়েছে সবাই, মানে হলো গিয়ে, “লোকে কী বলবে”, “একটা পাকি পতিতা-ভিক্ষুককে কী করে জায়গা দেয়া যাবে”- ইত্যকার বিষয় যখন সামনে এসে গেছে, অমনি সবাই কেটে পড়ছে একে একে ।
অবাক কাণ্ড ! পনেরো বছর বয়সি মেয়ে এখন আর মার সঙ্গে ঘৃণায় কথাও বলতে চায় না । মুখে বলে— “মা আমাকে ছেড়ে গেছে । বাবাও আরেকটা বিয়ে করেছে । আমায় দুর্দশায় ফেলে রেখেছে যে, সে আমার মা হতে পারে না ।” নিশ্চিত কলকাতার সিরিয়াল দেখে দেখে এসব শিখেছে মেয়েটা ।
লেখক হয়তো এই কাহিনীর ভেতরে তার উপন্যাসের প্লট খুঁজে পাবেন । কিন্তু এই নারী এখন কী করবে ? আমরা কি তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলতে পারবো যে, সে তার পাপের প্রায়শ্চিত্য করছে ? আর তার মেয়ে কী করবে ? মাকে অবজ্ঞা করে ক’দিন পরে সে কেমন মা হবে ? তারপর তার মেয়ে, তার মেয়ে— অনাগত ভবিষ্যতের সব মেয়ে, সব নারী কাকে দায়ি করবে তার কলঙ্কের জন্যে, তার দুর্ভাগা জীবনের জন্যে ?
আয় রে মা, তোরা নারীত্বের ঘোমটা ছেড়ে মানবী হ । ...আবার তোরা মানুষ হ ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩২