ভূমিকা...
কাল ১২ জুলাই সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা অবদি আমি অনলাইনে ছিলাম। শুধু একবার সামান্য সময়ের জন্য লগ-ইন করেছিলাম। শাশ্বত’র বাড়ীতে তোলা ছবিগুলো সবাইকে শেয়ার করার জন্য। তারপর আর লগ-ইন করিনি। সারাদিন দেশ বিদেশ থেকে ২৭ টি ফোন আর ৩ টি মেইল পেয়েছি। অনেকে আসল ঘটনাটা জানতে চেয়েছেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকজন সাধুবাদ জানিয়েছেন, কোন মন্তব্য না করার জন্য। আমি মনে করি এ ৩৬ জন ছাড়াও (ফোন করা ২৭ জন, মেইল করা ৩ জন, পোস্ট দেয়া ২ জন, কলকাঠি নাড়া ২ জন, কাঠগড়ার আমরা ২ জন) । আরো অনেকেই পোস্টগুলো পড়েছেন। সুতরাং একটা ব্যাক্ষা দেয়া প্রয়োজন।
কীভাবে আমি দালাল হলাম...
পাবলিক লাইব্রেরিতে শাশ্বত’র জন্য ফান্ড কালেকশনের প্রস্তুতি মিটিং থেকে অনেক ব্লগারের সাথে পরিচিত হই। এরপর বসুন্ধরায় টাকা তুলতে যেয়ে ৪ দিনে আরো কাছ থেকে দেখেছি ব্লগারদের। রাজশাহীর সুজন, সুমন, উজ্জ্বল আর মামুন সাহেবদের পোস্ট নিয়ে প্রতিক্রিয়াও দেখেছি। দেখেছি, সভ্য আমরা কতোটা অসভ্য ভাবে একে অপরকে লেখায়, মন্তব্যে, এসএমএস এবং মোবাইল ফোনে আক্রমন করেছি! ঢাকার সবাইকে (যারা শাশ্বত ফান্ড বিষয়ে সরাসরি জড়িত ছিল) তো দেখলাম, জানলাম, চিনলাম ! কিন্তু রাজশাহীর সুজন, সুমন বা মামুন সাহেব কে দেখিনি। তাই তাদের দেখার প্রচন্ড আগ্রহ ছিল। ইতোমধ্যে মি: মামুন সম্পর্কে আমার ঘনিষ্ট একজন (প্রথম আলোর সংবাদ কর্মী, তবে শ.হো.মাসুম নন)- এর কাছ থেকে জানলাম। আমি যা বুঝার বুঝলাম। নিজের আগ্রহ আর বন্ধুর অনুরোধে মামুন সাহেবের সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। অবশেষে আমি হয়ে গেলাম ‘দালাল’।
শাহবাগের আলোচনা এবং পোস্টে মিথ্যাচারীতা...
৭ জুলাই সোমবার শাহবাগে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষে উপস্থিত সব ব্লগাররা (কালপুরুষ, ক্যামেরাম্যান, দীপু, উজ্জ্বল, রাহা, মহারাজা, রাতমজুর, রাসেল, টুটুল, আমি এবং আরো ২/১ জনের নাম মনে পড়ছে না) মিলে ৩ টি বিষয়ে একমত হই।
১.শাশ্বত ফান্ডের চেক প্রেস কনফারেন্সে নয়, তার বাড়ীতে গিয়ে দিয়ে আসা হবে।
২.আমরা প্রেস কনফারেন্সে যাবো। যদি আমাদের কাউকে বলতে দেয়া হয়, আমরা শুধু টোটাল টাকার হিসেবটা (কারা কারা দিয়েছেন) বলবো এবং লিখিত আকারে তা দিয়ে আসবো। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোন প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠীকে রিপ্রেজেন্ট করবো না। কোন অবস্থাতেই রাজশাহীর কারো সাথে ব্যক্তিগত বিরোধে জড়াবো না।
৩.রাজশাহীতে আমরা নিজের খরচে ৪ জন যাবো। কালপুরুষ, উজ্জ্বল, টুটুল আর আমি। টিকেটের দায়িত্ব নিলেন- কালপুরুষ।
পরবর্তীতে দীপু, ক্যামেরাম্যান এবং নেমেসিস আমাকে ফোন করে যাবার ইচ্ছে জানালে আমি তাদের কে টিকেট নিশ্চিত করতে কালপুরুষের সাথে যোগাযোগের কথা বলি।
অথচ গতকাল শ্রদ্ধেয় ২ ব্লগার তাদের ২ পোস্টে লিখেছেন- শাহবাগের আলোচনায় প্রেস কনফারেন্সে যাবার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি... কী মিথ্যাচারীতা !!!!
স্ববিরোধীতা...
প্রিয় ব্লগার, যে পোস্টে আমাকে দালাল বলা হয়েছে- তার মূল লেখায় লেখক লিখেছেন :
‘ ব্লগাররা ২ টা বিষয়ে একমত হয়েছিলেন- ১.টাকাটা শাশ্বত বা তার বাবার একাউন্টে দেয়া হবে, ইউনির ফান্ডে না। ২.ব্লগাররা কেউ প্রেস কনফারেন্সে যাবে না ’
অর্থাৎ লেখকের ভাষ্যমতে শাহবাগের আলোচনায় রাজশাহীতে প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত থাকার বিষয়ে একমত হয়নি উপস্থিত ব্লগাররা।
একই পোস্টে আনিসুজ্জামান উজ্জ্বলের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে লেখকের মন্তব্য দেখুন :
‘ সোমবারে ডিসিশন হয়েছিল প্রেস কনফারেন্সে যাওয়া হবে। কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য দেয়া হবে না।’
একই লেখকের একই লেখায় মন্তব্য দুটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ জানাই আপনাদের... এ ক্ষেত্রে আমার মন্তব্য নি®েপ্রয়োজন !!
(স্যরি, আমি লিংক দিতে জানি না। তবে হুবহু লেখাটা লিখে দিয়েছি)
রাজশাহী অধ্যায়...
রাজশাহীতে নেমে প্রথমে নাস্তা সেরে নেই (এ জন্য আমার কোন খরচ হয়নি)। তারপর মি: কালপুরুষের বাড়ীতে যাই। ফ্রেশ হয়ে নাটোরে শাশ্বতদের বাড়ীতে যাই এবং শাশ্বত’র বাবার হাতে সংগৃহিত ৪ লক্ষ ৮২ হাজার ১৯৩ টাকার চেক তুলে দেয়া হয়। ৩ টা নাগাদ রাজশাহীতে পৌঁছে ব্লগার বন্ধুর নিজেদের হোটেলে দুপুরের খাবার খাই (এ বাবদ আমাকে কোনো টাকা দিতে হয়নি)। সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে আমি টুটুলসহ মামুন সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য তার বাসায় যাই। তাকে পেতে পেতে আমাদের প্রায় ৯ টা বেজে যায়। ঘন্টা খানেক আলাপ শেষে (উপস্থিত ছিলেন- মামুন সাহেব, শিবলী, সুজন, উজ্জ্বলসহ আরো ৪/৫ জন) আমি আর টুটুল ফিরে আসি।
ইতোমধ্যে দীপু ২ বার আমার মোবাইলে ফোন করেছে। আলোচনায় ছিলাম বলে আমি লাইন কেটে দিয়েছি। আলাপ শেষে দীপুকে ফোন করে আমার আর টুটুলের ব্যাগ নিয়ে হোটেলে চলে আসার জন্য অনুরোধ করি। দুপুরের সেই হোটেলে আমরা সবাই রাতের খাবার খেয়ে নেই (কী সোভাগ্য ! হে ঈশ্বর, আবার বিনামূল্যে আমি খেতে পেরেছি)। এরপর থেকেই শুরু হয় নাটকের (অবশ্যই নতুন ধরণের প্যাকেজ নাটক এটি ??!!)।
তারা ৪ জন এক টেবিলে। আমরা ২ জন অন্য টেবিলে। বাস কাউন্টারে এসেও তাদের ৪ জনের ফিসফাস ?? আমরা আলাদা !! ২/১ টি বিচ্ছিন্ন কথা ছাড়া কোনো কথা নেই ওদের সাথে...!!
বাসে উঠার পর একজন ব্লগার বন্ধু বললেন- ‘ শেষ পর্যন্ত নিজেদের লোকেরাই আমাদের জুতা মারলো। আমার মুখে থুতু মেরে দিলো...।’ বাস ছাড়ার মিনিট দশেক পর ৪ জনের একজন আমাকে ডেকে নিলেন বাসের পেছনের দিকে। পেছনের অনেকগুলো সিট খালী ছিলো। তারপর ?? তারপর আমার সাথে যা হয়েছে, তার নাম দিতে পারি- ‘ দু:স্বপ্নের ৩০ মিনিট ’। তিনি আমাকে যা বল্লেন- তার চুম্বক অংশ :
১. কেন (গালী.....) মামুনের সাথে দেখা করতে গেলাম ??
২. আমি রাজশাহীর ব্লগারদের (গালী...) উসকে দিয়েছি, তার মাকে গালী দেবার জন্য (এর স্বপক্ষে তার যুক্তি হচ্ছে- ব্লগে রাজশাহী এবং ঢাকার ব্লগারদের মধ্যে যখন গালাগালীর প্রতিযোগিতা হচ্ছিল তখন তাকে উদ্দেশ্য করে কেন আমি মন্তব্য করেছি- ‘ বস, প্লিজ থামেন / চুপ করেন ’)
৩. রাজশাহী যাবার বিষয়ে শাহবাগে ব্লগাররা একমত হয়েছে যারা, সেসব ব্লগার (গালী...) কারা ? তাদের কী অধিকার ? যেহেতু সে একটা ব্লগের রিপ্রেজেন্ট করছে সুতরাং তাকে কেনো ফোন করে তার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি ? আমি এত কিছু করার কে (গালী...) ??
৪. আমাকে এ জন্য চরম মূল্য দিতে হবে !! (এ প্রসংগে আমি বলেছি- আপনি আমাকে শারীরিকভাবে মারতে পারবেন। যেহেতু আপনারা সব সময় বলেন, আপনাদের অনেকগুলো নিক আছে- সেহেতু আগামীকাল ঢাকায় ফিরে ব্লগে আপনি আমাকে পঁচাতে পারবেন, বাবা-মা তুলে গালী দিতে পারবেন)
সম্মানীয় ভদ্রলোক তার কথা রেখেছেন। তবে নিজে নয়, অন্যকে দিয়ে (বয়স ৪০ হলে মানুষের ভিমরতি হয়- জানতাম। হে ঈশ্বর, আগামী সেপ্টেম্বরে তো আমারও ৪০ হবে। তাহলে কি আমারও ভিমরতি হবে ? রক্ষা করো প্রভু !!!!!)।
আমার আর কিছু বলার নেই......
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৯